৯ দিনে ১৭ বিরোধী নেতাকর্মী হত্যা by মেহেদী হাসান
ফেব্রুয়ারি
মাসের প্রথম নয় দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে কমপক্ষে ১৭ জন বিরোধী রাজনৈতিক
নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে
বলে আইনশঙ্খলা বাহিনীর দাবি। নিহত ১৭ জনের মধ্যে দই/তিনজন বাদে সবার
রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে গণমাধ্যমে পরিবেশিত খবরে। নিহত ১৭ জনের
মধ্যে কয়েকজন নিখোঁজ হবার পর তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তবে
তাদের হত্যার দায় আইনশঙ্খলা বাহিনী শিকার করেনি । কিন্তু নিহতদের পরিবারের
পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে যাবার পর তাদের
হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজ হবার পর যাদের লাশ পাওয়া গেছে তাদের সবারই মাথায়
এবং বুকে কয়েকটি করে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
কেউ নিখোঁজ হবার পর তার লাশ উদ্ধার হলেই কেবল পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে সে নিহত হয়েছে এবং তখন তা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু লাশ উদ্ধার না হলে তাদের নিহত হবার খবর চাপাই থেকে যায়। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
বন্দুক যুদ্ধে নিহত হবার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে বিবৃতি ইস্যু করা হয় বা গণমাধ্যমের কাছে মৌখিক যে জবাব দেয়া হয় তার সবগুলো গল্প হুবহু একই। অর্থাৎ আটককৃত ব্যক্তির দেয়া তথ্য অনুযায়ী গোপন স্থানে অস্ত্র উদ্ধার করতে যাওয়ার পর সেখানে ওৎ পেতে থাকা তার সহযোগীরা তাদের ওপর গুলি ও বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং আটকৃত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিতে চায়। এসময় আইনশঙ্খলা বাহিনীও তাদের ওপর পাল্টা গুলি চালালে অমুক অমুক ঘটনা স্থলে নিহত হয়। অথবা নিহত ব্যক্তি আইনশঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি বা পাবলিক গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারার সময় গুলিতে সে নিহত হয়েছে।
আগে এসব হত্যাকান্ডকে ক্রসফায়ার হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। এখন এর নাম দেয়া হয়েছে বন্দুকযুদ্ধ। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং শিহরিত যেটি তাহল এখন নিহতের ঘটনার পর কোন কোন ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে তারা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
ডেইলি স্টার, নিউএজ এবং ইন্ডিপেন্ডেট পত্রিকায় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ৯ দিনে যে ১৭টি হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে তা এখানে তুলে ধরা হল।
ধরে নেয়ার পর আরো তিজন নিহত ‘বন্দুকযুদ্ধে’
৮ ফ্রেব্রুয়ারি রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরো তিনজন বিরোধী নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’র মাধ্যমে তাদের হত্যার খবর প্রকাশিত হয়।
রোববার ভোররাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা জসিম উদ্দিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় বলে পুলিশের দাবি। তবে নিহতের ভাই আনিসুর রহমান দাবি করেছেন শনিবার জসিম উদ্দিনকে আগারগাও থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন থেকে সে নিখোঁজ ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জসিম উদ্দিন কাজিপাড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসায় পড়ত।
কুমিল্লায় কালা স্বপন নামে (২৭) একজন বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। কুমিল্লা সদর (দক্ষিণ) ওসি প্রশান্ত লাল জানান স্বপনকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে ভাতপারায় অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে ঘটনাস্থলে ওৎপেতে থাকা তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায় । এসময় পুলিশও পাল্টা জবাব দিলে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়।
একই দিন রাজু আহমেদ নামে যশোরের কথিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসী র্যাবের সাথে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বলে দাবি র্যাবের।
যাত্রাবাড়িতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবক নিহত
৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার ভোররাতে রাসেল সরদার নামে এক যুবক ডিবির সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাসেলের নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে তার নববিবাহিতা স্ত্রী শেফালী বেগম বিলাপ করছে।
পরিবারের দাবি রসেল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করত। শেফালী বেগম জানান, বৃহষ্পতিবার ১১টায় সে বাসা থেকে বের হয়। এরপর তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুুঁজির পর রোববার ভোররাতে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে রাসেলের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা।
ডিবি পুলিশের দাবি সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইল এলাকায় একদল সন্ত্রাসী ডিবি ভ্যানে বোমা ছোড়ে। তারা এসময় ডিবির গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিও চালায়। তখন পুলিশ তাদের প্রতি পাল্টা গুলি করলে বন্দুকযুদ্ধে রাসেল নিহত হয়।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার কুমিল্লার হাসানপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ডোবা থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে রাখা নিহতের লাশ দেখে তাকে সনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। তার নাম সোহেল। সে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সাথে জড়িত ছিল। পরিবারের দাবি তাকে শনিবার সন্ধ্যায় সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে যায় এবং এরপর তাকে হত্যা করা হয়েছে।
একইদিন রাজধানীর মিরপুরের কালসি এলাকায় বুলেটে ক্ষতবিক্ষত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিবির নেতাকে গুলি করে হত্যা
৭ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলায় ছাত্র শিবির নেতা বাচ্চু (২৬) তথাকথিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
জামায়াত শিবিরের তিন নেতাকর্মী গুলি করে হত্যা
৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি শাহাবুদ্দিন পাটওয়ারি পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ওসি উত্তম চক্রবর্ত্তী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টহলের সময় ২০ জনের মত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশের গাড়িতে বোমা ছোড়ে এবং গুলি চালায়। এতে পুলিশের পাল্টা গুলিতে শাহাবুদ্দিন পাটওয়ারী নিহত হয়।
শাহাবুদ্দিনের বোন ফারজানা জানান, বৃহষ্পতিবার বিকাল চারটায় শুক্রবার শাহাবুদ্দিনকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে শাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর খবর পাই।
ফারজানা জানান, তার ভাই কোন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাননি বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
শাহাবুদ্দিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
একই দিন রাবির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন রিপন কথিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন এর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃহষ্পতিবার রাত একটার সময় ১৫ জনের মত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। এসময় পুলিশ পাল্টা আক্রমন চালায়। গোলাগুলির পর গুলিবিদ্ধ তিনজন শিবির কর্মী আটক করা হয় ঘটনাস্থল থেকে। পরে তাদের রাজশাহী মেডিক্যালে নেয়া হলে শাহাবুদ্দিন রিপনকে ডাক্তাররা মৃত ঘোষনা করে।
নিহত রিপন রাবি শেষ বর্ষের ছাত্র । গ্রেফতারকৃত অপর দুজন শিবির নেতা কর্মী হল হাবিবুর রহমান এবং মফিজুর রহমান। হাবিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবরুর রহমান হল শিবির শাখা সভাপতি। আর মফিজুর রহমান একজন কর্মী।
মজার বিষয় হল তিনজনেরই উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতহ মফিজুর রহমান জানান, বৃহষ্পতিবার রাত আটটার দিকে তারা একটি বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন। এসময় কাপাসিয়া এলাকা থেকে তাদের তিনজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় মতিয়ার থানায়। ওই রাতে আরো পরে পুলিশ আমার চোখ বেঁধে একটি জায়গায় নিয়ে যায় এবং মাটিতে শুইয়ে উরুতে গুলি করে।
রাবি শিবির শাখা প্রচার সম্পাদক ফরহাদ রেজা জানান, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে রিপনকে হত্যা করেছে এবং পরে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে। রাতে তারা নিঁেখাজ হবার পর তাদের আত্মীয় স্বজনরা তাদের খোঁজ করে। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে।
যশোর
একই দিন সাতক্ষিরা জামায়াত কর্মী শহিদুল ইসলাম (৩৫) পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার বাড়ি সদর থানার কাশিপুর গ্রামে। যশোর মেডিক্যাল কলেজের তার লাশ রাখা হয়। কুমিল্লা এবং রাবিতে শাহাবুদ্দিন নামের নিহত দুজনের ক্ষেত্রে পুলিশ যে বন্দুকযুদ্ধের বিবরন দিয়েছে শহিদুলের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কাহিনীর কথা জানিয়েছে যশোর পুলিশ সদর দফতর।
মিরপুরে বন্দুকযুদ্ধে যুবক নিহত
৫ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পিতিবার ভোররাতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুযুদ্ধে ২২ বছরের এক যুবক নিহত হয়। মিরপুর থানার এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, পূর্ব মনিপুর এলাকায় বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশের টহল গাড়ি লক্ষ করে বিএনপি-জামায়াত-শিবির কর্মীরা গুলি চালায় এবং বোমা ছোড়ে। এসময় পুলিশের পাল্টা আক্রমন চালায়। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ একজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঘটনার দুইদিন পরে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে নিহত যুবকের লাশ সনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। নিহতের নাম মনির হোসেন। তার ভাই ইসরাফিল জানান, বুধবার রাতে মনিরকে একটি মেস থেকে পুলিশ আটক করে।
যাত্রাবাড়িতে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২ যুবক নিহত
বুধবার ৪ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ২ যুবক নিহত হয়। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। র্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার জামিল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার সময় র্যাব-১০ মাতুয়াইলে টাহল দিচ্ছিল। হঠাৎ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি এবং বোমা ছোড়ে। র্যাবও তখন পাল্টা জবাব দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ এবং রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেড্যিকালে নেয়া হলে ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষনা করে।
৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ডেইলি স্টারের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নিহত এ দুই যুবকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে শাখাওয়াত হোসেন রাহাত এবং মুজাহিদুল ইসলাম জিহাদ। পরিবারের দাবি রাহাতকে অপহরন করা হয়েছিল এবং জিহাদ ১১ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। রাহাতের পরিবার জানায় ২১ জানুয়ারি কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ থেকে তাকে অপহরন করা হয়। রাহাতের মাত সুফিয়া বেগম জানান, ২৭ জানুয়ারি তেজগাও থানায় অপহরন মামলা দায়ের করেন। রাহাত ফার্মগেটে একটি পার্টসের দোকানে কাজ করত। অপহরনের পরদিন দোকানের মালিক শাহ আলমও রাহাতের নামে একটি সাধারন ডায়েরি করেন থানায়। শাহ আলাম জানান, ঘটনার দিন রাহাত লাঞ্চ প্যাকেট কেনার জন্য সুগন্ধা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে আমি তার চিৎকার শুনলাম। এসময় দেখলাম তিন/চারজন মিলে তাকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল।
এরপর বৃহষ্পতিবার রাহাতের পরিবার তার লাশ পেল কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহতের পর।
জিহাদের ভাই সোহাগ জানান, ১১ দিন ধরে জিহাদ নিখোঁজ ছিল। এরপর পত্রিকায় তার ছবি দেখে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে লাশ সনাক্ত করি।
২ যুবদল কর্মী হত্যা
মঙ্গলবার ৩ ফেব্রুয়ারি যশোরে যুবদলের দুই জন কর্মী নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি মনিরামপুর-যশোর রোডে পুলিশের গাড়িতে বোমা মারার সময় তারা ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছে।
নিহতরা হল লিটন আলী (২২) এবং ইউসুফ মিয়া (২৫) । দুজনেরই বাড়ি মনিরামপুর।
মনিরামপুর থানার ওসি কবিরউদ্দিন বলেন মঙ্গলবার ভোররাত ৫টার সময় তারা ট্রাকে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে ট্রাক চাপায় ঘটনাস্থলে মারা যায়।
যশোর মেডিক্যাল কলেজে ইউসুফের চাচা আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাত আটটার দিকে তাদের দুজনকে গাংরা গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের খোঁজে আমি মঙ্গলবার মনিরামপুর থানায় গেলে পুলিশ আমাকে জানায় তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
পুলিশ হেফাজতে জামায়াত নেতার মৃত্যু
সোমবার ২ ফেব্রুয়ারি সাইদুল ইসলাম (৪৮) নামে এক জামায়াত নেতা সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তিনি বাকুয়া ইউনিয়ন জামায়াত সাধারন সম্পাদক ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ এসপি এমরান হোসেন বলেন, জামায়াত নেতাকর্মীরা বাকুয়ায় গোপন বৈঠক করছিল। পুলিশ অভিযানে গেলে তারা টের পেয়ে পুলিশের প্রতি বোমা ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। এতে অনেকে আহত হয়। সাইদুল ইসলামকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে রাত আড়াটায় সে মারা যায়।
পারিবারিক এবং দলীয় সূত্র পুলিশের এ বক্তব্যকে মিথ্যা গল্প আখ্যায়িত করে জানিয়েছে শহিদুল ইসলামকে পুলিশ রোববার গ্রেফতার করে । এরপর গভীর রাতে ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
কেউ নিখোঁজ হবার পর তার লাশ উদ্ধার হলেই কেবল পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে সে নিহত হয়েছে এবং তখন তা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু লাশ উদ্ধার না হলে তাদের নিহত হবার খবর চাপাই থেকে যায়। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
বন্দুক যুদ্ধে নিহত হবার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যে বিবৃতি ইস্যু করা হয় বা গণমাধ্যমের কাছে মৌখিক যে জবাব দেয়া হয় তার সবগুলো গল্প হুবহু একই। অর্থাৎ আটককৃত ব্যক্তির দেয়া তথ্য অনুযায়ী গোপন স্থানে অস্ত্র উদ্ধার করতে যাওয়ার পর সেখানে ওৎ পেতে থাকা তার সহযোগীরা তাদের ওপর গুলি ও বোমা বর্ষণ শুরু করে এবং আটকৃত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিতে চায়। এসময় আইনশঙ্খলা বাহিনীও তাদের ওপর পাল্টা গুলি চালালে অমুক অমুক ঘটনা স্থলে নিহত হয়। অথবা নিহত ব্যক্তি আইনশঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি বা পাবলিক গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা মারার সময় গুলিতে সে নিহত হয়েছে।
আগে এসব হত্যাকান্ডকে ক্রসফায়ার হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। এখন এর নাম দেয়া হয়েছে বন্দুকযুদ্ধ। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং শিহরিত যেটি তাহল এখন নিহতের ঘটনার পর কোন কোন ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে তারা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
ডেইলি স্টার, নিউএজ এবং ইন্ডিপেন্ডেট পত্রিকায় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ৯ দিনে যে ১৭টি হত্যাকান্ডের ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে তা এখানে তুলে ধরা হল।
ধরে নেয়ার পর আরো তিজন নিহত ‘বন্দুকযুদ্ধে’
৮ ফ্রেব্রুয়ারি রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আরো তিনজন বিরোধী নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’র মাধ্যমে তাদের হত্যার খবর প্রকাশিত হয়।
রোববার ভোররাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা জসিম উদ্দিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় বলে পুলিশের দাবি। তবে নিহতের ভাই আনিসুর রহমান দাবি করেছেন শনিবার জসিম উদ্দিনকে আগারগাও থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন থেকে সে নিখোঁজ ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। জসিম উদ্দিন কাজিপাড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসায় পড়ত।
কুমিল্লায় কালা স্বপন নামে (২৭) একজন বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। কুমিল্লা সদর (দক্ষিণ) ওসি প্রশান্ত লাল জানান স্বপনকে শনিবার গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে ভাতপারায় অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে ঘটনাস্থলে ওৎপেতে থাকা তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর গুলি চালায় । এসময় পুলিশও পাল্টা জবাব দিলে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়।
একই দিন রাজু আহমেদ নামে যশোরের কথিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসী র্যাবের সাথে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বলে দাবি র্যাবের।
যাত্রাবাড়িতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যুবক নিহত
৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার ভোররাতে রাসেল সরদার নামে এক যুবক ডিবির সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাসেলের নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে তার নববিবাহিতা স্ত্রী শেফালী বেগম বিলাপ করছে।
পরিবারের দাবি রসেল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে একটি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করত। শেফালী বেগম জানান, বৃহষ্পতিবার ১১টায় সে বাসা থেকে বের হয়। এরপর তার আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুুঁজির পর রোববার ভোররাতে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে রাসেলের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা।
ডিবি পুলিশের দাবি সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইল এলাকায় একদল সন্ত্রাসী ডিবি ভ্যানে বোমা ছোড়ে। তারা এসময় ডিবির গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিও চালায়। তখন পুলিশ তাদের প্রতি পাল্টা গুলি করলে বন্দুকযুদ্ধে রাসেল নিহত হয়।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার কুমিল্লার হাসানপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ডোবা থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যেতে পারে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে রাখা নিহতের লাশ দেখে তাকে সনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। তার নাম সোহেল। সে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রদলের সাথে জড়িত ছিল। পরিবারের দাবি তাকে শনিবার সন্ধ্যায় সাদা পোশাকের পুলিশ ধরে নিয়ে যায় এবং এরপর তাকে হত্যা করা হয়েছে।
একইদিন রাজধানীর মিরপুরের কালসি এলাকায় বুলেটে ক্ষতবিক্ষত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শিবির নেতাকে গুলি করে হত্যা
৭ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠী উপজেলায় ছাত্র শিবির নেতা বাচ্চু (২৬) তথাকথিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
জামায়াত শিবিরের তিন নেতাকর্মী গুলি করে হত্যা
৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি শাহাবুদ্দিন পাটওয়ারি পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ওসি উত্তম চক্রবর্ত্তী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টহলের সময় ২০ জনের মত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশের গাড়িতে বোমা ছোড়ে এবং গুলি চালায়। এতে পুলিশের পাল্টা গুলিতে শাহাবুদ্দিন পাটওয়ারী নিহত হয়।
শাহাবুদ্দিনের বোন ফারজানা জানান, বৃহষ্পতিবার বিকাল চারটায় শুক্রবার শাহাবুদ্দিনকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে শাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর খবর পাই।
ফারজানা জানান, তার ভাই কোন বন্দুকযুদ্ধে মারা যাননি বরং তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
শাহাবুদ্দিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
একই দিন রাবির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন রিপন কথিক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। রাজশাহী মেট্রোপলিটন এর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, বৃহষ্পতিবার রাত একটার সময় ১৫ জনের মত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। এসময় পুলিশ পাল্টা আক্রমন চালায়। গোলাগুলির পর গুলিবিদ্ধ তিনজন শিবির কর্মী আটক করা হয় ঘটনাস্থল থেকে। পরে তাদের রাজশাহী মেডিক্যালে নেয়া হলে শাহাবুদ্দিন রিপনকে ডাক্তাররা মৃত ঘোষনা করে।
নিহত রিপন রাবি শেষ বর্ষের ছাত্র । গ্রেফতারকৃত অপর দুজন শিবির নেতা কর্মী হল হাবিবুর রহমান এবং মফিজুর রহমান। হাবিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবরুর রহমান হল শিবির শাখা সভাপতি। আর মফিজুর রহমান একজন কর্মী।
মজার বিষয় হল তিনজনেরই উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহতহ মফিজুর রহমান জানান, বৃহষ্পতিবার রাত আটটার দিকে তারা একটি বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন। এসময় কাপাসিয়া এলাকা থেকে তাদের তিনজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় মতিয়ার থানায়। ওই রাতে আরো পরে পুলিশ আমার চোখ বেঁধে একটি জায়গায় নিয়ে যায় এবং মাটিতে শুইয়ে উরুতে গুলি করে।
রাবি শিবির শাখা প্রচার সম্পাদক ফরহাদ রেজা জানান, পুলিশ পরিকল্পিতভাবে রিপনকে হত্যা করেছে এবং পরে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছে। রাতে তারা নিঁেখাজ হবার পর তাদের আত্মীয় স্বজনরা তাদের খোঁজ করে। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে।
যশোর
একই দিন সাতক্ষিরা জামায়াত কর্মী শহিদুল ইসলাম (৩৫) পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার বাড়ি সদর থানার কাশিপুর গ্রামে। যশোর মেডিক্যাল কলেজের তার লাশ রাখা হয়। কুমিল্লা এবং রাবিতে শাহাবুদ্দিন নামের নিহত দুজনের ক্ষেত্রে পুলিশ যে বন্দুকযুদ্ধের বিবরন দিয়েছে শহিদুলের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কাহিনীর কথা জানিয়েছে যশোর পুলিশ সদর দফতর।
মিরপুরে বন্দুকযুদ্ধে যুবক নিহত
৫ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পিতিবার ভোররাতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুযুদ্ধে ২২ বছরের এক যুবক নিহত হয়। মিরপুর থানার এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, পূর্ব মনিপুর এলাকায় বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে পুলিশের টহল গাড়ি লক্ষ করে বিএনপি-জামায়াত-শিবির কর্মীরা গুলি চালায় এবং বোমা ছোড়ে। এসময় পুলিশের পাল্টা আক্রমন চালায়। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ একজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষনা করে। ঘটনার দুইদিন পরে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে নিহত যুবকের লাশ সনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। নিহতের নাম মনির হোসেন। তার ভাই ইসরাফিল জানান, বুধবার রাতে মনিরকে একটি মেস থেকে পুলিশ আটক করে।
যাত্রাবাড়িতে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২ যুবক নিহত
বুধবার ৪ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে র্যাবের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ২ যুবক নিহত হয়। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ এর মধ্যে। র্যাব-১০ এর কমান্ডিং অফিসার জামিল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটার সময় র্যাব-১০ মাতুয়াইলে টাহল দিচ্ছিল। হঠাৎ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ র্যাবের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি এবং বোমা ছোড়ে। র্যাবও তখন পাল্টা জবাব দেয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ এবং রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেড্যিকালে নেয়া হলে ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষনা করে।
৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ডেইলি স্টারের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নিহত এ দুই যুবকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে শাখাওয়াত হোসেন রাহাত এবং মুজাহিদুল ইসলাম জিহাদ। পরিবারের দাবি রাহাতকে অপহরন করা হয়েছিল এবং জিহাদ ১১ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। রাহাতের পরিবার জানায় ২১ জানুয়ারি কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ থেকে তাকে অপহরন করা হয়। রাহাতের মাত সুফিয়া বেগম জানান, ২৭ জানুয়ারি তেজগাও থানায় অপহরন মামলা দায়ের করেন। রাহাত ফার্মগেটে একটি পার্টসের দোকানে কাজ করত। অপহরনের পরদিন দোকানের মালিক শাহ আলমও রাহাতের নামে একটি সাধারন ডায়েরি করেন থানায়। শাহ আলাম জানান, ঘটনার দিন রাহাত লাঞ্চ প্যাকেট কেনার জন্য সুগন্ধা রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে আমি তার চিৎকার শুনলাম। এসময় দেখলাম তিন/চারজন মিলে তাকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল।
এরপর বৃহষ্পতিবার রাহাতের পরিবার তার লাশ পেল কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহতের পর।
জিহাদের ভাই সোহাগ জানান, ১১ দিন ধরে জিহাদ নিখোঁজ ছিল। এরপর পত্রিকায় তার ছবি দেখে ঢাকা মেডিক্যালে গিয়ে লাশ সনাক্ত করি।
২ যুবদল কর্মী হত্যা
মঙ্গলবার ৩ ফেব্রুয়ারি যশোরে যুবদলের দুই জন কর্মী নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি মনিরামপুর-যশোর রোডে পুলিশের গাড়িতে বোমা মারার সময় তারা ট্রাক চাপায় নিহত হয়েছে।
নিহতরা হল লিটন আলী (২২) এবং ইউসুফ মিয়া (২৫) । দুজনেরই বাড়ি মনিরামপুর।
মনিরামপুর থানার ওসি কবিরউদ্দিন বলেন মঙ্গলবার ভোররাত ৫টার সময় তারা ট্রাকে আগুন দেয়ার চেষ্টা করলে ট্রাক চাপায় ঘটনাস্থলে মারা যায়।
যশোর মেডিক্যাল কলেজে ইউসুফের চাচা আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাত আটটার দিকে তাদের দুজনকে গাংরা গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের খোঁজে আমি মঙ্গলবার মনিরামপুর থানায় গেলে পুলিশ আমাকে জানায় তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
পুলিশ হেফাজতে জামায়াত নেতার মৃত্যু
সোমবার ২ ফেব্রুয়ারি সাইদুল ইসলাম (৪৮) নামে এক জামায়াত নেতা সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। তিনি বাকুয়া ইউনিয়ন জামায়াত সাধারন সম্পাদক ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ এসপি এমরান হোসেন বলেন, জামায়াত নেতাকর্মীরা বাকুয়ায় গোপন বৈঠক করছিল। পুলিশ অভিযানে গেলে তারা টের পেয়ে পুলিশের প্রতি বোমা ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। এতে অনেকে আহত হয়। সাইদুল ইসলামকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হলে রাত আড়াটায় সে মারা যায়।
পারিবারিক এবং দলীয় সূত্র পুলিশের এ বক্তব্যকে মিথ্যা গল্প আখ্যায়িত করে জানিয়েছে শহিদুল ইসলামকে পুলিশ রোববার গ্রেফতার করে । এরপর গভীর রাতে ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হয়েছে।
No comments