চাচার পাঁচালি- শান্তিদূত by মাহবুব তালুকদার
দেশের
অবস্থা দিনে দিনে আরও ঘোরালো হয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার জীবনযাত্রা কিছুটা
স্বাভাবিক থাকলেও নাগরিকদের কেউই শঙ্কা বা আতঙ্কমুক্ত নয়। সরকারের কঠোরতম
ব্যবস্থা গ্রহণের পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হয় না। চাচার
মতে, সরকার কখনও ব্যর্থ হতে পারে না, তার ব্যর্থতার কোন অবকাশ নেই। কিন্তু
এসবের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? চাচাকে বললাম, দেশে যে কোন
সময়ই একটা নির্বাচন হতে হবে। আমরা কি ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারি?
কথা বলা মানে সংলাপ তো? তুমি কৌশলে সংলাপকে কথা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছ। তোমার চালাকি ধরে ফেলেছি।
চাচা! আমি কৌশল করছি না। শুধু বলতে চাচ্ছি, নির্বাচন যখনই হোক না কেন, আমরা কি সে বিষয়ে আলাপ করতে পারি?
আমি তো তোমাকে আগেই বলে দিয়েছি ২০১৯ সনের আগে কোন নির্বাচন হবে না।
আমি সে নির্বাচন সম্পর্কে কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি আগামী নির্বাচন, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচন সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে গেছি। আমি আলোচনা করতে চাচ্ছি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সম্পর্কে।
আমার কথা শুনে চাচা কৌতূহলভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন সম্পর্কে কোথায় ধারণা পেলে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই বলেন নি।
কথা ঠিক। তিনি এ বিষয়ে কিছু না বললেও, একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী কথা বলেছেন।
কে তিনি?
ইঞ্জনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত ৩০শে জানুয়ারি তিনি ফরিদপুরে বলেছেন, ‘৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৫৩ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান সরকার দেশে যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে এবং বিএনপি’র ভ্রান্তনীতির কারণে আগামীতে দেশে বিএনপি’র কোন অস্তিত্বই থাকবে না। তখন আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমরা ২০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবো।’
তার কথায় যুক্তি আছে। চাচা বললেন, খালেদা জিয়ার জ্বালাও পোড়াও নীতির কারণে বিএনপির কিছু মার্কা মারা লোক ছাড়া আর কেউ তাদেরকে ভোট দেবে না।
কিন্তু তাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০ আসন পাওয়া যাবে কি? বিএনপি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে-
চাচা বাধা দিয়ে বললেন, বিএনপি যাতে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে, সে ব্যবস্থা হয়েই আছে।
কি ভাবে?
এটা রাজনৈতিক কৌশলের ব্যাপার। ২০১৯ সালের নির্বাচন ২০১৩ সালের মতোই সংবিধান মেনেই হবে। সংবিধানের এক চুল পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন অবশ্যই শেখ হাসিনা তথা দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে। এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ারও গতবারের মতো নির্বাচন বর্জন ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। ফলাফল কি হবে, তা তো তুমি বুঝতেই পারছো। তবে ফলাফলটা মাননীয় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর আগাম ফাঁস করে দেয়া মোটেই উচিত হয়নি। তবে এ বিষয়ে একটা কথা আছে।
কি কথা?
আগামী নির্বাচনে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ তার পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তার মতো একজন দক্ষ অফিসার সত্যি খুব বিরল।
তিনি পদে থাকা না থাকাতে কি কিছু আসে যায়?
অনেক কিছু আসে যায়। তিনি যে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির নির্বাচন প্রার্থীদের যেভাবে ম্যানেজ করেছেন, তার কোন তুলনা নেই। সত্যি বলতে কি, ২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তার অবদানের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন। দেশকে একটা অসাধারণ নির্বাচন উপহার দেয়া তার কৃতিত্ব।
চাচা! আগামী নির্বাচনের রূপরেখা তো জানা হয়ে গেছে। সে জন্য আমি কথা বলতে চাচ্ছি ২০২৪-এর নির্বাচন নিয়ে। তা নিয়ে কি কোন সংলাপ হতে পারে?
তুমি আবার সংলাপ প্রসঙ্গ টানছো। সংলাপ শব্দটা মাথা থেকে একেবারে সরিয়ে ফেল। সংলাপ শব্দটা এখন বিস্ফোরক দ্রব্যের মতোই পরিত্যাজ্য। গত রোববার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের গোল টেবিল বৈঠকে ডক্টর ফরাসউদ্দিন যথার্থই বলেছেন, ‘যাঁরা সংলাপের কথা বলেন, তাঁরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, গণশত্রু। স্বাধীনতা বিরোধী কয়েকজন মানুষ যাঁরা কখনও কখনও রাষ্ট্রের উচ্চপদে গিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন সংলাপের কথা বলছেন। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠি জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাস-নাশকতার মাধ্যমে বাংলাদেশ গিলে খেতে চায়। তাদের সঙ্গে কখনও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সংলাপ হতে পারে না।’
তিনি অত্যন্ত কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে সবকিছুর পরও নাগরিক সমাজের সংলাপের উদ্যোক্তাদের আমি জাতির শত্রু, গণশত্রু বলে মনে করতে পারছি না। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ একটা মারাত্মক কথা বলেছেন।
কি সে কথা?
তিনি বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। পাকিস্তান পুরোপুরিভাবে খালেদা জিয়ার আন্দোলনকে সহযোগিতা করছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদ কোন কথা বললে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাযোগ্য।
তুমি বলতে চাচ্ছ কি?
তোফায়েল সাহেব যে অভিযোগটি তুলেছেন, তা সাংঘাতিক। আমরা জানি, এ বিষয়ে একজন পাকিস্তানি দূতাবাস কর্মীকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু খবরটা আমরা জানতে পারলাম তিনি দেশে চলে যাওয়ার পর। বিএনপির বর্তমান আন্দোলনে যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে এবং পাকিস্তান পুরোপুরিভাবে খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করছে, কথাটি বলেই থেমে যাওয়া উচিত নয়। এর সাক্ষ্য-প্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। যোগ্য প্রমাণ পেলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানোসহ আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়।
হ্যাঁ। তুমি ঠিকই বলেছো। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভারতও খুশি হবে।
আমাদের কথাবার্তার মাঝখানে চাচি এসে উপস্থিত হলেন। ট্রে-তে নাশতার প্লেট সাজানো। সেটা সাইড টেবিলের ওপর রেখে সোফায় বসতে বসতে তিনি বললেন, আজ তোমাদের কি নিয়ে কথা হচ্ছে? ক্রিকেট না রাজনীতি?
আমরা রাজনীতির বাইরে যেতে পারছি না। আমি বললাম।
রাজনীতি তো এখন সংলাপের উদ্যোগের মধ্যে এসে ঠেকেছে।
আবার সংলাপ! চাচা ক্ষুব্ধ স্বরে বললেন।
ঠিক আছে। সংলাপ না হয় না হলো। কিন্তু সনদ প্রক্রিয়া তো চলতে পারে।
সংলাপ না হলে সনদ তৈরি হবে কি করে? আমি প্রশ্ন রাখলাম।
চাচি মৃদু হাসলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজেরাই একটা সনদপত্র তৈরি করতে পারে। সেটা সবার বিবেচনার জন্য পেশ করা যায়।
রাজনৈতিক দল তাতে সাড়া দেবে কেন? চাচা যেন বিদ্রূপের মতো করে বললেন কথাটা।
সাড়া না দিক, তাদের মতামত তো বলতে পারে।
বলা মানেই তো সংলাপ। চাচা বললেন, আর সংলাপ মানে-
বাধা দিয়ে চাচি বললেন, সংলাপ-এলার্জি বাদ দেয়া গেল। কিন্তু দলগুলো লিখিত মতামত তো দিতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই সংলাপ নয়। রাজনৈতিক অবস্থা সমাধানে একটা কোন জায়গা থেকে সামনে এগোতে হবে।
তোমার মতিগতি বোঝা যাচ্ছে। এটা মোটেই রাজনৈতিক সমস্যা নয়।
আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তো বটেই। অর্থনৈতিক সমস্যা বলতেও কি তোমার আপত্তি আছে?
না।
তাহলে হয়েই গেল। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটা সনদ তৈরির ব্যবস্থা হতেই পারে। অন্তত ককটেল বোমা ও পেট্রল-আগুন এবং ক্রসফায়ার বা গুলি করা থেকে বিরত থাকতে সবাই একমত হবে।
চাচা আবার উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, কি বলতে চাও তুমি? ক্রসফায়ার বা গুলি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদেরকে ডাংগুলি খেলার জন্য অস্ত্র দেয়া হয়নি।
কিছুই যখন হবে না, তখন একটা বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা যায়?
কি সেই ব্যবস্থা? আমি জানতে চাইলাম।
আমাদের দেশে সাময়িকভাবে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা যায়। তবে এটা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত প্রস্তাব।
কি বললে তুমি? চাচা এবার আক্রোশে ফেটে পড়লেন, আমাদের দেশ কি আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার মতো কোন বিরোধপূর্ণ দেশ! তুমি কি চাও বিদেশীরা-
তুমি আমার কথাটা অন্তত শেষ করতে দাও। আমি মোটেই বিদেশীদের কথা বলছি না। আমি আমাদের কথাই বলছি। আমি বলছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আমাদের দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগ করা যায় কি না! চাচি চাচার রক্তচক্ষুর দিকে না তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী পৃথিবীর সব দেশে অকুণ্ঠ সুনাম অর্জন করেছে। তারা কি শান্তির দূত হয়ে নিজ দেশে শান্তি স্থাপন করতে পারে না?
কথা বলা মানে সংলাপ তো? তুমি কৌশলে সংলাপকে কথা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছ। তোমার চালাকি ধরে ফেলেছি।
চাচা! আমি কৌশল করছি না। শুধু বলতে চাচ্ছি, নির্বাচন যখনই হোক না কেন, আমরা কি সে বিষয়ে আলাপ করতে পারি?
আমি তো তোমাকে আগেই বলে দিয়েছি ২০১৯ সনের আগে কোন নির্বাচন হবে না।
আমি সে নির্বাচন সম্পর্কে কথা বলতে চাচ্ছি না। আমি আগামী নির্বাচন, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নির্বাচন সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়ে গেছি। আমি আলোচনা করতে চাচ্ছি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন সম্পর্কে।
আমার কথা শুনে চাচা কৌতূহলভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন সম্পর্কে কোথায় ধারণা পেলে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছুই বলেন নি।
কথা ঠিক। তিনি এ বিষয়ে কিছু না বললেও, একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী কথা বলেছেন।
কে তিনি?
ইঞ্জনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত ৩০শে জানুয়ারি তিনি ফরিদপুরে বলেছেন, ‘৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৫৩ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান সরকার দেশে যে উন্নয়নমূলক কাজ করছে এবং বিএনপি’র ভ্রান্তনীতির কারণে আগামীতে দেশে বিএনপি’র কোন অস্তিত্বই থাকবে না। তখন আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমরা ২০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবো।’
তার কথায় যুক্তি আছে। চাচা বললেন, খালেদা জিয়ার জ্বালাও পোড়াও নীতির কারণে বিএনপির কিছু মার্কা মারা লোক ছাড়া আর কেউ তাদেরকে ভোট দেবে না।
কিন্তু তাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০ আসন পাওয়া যাবে কি? বিএনপি যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে-
চাচা বাধা দিয়ে বললেন, বিএনপি যাতে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে, সে ব্যবস্থা হয়েই আছে।
কি ভাবে?
এটা রাজনৈতিক কৌশলের ব্যাপার। ২০১৯ সালের নির্বাচন ২০১৩ সালের মতোই সংবিধান মেনেই হবে। সংবিধানের এক চুল পরিমাণও ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন অবশ্যই শেখ হাসিনা তথা দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে। এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ারও গতবারের মতো নির্বাচন বর্জন ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। ফলাফল কি হবে, তা তো তুমি বুঝতেই পারছো। তবে ফলাফলটা মাননীয় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর আগাম ফাঁস করে দেয়া মোটেই উচিত হয়নি। তবে এ বিষয়ে একটা কথা আছে।
কি কথা?
আগামী নির্বাচনে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ তার পদে থাকবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তার মতো একজন দক্ষ অফিসার সত্যি খুব বিরল।
তিনি পদে থাকা না থাকাতে কি কিছু আসে যায়?
অনেক কিছু আসে যায়। তিনি যে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, ইচ্ছুক-অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির নির্বাচন প্রার্থীদের যেভাবে ম্যানেজ করেছেন, তার কোন তুলনা নেই। সত্যি বলতে কি, ২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তার অবদানের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন। দেশকে একটা অসাধারণ নির্বাচন উপহার দেয়া তার কৃতিত্ব।
চাচা! আগামী নির্বাচনের রূপরেখা তো জানা হয়ে গেছে। সে জন্য আমি কথা বলতে চাচ্ছি ২০২৪-এর নির্বাচন নিয়ে। তা নিয়ে কি কোন সংলাপ হতে পারে?
তুমি আবার সংলাপ প্রসঙ্গ টানছো। সংলাপ শব্দটা মাথা থেকে একেবারে সরিয়ে ফেল। সংলাপ শব্দটা এখন বিস্ফোরক দ্রব্যের মতোই পরিত্যাজ্য। গত রোববার সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের গোল টেবিল বৈঠকে ডক্টর ফরাসউদ্দিন যথার্থই বলেছেন, ‘যাঁরা সংলাপের কথা বলেন, তাঁরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, গণশত্রু। স্বাধীনতা বিরোধী কয়েকজন মানুষ যাঁরা কখনও কখনও রাষ্ট্রের উচ্চপদে গিয়েছিলেন, তাঁরাই এখন সংলাপের কথা বলছেন। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠি জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাস-নাশকতার মাধ্যমে বাংলাদেশ গিলে খেতে চায়। তাদের সঙ্গে কখনও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির সংলাপ হতে পারে না।’
তিনি অত্যন্ত কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে সবকিছুর পরও নাগরিক সমাজের সংলাপের উদ্যোক্তাদের আমি জাতির শত্রু, গণশত্রু বলে মনে করতে পারছি না। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ একটা মারাত্মক কথা বলেছেন।
কি সে কথা?
তিনি বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। পাকিস্তান পুরোপুরিভাবে খালেদা জিয়ার আন্দোলনকে সহযোগিতা করছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমদ কোন কথা বললে তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাযোগ্য।
তুমি বলতে চাচ্ছ কি?
তোফায়েল সাহেব যে অভিযোগটি তুলেছেন, তা সাংঘাতিক। আমরা জানি, এ বিষয়ে একজন পাকিস্তানি দূতাবাস কর্মীকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু খবরটা আমরা জানতে পারলাম তিনি দেশে চলে যাওয়ার পর। বিএনপির বর্তমান আন্দোলনে যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে এবং পাকিস্তান পুরোপুরিভাবে খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করছে, কথাটি বলেই থেমে যাওয়া উচিত নয়। এর সাক্ষ্য-প্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত। যোগ্য প্রমাণ পেলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানোসহ আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়।
হ্যাঁ। তুমি ঠিকই বলেছো। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভারতও খুশি হবে।
আমাদের কথাবার্তার মাঝখানে চাচি এসে উপস্থিত হলেন। ট্রে-তে নাশতার প্লেট সাজানো। সেটা সাইড টেবিলের ওপর রেখে সোফায় বসতে বসতে তিনি বললেন, আজ তোমাদের কি নিয়ে কথা হচ্ছে? ক্রিকেট না রাজনীতি?
আমরা রাজনীতির বাইরে যেতে পারছি না। আমি বললাম।
রাজনীতি তো এখন সংলাপের উদ্যোগের মধ্যে এসে ঠেকেছে।
আবার সংলাপ! চাচা ক্ষুব্ধ স্বরে বললেন।
ঠিক আছে। সংলাপ না হয় না হলো। কিন্তু সনদ প্রক্রিয়া তো চলতে পারে।
সংলাপ না হলে সনদ তৈরি হবে কি করে? আমি প্রশ্ন রাখলাম।
চাচি মৃদু হাসলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিজেরাই একটা সনদপত্র তৈরি করতে পারে। সেটা সবার বিবেচনার জন্য পেশ করা যায়।
রাজনৈতিক দল তাতে সাড়া দেবে কেন? চাচা যেন বিদ্রূপের মতো করে বললেন কথাটা।
সাড়া না দিক, তাদের মতামত তো বলতে পারে।
বলা মানেই তো সংলাপ। চাচা বললেন, আর সংলাপ মানে-
বাধা দিয়ে চাচি বললেন, সংলাপ-এলার্জি বাদ দেয়া গেল। কিন্তু দলগুলো লিখিত মতামত তো দিতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই সংলাপ নয়। রাজনৈতিক অবস্থা সমাধানে একটা কোন জায়গা থেকে সামনে এগোতে হবে।
তোমার মতিগতি বোঝা যাচ্ছে। এটা মোটেই রাজনৈতিক সমস্যা নয়।
আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা তো বটেই। অর্থনৈতিক সমস্যা বলতেও কি তোমার আপত্তি আছে?
না।
তাহলে হয়েই গেল। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটা সনদ তৈরির ব্যবস্থা হতেই পারে। অন্তত ককটেল বোমা ও পেট্রল-আগুন এবং ক্রসফায়ার বা গুলি করা থেকে বিরত থাকতে সবাই একমত হবে।
চাচা আবার উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। বললেন, কি বলতে চাও তুমি? ক্রসফায়ার বা গুলি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদেরকে ডাংগুলি খেলার জন্য অস্ত্র দেয়া হয়নি।
কিছুই যখন হবে না, তখন একটা বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবা যায়?
কি সেই ব্যবস্থা? আমি জানতে চাইলাম।
আমাদের দেশে সাময়িকভাবে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা যায়। তবে এটা আমার নিতান্তই ব্যক্তিগত প্রস্তাব।
কি বললে তুমি? চাচা এবার আক্রোশে ফেটে পড়লেন, আমাদের দেশ কি আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার মতো কোন বিরোধপূর্ণ দেশ! তুমি কি চাও বিদেশীরা-
তুমি আমার কথাটা অন্তত শেষ করতে দাও। আমি মোটেই বিদেশীদের কথা বলছি না। আমি আমাদের কথাই বলছি। আমি বলছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় আমাদের দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনী নিয়োগ করা যায় কি না! চাচি চাচার রক্তচক্ষুর দিকে না তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী পৃথিবীর সব দেশে অকুণ্ঠ সুনাম অর্জন করেছে। তারা কি শান্তির দূত হয়ে নিজ দেশে শান্তি স্থাপন করতে পারে না?
No comments