বিশ্বের অবস্থা কি ভালো? by জনাথন পাওয়ার
২০১৫
সালের প্রারম্ভে প্যারিসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা অনেক বেশি বিষণ্ন
হয়েছি। কারণ, এমনিতেই খারাপ সংবাদ শুনতে শুনতে আমাদের মগজ ধোলাই হয়ে আছে।
কম বয়সে মৃত্যু ঠেকানোর লড়াইয়ে জয়লাভের সংবাদের চেয়েও আমাদের টেলিভিশনে
প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদ বেশি সময় ধরে সম্প্রচারিত হয়। তার মানে রক্তঝরা
বা বিষাদের সংবাদ বেশি গুরুত্বের সঙ্গে সম্প্রচারিত হয় সুসংবাদের
পরিবর্তে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে কিছু আগ্রহোদ্দীপক তথ্য রয়েছে। গত দুই দশকে বিশ্বে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। হামজাতীয় রোগে মৃতের সংখ্যা তিন-চতুর্থাংশে নেমে গেছে এবং একসময়ের মরণব্যাধি যক্ষ্মা ও প্রসবকালীন মৃত্যু অর্ধেকে নেমে এসেছে। এইডস সংশ্লিষ্ট অসুস্থ লোকের সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৬০ সালে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে এক শিশু মারা যেত। এখন প্রতি ২০ জনে একজনের মৃত্যু ঘটে। আর এই হার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। গত ছয় বছরের মহামন্দার মধ্যেও দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। যদিও এর অধিকাংশই কমেছে চীনে। ভারতে ও অধিকাংশ তৃতীয় দুনিয়ার দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। এখন বিশ্বে শিশুদের হার প্রত্যাশা অনুযায়ী রয়েছে। সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের হানস রোসলিং বিবিসিকে বলেছেন, 'আমরা এখন শিশু উচ্চতার যুগে প্রবেশ করেছি।'
মেয়েদের শিক্ষার হার বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশে ছেলেদের মতো মেয়েরা বেশি সংখ্যায় স্কুলে যাচ্ছে। এমনকি সৌদি আরবে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে তরুণদের চেয়ে তরুণীর সংখ্যা বেশি।
২০১৫ সালের আগামী দিনগুলোতে আমরা নিশ্চিতভাবেই সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া ও সুদানে আরও যুদ্ধ দেখতে পাব। ইউক্রেনের অপ্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানের পথে এগোতে না পারলে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে শীতল শান্তি বিরাজ করতে দেখা যাবে এ বছরেও। ব্রিটেন যদি গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ইইউ বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হবে। ইবোলা, ম্যালেরিয়া ও বৈশ্বিক উষ্ণতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তবে ২০১৫ সালে আরও অনেক ক্ষেত্রে সুখবর আমরা পাব, যার ফলে বছরটি মানবজাতির জন্য উত্তম বছর হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। আমরা দ্রুত মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে চলেছি। তাই যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দুর্ঘটনা ও স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়া এ বিশ্বের মানুষকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তবে এসব ঘটনায় কত লোক মরবে!
বিদেশি সাহায্যের বিরুদ্ধে বলাটা বৌদ্ধিকভাবে ফ্যাশনবেল। কিন্তু বিদেশি সাহায্যের মূল্যকে আমরা কি অস্বীকার করতে পারি? বিদেশি সাহায্য ছাড়া যে অধিকাংশ দরিদ্র দেশ তাদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে পারত না, এখন তো এর ভূরি ভূরি উদাহরণ পাওয়া যাবে। আফ্রিকায় এইডসবিরোধী কর্মসূচিতে তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবি্লউ বুশের অবদানের কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এটাও অস্বীকার করার জো নেই যে, আমেরিকার সাহায্য কর্মসূচি ইউরোপীয়দের থেকে অপেক্ষাকৃত কম। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কর্মসূচির অধীনে আফ্রিকায় ৫০ লাখ এইডস আক্রান্তকে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটা সত্য যে, এ সময়ে ধনী দেশগুলো গরিব দেশগুলোকে বড় অঙ্কের সাহায্য দিয়েছে। শীতল যুদ্ধ অবসানের পর আড়াই দশকে এখন বিশ্বে অতীতের মতো যুদ্ধের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে না। আর এসব যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কম। তবে এটাও সত্য, গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, সুদান, সোমালিয়া ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ কারণেই পূর্বোক্ত সময়ের তুলনায় গত কয়েক বছরে যুদ্ধে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, গড় হিসাবে যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
এর প্রধান কারণ হতে পারে, গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করা। আর গণতান্ত্রিক দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না, এটা তো প্রমাণিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেখানে বিশ্বে ১০টির কম দেশে গণতন্ত্র ছিল, তা এখন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে।
শার্লি এবদো একটি খারাপ সংবাদ। এ সংবাদটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে উলি্লখিত ভালো খবরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়ই নয়। এমনকি পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী পরিচালিত স্কুলে জঙ্গিরা ১৫০ স্কুলছাত্রকে হত্যা করার সংবাদও নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ইরাক আক্রমণের সংবাদ, যেটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সেটাও ভালো খবরগুলোর তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তাই ২০১৫ সালকে আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে।
প্রবীণ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক; খালিজ টাইমস
থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে কিছু আগ্রহোদ্দীপক তথ্য রয়েছে। গত দুই দশকে বিশ্বে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। হামজাতীয় রোগে মৃতের সংখ্যা তিন-চতুর্থাংশে নেমে গেছে এবং একসময়ের মরণব্যাধি যক্ষ্মা ও প্রসবকালীন মৃত্যু অর্ধেকে নেমে এসেছে। এইডস সংশ্লিষ্ট অসুস্থ লোকের সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৬০ সালে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে এক শিশু মারা যেত। এখন প্রতি ২০ জনে একজনের মৃত্যু ঘটে। আর এই হার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। গত ছয় বছরের মহামন্দার মধ্যেও দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। যদিও এর অধিকাংশই কমেছে চীনে। ভারতে ও অধিকাংশ তৃতীয় দুনিয়ার দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে। এখন বিশ্বে শিশুদের হার প্রত্যাশা অনুযায়ী রয়েছে। সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের হানস রোসলিং বিবিসিকে বলেছেন, 'আমরা এখন শিশু উচ্চতার যুগে প্রবেশ করেছি।'
মেয়েদের শিক্ষার হার বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশে ছেলেদের মতো মেয়েরা বেশি সংখ্যায় স্কুলে যাচ্ছে। এমনকি সৌদি আরবে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে তরুণদের চেয়ে তরুণীর সংখ্যা বেশি।
২০১৫ সালের আগামী দিনগুলোতে আমরা নিশ্চিতভাবেই সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া ও সুদানে আরও যুদ্ধ দেখতে পাব। ইউক্রেনের অপ্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধানের পথে এগোতে না পারলে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে শীতল শান্তি বিরাজ করতে দেখা যাবে এ বছরেও। ব্রিটেন যদি গণভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ইইউ বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হবে। ইবোলা, ম্যালেরিয়া ও বৈশ্বিক উষ্ণতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তবে ২০১৫ সালে আরও অনেক ক্ষেত্রে সুখবর আমরা পাব, যার ফলে বছরটি মানবজাতির জন্য উত্তম বছর হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। আমরা দ্রুত মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করে চলেছি। তাই যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দুর্ঘটনা ও স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়া এ বিশ্বের মানুষকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তবে এসব ঘটনায় কত লোক মরবে!
বিদেশি সাহায্যের বিরুদ্ধে বলাটা বৌদ্ধিকভাবে ফ্যাশনবেল। কিন্তু বিদেশি সাহায্যের মূল্যকে আমরা কি অস্বীকার করতে পারি? বিদেশি সাহায্য ছাড়া যে অধিকাংশ দরিদ্র দেশ তাদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে পারত না, এখন তো এর ভূরি ভূরি উদাহরণ পাওয়া যাবে। আফ্রিকায় এইডসবিরোধী কর্মসূচিতে তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবি্লউ বুশের অবদানের কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এটাও অস্বীকার করার জো নেই যে, আমেরিকার সাহায্য কর্মসূচি ইউরোপীয়দের থেকে অপেক্ষাকৃত কম। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কর্মসূচির অধীনে আফ্রিকায় ৫০ লাখ এইডস আক্রান্তকে স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটা সত্য যে, এ সময়ে ধনী দেশগুলো গরিব দেশগুলোকে বড় অঙ্কের সাহায্য দিয়েছে। শীতল যুদ্ধ অবসানের পর আড়াই দশকে এখন বিশ্বে অতীতের মতো যুদ্ধের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে না। আর এসব যুদ্ধে প্রাণহানির সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কম। তবে এটাও সত্য, গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, সুদান, সোমালিয়া ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ কারণেই পূর্বোক্ত সময়ের তুলনায় গত কয়েক বছরে যুদ্ধে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, গড় হিসাবে যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
এর প্রধান কারণ হতে পারে, গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করা। আর গণতান্ত্রিক দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না, এটা তো প্রমাণিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেখানে বিশ্বে ১০টির কম দেশে গণতন্ত্র ছিল, তা এখন বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে।
শার্লি এবদো একটি খারাপ সংবাদ। এ সংবাদটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে উলি্লখিত ভালো খবরের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নিশ্চয়ই নয়। এমনকি পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী পরিচালিত স্কুলে জঙ্গিরা ১৫০ স্কুলছাত্রকে হত্যা করার সংবাদও নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ইরাক আক্রমণের সংবাদ, যেটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, সেটাও ভালো খবরগুলোর তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তাই ২০১৫ সালকে আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে।
প্রবীণ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক; খালিজ টাইমস
থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments