ভুলতে পারিনি কেউ by নাজনীন মহল অঞ্জনা
মৃত্যুর
এত বছর পরও আব্বা হারিয়ে যাননি! সত্যিই, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সরকার বা
রাজনৈতিক দলের ভুল সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রতিবাদ করতে কখনও দ্বিধান্বিত বা
ভীত হননি। বিপর্যয় নেমে এসেছে বহুবার। মাথা উঁচু করে তা বরণ করেছেন প্রচণ্ড
আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার সঙ্গে। তাই হতে পেরেছিলেন আদর্শ মানুষ। প্রখ্যাত
লেখক ও দার্শনিক অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ বলেছেন, '... আসফউদদৌলা
রেজার জীবনের গোড়া থেকেই সমাজপ্রেম দেখা দিয়েছিল প্রচণ্ডভাবে। কারণ তার
ধমনিতে ছিল সৈয়দ ইসমাইল হোসেন শিরাজীর রক্ত; যিনি দেশের সর্বসাধারণের চরম
দুরবস্থায় মুক্তিসাধনের জন্য অনলবর্ষী ভাষায় শুনিয়েছেন জাগরণের বাণী।'
প্রখ্যাত লোকবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনসুর উদ্দীনের লেখায়_ '...কেবল পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তাকে দেখলে তার প্রতি অবিচার করা হবে। কেননা সাংবাদিকতা ছিল তার কাছে একটি মিশন! এ মিশন অব্যাহত রাখতে গিয়ে প্রায় সব সরকারের রোষানলে তাকে পড়তে হয়েছে।'
১৯৫৪ সালে দৈনিক আজাদের ভূমিকার প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী বার্তা সম্পাদক পদে। '৬৮ সালে হন বার্তা সম্পাদক। তখন সিরাজুদ্দীন হোসেন নির্বাহী সম্পাদক। 'পরমাত্মা' দুই বন্ধুর সাহসী কলম '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ইত্তেফাককে করে তোলে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের মুখপত্র। তারই পরিণতিতে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে ইত্তেফাক পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। স্বাধীনতার পর ইত্তেফাককে পুনরুদ্ধার করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচার সংখ্যার শীর্ষে দণ্ডায়মান করার কীর্তিমান পুরুষ তিনিই। একই সঙ্গে বার্তা ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক ছাড়াও পুরো ইত্তেফাক পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্বও পালন করে গেছেন।
১৯৫৪ সাল থেকে তারা গ্রন্থনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় রেডিওর 'আমার দেশ' অনু্ষ্ঠানটি শোনার জন্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করত রেডিওর সামনে। একটানা সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অসম্ভব জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটির খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা তাকে অনেকটা কিংবদন্তির কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল।'
বিভিন্ন সময়ে আব্বার বন্ধু-সহকর্মীদের সাহচর্যে এসে আব্বার অনেক স্মৃতিচারণ শুনি। কারও কারও সানি্নধ্যে আব্বার স্নেহ খুঁজে পাই। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন ডেকে কাছে বসিয়ে মুড়ি খাওয়ালেন। বললেন, 'রেজা ছিল আমার প্রাণের বন্ধু। মানুষ ছিল খাঁটি।' কবি আল মাহমুদ তো দেখা হলেই বলেন_ 'অঞ্জনা, তুমি আমার গুরুর মেয়ে।'
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। সেদিনই চলে গেলেন আব্বা। মাথার ওপর থেকে বিশাল বটবৃক্ষের ছায়া গেল সরে। কিন্তু এভাবে তো যাওয়ার কথা ছিল না! কিন্তু মৃত্যুর মতো চরম সত্য এসে দাঁড়াল দুয়ারে, শুনল না কোনো বারণ, বলল না কোনো কারণ। শুধু দেহ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল শেষ নিঃশ্বাসটুকু, চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেলেন আব্বা। সে ঘুম আর ভাঙেনি। স্মৃতি হয়ে গেল সব! সেসব স্মৃতি বুকে জড়িয়ে আজও বেঁচে আছি। ভুলতে পারি না আব্বাকে, ভুলতে পারে কি কেউ?
সাংবাদিক আসফউদদৌলা রেজার কন্যা
প্রখ্যাত লোকবিজ্ঞানী অধ্যাপক মনসুর উদ্দীনের লেখায়_ '...কেবল পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তাকে দেখলে তার প্রতি অবিচার করা হবে। কেননা সাংবাদিকতা ছিল তার কাছে একটি মিশন! এ মিশন অব্যাহত রাখতে গিয়ে প্রায় সব সরকারের রোষানলে তাকে পড়তে হয়েছে।'
১৯৫৪ সালে দৈনিক আজাদের ভূমিকার প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে সহকারী বার্তা সম্পাদক পদে। '৬৮ সালে হন বার্তা সম্পাদক। তখন সিরাজুদ্দীন হোসেন নির্বাহী সম্পাদক। 'পরমাত্মা' দুই বন্ধুর সাহসী কলম '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ইত্তেফাককে করে তোলে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের মুখপত্র। তারই পরিণতিতে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে ইত্তেফাক পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। স্বাধীনতার পর ইত্তেফাককে পুনরুদ্ধার করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রচার সংখ্যার শীর্ষে দণ্ডায়মান করার কীর্তিমান পুরুষ তিনিই। একই সঙ্গে বার্তা ও কার্যনির্বাহী সম্পাদক ছাড়াও পুরো ইত্তেফাক পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্বও পালন করে গেছেন।
১৯৫৪ সাল থেকে তারা গ্রন্থনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনায় রেডিওর 'আমার দেশ' অনু্ষ্ঠানটি শোনার জন্য শহর ও গ্রামাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করত রেডিওর সামনে। একটানা সুদীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অসম্ভব জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটির খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা তাকে অনেকটা কিংবদন্তির কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল।'
বিভিন্ন সময়ে আব্বার বন্ধু-সহকর্মীদের সাহচর্যে এসে আব্বার অনেক স্মৃতিচারণ শুনি। কারও কারও সানি্নধ্যে আব্বার স্নেহ খুঁজে পাই। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন ডেকে কাছে বসিয়ে মুড়ি খাওয়ালেন। বললেন, 'রেজা ছিল আমার প্রাণের বন্ধু। মানুষ ছিল খাঁটি।' কবি আল মাহমুদ তো দেখা হলেই বলেন_ 'অঞ্জনা, তুমি আমার গুরুর মেয়ে।'
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন। সেদিনই চলে গেলেন আব্বা। মাথার ওপর থেকে বিশাল বটবৃক্ষের ছায়া গেল সরে। কিন্তু এভাবে তো যাওয়ার কথা ছিল না! কিন্তু মৃত্যুর মতো চরম সত্য এসে দাঁড়াল দুয়ারে, শুনল না কোনো বারণ, বলল না কোনো কারণ। শুধু দেহ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল শেষ নিঃশ্বাসটুকু, চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেলেন আব্বা। সে ঘুম আর ভাঙেনি। স্মৃতি হয়ে গেল সব! সেসব স্মৃতি বুকে জড়িয়ে আজও বেঁচে আছি। ভুলতে পারি না আব্বাকে, ভুলতে পারে কি কেউ?
সাংবাদিক আসফউদদৌলা রেজার কন্যা
No comments