হরতাল-অবরোধ- কৃষকের দুর্ভাগ্য
('হিমাগার পরিপূর্ণ হওয়ায় আলু নেওয়া বন্ধ' লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরের 'তিস্তা হিমাগার'র প্রধান ফটকের সামনে ঝুলছে এমন ব্যানার। তারপরও সেখানে ভিড় করছেন অনেক আলুচাষি। কোনোভাবে যদি কিছু আলু রাখার অনুমতি পাওয়া যায়। স্থানীয় আলুচাষিরা জানিয়েছেন, এমন চিত্র রংপুরের সর্বত্র। হিমাগারে জায়গা নেই। তাই আলুর বাম্পার ফলনে মাথায় হাত কৃষকদের। লাভ দূরে থাক উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠবে কিনা সে আশঙ্কায় দিন কাটছে রংপুরের আলুচাষিদের। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে এবার ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৩৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮২ টন। এদিকে রংপুরেই উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ১০ লাখ টনের বেশি। অথচ রংপুরে ৩০টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা প্রায় আড়াই লাখ টন। সূত্র জানায়, রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৮ জেলায় হিমাগার রয়েছে ৬৩টি। এসব হিমাগারে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৯২ টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। উৎপাদিত আলুর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন আলু হিমাগারে রাখা সম্ভব হবে না। আলুচাষিদের আন্দোলন :আলু নিয়ে বিপাকে পড়া কৃষকরা এখন আন্দোলন করছেন। তারা ৬ দফা দাবি আদায়ে বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। রংপুরে আলুচাষি সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সড়ক অবরোধ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও ও রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ করা হয়। ) আলুচাষিদের
মাথায় হাত_ এমন খবর প্রকাশ হয়েছে শুক্রবারের সমকালে। অব্যাহত
হরতাল-অবরোধের শিকার বিভিন্ন জেলার আলুচাষিরা। শীতকালীন সবজিচাষিদেরও একই
দুর্দশা। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটোর ক্রেতা কমে গেছে। দুধের উৎপাদকদের
প্রতিদিন কাটে উদ্বেগে। কী হবে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য-পুষ্টি জোগানো এসব
মানুষের? এক কেজি আলু বিক্রি করে অনেক এলাকায় এক কাপ চায়ের দামও মেলে না।
রাজনীতিই এ সর্বনাশ করেছে তাদের। যে ট্রাকে সবজি পাঠানো হয় তাতে পেট্রোল
বোমা হামলা চালানো হয়। একটি ট্রাকে হামলা হলে তার প্রতিক্রিয়ায় শত শত ট্রাক
পণ্য নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে শঙ্কায় পড়ে। ফলে ঘাটতি দেখা দেয়
পণ্যের প্রধান বাজার শহরাঞ্চলে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে গত প্রায় দেড় মাস
কৃষিপণ্যের মূল্য অনেক বেড়ে গেছে। ট্রাকচালকরা জীবনের ঝুঁকি নিতে চান না।
যারা এর পরও রাস্তায় বের হতে রাজি হন, তাদের জন্য ব্যবসায়ীদের গুনতে হয়
অনেক বেশি অর্থ। এর প্রভাবে পণ্যমূল্য বাড়ে। সীমিত ও বাঁধা আয়ের শহুরে
ক্রেতাদের তাই ব্যয় বেশি পড়ে। অর্থনীতিবিদ এবং বাজার বিশ্লেষকরা বলেন,
শহরের ক্রেতাদের পকেট কাটা পড়লেও উৎপাদকদের কোনো লাভ নেই। তারা উদ্বিগ্ন
বর্তমান নিয়ে। সামনের দিনগুলোও আশাপ্রদ নয়। দেশের নানা স্থানে বোরো ধান চাষ
শুরু হয়েছে। এ ধান চাষ উপকরণ-নির্ভর। নিয়মিত সেচ দিতে হয় জমিতে। এজন্য চাই
ডিজেলের অব্যাহত সরবরাহ। রাসায়নিক সার সময়মতো প্রয়োগ করাও ভালো ফলনের
অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু ঢাকার বাইরে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেভাবে বিঘি্নত হয়ে
চলেছে তাতে সারের জোগান নিশ্চিত বলা যাবে না। পরপর কয়েকটি ধানের মৌসুম
থেকে কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছে। আমরা যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠা এবং
উদ্বৃত্ত কিছু চাল রফতানির ক্ষমতা অর্জনের জন্য গর্ব করি, তার কৃতিত্ব
মূলত কৃষকদেরই। তাদের শ্রমে-ঘামেই বাজারে ছিল স্বস্তি। কিন্তু এবারের বোরো
ধানের মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সময়মতো উপকরণ না পেলে ফসল উৎপাদন
কমে যেতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘি্নত হওয়ার জন্য সারসহ বিভিন্ন উপকরণের
দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেশি পড়বে। কৃষকের তাহলে উপায়? কে তাদের
স্বার্থ দেখবে?
No comments