সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য -১৫৪ by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
রামমোহন রায়কে সাধারণভাবে রাজা রামমোহন রায় বলা হয়। তিনি রাজা উপাধিটি পেয়েছিলেন সে সময়ের নামমাত্র মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবরের (১৮০৬-১৮৩৭) কাছ থেকে। এর পেছনে কারণ ছিল। এ সময় সম্রাট তার জন্য বরাদ্দ বার্ষিক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য কোম্পানি শাসকদের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। তাই সম্রাট স্থির করলেন তিনি আবেদন জানাবেন ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে। তার পক্ষে ওকালতি করার জন্য সে সময়ের সুশিক্ষিত ভারতীয় হিসেবে রামমোহন রায়কেই বাছাই করলেন। রামমোহন রায়ও এ ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। এ সময় সম্রাটের আভিজাত্যকে ধারণ করার জন্য সম্রাট তার প্রতিনিধি হিসেবে রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধি প্রদান করেছিলেন। রামমোহন রায় অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করে ১৮৩২ সালে ফ্রান্স ভ্রমণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি ইংল্যান্ড থেকে আর দেশে ফিরতে পারেননি। ১৮৩৩ সালে ব্রিস্টলে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০- ১৮৯১ খ্রি.) : বিদ্যাসাগর উপাধিতে সমধিক পরিচিত হলেও এই ক্ষণজন্মা পুরুষের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বাঙালি নবজাগরণের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে দার্শনিক, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, লেখক, অনুবাদক, মুদ্রাকর, প্রকাশক, সমাজ সংস্কারক ও ব্যাকরণবিদ। তিনি সহজবোধ্য আধুনিক বাংলা গদ্য রচনার পথপ্রদর্শক ছিলেন। মুদ্রণ শিল্পে বিদ্যাসাগর বাংলা অক্ষরকে অনেক সহজীকরণ করেছিলেন। উনিশ শতকের ভারতে একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। জ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি একজন সংস্কৃত পণ্ডিত হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। কলকাতার সংস্কৃত কলেজ পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করে।
ছেলেবেলা থেকেই ঈশ্বরচন্দ্রের লেখাপড়ার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি ঘরের প্রদীপের খরচ বাঁচাতে রাতে সড়ক বাতির নিচে দাঁড়িয়ে বই পড়তেন। স্কুলে সব বিষয়ে তিনি অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রাখেন। ফলে বেশ কয়েকটি বৃত্তি লাভ করেন। নিজের খরচ মেটানো এবং পরিবারকে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র জোড়াসাঁকোতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নেন। এরপর তিনি ভর্তি হন সংস্কৃত কলেজে। দীর্ঘ ১২ বছর সেখানে লেখাপড়া করেন। ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলংকারশাস্ত্র, বেদান্ত, স্মৃতি ও জ্যোতির্বিদ্যায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৮৩৯ সালে ঈশ্বরচন্দ্র আইনশাস্ত্র চর্চাও সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৮৪১ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন।
পাঁচ বছর পর ১৮৪৬ সালে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ছেড়ে সংস্কৃত কলেজে সহকারী সেক্রেটারি পদে যোগদান করেন। ঈশ্বরচন্দ্র শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। একই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব লাভ করেন ১৮৫১ সালে। ১৮৫৫ সালে তিনি বিশেষ স্কুল পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কলেজ সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে তার মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজ থেকে পদত্যাগ করে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান করণিক হিসেবে যোগদান করেন।
দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণ ভাবনা ছিল ঈশ্বরচন্দ্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তার লেখায় ও বক্তব্যে এদের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা থাকত। সাধারণ মানুষ ঈশ্বরচন্দ্রকে ‘দয়ার সাগর’ বা ‘করুণার সাগর’ বলে ডাকত। তিনি অসুস্থ-পীড়িতদের পাশে ছুটে যেতেন। তাদের প্রতি যে কোনো অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতেন। সংস্কৃত কলেজের ছাত্র থাকাকালে ঈশ্বরচন্দ্র তার বৃত্তির টাকা দিয়ে দরিদ্রদের খাবার কিনে দিতেন। অসুস্থদের কিনে দিতেন ওষুধ। গ্রামের অসহায় প্রতিবেশীদেরও সাধ্যমতো দান করতেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০- ১৮৯১ খ্রি.) : বিদ্যাসাগর উপাধিতে সমধিক পরিচিত হলেও এই ক্ষণজন্মা পুরুষের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বাঙালি নবজাগরণের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বিদ্যাসাগর ছিলেন একাধারে দার্শনিক, শিক্ষানুরাগী, শিক্ষক, লেখক, অনুবাদক, মুদ্রাকর, প্রকাশক, সমাজ সংস্কারক ও ব্যাকরণবিদ। তিনি সহজবোধ্য আধুনিক বাংলা গদ্য রচনার পথপ্রদর্শক ছিলেন। মুদ্রণ শিল্পে বিদ্যাসাগর বাংলা অক্ষরকে অনেক সহজীকরণ করেছিলেন। উনিশ শতকের ভারতে একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। জ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি একজন সংস্কৃত পণ্ডিত হিসেবেই বিশেষভাবে পরিচিত। কলকাতার সংস্কৃত কলেজ পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত করে।
ছেলেবেলা থেকেই ঈশ্বরচন্দ্রের লেখাপড়ার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি ঘরের প্রদীপের খরচ বাঁচাতে রাতে সড়ক বাতির নিচে দাঁড়িয়ে বই পড়তেন। স্কুলে সব বিষয়ে তিনি অসাধারণ মেধার স্বাক্ষর রাখেন। ফলে বেশ কয়েকটি বৃত্তি লাভ করেন। নিজের খরচ মেটানো এবং পরিবারকে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরচন্দ্র জোড়াসাঁকোতে ছাত্র পড়ানোর কাজ নেন। এরপর তিনি ভর্তি হন সংস্কৃত কলেজে। দীর্ঘ ১২ বছর সেখানে লেখাপড়া করেন। ১৮৪১ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলংকারশাস্ত্র, বেদান্ত, স্মৃতি ও জ্যোতির্বিদ্যায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ১৮৩৯ সালে ঈশ্বরচন্দ্র আইনশাস্ত্র চর্চাও সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৮৪১ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন।
পাঁচ বছর পর ১৮৪৬ সালে তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ছেড়ে সংস্কৃত কলেজে সহকারী সেক্রেটারি পদে যোগদান করেন। ঈশ্বরচন্দ্র শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজে সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। একই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব লাভ করেন ১৮৫১ সালে। ১৮৫৫ সালে তিনি বিশেষ স্কুল পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কলেজ সেক্রেটারি রসময় দত্তের সঙ্গে তার মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজ থেকে পদত্যাগ করে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান করণিক হিসেবে যোগদান করেন।
দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কল্যাণ ভাবনা ছিল ঈশ্বরচন্দ্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য। তার লেখায় ও বক্তব্যে এদের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা থাকত। সাধারণ মানুষ ঈশ্বরচন্দ্রকে ‘দয়ার সাগর’ বা ‘করুণার সাগর’ বলে ডাকত। তিনি অসুস্থ-পীড়িতদের পাশে ছুটে যেতেন। তাদের প্রতি যে কোনো অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতেন। সংস্কৃত কলেজের ছাত্র থাকাকালে ঈশ্বরচন্দ্র তার বৃত্তির টাকা দিয়ে দরিদ্রদের খাবার কিনে দিতেন। অসুস্থদের কিনে দিতেন ওষুধ। গ্রামের অসহায় প্রতিবেশীদেরও সাধ্যমতো দান করতেন।
No comments