পায়রা নদীতে ট্রলারডুবি- এ মৃত্যুর সান্ত্বনা নেই
তারা
পটুয়াখালীর সমুদ্রসৈকতের এলাকা কুয়াকাটা থেকে এসেছিলেন বরগুনা জেলার বামনা
উপজেলার চলাভাঙা দরবার শরিফের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিতে। নিজেরাই
ভাড়া করেছিলেন মাছ ধরার ট্রলার। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি তাদের মৃত্যুর দিকে
ঠেলে দিল। শুক্রবার পায়রা ও বিষখালীর মোহনায় ট্রলারটি নিমজ্জিত হলে সাতজনের
মৃত্যু হয়। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। দিনের বেলা দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার কারণে
বেশিরভাগ যাত্রী বেঁচে গেছেন। মাছ ধরার ট্রলার হওয়ায় এর কোনো ছাউনি ছিল
না। ফলে নৌকা থেকে বের হতে তেমন সমস্যা হয়নি। নদীবিধৌত এলাকা হওয়ায়
ট্রলারের দেড়শ' থেকে দুইশ' যাত্রীর বেশিরভাগ সম্ভবত সাঁতারও জানতেন। উদ্ধার
পাওয়া যাত্রীরা বলছেন, ধারণ ক্ষমতার তুলনায় বেশি যাত্রী ওঠার কারণেই
ডুবেছে ট্রলারটি। ট্রলারটিকে ডুবতে দেখে আশপাশ থেকে কয়েকটি ট্রলার ছুটে
আসে। কোস্টগার্ড সদস্যরাও উদ্ধার কাজে অংশ নেন। এ মৃত্যুর জন্য কাকে আমরা
দায়ী করব? ট্রলারটি ব্যবহার হচ্ছিল মাছ ধরার জন্য। আমাদের দেশে দূর-দূরান্ত
এলাকা থেকে ওয়াজ মাহফিল কিংবা এ ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নানা
বয়সের লোকজন আগ্রহী থাকেন। প্রতি বছর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় দেখা যায় এমনকি
বয়স্ক ব্যক্তিরাও সব কষ্ট উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত অঞ্চল থকে ছুটে আসেন। এ
বছর রাজনৈতিক অশান্তি-অস্থিরতার মধ্যেও এ আয়োজনে শামিল হয়েছিলেন লাখ লাখ
মানুষ। বরগুনার চলাভাঙা দরবার শরিফের ওয়াজ মাহফিলের প্রতি বিপুলসংখ্যক
লোকের আকর্ষণ রয়েছে, এটা ধরে নেওয়া যায়। তারা কোনো বাধাই মানতে রাজি নন।
ধর্মীয় নেতাদের বক্তব্য শোনার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে পেঁৗছানোর ব্যবস্থা তারা
নিজেরাই করেছিলেন। নিহতদের স্বজনরা তাই কাউকে অব্যবস্থাপনা কিংবা প্রয়োজনীয়
যানবাহন সংগ্রহ না করার জন্য দায়ী করতে পারবেন না। অবশ্য এমন দাবিও কেউ
করেননি। কিন্তু ঘটনাটি মর্মান্তিক। কয়েকটি পরিবার এভাবে শোকের সাগরে
নিমজ্জিত হলো। শুধু পটুয়াখালী ও বরগুনার প্রশাসনের জন্য নয়, দেশের সর্বত্রই
এ ধরনের যানবাহন ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। জনসচেতনতাও
গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সরকারে যারা নির্বাচিত হন, তাদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব
বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গোপসাগরের মোহনার নদীগুলোতে এমনকি শীত
মৌসুমেও চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। শুক্রবার নৌযানটি ঝড়-বৃষ্টি
ছাড়াই বিপদে পড়া তাই একেবারে অস্বাভাবিক ছিল না। আমরা শোকাহত পরিবারগুলোর
প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাই। নিহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানে সরকার
এবং স্থানীয় বিত্তবানরা উদ্যোগী হবেন, এটাই প্রত্যাশা।
No comments