বন্দিশালা থেকে ফিরেছে পিতা, ফেরেনি পুত্র by রাসেল চৌধুরী
দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় মালয়েশিয়ায় কারাবন্দি জীবন কাটাবার পর দেশে ফেরেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার তেলখোলা গ্রামের চৈপুছিং চাকমা। রোজগারের আশায় শিক্ষকতা ছেড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি।
এক বছরেরও বেশি সময় সাগরে, সাগর উপকূলে, মালয়েশিয়ায় পুলিশি হাজত ও জেলবাসের পর দেশে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু দেশে ফেরার ৭ মাসের মাথায় তার ১৭ বছরের ছেলে স্নেহ কুমার চাকমা পাচার চক্রের অপহরণের শিকার হয়ে এখন থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর বন্দিশালায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর উখিয়ার মনখালী এলাকায় সাগরে চিংড়ি মাছের পোনা ধরতে গিয়েছিলেন স্নেহ কুমার চাকমা। পাচার চক্রের সদস্যরা সাগর উপকূল থেকে স্নেহ কুমার চাকমাসহ আরও পাঁচজনকে মাছ ধরার ছোট নৌকায় জোর করে তুলে। সেখান থেকে তাদের তুলে দেয়া হয় জাহাজে। চৈপুছিং চাকমার মঙ্গলবার দুপুরে নিজগ্রাম উখিয়ার তেলখোলায় তার ও ছেলের সাগরের দুর্বিষহ জীবনের কথা জানালেন। জানালেন, তার জেল জীবনের কষ্টের কথা।
কক্সবাজার থেকে উখিয়া উপজেলা শহর। সেখান থেকে পাহাড় টিলায় ঘেরা কাঁচাপাকা দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে তেলখোলা গ্রাম। পাঁচ ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চৈপুছিংয়ের। স্নেহ কুমার তার চতুর্থ ছেলে।
স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক ছিলেন চৈপুছিং চাকমা। সংসারে একটু অভাব-অনটন থাকলেও ভালই কাটছিল তার দিন। স্থানীয় রোহিঙ্গা দালাল শফিউল আলম তাকে বারবার প্রলোভন দেখাচ্ছিল মালয়েশিয়ায় উন্নত জীবনের ‘কী করবে তুমি এখানে? শিক্ষিত মানুষ। শিক্ষকতা করে কয় টাকা পাও। মালয়েশিয়ায় ভাল চাকরির খবর আছে। তুমি ওখানে যাও। মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবে। টাকা বেশি লাগবে না। জাহাজে করে যাবে- মালয়েশিয়ায় পৌঁছলেই চাকরি।’
সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ামুখী হতে চাননি মাস্টার চৈপুছিং। কিন্তু, দালালের নানা প্রলোভন ও লোভে পড়ে ২০১২ সালের শেষের দিকে অন্যদের সঙ্গে তিনিও সাগরে অনিশ্চিত যাত্রার শরিক হন।
চৈপুছিং চাকমা জানালেন, তাকেসহ শতাধিক বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের নাগরিককে নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেয় দালাল চক্রের ফিশিং বোট (মাছ ধরার নৌকা)। সপ্তাহ খানেক পর ভারতের আন্দামান উপকূলে পুলিশের হাতে আটক হয় ফিশিং বোট। সেখানে ৬দিন আটক থাকার পর আবারও তাদের নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সাগরে ভাসতে থাকে ফিশিং বোট।
কিন্তু, মালয়েশিয়ার উপকূলে গিয়ে কোস্টগার্ডের হাতে আবারও ধরা পড়ে চৈপুছিংদের বহনকারী ফিশিং বোটটি।
চৈপুছিং তার সাগরে ভাসা ও মালয়েশিয়ায় হাজত ও জেল জীবনের কষ্টগাথা তুলে ধরে বলেন, ‘মালয়েশিয়া কোস্টগার্ডের হাতে বন্দি হওয়ার পর দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের সবাইকে মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) হিসেবে পরিচয় দিতে বলে। তারা বলে রোহিঙ্গা পরিচয় দিলে আর কোন সমস্যা হবে না। আমরা সবাই নিজেদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিলাম। কিন্তু, কাজ হলো না। যারা বাংলাদেশী তাদের ঠিকই কথাবার্তায়, চালচলনে ধরে ফেলল মালয় প্রশাসন।’
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার আলাস্তা ক্যাম্পে ১৪ দিন হাজত বাসের পর এক বছর এক মাস করে জেল হলো শতাধিক মানুষের। যাদের মধ্যে বাংলাদেশীই বেশি। কুয়ালামপুরের চুমুনি জেলখানায় জেল খেটে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাদের সঙ্গে আরও ১০ জন বাংলাদেশীও দেশে আসতে পারেন। তবে বিমানের টিকিটের টাকা তাদেরই দিতে হয়েছে।’ বাকিরা এখনও সেখানেই রয়েছে বলে জানান তিনি।
মানসিকভাবে শক্ত চৈপুছিং চাকমা সমুদ্রে ও মালয়েশিয়ার হাজত ও জেল জীবনের কথা শুনানোর সময় বললেন, ‘সাগরে খেয়ে না খেয়ে কত দিন যে কাটালাম, কিভাবে যে সাগর পাড়ি দিলাম। এসব মনে হলে গা শিউরে ওঠে। এরপর তো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই।’ চৈপুছিং চাকমা বলেন, ‘শিক্ষকতা ছেড়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। লাখ লাখ টাকা ইনকামের পরিবর্তে জেল খেটে দেশে আসলাম। আমি কখনও চাইনি আমার পরিবারের কেউ দালালদের খপ্পরে পড়ে সাগরে ভাসুক। কিন্তু, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। আমি দেশে আসলাম ফেব্রুয়ারিতে। আর আমার ছেলে স্নেহ কুমার চাকমাকে ৫ই সেপ্টেম্বর অপহরণ করে নিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দিল দালালরা।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের কাছে মোবাইল ছিল। জাহাজে ওঠার পর সে আমাকে ফোন দিয়ে শুধু বলে, বাবা আমারে দালালরা জোর করে মালয়েশিয়ার জাহাজে তুলে দিয়েছে। আমাদের বাঁচাও আমাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি স্নেহ কুমারের সঙ্গে।’
তিনি বলেন, ‘দুই মাস পর আমাকে ফোন দেয় সে। এ সময় কান্নার শব্দ আসছিল অনেক মানুষের। সঙ্গে আমার ছেলের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দালালরা মুক্তিপণের জন্য তাদের মারধর করছিল। আমার ছেলে বলে পিতা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দি আছি। আমাদের বাঁচাও। এরপর এক দালাল ওপ্রান্ত থেকে বলে, ‘টাকা পাঠাও তোমাদের ছেলেদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে কাজ ধরিয়ে দেব। নইলে এখানেই শেষ।’
চৈপুছিং চাকমা বলেন, ‘এরপর দালালদের ঠিকানা মতো বিকাশে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। আমার মতো আরও কয়েকজন একই পরিমাণ টাকা পাঠায়। কিন্তু, এরপর থেকে আবারও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর গত ১৪-১৫ দিন আগে স্নেহ কুমার আবার ফোন দেয়। বলে তারা এখন থাইল্যান্ড নৌবাহিনীর বন্দিশালায়।’
কিভাবে জঙ্গল থেকে সেখানে তারা গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ডে সামপ্রতিক সময়ে যখন গণকবর আবিষ্কৃত হচ্ছিল- অপহরণকারীরা ভয়ে তাদের জঙ্গল থেকে তাদের ছোট নৌকায় তুলে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এরপর থাই নৌবাহিনীর হাতে আটক হন তারা।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে এ প্রতিবেদকের সামনেই থাইল্যান্ডে নৌবাহিনীর বন্দিশালায় থাকা স্নেহ কুমার চাকমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন তার পিতা চৈপুছিং চাকমা।
এ সময় স্নেহ কুমার চাকমা বারবার তার পিতাকে বলছিলেন, বড়ই কষ্টে আছি। আমাদের বাঁচাও বাবা। আমাদের দেশে নিয়ে যাও। অনেক কষ্ট করছি। ঠিকমতো খেতে পায় না। শরীর খারাপ হয়ে গেছে।
সাংবাদিকরা তার পিতার সঙ্গে রয়েছেন জেনে স্নেহ কুমার এ প্রতিবেদকের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দাদা আপনারা আমাদের বাঁচান। আমাদের দেশে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমরা যে আর সহ্য করতে পারছি না।’
চৈপুছিং চাকমা এ সময় বলেন, ওর (ছেলে) জন্য আমাদের কত টেনশন। ওর মা কাঁদতে কাঁদতে শরীর খারাপ করে ফেলেছে। আমি তো জানি কত কষ্টরে বাবা। খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। কী যে নির্যাতন। ভাই আপনারা সাংবাদিক মানুষ একটা ব্যবস্থা করেন না। সরকারকে একটু বলেন। ও তো ইচ্ছে করে যায়নি। অপহরণ করে নিয়ে গেছে দালালরা। যে দালালকে বিকাশে টাকা দিয়েছেন সে নম্বর ও নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম মনে নেই। আমরা তো ছেলেকে পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছি। ওসব তখন খেয়াল থাকেনি।’
এক বছরেরও বেশি সময় সাগরে, সাগর উপকূলে, মালয়েশিয়ায় পুলিশি হাজত ও জেলবাসের পর দেশে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু দেশে ফেরার ৭ মাসের মাথায় তার ১৭ বছরের ছেলে স্নেহ কুমার চাকমা পাচার চক্রের অপহরণের শিকার হয়ে এখন থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর বন্দিশালায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ২০১৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর উখিয়ার মনখালী এলাকায় সাগরে চিংড়ি মাছের পোনা ধরতে গিয়েছিলেন স্নেহ কুমার চাকমা। পাচার চক্রের সদস্যরা সাগর উপকূল থেকে স্নেহ কুমার চাকমাসহ আরও পাঁচজনকে মাছ ধরার ছোট নৌকায় জোর করে তুলে। সেখান থেকে তাদের তুলে দেয়া হয় জাহাজে। চৈপুছিং চাকমার মঙ্গলবার দুপুরে নিজগ্রাম উখিয়ার তেলখোলায় তার ও ছেলের সাগরের দুর্বিষহ জীবনের কথা জানালেন। জানালেন, তার জেল জীবনের কষ্টের কথা।
কক্সবাজার থেকে উখিয়া উপজেলা শহর। সেখান থেকে পাহাড় টিলায় ঘেরা কাঁচাপাকা দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে তেলখোলা গ্রাম। পাঁচ ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চৈপুছিংয়ের। স্নেহ কুমার তার চতুর্থ ছেলে।
স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক ছিলেন চৈপুছিং চাকমা। সংসারে একটু অভাব-অনটন থাকলেও ভালই কাটছিল তার দিন। স্থানীয় রোহিঙ্গা দালাল শফিউল আলম তাকে বারবার প্রলোভন দেখাচ্ছিল মালয়েশিয়ায় উন্নত জীবনের ‘কী করবে তুমি এখানে? শিক্ষিত মানুষ। শিক্ষকতা করে কয় টাকা পাও। মালয়েশিয়ায় ভাল চাকরির খবর আছে। তুমি ওখানে যাও। মাসে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবে। টাকা বেশি লাগবে না। জাহাজে করে যাবে- মালয়েশিয়ায় পৌঁছলেই চাকরি।’
সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ামুখী হতে চাননি মাস্টার চৈপুছিং। কিন্তু, দালালের নানা প্রলোভন ও লোভে পড়ে ২০১২ সালের শেষের দিকে অন্যদের সঙ্গে তিনিও সাগরে অনিশ্চিত যাত্রার শরিক হন।
চৈপুছিং চাকমা জানালেন, তাকেসহ শতাধিক বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের নাগরিককে নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেয় দালাল চক্রের ফিশিং বোট (মাছ ধরার নৌকা)। সপ্তাহ খানেক পর ভারতের আন্দামান উপকূলে পুলিশের হাতে আটক হয় ফিশিং বোট। সেখানে ৬দিন আটক থাকার পর আবারও তাদের নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে সাগরে ভাসতে থাকে ফিশিং বোট।
কিন্তু, মালয়েশিয়ার উপকূলে গিয়ে কোস্টগার্ডের হাতে আবারও ধরা পড়ে চৈপুছিংদের বহনকারী ফিশিং বোটটি।
চৈপুছিং তার সাগরে ভাসা ও মালয়েশিয়ায় হাজত ও জেল জীবনের কষ্টগাথা তুলে ধরে বলেন, ‘মালয়েশিয়া কোস্টগার্ডের হাতে বন্দি হওয়ার পর দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের সবাইকে মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) হিসেবে পরিচয় দিতে বলে। তারা বলে রোহিঙ্গা পরিচয় দিলে আর কোন সমস্যা হবে না। আমরা সবাই নিজেদের রোহিঙ্গা পরিচয় দিলাম। কিন্তু, কাজ হলো না। যারা বাংলাদেশী তাদের ঠিকই কথাবার্তায়, চালচলনে ধরে ফেলল মালয় প্রশাসন।’
তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার আলাস্তা ক্যাম্পে ১৪ দিন হাজত বাসের পর এক বছর এক মাস করে জেল হলো শতাধিক মানুষের। যাদের মধ্যে বাংলাদেশীই বেশি। কুয়ালামপুরের চুমুনি জেলখানায় জেল খেটে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরে আসেন গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। তাদের সঙ্গে আরও ১০ জন বাংলাদেশীও দেশে আসতে পারেন। তবে বিমানের টিকিটের টাকা তাদেরই দিতে হয়েছে।’ বাকিরা এখনও সেখানেই রয়েছে বলে জানান তিনি।
মানসিকভাবে শক্ত চৈপুছিং চাকমা সমুদ্রে ও মালয়েশিয়ার হাজত ও জেল জীবনের কথা শুনানোর সময় বললেন, ‘সাগরে খেয়ে না খেয়ে কত দিন যে কাটালাম, কিভাবে যে সাগর পাড়ি দিলাম। এসব মনে হলে গা শিউরে ওঠে। এরপর তো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো আছেই।’ চৈপুছিং চাকমা বলেন, ‘শিক্ষকতা ছেড়ে দালালদের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। লাখ লাখ টাকা ইনকামের পরিবর্তে জেল খেটে দেশে আসলাম। আমি কখনও চাইনি আমার পরিবারের কেউ দালালদের খপ্পরে পড়ে সাগরে ভাসুক। কিন্তু, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। আমি দেশে আসলাম ফেব্রুয়ারিতে। আর আমার ছেলে স্নেহ কুমার চাকমাকে ৫ই সেপ্টেম্বর অপহরণ করে নিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দিল দালালরা।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের কাছে মোবাইল ছিল। জাহাজে ওঠার পর সে আমাকে ফোন দিয়ে শুধু বলে, বাবা আমারে দালালরা জোর করে মালয়েশিয়ার জাহাজে তুলে দিয়েছে। আমাদের বাঁচাও আমাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে আর কথা হয়নি স্নেহ কুমারের সঙ্গে।’
তিনি বলেন, ‘দুই মাস পর আমাকে ফোন দেয় সে। এ সময় কান্নার শব্দ আসছিল অনেক মানুষের। সঙ্গে আমার ছেলের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। দালালরা মুক্তিপণের জন্য তাদের মারধর করছিল। আমার ছেলে বলে পিতা থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দি আছি। আমাদের বাঁচাও। এরপর এক দালাল ওপ্রান্ত থেকে বলে, ‘টাকা পাঠাও তোমাদের ছেলেদের মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে কাজ ধরিয়ে দেব। নইলে এখানেই শেষ।’
চৈপুছিং চাকমা বলেন, ‘এরপর দালালদের ঠিকানা মতো বিকাশে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিই। আমার মতো আরও কয়েকজন একই পরিমাণ টাকা পাঠায়। কিন্তু, এরপর থেকে আবারও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তাদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর গত ১৪-১৫ দিন আগে স্নেহ কুমার আবার ফোন দেয়। বলে তারা এখন থাইল্যান্ড নৌবাহিনীর বন্দিশালায়।’
কিভাবে জঙ্গল থেকে সেখানে তারা গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ডে সামপ্রতিক সময়ে যখন গণকবর আবিষ্কৃত হচ্ছিল- অপহরণকারীরা ভয়ে তাদের জঙ্গল থেকে তাদের ছোট নৌকায় তুলে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। এরপর থাই নৌবাহিনীর হাতে আটক হন তারা।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে এ প্রতিবেদকের সামনেই থাইল্যান্ডে নৌবাহিনীর বন্দিশালায় থাকা স্নেহ কুমার চাকমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন তার পিতা চৈপুছিং চাকমা।
এ সময় স্নেহ কুমার চাকমা বারবার তার পিতাকে বলছিলেন, বড়ই কষ্টে আছি। আমাদের বাঁচাও বাবা। আমাদের দেশে নিয়ে যাও। অনেক কষ্ট করছি। ঠিকমতো খেতে পায় না। শরীর খারাপ হয়ে গেছে।
সাংবাদিকরা তার পিতার সঙ্গে রয়েছেন জেনে স্নেহ কুমার এ প্রতিবেদকের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দাদা আপনারা আমাদের বাঁচান। আমাদের দেশে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমরা যে আর সহ্য করতে পারছি না।’
চৈপুছিং চাকমা এ সময় বলেন, ওর (ছেলে) জন্য আমাদের কত টেনশন। ওর মা কাঁদতে কাঁদতে শরীর খারাপ করে ফেলেছে। আমি তো জানি কত কষ্টরে বাবা। খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। কী যে নির্যাতন। ভাই আপনারা সাংবাদিক মানুষ একটা ব্যবস্থা করেন না। সরকারকে একটু বলেন। ও তো ইচ্ছে করে যায়নি। অপহরণ করে নিয়ে গেছে দালালরা। যে দালালকে বিকাশে টাকা দিয়েছেন সে নম্বর ও নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম মনে নেই। আমরা তো ছেলেকে পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছি। ওসব তখন খেয়াল থাকেনি।’
No comments