অষ্টাদশ বর্ষে মানবজমিন by ড. মাহফুজ পারভেজ
দীপ্ত-যৌবনের তুঙ্গ-তরঙ্গে আজ দৈনিক মানবজমিন পদার্পণ করলো অষ্টাদশ বর্ষে। পেশাগত বিশুদ্ধতা, নৈর্ব্যক্তিক দায়িত্বশীলতা
এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদপ্রবাহের প্রতি সত্যনিষ্ঠায় নিবেদিত বাংলাদেশের প্রথম
ও একমাত্র ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন গৌরবময় সতেরটি বছর অতিক্রম করে আঠারো
বছরে পদার্পণের এই শুভদিনে বিশ্বব্যাপী অগণিত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, স্বজনদের
প্রতি জানাচ্ছে বিনম্র অভিবাদন। তারুণ্য-যৌবনের লেলিহান অষ্টাদশ বছরের
শুরুতে মানবজমিন পুনরুচ্চারণ করছে ‘কারও তাঁবেদারি না করার’ শাশ্বত শপথ।
পাঠক মাত্রই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের চলমান সঙ্কুল আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় ভরা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে সত্যান্বেষণের নিত্য লড়াইরত মানবজমিন জাতীয় স্বার্থ আর গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিল অতিক্রান্ত বিগত বছরগুলোতে। অচলাবস্থার অন্ধকারের মধ্যেও পাঠকের কাঙিক্ষত তথ্য ও সংবাদের অগ্রণী ও অনিবার্য সংযোগ সূত্র হিসাবে নিত্য-সচল থেকেছে মুদ্রিত পৃষ্ঠায় আর ওয়েভ পেজের মলাটে। দৈনিক মানবজমিন ফেলে আসা দিনগুলোতে চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে পরিবর্তিত বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মানবিক, গণতান্ত্রিক, মহৎ, কল্যাণকর এবং দেশ ও জনগণের জন্য ইতিবাচক, সেসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও সমন্বয় বিধানের কঠিন কাজটিই সফলভাবে করেছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর তীব্র বিরূপ পরিস্থিতিতেও। ‘কারও তাঁবেদারি না করার’ বিঘোষিত নীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে শত চাপ ও বিরোধিতার মধ্যে মানবজমিন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সত্য-সুন্দর ধ্বনি উচ্চকিত করেছে। বাংলাদেশের প্রথম রঙিন ট্যাবলয়েড দৈনিক পত্রিকা হিসাবে আত্মপ্রকাশের দায় ও দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠায় এই পত্রিকার অকুতোভয় সংবাদকর্মীগণ ভয়হীনতায় দাঁড়িয়েছেন সত্যের স্বপক্ষে; নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছেন সাগর-মিথিলা-কিরিট-কুন্তলা-হাওর-বাওর-বন-বনানী আর গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগরের সম্মিলিত সমগ্র বাংলাদেশের মা-মাটি-মানুষের স্বার্থের মানসপটে। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরেছে বিশ্বব্যাপী ৪০ কোটি বাংলাভাষী মানুষের তথ্যবলয়ে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, নারী, প্রযুক্তি, ফ্যাশন, আন্তর্জাতিক বিষয়সহ জীবনের সকল অঙ্গনকে স্পর্শ করেছে নিজস্ব বিশিষ্টতায় এবং অবশ্যই বাংলাদেশের সমসময়ের কঠিন সঙ্কুলতার প্রেক্ষাপটকে প্রাধান্য দিয়ে পাঠক আর সংবাদের মধ্যে আশাবাদী সংযোগসূত্র হয়ে। প্রকৃত সংবাদ আর সংবাদের পেছনের অন্তর্নিহিত সত্যই পূর্ণ করেছে মানবজমিন-এর প্রতিদিনের পৃষ্ঠাসমূহ। বাংলাদেশের ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের যাপিত জীবনের আশা ও দুঃখের কোনও বিষয়কেই উপেক্ষা করে নি মানবজমিন। এড়িয়ে যায় নি জাতীয় ও মানবিক স্বার্থে একটিও বিষয়। বাংলাদেশের কেন্দ্র থেকে দূরপ্রান্তে বসবাসরত পাঠকের জানার অধিকারকে পরিপুষ্ট করার ব্রত থেকে মানবজমিন এক মুহূর্তের জন্যেও বিচ্যুত হয়নি। বিশ্বায়নের ক্রম-পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে এই বিশ্বে, এই দেশে ঘটমান সংবাদপ্রবাহের সঙ্গে বৃহত্তর পাঠকের সংযোগ স্থাপনের কাজটি মানবজমিন পেশাগত দায়বদ্ধতা, চৌকস দক্ষতা, নিষ্ঠা, কমিটমেন্ট ও প্রাগ্রসরতার সঙ্গে দায়িত্বরূপে গ্রহণ করেছে। এই পত্রিকার খোলা চোখে পাঠক দেখেছে নিজস্ব ভূগোল, সমাজ, সুশাসন, সারা বাংলাদেশ ও পৃথিবীর প্রসারিত রূপ এবং সেখানকার আলো ও অন্ধকারকে, ভাল ও মন্দকে, আশা ও হতাশার দিকগুলোকে। সত্য যত কঠিনই হোক, সেই কঠিনেরে ভালবেসে মানবজমিন নিজেকে উপস্থাপিত করেছে মানুষের চেতনা ও বিবেকের পাটাতনে। পাঠককে প্রণোদিত করেছেন বহুমুখী তথ্য ও সংবাদের ভিত্তিতে নিজের স্বাধীন ও স্বনির্ভর মতামত পরিগঠনের মাধ্যক্তি ব্যক্তিসত্তার বিকাশে। পাঠকের মুক্তচিন্তা ও বাধাহীন-বিবেচনার ক্ষমতায়নকে মানবজমিন সব সময়ই শ্রদ্ধা করেছে বলেই কোনও বিশেষ দল-মত-গোষ্ঠী নয়, মানবজমিন হয়েছে সর্বস্তরের পাঠকের নিজস্ব দৈনিক: আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসের সংবাদমাধ্যম; মানুষের চিন্তা ও বোধের সারথী; তথ্যের নির্ভরশীল সঙ্গী। চলার পথের বাঁকে বাঁকে মানবজমিন চ্যালেঞ্জিং ও গতিময় ঐতিহ্যকে সতত-মান্য করে স্থবিরতাকে কখনওই প্রশ্রয় দেয় নি। জগৎ ও জীবনে প্রতিমুহূর্তে যে পরিবর্তন ঘটছে, জন্মকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানবজমিন সেটাকে ইতিবাচকভাবে আত্মস্থ করেছে আঞ্চলিক-জাতীয়-আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণের পৃথক পৃথক মাত্রা ও বিন্যাসে। মানবজমিন বিশ্বাস করে গুণগত পরিবর্তনই প্রকৃতির অলঙ্ঘণীয় নিয়ম; অগ্রসরতাই জীবনের ধর্ম; চরৈবেতীই প্রকৃতির বিধান। তাই বিশ্বভুবনের পরিবর্তনধর্মী মূল স্রোতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিনোদন তথা সামগ্রিক মানবমণ্ডলীর লাইভিহুড বা সর্বব্যাপী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়-কাঙিক্ষত রূপান্তর এই পত্রিকায় পাতায় পাতায় আঁকা হয়েছে। বিনাশে, সঙ্কটে, সমস্যায় মানবজমিন আশা-জাগানিয়া স্পন্দনে মানুষকে দিতে চেয়েছে পথের দিশা। প্রতিদিন পাঠকের সামনে তথ্যের অধিকার নিয়ে চিন্তার সহযাত্রী হয়ে এসেছে মানবজমিন। এসেছে বহুত্ববাদী সমাজের ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-নৃতাত্ত্বিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিচিতি, গণতান্ত্রিক সুশাসন ও স্বাতন্ত্র্যকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানিয়ে। গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, শান্তি, সৌহার্দ্য, সংলাপ, সমঝোতা, উন্নয়ন ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় সমাজের জন্য অতি জরুরি সুশাসন, অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার ভিত রচনা করতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে মানবজমিন। বাংলাদেশের অপার অর্থনৈতিক সুযোগ ও সম্ভাবনা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং জনজীবনের বিশালতাকে অনুঘটকের মতো প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করেছে ইতিবাচকতার অভিমুখে। নিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে বাংলাদেশের অবক্ষয়দগ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কাঠামোকে সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক অবয়বে জনমানুষের সক্ষমতার আলোয় উদ্ভাসিত করতে এবং সে আলোয় আলোয় প্রিয় জনপদ বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদায় ঋদ্ধ ও আলোকিত করতে। এবং সংঘাতের রক্তাপ্লুত রণাঙ্গনকে শান্তির সহাবস্থানের সুমৃত্তিকায় রূপান্তরিত করতে। বাংলাদেশের সৎ, দায়িত্বশীল, জনবান্ধব সাংবাদিকতায় তরুণ মানবজমিন অঙ্কন করেছে নিজস্বতার স্বাধীন অস্তিত্ব।
ইতিহাসের আলোকে নবীন ও ভবিষ্যৎ পাঠকদের এ কথা জানা থাকা দরকার যে, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে, বিশেষত সঙ্ঘাত-সঙ্কুল পরিপ্রেক্ষিতে আকীর্ণ একটি প্রকৃত সন্ধিক্ষণে মানবজমিন-এর আত্মপ্রকাশ এবং পথচলা। প্রথাগত ও পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ-প্রবাহের মনোপলি ভেঙে মানবজমিন প্রকৃতই বিপ্লবীর মতো সঙ্গে এনেছে আধুনিক প্রকাশভঙ্গি, নিরপেক্ষ সংবাদ চয়নের নৈব্যক্তিক অভিলাষ এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে জাগরণের চিরন্তন-ধ্বনিপুঞ্জ। একদল অভিজ্ঞ, সৎ, নির্লোভ এবং সেই সঙ্গে এক ঝাঁক তরুণ-মেধাবী কর্মীকে নিয়ে স্বাপ্নিক-প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমান চৌধুরীর উদ্যোগে বিকল্প সংবাদশক্তির উন্মেষের সেই রোমাঞ্চকর ঘটনা আজ ইতিহাসের অংশ। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদকের আদি ও অকৃত্রিম সহযাত্রী সম্পাদক-ছড়াকার মাহবুবা চৌধুরী এবং সেইসব প্রাজ্ঞ প্রবীণ ও তুর্কী তরুণেরা মানবজমিন-এর দীপ্ত প্রথম-প্রকাশের মাধ্যমে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের গতানুগতিক পাটাতন। সেই সূত্রে অচীরেই আরও পরিশীলিত ও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে প্রকাশ পেতে থাকে মানবজমিন। চ্যালেঞ্জ আর বিঘ্ন পেরিয়ে আজ অষ্টাদশ বর্ষের পথে অনলাইন এবং প্রিন্ট আকারে মানবজমিন জাতীয় তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাংলাভাষী পাঠক সমাজে অন্যতম জনপ্রিয়-শীর্ষ দৈনিক; প্রতি দিনের এবং প্রতি মুর্হূতের সংবাদ মাধ্যম। তথ্য, সংবাদ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মতামত দিয়ে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিনোদনসহ মানবজীবন ও মানবমনের সকল অনুসঙ্গকে বাংলাদেশ ও পৃথিবীর লক্ষ-কোটি বাংলাভাষীদের সামনে তুলে ধরছে মানবজমিন স্বকীয় যোগ্যতায়, দ্রুততায়, দক্ষতায়, নিরপেক্ষতায়, অগ্রগণ্যতায় ও কৃতিত্বে। একটি দৈনিক পত্রিকার জন্য সতেরটি বছর খুব বেশি সময় নয়। কিন্তু এই সময়ের নিরিখে পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটিতে পৌঁছে যাওয়া এবং বাংলাদেশের সমাজ প্রগতি ও জাতীয় উন্নয়নের নানা অঙ্গনে ইতিবাচক-প্রায়োগিক-ব্যবহারিকভাবে ভূমিকা রাখা খুব সামান্য বিষয়ও নয়। মানুষের সিক্ত-ভালবাসা তথা পাঠকের এই আস্থা ও বিশ্বাসের শক্তিই মানবজমিন-এর অন্তহীন কর্মপ্রচেষ্টাময়-পদযাত্রার সাহসিক প্রেরণা। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মহান একুশের মাসে জন্ম নেওয়া মানবজমিন এ যাবৎ অর্জিত স্বর্ণালি-অভিজ্ঞতায় সর্বদা সত্য ও সাহসের প্রতীক হয়ে ভবিষ্যতের পথে প্রত্যয়দীপ্ত আলোর অভিযাত্রীরূপে পুনরুচ্চারণ করছে মাটি ও মানুষের প্রতি অঙ্গীকারের দীপ্ত শপথ: বাংলাদেশের সুমৃত্তিকার মুক্ত ইশতেহার রূপে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষার অপ্রতিরোধ্য মুক্তকণ্ঠী-তথ্য-সংযোগ-সেতু বিনির্মাণে প্রতীতী। পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে মানবিক দায়িত্ববোধের রাখিবন্ধনে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের গৌরবময় ইতিহাসের মুকুটে মানবজমিন নিজেকে একটি স্বর্ণালী পালকের মতো প্রতিস্থাপন করতে চায় পাঠকের ভালবাসা আর আত্মপ্রত্যয়ের মিলিত শক্তিতে। অষ্টাদশী মানবজমিন যৌবনের দুর্নিবার গানে গানে মানুষের জয়গান গাইতে চায় কাল-কালান্তরে, বর্তমান এবং অনাগত ভবিষ্যতের প্রতিটি ক্ষণে, সঙ্কটে, সমস্যায়, অচলাবস্থায়। বাংলাদেশের মানব-অস্তিত্বের ঐতিহাসিক পথচলায় মানবজমিন সর্বাবস্থায় মৃত্তিকা ও মানুষের প্রকৃত জয়যাত্রার দিশারী।
পাঠক মাত্রই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের চলমান সঙ্কুল আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় ভরা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে সত্যান্বেষণের নিত্য লড়াইরত মানবজমিন জাতীয় স্বার্থ আর গণমানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিল অতিক্রান্ত বিগত বছরগুলোতে। অচলাবস্থার অন্ধকারের মধ্যেও পাঠকের কাঙিক্ষত তথ্য ও সংবাদের অগ্রণী ও অনিবার্য সংযোগ সূত্র হিসাবে নিত্য-সচল থেকেছে মুদ্রিত পৃষ্ঠায় আর ওয়েভ পেজের মলাটে। দৈনিক মানবজমিন ফেলে আসা দিনগুলোতে চিন্তায়, চেতনায়, কর্মে পরিবর্তিত বিশ্ব ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কিছু সত্য, সুন্দর, ভালো, মানবিক, গণতান্ত্রিক, মহৎ, কল্যাণকর এবং দেশ ও জনগণের জন্য ইতিবাচক, সেসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য ও সমন্বয় বিধানের কঠিন কাজটিই সফলভাবে করেছে দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর তীব্র বিরূপ পরিস্থিতিতেও। ‘কারও তাঁবেদারি না করার’ বিঘোষিত নীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে শত চাপ ও বিরোধিতার মধ্যে মানবজমিন সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সত্য-সুন্দর ধ্বনি উচ্চকিত করেছে। বাংলাদেশের প্রথম রঙিন ট্যাবলয়েড দৈনিক পত্রিকা হিসাবে আত্মপ্রকাশের দায় ও দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠায় এই পত্রিকার অকুতোভয় সংবাদকর্মীগণ ভয়হীনতায় দাঁড়িয়েছেন সত্যের স্বপক্ষে; নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছেন সাগর-মিথিলা-কিরিট-কুন্তলা-হাওর-বাওর-বন-বনানী আর গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগরের সম্মিলিত সমগ্র বাংলাদেশের মা-মাটি-মানুষের স্বার্থের মানসপটে। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরেছে বিশ্বব্যাপী ৪০ কোটি বাংলাভাষী মানুষের তথ্যবলয়ে। রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, নারী, প্রযুক্তি, ফ্যাশন, আন্তর্জাতিক বিষয়সহ জীবনের সকল অঙ্গনকে স্পর্শ করেছে নিজস্ব বিশিষ্টতায় এবং অবশ্যই বাংলাদেশের সমসময়ের কঠিন সঙ্কুলতার প্রেক্ষাপটকে প্রাধান্য দিয়ে পাঠক আর সংবাদের মধ্যে আশাবাদী সংযোগসূত্র হয়ে। প্রকৃত সংবাদ আর সংবাদের পেছনের অন্তর্নিহিত সত্যই পূর্ণ করেছে মানবজমিন-এর প্রতিদিনের পৃষ্ঠাসমূহ। বাংলাদেশের ব্যক্তিগত ও সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের যাপিত জীবনের আশা ও দুঃখের কোনও বিষয়কেই উপেক্ষা করে নি মানবজমিন। এড়িয়ে যায় নি জাতীয় ও মানবিক স্বার্থে একটিও বিষয়। বাংলাদেশের কেন্দ্র থেকে দূরপ্রান্তে বসবাসরত পাঠকের জানার অধিকারকে পরিপুষ্ট করার ব্রত থেকে মানবজমিন এক মুহূর্তের জন্যেও বিচ্যুত হয়নি। বিশ্বায়নের ক্রম-পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে এই বিশ্বে, এই দেশে ঘটমান সংবাদপ্রবাহের সঙ্গে বৃহত্তর পাঠকের সংযোগ স্থাপনের কাজটি মানবজমিন পেশাগত দায়বদ্ধতা, চৌকস দক্ষতা, নিষ্ঠা, কমিটমেন্ট ও প্রাগ্রসরতার সঙ্গে দায়িত্বরূপে গ্রহণ করেছে। এই পত্রিকার খোলা চোখে পাঠক দেখেছে নিজস্ব ভূগোল, সমাজ, সুশাসন, সারা বাংলাদেশ ও পৃথিবীর প্রসারিত রূপ এবং সেখানকার আলো ও অন্ধকারকে, ভাল ও মন্দকে, আশা ও হতাশার দিকগুলোকে। সত্য যত কঠিনই হোক, সেই কঠিনেরে ভালবেসে মানবজমিন নিজেকে উপস্থাপিত করেছে মানুষের চেতনা ও বিবেকের পাটাতনে। পাঠককে প্রণোদিত করেছেন বহুমুখী তথ্য ও সংবাদের ভিত্তিতে নিজের স্বাধীন ও স্বনির্ভর মতামত পরিগঠনের মাধ্যক্তি ব্যক্তিসত্তার বিকাশে। পাঠকের মুক্তচিন্তা ও বাধাহীন-বিবেচনার ক্ষমতায়নকে মানবজমিন সব সময়ই শ্রদ্ধা করেছে বলেই কোনও বিশেষ দল-মত-গোষ্ঠী নয়, মানবজমিন হয়েছে সর্বস্তরের পাঠকের নিজস্ব দৈনিক: আস্থা, নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসের সংবাদমাধ্যম; মানুষের চিন্তা ও বোধের সারথী; তথ্যের নির্ভরশীল সঙ্গী। চলার পথের বাঁকে বাঁকে মানবজমিন চ্যালেঞ্জিং ও গতিময় ঐতিহ্যকে সতত-মান্য করে স্থবিরতাকে কখনওই প্রশ্রয় দেয় নি। জগৎ ও জীবনে প্রতিমুহূর্তে যে পরিবর্তন ঘটছে, জন্মকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানবজমিন সেটাকে ইতিবাচকভাবে আত্মস্থ করেছে আঞ্চলিক-জাতীয়-আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণের পৃথক পৃথক মাত্রা ও বিন্যাসে। মানবজমিন বিশ্বাস করে গুণগত পরিবর্তনই প্রকৃতির অলঙ্ঘণীয় নিয়ম; অগ্রসরতাই জীবনের ধর্ম; চরৈবেতীই প্রকৃতির বিধান। তাই বিশ্বভুবনের পরিবর্তনধর্মী মূল স্রোতের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিনোদন তথা সামগ্রিক মানবমণ্ডলীর লাইভিহুড বা সর্বব্যাপী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়-কাঙিক্ষত রূপান্তর এই পত্রিকায় পাতায় পাতায় আঁকা হয়েছে। বিনাশে, সঙ্কটে, সমস্যায় মানবজমিন আশা-জাগানিয়া স্পন্দনে মানুষকে দিতে চেয়েছে পথের দিশা। প্রতিদিন পাঠকের সামনে তথ্যের অধিকার নিয়ে চিন্তার সহযাত্রী হয়ে এসেছে মানবজমিন। এসেছে বহুত্ববাদী সমাজের ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-নৃতাত্ত্বিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিচিতি, গণতান্ত্রিক সুশাসন ও স্বাতন্ত্র্যকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানিয়ে। গণতান্ত্রিক সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, শান্তি, সৌহার্দ্য, সংলাপ, সমঝোতা, উন্নয়ন ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় সমাজের জন্য অতি জরুরি সুশাসন, অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার ভিত রচনা করতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে মানবজমিন। বাংলাদেশের অপার অর্থনৈতিক সুযোগ ও সম্ভাবনা, প্রাকৃতিক বৈচিত্র এবং জনজীবনের বিশালতাকে অনুঘটকের মতো প্রতিনিয়ত উৎসাহিত করেছে ইতিবাচকতার অভিমুখে। নিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে বাংলাদেশের অবক্ষয়দগ্ধ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কাঠামোকে সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক অবয়বে জনমানুষের সক্ষমতার আলোয় উদ্ভাসিত করতে এবং সে আলোয় আলোয় প্রিয় জনপদ বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদায় ঋদ্ধ ও আলোকিত করতে। এবং সংঘাতের রক্তাপ্লুত রণাঙ্গনকে শান্তির সহাবস্থানের সুমৃত্তিকায় রূপান্তরিত করতে। বাংলাদেশের সৎ, দায়িত্বশীল, জনবান্ধব সাংবাদিকতায় তরুণ মানবজমিন অঙ্কন করেছে নিজস্বতার স্বাধীন অস্তিত্ব।
ইতিহাসের আলোকে নবীন ও ভবিষ্যৎ পাঠকদের এ কথা জানা থাকা দরকার যে, বাংলাদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে, বিশেষত সঙ্ঘাত-সঙ্কুল পরিপ্রেক্ষিতে আকীর্ণ একটি প্রকৃত সন্ধিক্ষণে মানবজমিন-এর আত্মপ্রকাশ এবং পথচলা। প্রথাগত ও পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ-প্রবাহের মনোপলি ভেঙে মানবজমিন প্রকৃতই বিপ্লবীর মতো সঙ্গে এনেছে আধুনিক প্রকাশভঙ্গি, নিরপেক্ষ সংবাদ চয়নের নৈব্যক্তিক অভিলাষ এবং দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থকে জাগরণের চিরন্তন-ধ্বনিপুঞ্জ। একদল অভিজ্ঞ, সৎ, নির্লোভ এবং সেই সঙ্গে এক ঝাঁক তরুণ-মেধাবী কর্মীকে নিয়ে স্বাপ্নিক-প্রতিষ্ঠাতা মতিউর রহমান চৌধুরীর উদ্যোগে বিকল্প সংবাদশক্তির উন্মেষের সেই রোমাঞ্চকর ঘটনা আজ ইতিহাসের অংশ। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পাদকের আদি ও অকৃত্রিম সহযাত্রী সম্পাদক-ছড়াকার মাহবুবা চৌধুরী এবং সেইসব প্রাজ্ঞ প্রবীণ ও তুর্কী তরুণেরা মানবজমিন-এর দীপ্ত প্রথম-প্রকাশের মাধ্যমে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের গতানুগতিক পাটাতন। সেই সূত্রে অচীরেই আরও পরিশীলিত ও দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে প্রকাশ পেতে থাকে মানবজমিন। চ্যালেঞ্জ আর বিঘ্ন পেরিয়ে আজ অষ্টাদশ বর্ষের পথে অনলাইন এবং প্রিন্ট আকারে মানবজমিন জাতীয় তো বটেই, আন্তর্জাতিক বাংলাভাষী পাঠক সমাজে অন্যতম জনপ্রিয়-শীর্ষ দৈনিক; প্রতি দিনের এবং প্রতি মুর্হূতের সংবাদ মাধ্যম। তথ্য, সংবাদ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, মতামত দিয়ে সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, বিনোদনসহ মানবজীবন ও মানবমনের সকল অনুসঙ্গকে বাংলাদেশ ও পৃথিবীর লক্ষ-কোটি বাংলাভাষীদের সামনে তুলে ধরছে মানবজমিন স্বকীয় যোগ্যতায়, দ্রুততায়, দক্ষতায়, নিরপেক্ষতায়, অগ্রগণ্যতায় ও কৃতিত্বে। একটি দৈনিক পত্রিকার জন্য সতেরটি বছর খুব বেশি সময় নয়। কিন্তু এই সময়ের নিরিখে পাঠকের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটিতে পৌঁছে যাওয়া এবং বাংলাদেশের সমাজ প্রগতি ও জাতীয় উন্নয়নের নানা অঙ্গনে ইতিবাচক-প্রায়োগিক-ব্যবহারিকভাবে ভূমিকা রাখা খুব সামান্য বিষয়ও নয়। মানুষের সিক্ত-ভালবাসা তথা পাঠকের এই আস্থা ও বিশ্বাসের শক্তিই মানবজমিন-এর অন্তহীন কর্মপ্রচেষ্টাময়-পদযাত্রার সাহসিক প্রেরণা। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির মহান একুশের মাসে জন্ম নেওয়া মানবজমিন এ যাবৎ অর্জিত স্বর্ণালি-অভিজ্ঞতায় সর্বদা সত্য ও সাহসের প্রতীক হয়ে ভবিষ্যতের পথে প্রত্যয়দীপ্ত আলোর অভিযাত্রীরূপে পুনরুচ্চারণ করছে মাটি ও মানুষের প্রতি অঙ্গীকারের দীপ্ত শপথ: বাংলাদেশের সুমৃত্তিকার মুক্ত ইশতেহার রূপে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষার অপ্রতিরোধ্য মুক্তকণ্ঠী-তথ্য-সংযোগ-সেতু বিনির্মাণে প্রতীতী। পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে মানবিক দায়িত্ববোধের রাখিবন্ধনে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের গৌরবময় ইতিহাসের মুকুটে মানবজমিন নিজেকে একটি স্বর্ণালী পালকের মতো প্রতিস্থাপন করতে চায় পাঠকের ভালবাসা আর আত্মপ্রত্যয়ের মিলিত শক্তিতে। অষ্টাদশী মানবজমিন যৌবনের দুর্নিবার গানে গানে মানুষের জয়গান গাইতে চায় কাল-কালান্তরে, বর্তমান এবং অনাগত ভবিষ্যতের প্রতিটি ক্ষণে, সঙ্কটে, সমস্যায়, অচলাবস্থায়। বাংলাদেশের মানব-অস্তিত্বের ঐতিহাসিক পথচলায় মানবজমিন সর্বাবস্থায় মৃত্তিকা ও মানুষের প্রকৃত জয়যাত্রার দিশারী।
No comments