বেআইনি আদেশ পালন থেকে বিরত থাকুন -আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ড. কামাল
(রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল নাগরিক ঐক্যের অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন l ছবি: প্রথম আলো) আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীকে বেআইনি আদেশ পালন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন,
সরকারে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের সংবিধান মানতে হবে। সংবিধানের
ঊর্ধ্বে তারা থাকতে পারেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সংবিধান মেনে
চলতে হবে। দায়িত্ব পালন করার সময় বেআইনি আদেশ পালন থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিশেষ করে যারা মাঠে বা মাঠের বাইরে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের এ বিষয়ে
ভূমিকা রাখতে হবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক
ঐক্যের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সহিংসতা বন্ধ ও শান্তির জন্য জাতীয় সংলাপের দাবিতে নাগরিক ঐক্য এ কর্মসূচি
পালন করে।
ড. কামাল বলেন, সংবিধানে বোমাবাজির কোন জায়গা নেই। বিনা বিচারে হত্যার কোন বিধান নেই। সরকারে যারা থাকে তাদের বেআইনি কাজে প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বেআইনি কাজ করে, অসাংবিধানিক কাজ করে, কেউ পার পায় না। এটা হলো বাংলার মানুষের বৈশিষ্ট্য। চালাকি করে কেউ শেষ পর্যন্ত পার পায় না।
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, আমাদের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে সেটা ধ্বংস হতে দেয়া যায় না। কতিপয় লোকের ক্ষমতায় থাকার আর ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক- এটা কেউ চায় না। এজন্য সবাই মিলে শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংঘাত-সংঘর্ষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে বা যারা তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্বাভাবিক করে, আমরা তাদের বলতে চাই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৬ কোটি মানুষকে উঠেপড়ে লাগতে হবে। জেলায় জেলায়, থানায় থানায় সমাবেশ করে এ দাবি জানাতে হবে।
সরকার ‘সংলাপ’ শব্দটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে দাবি করে সংবিধানের এই প্রণেতা বলেন, ২০০৭ সালে সংস্কার শব্দটিকে খারাপ বলা হতো। এখন সংলাপ শব্দটিকে খারাপ শব্দ বলার অপচেষ্টা চলছে। সংস্কার ও সংলাপ খারাপ শব্দ হতে পারে না। সত্যিকার অর্থে কার্যকর গণতন্ত্র চাইলে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার করতে হবে। শান্তির জন্য সংলাপের আয়োজন করতে হবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক অথচ কিন্তু তাদের কথা না শুনলে তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করা যায়।
জনগণকে সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশ কোন ব্যক্তির, দলের বা পরিবারের না। এই দেশ ১৬ কোটি মানুষের। আপনারা জায়গায় জায়গায় রুখে দাঁড়ান। এই দেশ ধ্বংস করতে দেয়া যাবে না। সংঘাত সংঘর্ষের কাছে মানুষ জিম্মি হবে না। বোমাবাজি বন্ধ হতে হবে। এটা রাজনীতি হতে পারে না। এ দেশে শান্তি আনতে পারবে জনগণ। সরকার যেহেতু পারছে না। জনগণকে পারতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে না পারলে জনগণ নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না। মোটেই আমরা নিষ্ক্রিয় ও অসহায় হয়ে থাকব না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আরও একমাস ধরে চললে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাজেটের সমান হবে। আমরা সহিংসতা, নাশকতার বিরোধিতা করি। আমরা শান্তি চাই, গণতন্ত্র চাই। এজন্য সংলাপের বিকল্প নাই। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকে বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিলে সমস্যা এত দূর আসত না। এখন যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের পুলিশ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। সরকার যখন গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে তখনই তারা বিরোধী পক্ষকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে দমন করার চেষ্টা করে। মান্না আরও বলেন, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। এসএসসি পরীক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক সমস্যা গায়ের জোরে সমাধান করা যায় না। অহঙ্কার করে, জেদ করে সমস্যার সমাধান করা যায় না। সরকারের দায়িত্ব সহিংসতা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা। এজন্য জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অবশ্য এর জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশও থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট সময়ে সংলাপ শুরু ও ক্রসফায়ার বন্ধের ঘোষণা দিন। অন্যদিকে বোমাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। সংলাপ শুরুর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনীতিতে শেষ কথা নাও থাকতে পারে। কারণ, ক্ষমতা ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগেও কেউ বুঝতে পারে না যে তার ক্ষমতা শেষ।
জেএসডি সভাপতি আ স ম রব বলেন, অবৈধ সরকারের আইন প্রণয়নের কোন অধিকার নেই। সহিংসতা যারা করছে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। টকশোর ব্যক্তিদের দেখে নেয়া হবে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, টকশোতে কেউ মিথ্যা বলে না। কেউ মিথ্যা বললে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন। আমাদের সঙ্গে আপনার ৫০-৬০ বছরের পরিচয়। নতুন করে আর কি দেখবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলের শাখায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে গৃহযুদ্ধ হবে। সরকার বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলছে অথচ দেশের মানুষকে হুমকি দিচ্ছে। বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় জাতীয় সংলাপের বিকল্প নেই। এটা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। জেএসডি সভাপতি আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জাতি যুদ্ধ করবে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। হত্যা করে, খুন করে সঙ্কট মোকাবিলা করা যাবে না। যে সরকার স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে পারে না তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা যায় না।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, সারা দেশে পেট্রলবোমার আঘাত ও হত্যাগুমের মাধ্যমে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। ২০০৮ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এজন্য এই সরকারকে জনগণ ক্ষমতায় আনে নাই। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কেউ ভোট দেয় নাই। কারও কাছে ওয়াদা দিয়ে সরকার ক্ষমতায় আসে নাই।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী না হলে বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টি হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশ ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারবেন না। এই অশুভ দৃশ্য আর থাকবে না। বড় বড় কথা বন্ধ হয়ে যাবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সেক্রেটারি খালেকুজ্জামান বলেন, আজ ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তারা যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। জাতিসংঘ দিয়ে সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব নয়। সংবিধান ও অনেক প্রথার সংস্কার করতে হবে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, এমন সংলাপের আয়োজন করতে হবে যেন সকল সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হয়। আর কখনও সংলাপের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি না হয়। বাংলার মানুষ আর সংঘাত চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করলে বিকল্প শক্তির উত্থান হতে পারে। যারা সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছে তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দমন-পীড়ন দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে না। অরাজক অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই সংলাপ করতে হবে। নাগরিক সমাজকে যারা ১-১১-এর কুশীলব বলছে, তাদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, ১/১১ এর কুশীলব ছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। বিএনপি একটি সাজানো নির্বাচন করতে চেয়েছিল বলেই তখন ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আওয়ামী লীগও একটা বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে জনগণের ওপর চেপে আছে। এর পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সঙ্কট শুরু হয়েছে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যে নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি, সংসদে বিরোধী দল নেই। সেই নির্বাচনকে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র। এটাই নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সেই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি পালনের জন্য বিরোধী জোটকে অবরুদ্ধ করতে হলো। এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে!
নাগরিক ঐক্যের কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন জেএসডি সেক্রেটারি আবদুল মালেক রতন, সিপিবি সেক্রেটারি সৈয়দ আবু জাফর, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
ড. কামাল বলেন, সংবিধানে বোমাবাজির কোন জায়গা নেই। বিনা বিচারে হত্যার কোন বিধান নেই। সরকারে যারা থাকে তাদের বেআইনি কাজে প্রশ্রয় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। বেআইনি কাজ করে, অসাংবিধানিক কাজ করে, কেউ পার পায় না। এটা হলো বাংলার মানুষের বৈশিষ্ট্য। চালাকি করে কেউ শেষ পর্যন্ত পার পায় না।
জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল বলেন, আমাদের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আছে সেটা ধ্বংস হতে দেয়া যায় না। কতিপয় লোকের ক্ষমতায় থাকার আর ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক- এটা কেউ চায় না। এজন্য সবাই মিলে শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংঘাত-সংঘর্ষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে বা যারা তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্বাভাবিক করে, আমরা তাদের বলতে চাই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ১৬ কোটি মানুষকে উঠেপড়ে লাগতে হবে। জেলায় জেলায়, থানায় থানায় সমাবেশ করে এ দাবি জানাতে হবে।
সরকার ‘সংলাপ’ শব্দটিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে দাবি করে সংবিধানের এই প্রণেতা বলেন, ২০০৭ সালে সংস্কার শব্দটিকে খারাপ বলা হতো। এখন সংলাপ শব্দটিকে খারাপ শব্দ বলার অপচেষ্টা চলছে। সংস্কার ও সংলাপ খারাপ শব্দ হতে পারে না। সত্যিকার অর্থে কার্যকর গণতন্ত্র চাইলে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার করতে হবে। শান্তির জন্য সংলাপের আয়োজন করতে হবে। জনগণ ক্ষমতার মালিক অথচ কিন্তু তাদের কথা না শুনলে তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করা যায়।
জনগণকে সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই দেশ কোন ব্যক্তির, দলের বা পরিবারের না। এই দেশ ১৬ কোটি মানুষের। আপনারা জায়গায় জায়গায় রুখে দাঁড়ান। এই দেশ ধ্বংস করতে দেয়া যাবে না। সংঘাত সংঘর্ষের কাছে মানুষ জিম্মি হবে না। বোমাবাজি বন্ধ হতে হবে। এটা রাজনীতি হতে পারে না। এ দেশে শান্তি আনতে পারবে জনগণ। সরকার যেহেতু পারছে না। জনগণকে পারতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে না পারলে জনগণ নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না। মোটেই আমরা নিষ্ক্রিয় ও অসহায় হয়ে থাকব না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আরও একমাস ধরে চললে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাজেটের সমান হবে। আমরা সহিংসতা, নাশকতার বিরোধিতা করি। আমরা শান্তি চাই, গণতন্ত্র চাই। এজন্য সংলাপের বিকল্প নাই। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণকে বর্তমান সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিলে সমস্যা এত দূর আসত না। এখন যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের পুলিশ সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। সরকার যখন গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে তখনই তারা বিরোধী পক্ষকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে দমন করার চেষ্টা করে। মান্না আরও বলেন, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। এসএসসি পরীক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক সমস্যা গায়ের জোরে সমাধান করা যায় না। অহঙ্কার করে, জেদ করে সমস্যার সমাধান করা যায় না। সরকারের দায়িত্ব সহিংসতা ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করা। এজন্য জনগণকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অবশ্য এর জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশও থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে জাতীয় সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দিষ্ট সময়ে সংলাপ শুরু ও ক্রসফায়ার বন্ধের ঘোষণা দিন। অন্যদিকে বোমাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। সংলাপ শুরুর জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনীতিতে শেষ কথা নাও থাকতে পারে। কারণ, ক্ষমতা ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগেও কেউ বুঝতে পারে না যে তার ক্ষমতা শেষ।
জেএসডি সভাপতি আ স ম রব বলেন, অবৈধ সরকারের আইন প্রণয়নের কোন অধিকার নেই। সহিংসতা যারা করছে তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। টকশোর ব্যক্তিদের দেখে নেয়া হবে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, টকশোতে কেউ মিথ্যা বলে না। কেউ মিথ্যা বললে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিন। আমাদের সঙ্গে আপনার ৫০-৬০ বছরের পরিচয়। নতুন করে আর কি দেখবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলের শাখায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে গৃহযুদ্ধ হবে। সরকার বিদেশীদের সঙ্গে কথা বলছে অথচ দেশের মানুষকে হুমকি দিচ্ছে। বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় জাতীয় সংলাপের বিকল্প নেই। এটা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। জেএসডি সভাপতি আরও বলেন, কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে জাতি যুদ্ধ করবে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। হত্যা করে, খুন করে সঙ্কট মোকাবিলা করা যাবে না। যে সরকার স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে পারে না তার ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা যায় না।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, সারা দেশে পেট্রলবোমার আঘাত ও হত্যাগুমের মাধ্যমে আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। ২০০৮ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এজন্য এই সরকারকে জনগণ ক্ষমতায় আনে নাই। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে কেউ ভোট দেয় নাই। কারও কাছে ওয়াদা দিয়ে সরকার ক্ষমতায় আসে নাই।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী না হলে বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টি হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা দেশ ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারবেন না। এই অশুভ দৃশ্য আর থাকবে না। বড় বড় কথা বন্ধ হয়ে যাবে। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সেক্রেটারি খালেকুজ্জামান বলেন, আজ ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তারা যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। জাতিসংঘ দিয়ে সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব নয়। সংবিধান ও অনেক প্রথার সংস্কার করতে হবে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, এমন সংলাপের আয়োজন করতে হবে যেন সকল সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হয়। আর কখনও সংলাপের জন্য সঙ্কট সৃষ্টি না হয়। বাংলার মানুষ আর সংঘাত চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করলে বিকল্প শক্তির উত্থান হতে পারে। যারা সংলাপের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছে তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দমন-পীড়ন দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে না। অরাজক অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই সংলাপ করতে হবে। নাগরিক সমাজকে যারা ১-১১-এর কুশীলব বলছে, তাদের উদ্দেশে আসিফ নজরুল বলেন, ১/১১ এর কুশীলব ছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। বিএনপি একটি সাজানো নির্বাচন করতে চেয়েছিল বলেই তখন ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। আওয়ামী লীগও একটা বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে জনগণের ওপর চেপে আছে। এর পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সঙ্কট শুরু হয়েছে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। যে নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি, সংসদে বিরোধী দল নেই। সেই নির্বাচনকে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র। এটাই নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। সেই নির্বাচনের বর্ষপূর্তি পালনের জন্য বিরোধী জোটকে অবরুদ্ধ করতে হলো। এর চেয়ে লজ্জা আর কি হতে পারে!
নাগরিক ঐক্যের কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন জেএসডি সেক্রেটারি আবদুল মালেক রতন, সিপিবি সেক্রেটারি সৈয়দ আবু জাফর, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
No comments