একুশের আন্তর্জাতিকতার স্বপ্নদ্রষ্টা by মোহাম্মদ আলী বোখারী
আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস এমনই একটি দিন, যে দিনটিতে মাতৃভাষায় সবার জন্য মানসম্মত ও
বঞ্চিতদের জন্য শিক্ষা প্রসারের পতাকাকে সুউচ্চে তুলে ধরতে হবে। ইউনেস্কোর
মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভার এ দিবস উপলক্ষে তার বাণীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা
দিবস বাস্তবায়নের গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন। এ দিবসের স্বপ্নদ্রষ্টা ও
বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ভূষিত কানাডার 'মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব
দ্য ওয়ার্ল্ড সোসাইটি বিসি'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল ইসলামও (প্রয়াত)
নানাভাবে এ প্রসঙ্গ তুলেছেন। গত ১৫ বছরে তার সে স্বপ্ন অনেক দূর এগিয়ে
গেছে।
যে প্রতিষ্ঠানটি তিনি গড়েছেন, সেটির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম মওলা ২০০৯ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের বেয়ার ক্রিক পার্কে হেরিটেজ ইন্টার্যাকটিভ ল্যাংগুয়েজ আর্ট ওয়ার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত 'লিঙ্গুয়া আকুয়া' বাস্তবায়নে সবিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এ বছর তিনি দিবসটির জন্য প্রাদেশিক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি বয়ে আনলেন। ভাষাগত বৈচিত্র্য ও বহুজাতিকতা এই প্রদেশকে বিকশিত করেছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংলাপ ও মর্যাদা হচ্ছে কানাডীয় জীবনযাত্রার নিয়ামক উপাদান। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সম্মানজনকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে আদিম ভাষাভাষী ও আবহমানকাল ধরে বিস্তৃত অপরাপর ভাষার সুরক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারে। কেননা, বিশ্বের বিগত প্রজন্মের সাড়ে ৬ হাজার ভাষার অধিকাংশই আজ বিলুপ্তির পথে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত অ্যাশফিল্ড হেরিটেজ পার্কে ২০০৬ সালে একুশে একাডেমির তৎকালীন সভাপতি নির্মল পালের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিশ্বের প্রথম 'আন্তর্জাতিক ভাষা সৌধ'। এ বছর তিনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অস্ট্রেলিয়ান লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন-'আলিয়া'র গুরুত্বপূর্ণ মুখপত্র 'ইনসাইট'-এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় 'কনজার্ভ ইওর মাদার ল্যাংগুয়েজ' বা 'আপনার মাতৃভাষা সংরক্ষণ করুন' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশে সক্ষম হয়েছেন। টরন্টো শহরেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে কোনো কমতি ঘটেনি। ২০০৩ সাল থেকে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলে ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সিটি মেয়র ডেভিড মিলার কর্তৃক প্রোক্লামেশন প্রদান ও প্রাদেশিক পর্যায়ে প্রিমিয়ার ডাল্টন মেগেন্টি এবং প্রাদেশিক অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় সহকারী তৎকালীন লন্ডন-ফেনসোঁর সাংসদ ড. খলিল রামাল কর্তৃক একটি বিবৃতি প্রদানে সক্ষম হয়েছি। এমনকি সে বছরের একুশের একটি অনুষ্ঠান স্থানীয় চারটি বাংলা সাপ্তাহিকী_ বাংলা রিপোর্টার, দেশে-বিদেশে, বাংলা কাগজ ও বাংলা নিউজের সহযোগিতায় ও বহুজাতিক সাংস্কৃতিক দলের অংশগ্রহণে মেট্রো হলে আয়োজনে সফল হয়েছি।
এভাবেই একুশের আন্তর্জাতিকতার স্বপ্নদ্রষ্টা রফিকুল ইসলামের প্রচেষ্টাটি সারাবিশ্বে অর্থবহ প্রাণচাঞ্চল্য সঞ্চার করেছে এবং সবার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্বকে সর্বজনীন মৌলিক অধিকার হিসেবে তুলে ধরেছে। স্বয়ং পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েব ইঞ্জিন 'গুগল' তাদের 'দ্য এনডেঞ্জার্ড ল্যাংগুয়েজেস প্রজেক্ট'-এ ৩,০০০ ভাষার সুরক্ষায় 'প্রিজার্ভ ল্যাংগুয়েজেস অন দ্য ব্রিঙ্ক অব ডিসঅ্যাপিয়ারিং' হিসেবে মুখ্য প্রতিপাদ্য করেছে। এমনকি যে পাকিস্তান থেকে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, সে দেশটিতেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন গুরুত্ব লাভ করেছে। তাই নিয়ে ২০১৪ ও ২০১২ সালে পাকিস্তানের ইংরেজি পত্রিকা ইন্টারন্যাশনাল নিউজ ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন যথাক্রমে 'আওয়ার ল্যাংগুয়েজ ট্র্যাজেডি' ও 'ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে :গিভ ন্যাশনাল স্ট্যাটাস টু অল রিজিওনাল ল্যাংগুয়েজেস' শিরোনামে জোবায়ের তরওয়ালি এবং মায়রা বারী ও পীর মুহাম্মদ রচিত দুটি পৃথক নিবন্ধ প্রকাশ করে।
ভাষার এই মহান মাসে আমরা যেন ভুলে না যাই কানাডার সেই প্রয়াত স্বপ্নদ্রষ্টাসহ তার অন্যতম সহযোগী আবদুস সালামকে, যাদের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রয়াসে মহান একুশ তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বিলুপ্তপ্রায় পৃথিবীর সহস্রাধিক ভাষাকে দিকে দিকে সুরক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করে চলেছে। সে জন্য রফিকুল ইসলামের বিদেহী আত্মার প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধার্ঘ্য।
bukhari.toronto@gmail.com
যে প্রতিষ্ঠানটি তিনি গড়েছেন, সেটির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম মওলা ২০০৯ সালে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের বেয়ার ক্রিক পার্কে হেরিটেজ ইন্টার্যাকটিভ ল্যাংগুয়েজ আর্ট ওয়ার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত 'লিঙ্গুয়া আকুয়া' বাস্তবায়নে সবিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এ বছর তিনি দিবসটির জন্য প্রাদেশিক সর্বোচ্চ স্বীকৃতি বয়ে আনলেন। ভাষাগত বৈচিত্র্য ও বহুজাতিকতা এই প্রদেশকে বিকশিত করেছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংলাপ ও মর্যাদা হচ্ছে কানাডীয় জীবনযাত্রার নিয়ামক উপাদান। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সম্মানজনকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে আদিম ভাষাভাষী ও আবহমানকাল ধরে বিস্তৃত অপরাপর ভাষার সুরক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারে। কেননা, বিশ্বের বিগত প্রজন্মের সাড়ে ৬ হাজার ভাষার অধিকাংশই আজ বিলুপ্তির পথে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত অ্যাশফিল্ড হেরিটেজ পার্কে ২০০৬ সালে একুশে একাডেমির তৎকালীন সভাপতি নির্মল পালের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বিশ্বের প্রথম 'আন্তর্জাতিক ভাষা সৌধ'। এ বছর তিনি ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অস্ট্রেলিয়ান লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন-'আলিয়া'র গুরুত্বপূর্ণ মুখপত্র 'ইনসাইট'-এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় 'কনজার্ভ ইওর মাদার ল্যাংগুয়েজ' বা 'আপনার মাতৃভাষা সংরক্ষণ করুন' শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশে সক্ষম হয়েছেন। টরন্টো শহরেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে কোনো কমতি ঘটেনি। ২০০৩ সাল থেকে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলে ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সিটি মেয়র ডেভিড মিলার কর্তৃক প্রোক্লামেশন প্রদান ও প্রাদেশিক পর্যায়ে প্রিমিয়ার ডাল্টন মেগেন্টি এবং প্রাদেশিক অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় সহকারী তৎকালীন লন্ডন-ফেনসোঁর সাংসদ ড. খলিল রামাল কর্তৃক একটি বিবৃতি প্রদানে সক্ষম হয়েছি। এমনকি সে বছরের একুশের একটি অনুষ্ঠান স্থানীয় চারটি বাংলা সাপ্তাহিকী_ বাংলা রিপোর্টার, দেশে-বিদেশে, বাংলা কাগজ ও বাংলা নিউজের সহযোগিতায় ও বহুজাতিক সাংস্কৃতিক দলের অংশগ্রহণে মেট্রো হলে আয়োজনে সফল হয়েছি।
এভাবেই একুশের আন্তর্জাতিকতার স্বপ্নদ্রষ্টা রফিকুল ইসলামের প্রচেষ্টাটি সারাবিশ্বে অর্থবহ প্রাণচাঞ্চল্য সঞ্চার করেছে এবং সবার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্বকে সর্বজনীন মৌলিক অধিকার হিসেবে তুলে ধরেছে। স্বয়ং পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ওয়েব ইঞ্জিন 'গুগল' তাদের 'দ্য এনডেঞ্জার্ড ল্যাংগুয়েজেস প্রজেক্ট'-এ ৩,০০০ ভাষার সুরক্ষায় 'প্রিজার্ভ ল্যাংগুয়েজেস অন দ্য ব্রিঙ্ক অব ডিসঅ্যাপিয়ারিং' হিসেবে মুখ্য প্রতিপাদ্য করেছে। এমনকি যে পাকিস্তান থেকে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, সে দেশটিতেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন গুরুত্ব লাভ করেছে। তাই নিয়ে ২০১৪ ও ২০১২ সালে পাকিস্তানের ইংরেজি পত্রিকা ইন্টারন্যাশনাল নিউজ ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন যথাক্রমে 'আওয়ার ল্যাংগুয়েজ ট্র্যাজেডি' ও 'ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে :গিভ ন্যাশনাল স্ট্যাটাস টু অল রিজিওনাল ল্যাংগুয়েজেস' শিরোনামে জোবায়ের তরওয়ালি এবং মায়রা বারী ও পীর মুহাম্মদ রচিত দুটি পৃথক নিবন্ধ প্রকাশ করে।
ভাষার এই মহান মাসে আমরা যেন ভুলে না যাই কানাডার সেই প্রয়াত স্বপ্নদ্রষ্টাসহ তার অন্যতম সহযোগী আবদুস সালামকে, যাদের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রয়াসে মহান একুশ তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বিলুপ্তপ্রায় পৃথিবীর সহস্রাধিক ভাষাকে দিকে দিকে সুরক্ষা ও পুনরুজ্জীবিত করে চলেছে। সে জন্য রফিকুল ইসলামের বিদেহী আত্মার প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধার্ঘ্য।
bukhari.toronto@gmail.com
No comments