ফল পাকাতে ৭০ কোটি টাকার ক্ষতিকর হরমোন by মো. নজরুল ইসলাম
টাঙ্গাইলের
মধুপুরে মৌসুমী ফল পাকাতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও
ইথোফন সমৃদ্ধ হরমোন। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে চোরাই হরমোন প্রয়োগে
ফল পাকানোর অবৈধ ব্যবসায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রতিবছর ৭০ কোটি টাকা
কামিয়ে নিচ্ছে। গড় ফলের বাণিজ্যিক আবাদে হরমোনের নির্বিচার প্রয়োগকে পুঁজি
করে কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা মে হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ও
ক্ষতিকর হরমোন বাজারজাত করে। টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ কৃষি অফিস জানায়, ঢাকার
খামার বাড়ির ফিল্ড সার্ভিস উইংয়ের অনুমোদিত ২৭টি কেমিক্যাল কোম্পানির ৪৫
প্রকার হরমোন বাজারে পাওয়া যায়। শুধু মাত্র উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের
জন্য বিদেশ থেকে আমদানির অনুমোদন দিলেও ৬টি কেমিক্যাল কোম্পানি হরমোন দিয়ে
ফল পাকানোর কাজে ফল ব্যবসায়ী, মহাজন এবং খামারিদের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়ে
তুলেছে। ঘাটাইল ও মধুপুরের কিটনাশক ব্যবসায়ীরা জানান, ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও
ইথোফনের উপাদানে তৈরি ৬ প্রকার হরমোন যেমন অনিকা এন্টারপ্রাইজের টমটম,
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ারের রাইপেন-১৫, হাইসিন বিডি লিমিটেডের হারভেস্ট, সার্ক
বাংলাদেশের প্রমোট, মার্শাল লিমিটেডের পোলং এবং ক্লিনএগ্রো লিমিটেডের
ব্রাইট ফল পাকানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। মধুপুর উপজেলার ইদিলপুর আনারস চাষি
সমিতির সাবেক সম্পাদক আলী আকবর ফকির অভিযোগ করেন, ফল সংগ্রহ মওসুমে ওই ৬
কেমিক্যাল কোম্পানি টনকে টন হরমোন বাজারজাত করে। এ ছাড়াও ভারত থেকে চোরাই
পথে আসছে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর হরমোন। কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের এক হিসাবে দেখা
যায়, মধুপুর, পঁচিশ মাইল, গারো বাজার, ইদিলপুর, চৌরাস্তা বাজার, সাগরদীঘি,
জলছত্র, মোটের বাজার, আশ্রা বাজার, ধলাপাড়া, লেংড়া বাজার ও দোখলা বাজারসহ
শতাধিক ডিলারের দোকানে ফল পাকানোর মওসুমে প্রায় ৭০ কোটি টাকার হরমোন বিক্রি
হয়। আউসনারার ফল চাষি আবদুল হক জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের
পাইকার ও মহাজনরা বাগান অথবা হাটবাজার থেকে ফল কিনে ট্রাকে লোড করার আগে
ক্ষতিকর হরমোন সেপ্র করে নেয়। সেপ্র করা ফল ১৫/২০ ঘণ্টার মধ্যেই পেকে
টসটসে হয়। ৪৫ বছরের অভিজ্ঞ আনারস চাষি ইদিলপুর গ্রামের আজগর মণ্ডল জানান,
তরল কেমিক্যালে ভরা এসব হরমোনের বোতলের গায়ে বিষাক্ত শব্দ লেখা থাকে এবং
এসব খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সেপ্রর সময় নাকে বা
চোখে ছিটা গেলে সেপ্রম্যান অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তরল হরমোনকে মানব বা পশুখাদ্য
থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার নির্দেশ থেকে বুঝা যায় এসব কেমিক্যালে পাকানো ফল
বিষে পরিণত হয়। বোকারবাইদ গ্রামের আনারস চাষি হাফিজুর রহমান জানান, হরমোনে
পাকানো আনারস দেখতে সুন্দর। খেতে বিস্বাদু। কখনো টক, কখনো পানসে। বেশি
খেলে বমি হয়। মাথা ঘুরায়। পেট খারাপ হয়। আশ্রা গ্রামের আনিছুর রহমান ১০
একরে আনারস আবাদ করেন। তিনি বরাবরই কেমিক্যাল সেপ্র করে ফল পাকান। স্থানীয়
কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মহাজন ও বড় খামারির
দেখাদেখি সাধারণ গৃহস্থরাও ফল পাকানোর কুপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে। দেশে
হরমোন নীতিমালা না থাকায় কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদেন
বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
No comments