নিঃস্বার্থ ভালোবাসাই সঙ্কট উত্তরণের পথ by মোদাস্সের হোসেন খান
‘ভালোবাসা’
স্থান, কাল ও পাত্রভেদে শব্দটি উচ্চারণ ও প্রকাশভঙ্গি অনেক ঘটনা সৃষ্টির
কারণ হতে পারে। বয়ে আনতে পারে একাধারে পরম আনন্দ, সুখ ও বেদনাও বটে।
ভালোবাসার রয়েছে অনেক রূপ। মা বাবা তাদের সন্তানদের ভালোবাসে। সন্তান তার
বাবা-মাকে ভালোবাসে, বন্ধু তার প্রিয় বন্ধুকে ভালোবাসে। আবার প্রেমিক ও
প্রেমিকার মধ্যে রয়েছে ভালোবাসা। রয়েছে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা।
মানুষের প্রতি ও সব প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা তবে সবার ওপরে রয়েছে
সৃষ্টিকর্তার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ও বিশুদ্ধ ভালোবাসা। সন্তানের প্রতি
বাবা-মায়ের ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব স্বর্গীয় সৃষ্টি। এ ভালোবাসা,
বিশেষ করে মায়ের ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই। এ ভালোবাসা চিরন্তন ও শাশ্বত।
এই সম্পর্কের বাইরে আবার দু’টি পুরুষ ও নারীর মধ্যে গড়ে ওঠা ভালোবাসা
অনেকখানিই জটিল, বৈচিত্র্যময় ও দুর্বোধ্যও বটে। ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি
করা খুব সহজ নয়। কেননা এর তলদেশে কখনো সন্তরণ করে বা ডুব দেয়ার সুযোগ না
হলে এর ব্যাপকতা বোঝা কষ্টকর।
গল্প, উপন্যাসে আমরা ভালোবাসার কাহিনী পড়ি। নাটকে, সিনেমায় ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীদের পাগলামো করতে দেখি। একজন প্রাণ দিয়ে অন্যজনের প্রাণ বাঁচাতে দেখি। আবার দু’জনকেই একত্রে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার দৃশ্যও দেখেছি ও কাহিনী পড়েছি। বাস্তবজীবনে তার প্রতিফলন বেশি দেখতে পাইনি। তবে বুঝি ও বিশ্বাস করি, সত্যিকারের ভালোবাসা মানুষকে শিহরিত করে। ভালোবাসার মানুষটি চোখের আড়াল হলে আত্মা হয়ে ওঠে বিচলিত। মন আবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে তাকে একনজর দেখার জন্য, কাছে পাওয়ার জন্য হৃদয় হয়ে ওঠে ব্যাকুল। তাকে না পাওয়ার ব্যথা হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করে। তাকে হারানোর বেদনা হৃৎপিণ্ডে রক্তক্ষরণের সূচনা করে। তাই এই প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষটি যখন তাকে অবহেলা করে কাছে থেকে দূরে সরে যায়, তখন তার সব আশা, আকাক্সা হয়ে যায় চূর্ণবিচূর্ণ। জীবন হয়ে ওঠে অর্থহীন। আর প্রাণের চেয়ে প্রিয় সেই মানুষটি যদি অন্য কারো প্রতি আকর্ষিত হয়, তখন সে হয়ে ওঠে হিংস্র ও অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিশোধপরায়ণ। পৃথিবীর সব মানুষ তার কাছে হয়ে যায় তখন ঘৃণার পাত্র।
গভীর ভালোবাসা তাই মানুষকে এক দিকে এনে দেয় অনাবিল শান্তি সীমাহীন আনন্দ ও স্বর্গীয় সুখ। আর এই ভালোবাসার অপূর্ণতা, প্রত্যাখ্যান ও বিশ্বাসঘাতকতা মানুষকে নিক্ষেপ করে বেদনা, যাতনা, অশান্তি ও প্রতিহিংসার আগুনে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবাহপূর্ব ভালোবাসা সৃষ্টি হয় মোহতে পড়ে। পৃথিবী তখন থাকে গদ্যময়, ভালোবাসার গভীরতার আবর্তে পড়ার সুযোগ থাকে সীমিত। জীবনের চলার পথে ঘাত-প্রতিঘাত তখন থাকে অনুপস্থিত। তাই প্রাপ্তির প্রত্যাশাই থাকে তখন সবটুকু মনজুড়ে। জীবনযুদ্ধের প্রতিকূল পরিবেশ ভালোবাসাকে তখন কোনো পরীক্ষার সম্মুখে দাঁড় করায়নি। ভালোবাসার গভীরতা থেকে যায় অপরীক্ষিত। তাই এই ক্ষণিকের ভালোবাসার মানুষটি দূরে চলে গেলেও অন্য কাউকে জীবনসাথী হিসেবে মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় না।
অন্য দিকে বিবাহোত্তর ভালোবাসাই পেয়ে থাকে স্থায়িত্ব। কেননা সংসার জীবনের বাস্তবতা, ঝগড়া, মনমালিন্যতা, ক্ষোভ, ক্ষণিকের সন্দেহ, আর এসবের মধ্য থেকে সৃষ্ট দুঃখ ও কষ্টের তরী পার হয়ে টিকে থাকাই ভালোবাসার গভীরতার পরিচয়। এই ভালোবাসা কষ্টি পাথরে যাচাই করা প্রাণের টানে সৃষ্ট ভালোবাসা। এ ভালোবাসা ছুটে যাওয়ার ভালোবাসা নয়। এ ভালোবাসা চিরন্তন, শাশ্বত ও মৃত্যুঞ্জয়ী। তাই ভালোবাসার স্বামী বা স্ত্রীর বিপদ এলে, তারা কেউ অসুস্থ হলে, দুঃখ ও কষ্ট পেলে, শত ঝগড়া ও মান অভিমানের পরেও একে অন্যের দিকে পাগলের মতো ছুটে যায়, অকাতরে সেবা করে যায়। একে অন্যের হৃদয়ের সবটুকু নিংড়িয়ে উজাড় করে দেয় তার ভালোবাসা। এ অনুভূতি, প্রাণের এই আকুতি ও ব্যাকুলতা বিয়ের আগে কখনো সৃষ্টি হতে পারে না। কেননা সেই সুযোগ ও পরিস্থিতি তখন থাকে অবর্তমান।
তাই বিয়ের পরই খাঁটি ভালোবাসা আমরা সবাই খুঁজে পাই। এ আমাদের সৃষ্টি নয়। এ আমাদের হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা ঘুমন্ত ভালোবাসাকে আবিষ্কার করা। এই অমৃত স্বাদ ও স্বর্গীয় অনুভূতি স্ফুলিঙ্গ হয়ে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমরা তখন হই তৃপ্ত। এ কথা সত্যি যে অফুরন্ত আনন্দ সুখ ও তৃপ্তির মধ্যে ডুবে থেকেও আমাদের হতে হয় অনুতপ্ত। আমরা অনুতপ্ত হই কেননা আমাদের ভালোবাসার অমূল্য রতœটির প্রতি আমরা যথাযথ মনোযোগ দেই না। আমাদের আচার, আচরণ ও ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে ত্রুটিপূর্ণ। আমরা অনেক সময় হয়ে থাকি অযৌক্তিকভাবে রূঢ়। একে অন্যের অনেক আদেশ, নির্দেশ ও চাপ চোখ ও মুখ বুজে সহ্য করি। তবে এ কথা সত্যি যে এসব অন্যায় আচরণ কখনো পরিকল্পিত থাকে না। তবে কোনো কারণ দর্শানো বা অজুহাতই এ আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের অমূল্য সম্পদকে কষ্ট দিয়ে নিজের অজান্তে নিজেকেই কষ্ট দিয়ে থাকি। এ অনুভূতি আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ আমাদের জীবনসাথীকে সৃষ্টি করে আমাদের একে অন্যের কাছে দান করেন এক অমূল্য নিয়ামত। আল্লাহর এই দানের জন্য তার কাছে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমাদের মাথা নত হয়ে আসা উচিত- আল্লাহ তুমি সত্যিই সর্বমহান ও সর্বমহৎ।
বর্তমান আধুনিক শিক্ষিতসমাজে বিবাহিত নর-নারী বিশেষ করে সদ্যবিবাহিত ছেলেমেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদ প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। আল্লাহভীরু সব মানুষের কাছে এটি পীড়াদায়ক।
বিশেষ করে নারীদের কোমল হৃদয়ের ব্যথা ও যন্ত্রণার অনেক সুযোগ-সন্ধানী পুরুষই নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের দেখানো হয় অনেক প্রলোভন। কিন্তু আল্লাহ তো খাঁটি ভালোবাসার যুগলদের সৃষ্টি করছেন একমাত্র একে অপরের জন্য। তাদের ভালোবাসা সত্য, নিখুঁত, নির্ভেজাল ও চিরন্তন। তাই আমাদের অনিচ্ছাকৃত অবহেলা ও অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার পরও আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত থেকে আমরা বঞ্চিত হই না। কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন মানুষ শত সহস্র পাপ ও ভুল করার পরেও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে ও তওবা করলে তিনি তার সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। এ অবস্থায় দু’জনকেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়।
আবার শুরুর দিকের কথায় চলে যাই। বলেছিলাম বিবাহ-পূর্ব ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ক্ষণিকের মোহে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর স্থায়িত্ব হয়ে থাকে স্বল্পকালীন। কেননা এ ভালোবাসা জীবনের রূঢ় বাস্তবতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নয়। সংসার জীবনের ঘাত, প্রতিঘাত, দুঃখ, কষ্ট, দ্বন্দ্ব, কলহ, মান-অভিমান, টানাপড়েন ও নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতির ঘুরপাকে নিজেদের ভালোবাসা প্রমাণ হয়। স্বামী ও স্ত্রীর প্রেম ও ভালোবাসা তাই কৌতুক ও হাসি ঠাট্টায় ভালোবাসা নয়। এ ভালোবাসা স্বর্গীয় ও আল্লাহ প্রেরিত। তাই এটি নির্ভেজাল, কষ্টিপাথরে যাচাই করা খাঁটি ও নিখুঁত ভালোবাসা। আল্লাহর দেয়া এ নেয়ামত পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষেই ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে ‘মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা’, বলতে হয় প্রায় দুর্লভ হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা, লোভ আর প্রতিহিংসার আগুনে যেন চতুর্দিক জ্বলছে, এ এক অকল্পণীয় দৃশ্য। আশঙ্কা হয়, সমগ্রজাতি আল্লাহ থেকে প্রেরিত এক ভয়ঙ্কর অভিশাপকে আলিঙ্গন করতে উন্মাদের মতো ছুটে যাচ্ছেন। এই অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে আমাদের সব মানুষের বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় সব ব্যক্তিকে মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসার অনুভূতি ফিরে আনা এখন অপরিহার্য। দেশকে ভালোবেসে আর মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসলেই কেবল তারা বর্তমান সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে পারেন।
লেখক : বীর প্রতীক
mudassir51.k@gmail.com
গল্প, উপন্যাসে আমরা ভালোবাসার কাহিনী পড়ি। নাটকে, সিনেমায় ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীদের পাগলামো করতে দেখি। একজন প্রাণ দিয়ে অন্যজনের প্রাণ বাঁচাতে দেখি। আবার দু’জনকেই একত্রে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার দৃশ্যও দেখেছি ও কাহিনী পড়েছি। বাস্তবজীবনে তার প্রতিফলন বেশি দেখতে পাইনি। তবে বুঝি ও বিশ্বাস করি, সত্যিকারের ভালোবাসা মানুষকে শিহরিত করে। ভালোবাসার মানুষটি চোখের আড়াল হলে আত্মা হয়ে ওঠে বিচলিত। মন আবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে তাকে একনজর দেখার জন্য, কাছে পাওয়ার জন্য হৃদয় হয়ে ওঠে ব্যাকুল। তাকে না পাওয়ার ব্যথা হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করে। তাকে হারানোর বেদনা হৃৎপিণ্ডে রক্তক্ষরণের সূচনা করে। তাই এই প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষটি যখন তাকে অবহেলা করে কাছে থেকে দূরে সরে যায়, তখন তার সব আশা, আকাক্সা হয়ে যায় চূর্ণবিচূর্ণ। জীবন হয়ে ওঠে অর্থহীন। আর প্রাণের চেয়ে প্রিয় সেই মানুষটি যদি অন্য কারো প্রতি আকর্ষিত হয়, তখন সে হয়ে ওঠে হিংস্র ও অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিশোধপরায়ণ। পৃথিবীর সব মানুষ তার কাছে হয়ে যায় তখন ঘৃণার পাত্র।
গভীর ভালোবাসা তাই মানুষকে এক দিকে এনে দেয় অনাবিল শান্তি সীমাহীন আনন্দ ও স্বর্গীয় সুখ। আর এই ভালোবাসার অপূর্ণতা, প্রত্যাখ্যান ও বিশ্বাসঘাতকতা মানুষকে নিক্ষেপ করে বেদনা, যাতনা, অশান্তি ও প্রতিহিংসার আগুনে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবাহপূর্ব ভালোবাসা সৃষ্টি হয় মোহতে পড়ে। পৃথিবী তখন থাকে গদ্যময়, ভালোবাসার গভীরতার আবর্তে পড়ার সুযোগ থাকে সীমিত। জীবনের চলার পথে ঘাত-প্রতিঘাত তখন থাকে অনুপস্থিত। তাই প্রাপ্তির প্রত্যাশাই থাকে তখন সবটুকু মনজুড়ে। জীবনযুদ্ধের প্রতিকূল পরিবেশ ভালোবাসাকে তখন কোনো পরীক্ষার সম্মুখে দাঁড় করায়নি। ভালোবাসার গভীরতা থেকে যায় অপরীক্ষিত। তাই এই ক্ষণিকের ভালোবাসার মানুষটি দূরে চলে গেলেও অন্য কাউকে জীবনসাথী হিসেবে মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় না।
অন্য দিকে বিবাহোত্তর ভালোবাসাই পেয়ে থাকে স্থায়িত্ব। কেননা সংসার জীবনের বাস্তবতা, ঝগড়া, মনমালিন্যতা, ক্ষোভ, ক্ষণিকের সন্দেহ, আর এসবের মধ্য থেকে সৃষ্ট দুঃখ ও কষ্টের তরী পার হয়ে টিকে থাকাই ভালোবাসার গভীরতার পরিচয়। এই ভালোবাসা কষ্টি পাথরে যাচাই করা প্রাণের টানে সৃষ্ট ভালোবাসা। এ ভালোবাসা ছুটে যাওয়ার ভালোবাসা নয়। এ ভালোবাসা চিরন্তন, শাশ্বত ও মৃত্যুঞ্জয়ী। তাই ভালোবাসার স্বামী বা স্ত্রীর বিপদ এলে, তারা কেউ অসুস্থ হলে, দুঃখ ও কষ্ট পেলে, শত ঝগড়া ও মান অভিমানের পরেও একে অন্যের দিকে পাগলের মতো ছুটে যায়, অকাতরে সেবা করে যায়। একে অন্যের হৃদয়ের সবটুকু নিংড়িয়ে উজাড় করে দেয় তার ভালোবাসা। এ অনুভূতি, প্রাণের এই আকুতি ও ব্যাকুলতা বিয়ের আগে কখনো সৃষ্টি হতে পারে না। কেননা সেই সুযোগ ও পরিস্থিতি তখন থাকে অবর্তমান।
তাই বিয়ের পরই খাঁটি ভালোবাসা আমরা সবাই খুঁজে পাই। এ আমাদের সৃষ্টি নয়। এ আমাদের হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা ঘুমন্ত ভালোবাসাকে আবিষ্কার করা। এই অমৃত স্বাদ ও স্বর্গীয় অনুভূতি স্ফুলিঙ্গ হয়ে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমরা তখন হই তৃপ্ত। এ কথা সত্যি যে অফুরন্ত আনন্দ সুখ ও তৃপ্তির মধ্যে ডুবে থেকেও আমাদের হতে হয় অনুতপ্ত। আমরা অনুতপ্ত হই কেননা আমাদের ভালোবাসার অমূল্য রতœটির প্রতি আমরা যথাযথ মনোযোগ দেই না। আমাদের আচার, আচরণ ও ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে ত্রুটিপূর্ণ। আমরা অনেক সময় হয়ে থাকি অযৌক্তিকভাবে রূঢ়। একে অন্যের অনেক আদেশ, নির্দেশ ও চাপ চোখ ও মুখ বুজে সহ্য করি। তবে এ কথা সত্যি যে এসব অন্যায় আচরণ কখনো পরিকল্পিত থাকে না। তবে কোনো কারণ দর্শানো বা অজুহাতই এ আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের অমূল্য সম্পদকে কষ্ট দিয়ে নিজের অজান্তে নিজেকেই কষ্ট দিয়ে থাকি। এ অনুভূতি আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহ আমাদের জীবনসাথীকে সৃষ্টি করে আমাদের একে অন্যের কাছে দান করেন এক অমূল্য নিয়ামত। আল্লাহর এই দানের জন্য তার কাছে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আমাদের মাথা নত হয়ে আসা উচিত- আল্লাহ তুমি সত্যিই সর্বমহান ও সর্বমহৎ।
বর্তমান আধুনিক শিক্ষিতসমাজে বিবাহিত নর-নারী বিশেষ করে সদ্যবিবাহিত ছেলেমেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদ প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। আল্লাহভীরু সব মানুষের কাছে এটি পীড়াদায়ক।
বিশেষ করে নারীদের কোমল হৃদয়ের ব্যথা ও যন্ত্রণার অনেক সুযোগ-সন্ধানী পুরুষই নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের দেখানো হয় অনেক প্রলোভন। কিন্তু আল্লাহ তো খাঁটি ভালোবাসার যুগলদের সৃষ্টি করছেন একমাত্র একে অপরের জন্য। তাদের ভালোবাসা সত্য, নিখুঁত, নির্ভেজাল ও চিরন্তন। তাই আমাদের অনিচ্ছাকৃত অবহেলা ও অসাবধানতাবশত দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার পরও আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত থেকে আমরা বঞ্চিত হই না। কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন মানুষ শত সহস্র পাপ ও ভুল করার পরেও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে ও তওবা করলে তিনি তার সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। এ অবস্থায় দু’জনকেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়।
আবার শুরুর দিকের কথায় চলে যাই। বলেছিলাম বিবাহ-পূর্ব ভালোবাসা সৃষ্টি হয় ক্ষণিকের মোহে। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর স্থায়িত্ব হয়ে থাকে স্বল্পকালীন। কেননা এ ভালোবাসা জীবনের রূঢ় বাস্তবতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নয়। সংসার জীবনের ঘাত, প্রতিঘাত, দুঃখ, কষ্ট, দ্বন্দ্ব, কলহ, মান-অভিমান, টানাপড়েন ও নানাবিধ প্রতিকূল পরিস্থিতির ঘুরপাকে নিজেদের ভালোবাসা প্রমাণ হয়। স্বামী ও স্ত্রীর প্রেম ও ভালোবাসা তাই কৌতুক ও হাসি ঠাট্টায় ভালোবাসা নয়। এ ভালোবাসা স্বর্গীয় ও আল্লাহ প্রেরিত। তাই এটি নির্ভেজাল, কষ্টিপাথরে যাচাই করা খাঁটি ও নিখুঁত ভালোবাসা। আল্লাহর দেয়া এ নেয়ামত পৃথিবীর কোনো শক্তির পক্ষেই ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে ‘মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা’, বলতে হয় প্রায় দুর্লভ হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা, লোভ আর প্রতিহিংসার আগুনে যেন চতুর্দিক জ্বলছে, এ এক অকল্পণীয় দৃশ্য। আশঙ্কা হয়, সমগ্রজাতি আল্লাহ থেকে প্রেরিত এক ভয়ঙ্কর অভিশাপকে আলিঙ্গন করতে উন্মাদের মতো ছুটে যাচ্ছেন। এই অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে আমাদের সব মানুষের বিশেষ করে নেতৃস্থানীয় সব ব্যক্তিকে মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসার অনুভূতি ফিরে আনা এখন অপরিহার্য। দেশকে ভালোবেসে আর মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসলেই কেবল তারা বর্তমান সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে পারেন।
লেখক : বীর প্রতীক
mudassir51.k@gmail.com
No comments