পোশাকশিল্প মালিকদের অনশন- সমঝোতার আহ্বান ট্যাক্স বন্ধের হুমকি
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসন ও সঙ্কট কাটাতে সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক শিল্প মালিক
ও ব্যবসায়ীরা। দিনভর প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন শেষে তারা জানিয়েছেন,
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। বর্তমান অবস্থা
চলতে থাকলে বিদ্যুৎ বিল ও ট্যাক্স দেয়া বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন
ব্যবসায়ীরা।
গতকাল বিজিএমইএ ভবনের সামনে প্রতীকী অনশনে বিজিএমইএ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ নিট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন (বিকিএমইএ)সহ পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ৪০টি সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
এদিকে চলমান অস্থিরতা নিরসনে এসব সংগঠন মিলে ২টি কমিটি গঠন করেছে। কমটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীকে। অন্য কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুহিউদ্দিনকে। এর মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেসব তৈরী পোশাক কারখানা নানা ধরনের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, তাদের পর্যবেক্ষণ করবেন আবদুস সালম মুর্শিদী। আর আন্দোলগত দিক দেখভাল করবেন মুহিউদ্দিন।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি একে আজাদ, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, বিটিএমইএ’র সভাপতি তপন চৌধুরী, বিজিএমইএ দ্বিতীয় সহসভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ, এমএ মান্নান কচি, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি আসলাম সানি, প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দীন, বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার তপন চৌধুরী, পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ, বারভিডার সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন ও অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান না হলে দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এ সহিংসতা চলতে থাকলে শুধু ব্যবসায়ীদের অনশন নয়, কোটি কোটি শ্রমিককে অনাহারে থাকতে বাধ্য হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সহিংসতা বন্ধ না হলে আগামী দিনে পোশাক খাতের মালিক-শ্রমিকরা আন্দোলনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয় সমাবেশ থেকে। ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হয় নিরাপত্তা দিন, নয়তো ক্ষতি পূরণ দিন।
অনশনে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ দুই নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে সমঝোতা আর পরস্পর ভালবাসার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান করুন। এ সময় তিনি দুই পক্ষকেই হানাহানি বন্ধ করে শান্তিতে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা বোমাবাজি চান না, নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে চান। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আপনারা সমঝোতা করুন তা না হলে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের সমস্যা আপনারা সমাধান করুন, আমাদের ক্ষতি করবেন না। আমরা একবার রাস্তায় নামলে সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবো। তিনি বলেন, এ সহিংস পরিস্থিতিতে বিদেশীরা আমাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। তারা জানতে চাইছে কবে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। আমরা (ব্যবসায়ীরা) তাদের কোন সুখবর দিতে পারিনি। তাই তারা অন্য দেশে অর্ডার দিচ্ছে। আমরা যখন প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে সবদিক থেকে এগিয়ে, ঠিক তখনই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এ সমস্যার সমাধান না হলে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, আইজীবী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বিজিএমই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতির অবসান না হলে দেশ অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের সেই কর্মসূচিতে ককটেল হামলা চালানো হলো। এভাবে বোমাবাজি করে আমাদের আটকানো যাবে না। বোমাবাজদের কাছে আমরা মাথানত করবো না। আমরা ব্যবসা করতে চাই। আমাদের ধবংস করবেন না। তিনি বলেন, আমাদের একের পর এক কর্মসূচি চলতেই থাকবে। রাজনীতিবিদদের বলব, আপনারা রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করুন। আমাদের হত্যা করে নয়। এসব করে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার সন্ধি চলছে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বিদেশী ক্রেতারা প্রতিনিয়ত জানতে চাইছেন- দেশের চলমান সঙ্কট কবে সমাধান হবে? কিন্তু আমরা নিজেরাই জানি না, তাদের কি উত্তর দেব। তারা এ দেশ থেকে অর্ডার প্রত্যাহার করারও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতের সবাইকে পথে নামতে হবে।
অবিলম্বে নাশকতা বন্ধের দাবি জানিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, আপনার দয়া করে নাশকতা বন্ধ করুন। তা না হলে পুরো দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমান সহিংস কর্মসূচিতে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনীতিকরা দেশকে নিয়ে খেলাধুলা করছে। রাস্তায় মানুষ মরছে, জীবন দিচ্ছে। দেশ অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটা চলতে পারে না। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে গর্বিত স্থানে নিয়ে যাই। তা না হলে যারা এ সব কর্মসূচি দিচ্ছে, মানুষ তাদের ওপরই একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি যেভাবে পারেন সহিংসতা বন্ধ করেন। এ দায়িত্ব আপনার, আমরা আপনাকে ট্যাক্স দেই। চলমান সঙ্কট যত দিন থাকবে তত দিন আমরা বিদ্যুৎ বিল দেব না।
গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাফেজ আলম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যেভাবে হোক বন্ধ করুন। এটা সংলাপের মাধ্যমেও হতে পারে আবার আইনের মাধ্যমেও হতে পারে। আমাদের নিরাপত্তা দিন। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিবাদে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে প্রতীকী অনশনে কাজ না হলে ধারাবাহিক কর্মসূচিসহ প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন ব্যবসায়ীরা। অনশন থেকে এমন ঘোষণা দেন তারা।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ না হলে ঢাকার কয়েক লাখ দোকান মালিক-কর্মচারীকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান।
ওদিকে অনশন চলাকালেই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মঞ্চের কাছেই একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিতদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সে সময় মিনিট দশেকের জন্য বক্তব্য বন্ধ রাখা হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে অনশনকারীরা জানিয়েছেন। হাতবোমা বিস্ফোরণের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রেণের দায়িত্বে থাকা বাহিনী উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ প্রতীকী অনশন চলে।
অনশন শেষে সন্ধায় অবস্থান নেয়া ব্যবসায়ীদের পানি পান করিয়ে প্রতীকী অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সকল দায় অসুস্থ রাজনীতির, এ থেকে সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ চায়। রাজনীতির কারণে দেশের অর্থনীতিসহ সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এফবিসিসিআই-ডিসিসিআইর উদ্বেগ
বিজিএমইএ ভবনের সামনে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনকালে ককটেল হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পরে পাঠানো এফবিসিসিআইয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, হরতাল ও অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেশের অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয় এবং অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ যৌথ উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচি পালনকালে সেখানে ককটেল হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। তিনি পোশাকশিল্প মালিকদের এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টা হরতাল প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় এফবিসিসিআই।
এদিকে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান অবস্থায় দেশের ব্যবসায়ী সমাজ শুধু নিজেদের শিল্প-কারখানা রক্ষায় এ প্রতীকী অনশন করতে বাধ্য হয়েছেন এবং এ ধরনের কর্মসূচিতে ককটেল হামলা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এদিকে বিজিএমইএ ভবনের সামনে পোশাক ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তাদের অনশন চলাকালীন দুষ্কৃতকারী কর্তৃক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএসহ অনশনস্থলে উপস্থিত প্রতিটি সংগঠন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জ্ঞাপন করেছে। সংগঠনগুলো মনে করে, শান্তিপূর্ণভাবে অনশন কর্মসূচি চলাকালে সমাবেশস্থলে এ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থানকারী ও রপ্তানিকারিখাত পোশাক শিল্পের ওপর সরাসরি হামলার সামিল।
গতকাল বিজিএমইএ ভবনের সামনে প্রতীকী অনশনে বিজিএমইএ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ নিট ম্যানুফ্যাকচার অ্যাসোসিয়েশন (বিকিএমইএ)সহ পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ৪০টি সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।
এদিকে চলমান অস্থিরতা নিরসনে এসব সংগঠন মিলে ২টি কমিটি গঠন করেছে। কমটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদীকে। অন্য কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম মুহিউদ্দিনকে। এর মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেসব তৈরী পোশাক কারখানা নানা ধরনের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, তাদের পর্যবেক্ষণ করবেন আবদুস সালম মুর্শিদী। আর আন্দোলগত দিক দেখভাল করবেন মুহিউদ্দিন।
বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি একে আজাদ, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস, বিটিএমইএ’র সভাপতি তপন চৌধুরী, বিজিএমইএ দ্বিতীয় সহসভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ, এমএ মান্নান কচি, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, বিকেএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি আসলাম সানি, প্লাস্টিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জসিম উদ্দীন, বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার তপন চৌধুরী, পরিবহন মালিক সমিতির সদস্য ও বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ, বারভিডার সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন ও অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান না হলে দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এ সহিংসতা চলতে থাকলে শুধু ব্যবসায়ীদের অনশন নয়, কোটি কোটি শ্রমিককে অনাহারে থাকতে বাধ্য হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সহিংসতা বন্ধ না হলে আগামী দিনে পোশাক খাতের মালিক-শ্রমিকরা আন্দোলনে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয় সমাবেশ থেকে। ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি নিরাপত্তা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হয় নিরাপত্তা দিন, নয়তো ক্ষতি পূরণ দিন।
অনশনে এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ দুই নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে সমঝোতা আর পরস্পর ভালবাসার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান করুন। এ সময় তিনি দুই পক্ষকেই হানাহানি বন্ধ করে শান্তিতে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা বোমাবাজি চান না, নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে চান। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আপনারা সমঝোতা করুন তা না হলে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনাদের সমস্যা আপনারা সমাধান করুন, আমাদের ক্ষতি করবেন না। আমরা একবার রাস্তায় নামলে সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবো। তিনি বলেন, এ সহিংস পরিস্থিতিতে বিদেশীরা আমাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। তারা জানতে চাইছে কবে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে। আমরা (ব্যবসায়ীরা) তাদের কোন সুখবর দিতে পারিনি। তাই তারা অন্য দেশে অর্ডার দিচ্ছে। আমরা যখন প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে সবদিক থেকে এগিয়ে, ঠিক তখনই দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এ সমস্যার সমাধান না হলে ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, আইজীবী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বিজিএমই সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতির অবসান না হলে দেশ অচল করে দেয়ার মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের সেই কর্মসূচিতে ককটেল হামলা চালানো হলো। এভাবে বোমাবাজি করে আমাদের আটকানো যাবে না। বোমাবাজদের কাছে আমরা মাথানত করবো না। আমরা ব্যবসা করতে চাই। আমাদের ধবংস করবেন না। তিনি বলেন, আমাদের একের পর এক কর্মসূচি চলতেই থাকবে। রাজনীতিবিদদের বলব, আপনারা রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করুন। আমাদের হত্যা করে নয়। এসব করে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার সন্ধি চলছে। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, বিদেশী ক্রেতারা প্রতিনিয়ত জানতে চাইছেন- দেশের চলমান সঙ্কট কবে সমাধান হবে? কিন্তু আমরা নিজেরাই জানি না, তাদের কি উত্তর দেব। তারা এ দেশ থেকে অর্ডার প্রত্যাহার করারও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ খাতের সবাইকে পথে নামতে হবে।
অবিলম্বে নাশকতা বন্ধের দাবি জানিয়ে তপন চৌধুরী বলেন, আপনার দয়া করে নাশকতা বন্ধ করুন। তা না হলে পুরো দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তিনি বলেন, বর্তমান সহিংস কর্মসূচিতে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাই নয়, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজনীতিকরা দেশকে নিয়ে খেলাধুলা করছে। রাস্তায় মানুষ মরছে, জীবন দিচ্ছে। দেশ অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এটা চলতে পারে না। আসুন আমরা সবাই মিলে দেশকে গর্বিত স্থানে নিয়ে যাই। তা না হলে যারা এ সব কর্মসূচি দিচ্ছে, মানুষ তাদের ওপরই একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি যেভাবে পারেন সহিংসতা বন্ধ করেন। এ দায়িত্ব আপনার, আমরা আপনাকে ট্যাক্স দেই। চলমান সঙ্কট যত দিন থাকবে তত দিন আমরা বিদ্যুৎ বিল দেব না।
গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাফেজ আলম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি যেভাবে হোক বন্ধ করুন। এটা সংলাপের মাধ্যমেও হতে পারে আবার আইনের মাধ্যমেও হতে পারে। আমাদের নিরাপত্তা দিন। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিবাদে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে প্রতীকী অনশনে কাজ না হলে ধারাবাহিক কর্মসূচিসহ প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবেন ব্যবসায়ীরা। অনশন থেকে এমন ঘোষণা দেন তারা।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ না হলে ঢাকার কয়েক লাখ দোকান মালিক-কর্মচারীকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান।
ওদিকে অনশন চলাকালেই বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মঞ্চের কাছেই একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিতদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। সে সময় মিনিট দশেকের জন্য বক্তব্য বন্ধ রাখা হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে অনশনকারীরা জানিয়েছেন। হাতবোমা বিস্ফোরণের সময় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রেণের দায়িত্বে থাকা বাহিনী উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ প্রতীকী অনশন চলে।
অনশন শেষে সন্ধায় অবস্থান নেয়া ব্যবসায়ীদের পানি পান করিয়ে প্রতীকী অনশন ভাঙান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির সকল দায় অসুস্থ রাজনীতির, এ থেকে সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ চায়। রাজনীতির কারণে দেশের অর্থনীতিসহ সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এফবিসিসিআই-ডিসিসিআইর উদ্বেগ
বিজিএমইএ ভবনের সামনে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালনকালে ককটেল হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পরে পাঠানো এফবিসিসিআইয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, হরতাল ও অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি দেশের অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয় এবং অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ যৌথ উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচি পালনকালে সেখানে ককটেল হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ। তিনি পোশাকশিল্প মালিকদের এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টা হরতাল প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় এফবিসিসিআই।
এদিকে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান অবস্থায় দেশের ব্যবসায়ী সমাজ শুধু নিজেদের শিল্প-কারখানা রক্ষায় এ প্রতীকী অনশন করতে বাধ্য হয়েছেন এবং এ ধরনের কর্মসূচিতে ককটেল হামলা কোনভাবেই কাম্য নয়।
এদিকে বিজিএমইএ ভবনের সামনে পোশাক ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তাদের অনশন চলাকালীন দুষ্কৃতকারী কর্তৃক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএসহ অনশনস্থলে উপস্থিত প্রতিটি সংগঠন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জ্ঞাপন করেছে। সংগঠনগুলো মনে করে, শান্তিপূর্ণভাবে অনশন কর্মসূচি চলাকালে সমাবেশস্থলে এ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থানকারী ও রপ্তানিকারিখাত পোশাক শিল্পের ওপর সরাসরি হামলার সামিল।
No comments