পুলিশের উসকানিমূলক বক্তব্য- এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
বাংলাদেশের
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন অনেকটাই রাজনৈতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন যেন পুলিশের প্রধান কাজ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব এবং আইনের অধীন থেকে দায়িত্ব পালন করার
যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা এখন আর পুলিশ মানছে না। ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে
বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিনাবিচারে হত্যা ও নির্যাতনের যেমন অভিযোগ
উঠেছে, তেমনি সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে অর্থ আদায় এবং পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনাও
ঘটেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অবরোধ ও হরতালের কর্মসূচি শুরু হওয়ার
পর থেকে পুলিশ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অস্ত্রধারী প্রশিক্ষিত এই বাহিনীর
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুধু যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তা-ই নয়, ক্ষমতাসীন
দলের নেতাকর্মীদের আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নাশকতাকারীদের গুলি করে
হত্যা, পিটিয়ে হত্যা এমনকি আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছেন। খুলনা
রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ জামান বলেছেন, যেসব কুলাঙ্গারের বাচ্চা রাতের
আঁধারে পেট্রলবোমা মেরে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে তাদের মতো দুই-পাঁচটা
ছারপোকাকে আমরা পুড়িয়ে মারলে কোনো তি হবে না। নাশকতাকারীদের হুমকি দিয়ে
তিনি বলেন, বাপের বেটা হলে সামনে আয়। আমরা জানি তোদের কিভাবে শায়েস্তা করতে
হয়। এটা ’৭১-৭৫ সাল নয়, এখন চলছে ২০১৫ সাল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে
তিনি বলেন, নির্বাচন না হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান অথবা তালেবানি রাষ্ট্রে
পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যখন তার সুখ, দুঃখ, আনন্দ ভুলে বাংলাদেশকে
উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তখন আলবদর, রাজাকার ও
জঙ্গিরা এ দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। ক্ষমতাসীন
দলের কোনো রাজনৈতিক নেতাও এই ভাষায় বক্তব্য দেবেন কি না সন্দেহ আছে।
পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ
বলেছেন, যারা পেট্রলবামা মেরে মানুষ মারে, গাড়িতে আগুন দেয় এবং নাশকতা করে
তাদের গুলি করে মেরে ফেলা হবে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও অঙ্গসংগঠনের
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নাশকতাকারীদের হাতেনাতে ধরতে পারলে
পিটিয়ে মেরে ফেলবেন। যে দেশে পুলিশ কর্মকর্তারা মানুষকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে
হত্যার নির্দেশ দেন সে দেশে কখনোই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
পুলিশের কর্মকর্তাদের এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে সহিংসতাকে উসকানি দেয়া
হচ্ছে। তাদের এসব বক্তব্য শুধু চাকরির আচরণবিধির লঙ্ঘনই নয়, সম্পূর্ণ
বেআইনি এবং আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। আমরা আশা করব, পুলিশ বিভাগে শৃঙ্খলা
ফিরিয়ে আনতে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments