খালেদা জিয়ার অফিসে ভাত বন্ধ by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
(গুলশানে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও
নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য আনা খাবার নিয়ে আজ শনিবার দুপুরে দুই ব্যক্তি
ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের বাধা
দেন। ছবি: সাজিদ হোসেন, প্রথম আলো) পৃথিবীতে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনই
যেমন দিনক্ষণ বেঁধে দিয়ে শুরু বা শেষ হয়নি, তেমনি শনি-মঙ্গলবারের চিন্তা
করেও সফলভাবে আন্দোলন শুরু করা বা তাতে সাফল্য অর্জন করা যায়নি। একটি
নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি ২০ দলীয় জোট করে
আসছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে। কার্যত
এই প্রতিবাদের ধারা সূচিত হয়েছিল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে। সাবেক প্রধান
বিচারপতি খায়রুল হক ওই ব্যবস্থা বাতিলের রায় ঘোষণা করেছিলেন। সে রায়ে তিনি
অবশ্য আরো বলেছিলেন, পরবর্তী দু’টি সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনেই হতে পারে। এ রায়টি এসেছিল সদরঘাটের
স্টার সিনেমা হলের মালিকানা নির্ধারণ করতে গিয়ে। এ কারণে তা অত্যন্ত
অপ্রাসঙ্গিক ও অসঙ্গত।
২০০৮ সালে সাজানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসীন হয়। এর আগে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার লালসায় ঘটিয়েছিল নজিরবিহীন পৈশাচিক তাণ্ডব। সে সময় সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গঠিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল দলটি। এমনকি সংবিধানে দেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো অপশনই তারা মেনে নিতে অস্বীকার করে। শেষ অপশন ছিল রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ওই সরকার গঠিত হওয়ার বিষয়কে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিল মেনে নিয়েছিলেন। আর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেখা যাক, উনি কতটা নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু সে সময় ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্র ছিল ভিন্ন উদ্দেশ্যে। তারা চাইছিলেন, একটি অরাজনৈতিক সামরিক সরকার। এর অংশীদার ছিল আওয়ামী লীগও। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে তাদের কথায় উঠবস করানোর জন্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠাধারীরা রাজধানীর পল্টন এলাকায় নরহত্যাযজ্ঞের আয়োজন করে। সেখানে নিরস্ত্র নিরীহ প্রতিপক্ষকে পিটিয়ে যে বর্বরতা ও পৈশাচিকতার নজির তারা স্থাপন করেছে, তা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। টিভির পর্দায় সেই শত শত লোকের সামনে হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য লাইভ প্রচারিত হয়েছিল। পরে ওই হত্যাযজ্ঞকে আওয়ামী লীগ যৌক্তিক বলে প্রচারণা চালাতে থাকলেও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলিও চালাচ্ছে। সেটা ছিল ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া যে, তাদের কথামতো কাজ না করলে তারা দেশব্যাপী এমন সহিংসতা চালানোর সামর্থ্য রাখে। শুধু এটা নয়, বর্তমান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন, তাদের কথামতো না চললে বঙ্গভবনের খাদ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, এমনকি অক্সিজেন পর্যন্ত তারা বন্ধ করে দেবেন।
সে সময় সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির লেজুড় হিসেবে দাঁড়িয়েছিল কথিত একটি সুশীলসমাজ। তারা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে দেশব্যাপী ‘সৎ’ প্রার্থী অনুসন্ধানে নেমেছিলেন। তদুপরি, এমন একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন যে, রাজনীতিক মাত্রই অসৎ ও দুর্নীতিবাজ। অতএব, প্রার্থী হবেন রাজনৈতিক দল করেন না, এমন ব্যক্তিরা। অবশ্য বহু জায়গায় তাড়া খেয়ে এসব সুশীলকে দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল। তাদের ছিল দু’টি প্রভাবশালী পত্রিকাÑ একটি বাংলা। অপরটি ইংরেজি। এই মিডিয়া সদ্যবিদায়ী বিএনপির মন্ত্রী, এমপি, নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে অসঙ্গত ও অসংলগ্ন প্রচার চালায়। তাদের লোক নাকি কোনো কোনো এলাকায় মুদি, তরিতরকারির দোকানে গিয়েছিল, দোকানিরা তাদের নাকি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা বঙ্গভবনের জন্য কোনো পণ্য বিক্রি করবেন না। এসব হাস্যকর গল্প। এভাবে তারাও দেশকে রাজনীতিশূন্য করার ষড়যন্ত্রের শরিক হলেন।
আওয়ামী লীগও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কোনো ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বিরোধী দলে থেকেও যে গণবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত ছিল, তাতে নিরপেক্ষ ভোট হলে সে নির্বাচনে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। এ দিকে তাদের দাবির তালিকাও বাড়তে থাকেÑ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানি না। অমুক উপদেষ্টা মানি না। নির্বাচন কমিশন মানি না। জনপ্রশাসনের পরিবর্তন মানি না।’ ফলে এমন এক অচল অবস্থা সৃষ্টি হলো যে, সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক উপায়ে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উদ্দিন কৌশলে ক্ষমতা দখল করলেন।
এরপরই তারা সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান একে একে অকার্যকর করে দিতে শুরু করেন। হস্তক্ষেপ করতে থাকেন বিচার বিভাগের ওপরও। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা শুরু হলো; আওয়ামী লীগের ডজন ডজন। একপর্যায়ে তারা বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান, তার মন্ত্রীবর্গ এবং শেখ হাসিনা ও তার কিছু মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেন। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যখন ঘোষণা দেন, ওই সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল, তখন আর বুঝতে বাকি থাকেনি যে, এমন একটি অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় নিয়ে আসার পেছনে কাদের মদদ কতটা প্রবল ছিল।
এরপর শেখ হাসিনা নানা অজুহাতে কারামুক্তি লাভ করেন এবং কয়েকটি দেশে সফর করে বেড়াতে থাকেন। অপর দিকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত যে ছদ্মবেশী সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল, তারা ক্রমান্বয়ে সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিয়েছিল। শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি তাদের দায়মুক্তি দেবেন। তিনি সে কথা রেখেছেন। ওই অসাংবিধানিক শাসনের হোতা মইন-ফখর ও অন্যদেরকে নিরাপদে বিদেশে চলে যেতে দিয়েছেন। অনেককে নিরাপদেই রেখেছেন। আর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন ছয় বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত থেকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বিঘœ জীবন যাপন করছেন।
যদিও শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যেই অভিযোগ করেছেন যে, ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে হত্যার জন্য আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করেছিল, তার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু একই সাথে দেখা গেছে, তিনি দুই কানে দুই মোবাইল নিয়ে কথা বলছেন। তার সরকার ফেসবুকে ‘কটূক্তি’ করার জন্য তরুণদের ছয় থেকে আট বছর পর্যন্ত জেল দিচ্ছে, আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটিও নেই। তাহলে ওই অভিযোগ কি নিতান্তই লোক দেখানো ছিল?
২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ যেকোনো কৌশলে ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। এ নির্বাচন ছিল অর্থহীন, অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিল। ১৫৪টি আসনে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এমনকি শেখ হাসিনার দীর্ঘকালের সঙ্গী জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে তাকে জোর করে সিএমএইচে বন্দী রাখা হয়। জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বাধিক সমালোচিত নির্বাচন কমিশন সেই চিঠি গ্রহণ করেনি।
ওই নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। ৪৯টিরও বেশি কেন্দ্রে একজন লোকও ভোট দেয়নি। অথচ নির্বাচনকেন্দ্র আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এজেন্ট, পোলিং এজেন্টসহ তাদের প্রচারবিদেরা উপস্থিত ছিলেন। তারা উপস্থিত থেকেও ভোট দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। নির্বাচনটি ছিল এমনই বিস্ময়কর। অথচ সেই নির্বাচন নিয়ে এখন সরকারের গর্বের সীমা নেই। সরকারের নির্বাচন কমিশন চার দিন পর ঘোষণা দেয়, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু সে হিসাবের গরমিল নিয়েও সংবাদপত্রে রিপোর্ট চোখে পড়েছে। চার দিকে কেবলই অসত্য আর বানোয়াট কথা। এ থেকে বাদ নেই কেউÑ সরকার, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন।
কথিত ওই ইলেকশনের নামে সিলেকশনের বর্ষপূর্তি ছিল গত ৫ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে ঢাকায় দু’টি সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, বর্তমানে যারা সরকারে আছেন। কিন্তু ২০ দলীয় জোটকে ওই জনসভা করতে দিতে রাজি ছিল না সরকার। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো মূল্যে ওই জনসভা ভণ্ডুল করতেই হবে। তাই তারা নাক কেটে যাত্রাভঙ্গ করলেন। ৩ জানুয়ারি থেকে ঢাকামুখী সব যান চলাচল সরকার বন্ধ করে দেয়, যেন ২০ দলীয় জোটের জনসভায় কেউ হাজির হতে না পারেন। ১৪ দলীয় জোট যে জনসভা ডেকেছিল, তা যে নিতান্তই প্রহসন, সেটিও আর ঢাকা থাকেনি। কারণ, ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ হলে তাদের লোকজনও তো ঢাকায় আসতে পারবে না। বিষয়টা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কেননা তার আগে তারা যত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, সবই ছিল ফপ। অতএব, ‘রোখো ২০ দল তথা বিএনপি।’ কারণ, এর আগে তাদের অন্তত ১১টি জনসভায় লাখ লাখ লোক যোগ দিয়েছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী শীর্ষ নেতানেত্রীদের জনসভায় লোকসংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
গত ৩ জানুয়ারি সরকার পুলিশ দিয়ে ঘোষণা করিয়ে দিলো, সারা দেশে ওই মুহূর্ত থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, আর ১৪ দল বলল, আমরা আইন মান্যকারী। অতএব আমরা জনসভা করছি না। এর মধ্য দিয়ে যে কথা বলা হয়ে গেল, সেটা ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভা ভণ্ডুল করার মধ্য দিয়ে জানান দেয়া হয়েছিলÑ “আমাদের জনসভা করার ‘মুরোদ’ নেই। অতএব, আমরা পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবহার করলাম। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে তো আর জনসভা করতে দেয়া যায় না।” বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ৪০-৪১তম দিন চলছে। এর মধ্যে সরকার নাটকের পর নাটক করেছে। অবরোধে অচল হয়ে গেছে গোটা দেশ। বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকে আগুন দেয়ার সময় বলা হতো, ‘ভাই, বাস থেকে নামেন। আমরা আগুন দেবো।’ যাত্রী সব নেমে যেত। বাসে আগুন দিলে বড় ক্ষতি। তবে আন্দোলন-সংগ্রামে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দিনই ঘটছে। এ অবস্থা যখন চলতে থাকে তখন এসে হাজির হলো পেট্রলবোমা কালচার। এতে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল মানবিক বিপর্যয়। আর জনমনে এ বিশ্বাসই প্রবল হতে থাকে, এই পেট্রলবোমার সাথে সরকারি দলের লোকজন জড়িত। অথচ এর জন্য এ পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকার। সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তাতে কী? ‘হুকুমের আসামি’ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে। বেগম জিয়াও বহু স্থানে হুকুমের আসামি। তাই যদি হয় তাহলে ক্রসফায়ারে ইতোমধ্যে যে প্রায় ১০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে, এর হুকুমের আসামি কে? তারও কি একদিন বিচার হবে না?
৩ জানুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ। সরকার তার কার্যালয়ের টিঅ্যান্ডটি, ডিশ, ইন্টারনেট লাইন কেটে দিয়ে তাকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তার কার্যালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি। কার্যালয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য দলের তরফ থেকে যে খাবার পাঠানো হয়, তা সরকার ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানকারী বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। তারা মুড়ি-চিঁড়া-গুড়-বিস্কুট খেয়ে কোনোমতে দিনানিপাত করছেন।
আমরা এক দারুণ দৃশ্য দেখলাম ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নির্ধারিত ক্যাটারার খাবার নিয়ে এলেন। পুলিশ থামিয়ে দিলো। খাবার নিয়ে আসা ভ্যানগাড়িওয়ালার সাথে কী যেন হম্বিতম্বি করল। তারপর খাবারসহ ওই ভ্যানগাড়িতেই উঠে বসলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই খাবার নিয়ে তারা ঢুকল গুলশান থানার ভেতরে। মনে হলো, সরকার পুলিশকে যথাযথ খাবারও দিচ্ছে না। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসের খাবার লুট করে তাদের খেতে হচ্ছে। এটি বিপজ্জনক। সাংবাদিকেরা যাকেই প্রশ্ন করেন, উত্তর একটাই- ওপরের নির্দেশে। আর ওপরওয়ালা বলেন, আমি তো কিছু জানি না।
কিন্তু খালেদা জিয়া ও তার কার্যালয়ের প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভাত বন্ধ করে সরকার এক ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করল। যেন কোথাও সমতা নেই, সততা নেই; মনে হয়, জন্মান্ধ সরকার জন্মান্ধই রয়ে গেছে।
২০০৮ সালে সাজানো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসীন হয়। এর আগে ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার লালসায় ঘটিয়েছিল নজিরবিহীন পৈশাচিক তাণ্ডব। সে সময় সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় গঠিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল দলটি। এমনকি সংবিধানে দেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো অপশনই তারা মেনে নিতে অস্বীকার করে। শেষ অপশন ছিল রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ওই সরকার গঠিত হওয়ার বিষয়কে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আবদুল জলিল মেনে নিয়েছিলেন। আর শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেখা যাক, উনি কতটা নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু সে সময় ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্র ছিল ভিন্ন উদ্দেশ্যে। তারা চাইছিলেন, একটি অরাজনৈতিক সামরিক সরকার। এর অংশীদার ছিল আওয়ামী লীগও। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে তাদের কথায় উঠবস করানোর জন্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠাধারীরা রাজধানীর পল্টন এলাকায় নরহত্যাযজ্ঞের আয়োজন করে। সেখানে নিরস্ত্র নিরীহ প্রতিপক্ষকে পিটিয়ে যে বর্বরতা ও পৈশাচিকতার নজির তারা স্থাপন করেছে, তা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। টিভির পর্দায় সেই শত শত লোকের সামনে হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য লাইভ প্রচারিত হয়েছিল। পরে ওই হত্যাযজ্ঞকে আওয়ামী লীগ যৌক্তিক বলে প্রচারণা চালাতে থাকলেও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে গুলিও চালাচ্ছে। সেটা ছিল ইয়াজউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ বার্তা পৌঁছে দেয়া যে, তাদের কথামতো কাজ না করলে তারা দেশব্যাপী এমন সহিংসতা চালানোর সামর্থ্য রাখে। শুধু এটা নয়, বর্তমান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন, তাদের কথামতো না চললে বঙ্গভবনের খাদ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ, এমনকি অক্সিজেন পর্যন্ত তারা বন্ধ করে দেবেন।
সে সময় সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির লেজুড় হিসেবে দাঁড়িয়েছিল কথিত একটি সুশীলসমাজ। তারা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য রাজনীতিবিদদের বাদ দিয়ে দেশব্যাপী ‘সৎ’ প্রার্থী অনুসন্ধানে নেমেছিলেন। তদুপরি, এমন একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করছিলেন যে, রাজনীতিক মাত্রই অসৎ ও দুর্নীতিবাজ। অতএব, প্রার্থী হবেন রাজনৈতিক দল করেন না, এমন ব্যক্তিরা। অবশ্য বহু জায়গায় তাড়া খেয়ে এসব সুশীলকে দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল। তাদের ছিল দু’টি প্রভাবশালী পত্রিকাÑ একটি বাংলা। অপরটি ইংরেজি। এই মিডিয়া সদ্যবিদায়ী বিএনপির মন্ত্রী, এমপি, নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে অসঙ্গত ও অসংলগ্ন প্রচার চালায়। তাদের লোক নাকি কোনো কোনো এলাকায় মুদি, তরিতরকারির দোকানে গিয়েছিল, দোকানিরা তাদের নাকি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তারা বঙ্গভবনের জন্য কোনো পণ্য বিক্রি করবেন না। এসব হাস্যকর গল্প। এভাবে তারাও দেশকে রাজনীতিশূন্য করার ষড়যন্ত্রের শরিক হলেন।
আওয়ামী লীগও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কোনো ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বিরোধী দলে থেকেও যে গণবিরোধী তৎপরতায় তারা লিপ্ত ছিল, তাতে নিরপেক্ষ ভোট হলে সে নির্বাচনে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। এ দিকে তাদের দাবির তালিকাও বাড়তে থাকেÑ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানি না। অমুক উপদেষ্টা মানি না। নির্বাচন কমিশন মানি না। জনপ্রশাসনের পরিবর্তন মানি না।’ ফলে এমন এক অচল অবস্থা সৃষ্টি হলো যে, সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক উপায়ে মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদকে সামনে রেখে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উদ্দিন কৌশলে ক্ষমতা দখল করলেন।
এরপরই তারা সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান একে একে অকার্যকর করে দিতে শুরু করেন। হস্তক্ষেপ করতে থাকেন বিচার বিভাগের ওপরও। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা শুরু হলো; আওয়ামী লীগের ডজন ডজন। একপর্যায়ে তারা বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান, তার মন্ত্রীবর্গ এবং শেখ হাসিনা ও তার কিছু মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেন। তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যখন ঘোষণা দেন, ওই সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল, তখন আর বুঝতে বাকি থাকেনি যে, এমন একটি অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় নিয়ে আসার পেছনে কাদের মদদ কতটা প্রবল ছিল।
এরপর শেখ হাসিনা নানা অজুহাতে কারামুক্তি লাভ করেন এবং কয়েকটি দেশে সফর করে বেড়াতে থাকেন। অপর দিকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত যে ছদ্মবেশী সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল, তারা ক্রমান্বয়ে সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিয়েছিল। শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি তাদের দায়মুক্তি দেবেন। তিনি সে কথা রেখেছেন। ওই অসাংবিধানিক শাসনের হোতা মইন-ফখর ও অন্যদেরকে নিরাপদে বিদেশে চলে যেতে দিয়েছেন। অনেককে নিরাপদেই রেখেছেন। আর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন ছয় বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত থেকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে নির্বিঘœ জীবন যাপন করছেন।
যদিও শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যেই অভিযোগ করেছেন যে, ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে হত্যার জন্য আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করেছিল, তার কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু একই সাথে দেখা গেছে, তিনি দুই কানে দুই মোবাইল নিয়ে কথা বলছেন। তার সরকার ফেসবুকে ‘কটূক্তি’ করার জন্য তরুণদের ছয় থেকে আট বছর পর্যন্ত জেল দিচ্ছে, আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করে তাকে হত্যার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটিও নেই। তাহলে ওই অভিযোগ কি নিতান্তই লোক দেখানো ছিল?
২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ যেকোনো কৌশলে ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। এ নির্বাচন ছিল অর্থহীন, অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিল। ১৫৪টি আসনে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এমনকি শেখ হাসিনার দীর্ঘকালের সঙ্গী জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে তাকে জোর করে সিএমএইচে বন্দী রাখা হয়। জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বাধিক সমালোচিত নির্বাচন কমিশন সেই চিঠি গ্রহণ করেনি।
ওই নির্বাচনে ৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। ৪৯টিরও বেশি কেন্দ্রে একজন লোকও ভোট দেয়নি। অথচ নির্বাচনকেন্দ্র আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এজেন্ট, পোলিং এজেন্টসহ তাদের প্রচারবিদেরা উপস্থিত ছিলেন। তারা উপস্থিত থেকেও ভোট দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। নির্বাচনটি ছিল এমনই বিস্ময়কর। অথচ সেই নির্বাচন নিয়ে এখন সরকারের গর্বের সীমা নেই। সরকারের নির্বাচন কমিশন চার দিন পর ঘোষণা দেয়, প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু সে হিসাবের গরমিল নিয়েও সংবাদপত্রে রিপোর্ট চোখে পড়েছে। চার দিকে কেবলই অসত্য আর বানোয়াট কথা। এ থেকে বাদ নেই কেউÑ সরকার, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন।
কথিত ওই ইলেকশনের নামে সিলেকশনের বর্ষপূর্তি ছিল গত ৫ জানুয়ারি। এ উপলক্ষে ঢাকায় দু’টি সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট, বর্তমানে যারা সরকারে আছেন। কিন্তু ২০ দলীয় জোটকে ওই জনসভা করতে দিতে রাজি ছিল না সরকার। তাদের উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো মূল্যে ওই জনসভা ভণ্ডুল করতেই হবে। তাই তারা নাক কেটে যাত্রাভঙ্গ করলেন। ৩ জানুয়ারি থেকে ঢাকামুখী সব যান চলাচল সরকার বন্ধ করে দেয়, যেন ২০ দলীয় জোটের জনসভায় কেউ হাজির হতে না পারেন। ১৪ দলীয় জোট যে জনসভা ডেকেছিল, তা যে নিতান্তই প্রহসন, সেটিও আর ঢাকা থাকেনি। কারণ, ঢাকামুখী যান চলাচল বন্ধ হলে তাদের লোকজনও তো ঢাকায় আসতে পারবে না। বিষয়টা সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কেননা তার আগে তারা যত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন, সবই ছিল ফপ। অতএব, ‘রোখো ২০ দল তথা বিএনপি।’ কারণ, এর আগে তাদের অন্তত ১১টি জনসভায় লাখ লাখ লোক যোগ দিয়েছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী শীর্ষ নেতানেত্রীদের জনসভায় লোকসংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
গত ৩ জানুয়ারি সরকার পুলিশ দিয়ে ঘোষণা করিয়ে দিলো, সারা দেশে ওই মুহূর্ত থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ, আর ১৪ দল বলল, আমরা আইন মান্যকারী। অতএব আমরা জনসভা করছি না। এর মধ্য দিয়ে যে কথা বলা হয়ে গেল, সেটা ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভা ভণ্ডুল করার মধ্য দিয়ে জানান দেয়া হয়েছিলÑ “আমাদের জনসভা করার ‘মুরোদ’ নেই। অতএব, আমরা পুলিশ ও প্রশাসন ব্যবহার করলাম। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে তো আর জনসভা করতে দেয়া যায় না।” বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ৪০-৪১তম দিন চলছে। এর মধ্যে সরকার নাটকের পর নাটক করেছে। অবরোধে অচল হয়ে গেছে গোটা দেশ। বাসে আগুন দেয়া হয়েছে। প্রথম দিকে আগুন দেয়ার সময় বলা হতো, ‘ভাই, বাস থেকে নামেন। আমরা আগুন দেবো।’ যাত্রী সব নেমে যেত। বাসে আগুন দিলে বড় ক্ষতি। তবে আন্দোলন-সংগ্রামে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু দিনই ঘটছে। এ অবস্থা যখন চলতে থাকে তখন এসে হাজির হলো পেট্রলবোমা কালচার। এতে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল মানবিক বিপর্যয়। আর জনমনে এ বিশ্বাসই প্রবল হতে থাকে, এই পেট্রলবোমার সাথে সরকারি দলের লোকজন জড়িত। অথচ এর জন্য এ পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে সরকার। সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তাতে কী? ‘হুকুমের আসামি’ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতাকে। বেগম জিয়াও বহু স্থানে হুকুমের আসামি। তাই যদি হয় তাহলে ক্রসফায়ারে ইতোমধ্যে যে প্রায় ১০০ লোকের মৃত্যু হয়েছে, এর হুকুমের আসামি কে? তারও কি একদিন বিচার হবে না?
৩ জানুয়ারি থেকে বেগম খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ। সরকার তার কার্যালয়ের টিঅ্যান্ডটি, ডিশ, ইন্টারনেট লাইন কেটে দিয়ে তাকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তার কার্যালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি। কার্যালয়ে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য দলের তরফ থেকে যে খাবার পাঠানো হয়, তা সরকার ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। ফলে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থানকারী বেগম খালেদা জিয়াসহ প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় অভুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। তারা মুড়ি-চিঁড়া-গুড়-বিস্কুট খেয়ে কোনোমতে দিনানিপাত করছেন।
আমরা এক দারুণ দৃশ্য দেখলাম ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে। বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের নির্ধারিত ক্যাটারার খাবার নিয়ে এলেন। পুলিশ থামিয়ে দিলো। খাবার নিয়ে আসা ভ্যানগাড়িওয়ালার সাথে কী যেন হম্বিতম্বি করল। তারপর খাবারসহ ওই ভ্যানগাড়িতেই উঠে বসলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। সেই খাবার নিয়ে তারা ঢুকল গুলশান থানার ভেতরে। মনে হলো, সরকার পুলিশকে যথাযথ খাবারও দিচ্ছে না। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসের খাবার লুট করে তাদের খেতে হচ্ছে। এটি বিপজ্জনক। সাংবাদিকেরা যাকেই প্রশ্ন করেন, উত্তর একটাই- ওপরের নির্দেশে। আর ওপরওয়ালা বলেন, আমি তো কিছু জানি না।
কিন্তু খালেদা জিয়া ও তার কার্যালয়ের প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভাত বন্ধ করে সরকার এক ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করল। যেন কোথাও সমতা নেই, সততা নেই; মনে হয়, জন্মান্ধ সরকার জন্মান্ধই রয়ে গেছে।
No comments