মেয়র পাপলুকে ঘিরে ‘সরব’ গোলাপগঞ্জ by ওয়েছ খছরু
বয়সে
অনেকটা তরুণ। আওয়ামী লীগের জাঁদরেল নেতাদের কাছে তিনি ‘চুনোপুঁটি’।
নিতান্তই একজন ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিতি ছিল। এক দশক আগের ছাত্রলীগের
সেই জাকারিয়া আহমদ পাপলু এখন শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী আসনের গোলাপগঞ্জের
পৌরপিতা। মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয়, আবার খারাপও নয়। তবে, টানা ১০
বছরের পৌর মেয়রের দায়িত্ব পালনে একাই পথ চলতে গিয়ে তিনি বার বার এসেছেন
আলোচনায়। রাজনৈতিক উল্টো স্রোতে অনেকটা লড়াই করে চলা এই পৌর মেয়র এবার নতুন
করে আলোচনায়। তাকে ঘিরে উন্নত জনপদ গোলাপগঞ্জে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সামনেই পৌর নির্বাচন। হয়তো একারণেই আগাম এই তোড়জোড় শুরু পৌর শহরে।
‘চ্যালেঞ্জ’ ভালবাসেন বলে এবারও পড়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। বিরোধী জোট এক
হয়েছেন তার বিরুদ্ধে। গঠন করেছেন ‘আমরা গোলাপগঞ্জবাসী’। তাদের সব অভিযোগ
পৌর চেয়ারম্যান পাপলুর বিরুদ্ধে। ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি সহ নানা
অভিযোগ তুলেছেন তার বিরুদ্ধে। পাপলুও বসে নেই। বিরোধী জোটকে শায়েস্তা করতে
ইতিমধ্যে নিজেও দিয়েছেন শোডাউন। পৌর শহরে হাজারো মানুষের সমাগম ঘটিয়ে
জানিয়ে দিয়েছেন তার অবস্থান। বলেছেন, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। এ কারণে
একটি মহল তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই বিরোধ এবার
নতুন নয়। তবে, এবারের বিরোধ নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছে
অনেকেই। এর কারণ হিসেবে তারা দেখছেন, পাপলু এবার ক্ষেপেছেন অনলাইন
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করে ইতিমধ্যে
একটি অনলাইন মাধ্যম খবর প্রচার করেছেন। আর এতেই ক্ষেপেছেন পৌর মেয়র পাপলু।
তিনি ইতিমধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন।
আর এই মামলার পর গোলাপগঞ্জের কাদা ছুড়াছুড়ির রাজনীতি চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রতিদিনই গোলাপগঞ্জে পালন হচ্ছে কোন না কোন কর্মসূচি। পাপলু মানবজমিনকে
বললেন, ‘আমি একজন রাজনীতিবিদ, পৌরপিতাও। আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ
আসতেই পারে। সেটি ক্রমাগত আসছেও। মোকাবিলা করে যাচ্ছি। কিন্তু এখন আমার
পরিবারের ওপর আক্রমণ কোন ভাবেই সহ্য করা যায় না। এটা নোংরামি। এর অবসান
হওয়া প্রয়োজন।’ তবে, বিরোধীরা বলছেন, ‘সামনে নির্বাচন। মেয়র পাপলুর ইস্যু
প্রয়োজন। এ কারণে আগাম ইস্যু নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি।’ পাপলুকে নিয়ে যখন
গোলাপগঞ্জের আলোচনা জোর তুঙ্গে তখন তাতে ঘি ঢাললেন ‘আমরা গোলাপগঞ্জবাসী’
নামে সংগঠন। সোমবার আমরা গোলাপগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র
পাপলুর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি, অন্যায়ভাবে পৌরসভায়
চাকরিরত লোকজনকে চাকরিচ্যুত করা ও কর আরোপের নামে ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষের
ওপর অবিচারের অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পৌর এলাকার নাগরিক এম
আব্দুল জলিল লিখিত বক্তব্যে বলেন, গোলাপগঞ্জ পৌরবাসীকে জিম্মি করে উপজেলা
পর্যায়ের দেশের ‘ক’ শ্রেণীর যেকোন পৌরসভার চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি হারে
বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ওপর থেকে কর আদায় করছেন মেয়র।
এক্ষেত্রে দালালদের উৎপাত মানুষকে আরও অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দালালরা মেয়রের
কাছের লোক হওয়ায় সাহস থাকার পরও অনেকেই প্রতিবাদ করতে পারেন না। অনেক সময়
দেখা গেছে, বিল্ডিং বা ইমারত নির্মাণ নকশা অনুমোদনের কয়েক বছর আগের দিন
তারিখ উল্লেখ করে হোল্ডিং ট্যাক্সের চিঠি প্রেরণ করা হয়। হোল্ডিং ট্যাক্স
আদায়ের অজুহাতে অনেক বিল্ডিংয়ের গ্যাস সংযোগ প্রদানের পৌর ছাড়পত্র দেয়া
হচ্ছে না। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে ছাড়পত্র দেয়ার পর কোন কারণ
ছাড়াই তা বাতিল করা হচ্ছে। তারা বলেন, মেয়র পাপলুর ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে
যারা মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম গোলাপগঞ্জ
চৌমুহনী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির ৩৪ বছরের সেক্রেটারি, গোলাপগঞ্জ বাজার
বণিক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি হাফিজুর রহমান চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার
সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান বর্তমান কাউন্সিলর ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি
হেলালুজ্জামান হেলাল ও তার ভাই কৈলাশ টিলা গ্যাসফিল্ডের চাকরিজীবী বিলাল
আহমদ, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের
সভাপতি রুহিন আহমদ খান, গোলাপগঞ্জের গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির
সেক্রেটারি ও সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গোলাপগঞ্জ অঞ্চলের পরিচালক আব্দুল
আহাদ, পৌর এলাকার রণকেলী মহিউসসুন্নাহ মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা এম আব্দুল
জলিল, গোলাপগঞ্জের কবিরাজ চাঁদসী প্রফুল্ল কুমার সরকার, গোলাপগঞ্জ বাজারের
ব্যবসায়ী জাবলু তালুকদার, বাঘা ইউনিয়নের নূরুল ইসলামসহ অনেকেই। মামলা
দায়েরের প্রতিবাদে হাজারো মানুষ গোলাপগঞ্জ পৌর শহরে সমবেত হয়ে মানববন্ধন
কর্মসূচি পালন করেছে। পাপলু মেয়রের অবিচারের শিকার হয়েছেন পৌরসভার
হিসাবরক্ষক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী (সাহেদ), সহঃ কর আদায়কারী আব্দুল বাছিত,
এমএলএসএস নজরুল ইসলাম, নৈশপ্রহরী আনোয়ার হোসেন। যারা চাকরি পেয়েও মেয়রের
দুর্নীতিতে সহায়তা না করায় তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চাকরিচ্যুত করা
হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন গোলাপগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি
হাফিজুর রহমান চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাদেক আহমদ,
মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সহ-সভাপতি ফজলুল আলম, সমাজসেবী দেলোয়ার হোসেন
খান, গউছ উদ্দিন চৌধুরী, আমরা গোলাপগঞ্জবাসী সংগঠনের সেক্রেটারি সায়েম আহমদ
চৌধুরী, আব্দুস সালাম শিপলু, শাহিন আহমদ ও ইউসুফ আলী প্রমুখ। এদিকে, সংবাদ
সম্মেলনের পরদিনই গোলাপগঞ্জ পৌর শহরে শোডাউন করেছেন পৌর মেয়র জাকারিয়া
আহমদ পাপলু। পৌর নাগরিক কমিটির ব্যানারে আয়োজিত ওই সমাবেশে আন্দোলনের হুমকি
দিয়ে বলা হয়েছে, পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলুর পরিবারকে নিয়ে কটূক্তি ও
ষড়যন্ত্রকারীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা না হলে হরতাল ও পরিবহন ধর্মঘট সহ
কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার তেমুখীতে আয়োজিত প্রতিবাদ
সমাবেশে বক্তারা এই হুমকি দেন। পৌর নাগরিক কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কাহের
সোয়া মিয়ার সভাপতিত্বে ও যুবলীগ নেতা মঞ্জুর আহমদের পরিচালনায় প্রতিবাদ
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ
পাপলু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের
সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল
মান্নান, গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অসিউদ্দিন মাখন মিয়া,
সাবেক চেয়ারম্যান মকসুদ হোসেন বাবুল, গোলাপগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী এডহক কমিটির
সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান। মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, ‘একটি
কুচক্রী মহল দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এতো দিন আমাকে
নিয়ে ষড়যন্ত্র করে ক্ষান্ত হয়নি তারা। এখন আমার পরিবারকে নিয়ে সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে অভিযুক্ত মাহফুজুর
রহমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অন্যথায় গোলাপগঞ্জের সর্বস্তরের
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে হরতাল সহ কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন।’ সিলেট জেলা পরিবহন
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, মেয়র পাপলুর
জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এখন তারা পাপলুর
পরিবারকে নিয়েও নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যদি অবিলম্বে অভিযুক্ত মাহফুজুর
রহমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা না হয় তবে সিলেটের সকল পরিবহন শ্রমিককে সঙ্গে
নিয়ে পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেন তিনি।’
No comments