রাজাপক্ষের পতনের গভীরে
শ্রীলঙ্কার
ইতিহাসে অন্যতম ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট ছিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। দোর্দণ্ড
দাপটে দেশটিকে প্রায় এক দশক শাসন করেছেন। দীর্ঘ দিনের গৃহযুদ্ধের কারণ
বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের নির্মূল করেছেন। শুধু বিরোধীদের
নয়, নিজ দলের ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিদের নানাভাবে শায়েস্তা করেছেন। তাঁর
বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নিজ মন্ত্রিসভার সদস্যরাও করতেন না। কিন্তু তাঁরই
ডাকা আগাম নির্বাচনেই গো-হারা হেরেছেন তিনি।
অনেকেরই প্রশ্ন—আটঘাট বেঁধে নামার পরও কেন রাজাপক্ষের এই পরাজয়?
এ ব্যাপারে ইন্ডিয়া টুডে সাময়িকীর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত ৯ জানুয়ারি সকালে রাজাপক্ষে যখন বুঝতে পারলেন যে নির্বাচনে তিনি হেরে যাচ্ছেন, তখন তিন লাখ অনুগত সেনার দ্বারস্থ হন। উদ্দেশ্য ছিল ছলচাতুরি করে ভোট গণনায় বিঘ্ন ঘটানো এবং এর জেরে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা। কিন্তু এমন প্রস্তাবে বেঁকে বসে সেনাবাহিনী। তখন প্রতিদ্বন্দ্বী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার বিজয় মেনে নিয়ে প্রেসিডেন্টের ভবন ত্যাগ করা ছাড়া রাজাপক্ষের আর কোনো উপায় ছিল না।
প্রভাবশালী রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরেছিল আগেই। গত নভেম্বর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা নিম্নগামী হলেও তাঁকে সরানো একরকম অসম্ভব মনে করা হতো। দ্বীপরাষ্ট্রটিতে তাঁর পরিবার ছিল সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। প্রায় এক দশক ধরে দেশ শাসন করার পরও সুপ্রিম কোর্টের নমনীয়তার সুযোগে বিতর্কিতভাবে ২০১০ সালে সংবিধান সংশোধন করেন। নজিরবিহীনভাবে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন রাজাপক্ষে। নির্বাচনে বিজয় নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী রাজাপক্ষে মেয়াদপূর্তির দুই বছর আগেই আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর রাজাপক্ষকে সবচেয়ে বড় অবাক করেন তাঁর সাবেক বিরোধী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া রাজাপক্ষের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরিসেনাকে কুমারাতুঙ্গা বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। নির্বাচনে সিরিসেনা বিপুল ভোটে রাজাপক্ষেকে হারিয়ে দেন।
২০০৯ সালের মে মাসে তামিলদের হটিয়ে দেওয়ার পর রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। ২০১০ সালে রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তামিলবিরোধী যুদ্ধে নেতৃত্বে থাকা সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা নির্বাচনে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে লড়েন। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যান ফনসেকা। এরপর দীর্ঘ দিনের সহচর ফনসেকাকে অযৌক্তিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে দিতে দেরি করেননি রাজাপক্ষে। তবে তাঁর এমন কর্মকাণ্ডকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষ। দেশটির অনেকের ধারণা, ফনসেকার সঙ্গে এমন আচরণে পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। নতুন মহাসড়ক নির্মাণ আর বড় অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রাজাপক্ষে তাঁর ক্ষমতাকে আরও কুক্ষিগত করতে থাকেন।
রাজনৈতিক বিরোধীদের নানাভাবে দমন করেন রাজাপক্ষে। তাঁর ভয়ে অনেক সাংবাদিক দেশত্যাগে বাধ্য হন। তিনি পরিবারের সদস্য ও মিত্রদের চীনের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান থেকে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার ব্যবস্থা করে দেন। শ্রীলঙ্কার মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিপক্ষে সরব হলেও রাজাপক্ষেকে ক্ষমতা থেকে টলাতে পারেনি।
তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হতে পেরে হতাশ রাজাপক্ষে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তাঁর ২৮ বছর বয়সী ছেলে নির্মলের জন্য ক্ষমতায় আরোহণের পথ করতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালে বয়স ৩৫ বছর হলে নির্মল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারতেন।
শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষের প্রভাব ছিল সর্বত্র। বন্ধুত্ব করে বা ভয় দেখিয়ে গণমাধ্যম ও হোটেল, শিল্প ও ব্যাংকিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরম বিশ্বস্ত বন্ধু বা স্বজনদের বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রাজাপক্ষের ভাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাবায়ার মদদে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলে। সংগঠনটি সংখ্যালঘু হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়।
ওই সংগঠনের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন মুসলিম ও খ্রিষ্টান নাগরিকেরা। তারা কলম্বোতে বৌদ্ধদের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে উসকানি দেয়। গত জুনে বিবিএস বলে পরিচিত এই সংগঠনের বৌদ্ধ ভিক্ষু ও তাদের সমর্থকেরা মুসলমান-নিয়ন্ত্রিত বেরুওয়ালা শহরে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হন। এর বিপক্ষে মুসলিম রাজনীতিকেরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে ঘটনার বিচার দাবি করেন। কিন্তু রাজাপক্ষের সরকার দোষী কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
এর মধ্যে রাজাপক্ষের মন্ত্রিসভায় অসন্তোষ দেখা দেয়। মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বাদ দিয়ে রাজাপক্ষে নতুনদের প্রাধান্য দেন। অগ্রাধিকার দেন নতুনদের মতামতে। সেই অনুযায়ী অন্যায্য কিছু চুক্তিও করেন। কিন্তু রাজাপক্ষের ভয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যরা ছিলেন নিশ্চুপ।
দেশটির তামিল-অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলের মানুসৈল মন জয়েও ব্যর্থ হন রাজাপক্ষে। ২০১৩ সালে দেশটির প্রধান বিচারপতি শিরানি বন্দোরনায়েকেকে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় তাঁকে তিনি অপসারণ করেন। রাজাপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নতুন সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়। গত বছর সর্বজনশ্রদ্ধেয় বৌদ্ধ ভিক্ষু মধুলোলুভি সোবিথা বিভিন্ন ক্ষেত্রের সুশীল সমাজের সদস্যদের এক করে সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন রাজাপক্ষে।
এরপর কুমারাতুঙ্গা তাঁর কারিশমা দেখান। কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতির পর তাঁর বাসায় বিরোধীরা মিলিত হন। সেখানে সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা দুই মেয়াদের শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু রাজাপক্ষের কারণে তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) থেকে তিনি বিতাড়িত হন। এ জন্য রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়াতে সিরিসেনা ও মিত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন।
রাজাপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে বিরোধীরা বিশেষ প্রযুক্তির ফোন ব্যবহার করেন। পরিকল্পনা মতো, বিরোধীরা গণমাধম্যে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এতে রাজাপক্ষে একক কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। বিরোধীদের এমন কৌশল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁদের প্রত্যাশিত ফলাফল নিয়ে আসে।
প্রায় দশক ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী রাজাপক্ষে খাদের কিনারায় এসে ঠেকেছেন। গত ১৩ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন জোটের মিত্র পিপল লিবারেশন ফ্রন্ট দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থায় রাজাপক্ষে ও তাঁর ভাই গোটাবায়া, বাসিল ও নামালের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা ঠুকেছে। বাসিল ও তাঁর স্ত্রী ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি রাজাপক্ষে ও তাঁর মিত্রদের বিপক্ষে মামলা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এমনটি হলে রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের আইনি খাঁড়ার নিচে পড়বেন।
অনেকেরই প্রশ্ন—আটঘাট বেঁধে নামার পরও কেন রাজাপক্ষের এই পরাজয়?
এ ব্যাপারে ইন্ডিয়া টুডে সাময়িকীর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গত ৯ জানুয়ারি সকালে রাজাপক্ষে যখন বুঝতে পারলেন যে নির্বাচনে তিনি হেরে যাচ্ছেন, তখন তিন লাখ অনুগত সেনার দ্বারস্থ হন। উদ্দেশ্য ছিল ছলচাতুরি করে ভোট গণনায় বিঘ্ন ঘটানো এবং এর জেরে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা। কিন্তু এমন প্রস্তাবে বেঁকে বসে সেনাবাহিনী। তখন প্রতিদ্বন্দ্বী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার বিজয় মেনে নিয়ে প্রেসিডেন্টের ভবন ত্যাগ করা ছাড়া রাজাপক্ষের আর কোনো উপায় ছিল না।
প্রভাবশালী রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তায় চিড় ধরেছিল আগেই। গত নভেম্বর থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা নিম্নগামী হলেও তাঁকে সরানো একরকম অসম্ভব মনে করা হতো। দ্বীপরাষ্ট্রটিতে তাঁর পরিবার ছিল সবকিছুর নিয়ন্ত্রক। প্রায় এক দশক ধরে দেশ শাসন করার পরও সুপ্রিম কোর্টের নমনীয়তার সুযোগে বিতর্কিতভাবে ২০১০ সালে সংবিধান সংশোধন করেন। নজিরবিহীনভাবে তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন রাজাপক্ষে। নির্বাচনে বিজয় নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী রাজাপক্ষে মেয়াদপূর্তির দুই বছর আগেই আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক প্রচারণা শুরু হওয়ার পর রাজাপক্ষকে সবচেয়ে বড় অবাক করেন তাঁর সাবেক বিরোধী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেওয়া রাজাপক্ষের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিরিসেনাকে কুমারাতুঙ্গা বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। নির্বাচনে সিরিসেনা বিপুল ভোটে রাজাপক্ষেকে হারিয়ে দেন।
২০০৯ সালের মে মাসে তামিলদের হটিয়ে দেওয়ার পর রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। ২০১০ সালে রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তামিলবিরোধী যুদ্ধে নেতৃত্বে থাকা সেনাপ্রধান শরৎ ফনসেকা নির্বাচনে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে লড়েন। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যান ফনসেকা। এরপর দীর্ঘ দিনের সহচর ফনসেকাকে অযৌক্তিক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে কারাগারে দিতে দেরি করেননি রাজাপক্ষে। তবে তাঁর এমন কর্মকাণ্ডকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষ। দেশটির অনেকের ধারণা, ফনসেকার সঙ্গে এমন আচরণে পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। নতুন মহাসড়ক নির্মাণ আর বড় অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি রাজাপক্ষে তাঁর ক্ষমতাকে আরও কুক্ষিগত করতে থাকেন।
রাজনৈতিক বিরোধীদের নানাভাবে দমন করেন রাজাপক্ষে। তাঁর ভয়ে অনেক সাংবাদিক দেশত্যাগে বাধ্য হন। তিনি পরিবারের সদস্য ও মিত্রদের চীনের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান থেকে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার ব্যবস্থা করে দেন। শ্রীলঙ্কার মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিপক্ষে সরব হলেও রাজাপক্ষেকে ক্ষমতা থেকে টলাতে পারেনি।
তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হতে পেরে হতাশ রাজাপক্ষে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তাঁর ২৮ বছর বয়সী ছেলে নির্মলের জন্য ক্ষমতায় আরোহণের পথ করতে চেয়েছিলেন তিনি। ২০২১ সালে বয়স ৩৫ বছর হলে নির্মল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারতেন।
শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষের প্রভাব ছিল সর্বত্র। বন্ধুত্ব করে বা ভয় দেখিয়ে গণমাধ্যম ও হোটেল, শিল্প ও ব্যাংকিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। পরম বিশ্বস্ত বন্ধু বা স্বজনদের বিদেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রাজাপক্ষের ভাই প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাবায়ার মদদে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলে। সংগঠনটি সংখ্যালঘু হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়।
ওই সংগঠনের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন মুসলিম ও খ্রিষ্টান নাগরিকেরা। তারা কলম্বোতে বৌদ্ধদের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে উসকানি দেয়। গত জুনে বিবিএস বলে পরিচিত এই সংগঠনের বৌদ্ধ ভিক্ষু ও তাদের সমর্থকেরা মুসলমান-নিয়ন্ত্রিত বেরুওয়ালা শহরে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে তিনজন নিহত হন। এর বিপক্ষে মুসলিম রাজনীতিকেরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে ঘটনার বিচার দাবি করেন। কিন্তু রাজাপক্ষের সরকার দোষী কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
এর মধ্যে রাজাপক্ষের মন্ত্রিসভায় অসন্তোষ দেখা দেয়। মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের বাদ দিয়ে রাজাপক্ষে নতুনদের প্রাধান্য দেন। অগ্রাধিকার দেন নতুনদের মতামতে। সেই অনুযায়ী অন্যায্য কিছু চুক্তিও করেন। কিন্তু রাজাপক্ষের ভয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যরা ছিলেন নিশ্চুপ।
দেশটির তামিল-অধ্যুষিত উত্তরাঞ্চলের মানুসৈল মন জয়েও ব্যর্থ হন রাজাপক্ষে। ২০১৩ সালে দেশটির প্রধান বিচারপতি শিরানি বন্দোরনায়েকেকে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় তাঁকে তিনি অপসারণ করেন। রাজাপক্ষের ওই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নতুন সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়। গত বছর সর্বজনশ্রদ্ধেয় বৌদ্ধ ভিক্ষু মধুলোলুভি সোবিথা বিভিন্ন ক্ষেত্রের সুশীল সমাজের সদস্যদের এক করে সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেন রাজাপক্ষে।
এরপর কুমারাতুঙ্গা তাঁর কারিশমা দেখান। কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতির পর তাঁর বাসায় বিরোধীরা মিলিত হন। সেখানে সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা দুই মেয়াদের শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু রাজাপক্ষের কারণে তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) থেকে তিনি বিতাড়িত হন। এ জন্য রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়াতে সিরিসেনা ও মিত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন।
রাজাপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন গোয়েন্দাদের ফাঁকি দিতে বিরোধীরা বিশেষ প্রযুক্তির ফোন ব্যবহার করেন। পরিকল্পনা মতো, বিরোধীরা গণমাধম্যে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। এতে রাজাপক্ষে একক কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। বিরোধীদের এমন কৌশল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁদের প্রত্যাশিত ফলাফল নিয়ে আসে।
প্রায় দশক ধরে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী রাজাপক্ষে খাদের কিনারায় এসে ঠেকেছেন। গত ১৩ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন জোটের মিত্র পিপল লিবারেশন ফ্রন্ট দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থায় রাজাপক্ষে ও তাঁর ভাই গোটাবায়া, বাসিল ও নামালের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা ঠুকেছে। বাসিল ও তাঁর স্ত্রী ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন। রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি রাজাপক্ষে ও তাঁর মিত্রদের বিপক্ষে মামলা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এমনটি হলে রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বড় ধরনের আইনি খাঁড়ার নিচে পড়বেন।
No comments