পরিবর্তনের আওয়াজ!
স্টিফেন
ডুজাররিক নামটি হঠাৎ করেই পরিচিত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে। ভদ্রলোক জাতিসংঘ
মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র। ইদানিং নিউ ইয়র্কে তার ডেইলি প্রেস
ব্রিফিংয়ে প্রায় প্রতিদিনই উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। টালমাটাল
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে নিত্যই আলোচনা হচ্ছে জাতিসংঘ হেডকোয়ার্টারে।
দুনিয়ার অন্য সব বড় ক্রাইসিসের সঙ্গে খুব সম্ভবত যোগ হয়েছে বাংলাদেশের
নামও।
‘৫ই জানুয়ারি’ থেকে সৃষ্ট সঙ্কটে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা চলছে বাংলাদেশে। মারা যাচ্ছে মানুষ। কেউ পেট্রলবোমায়, কেউ বন্দুকযুদ্ধে। ভিড় বার্ন ইউনিট আর পঙ্গু হাসপাতালে। এ অবস্থায় গত তিনদিনে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম ক্রীড়ণক তিন শক্তির প্রতিক্রিয়া জানা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিক্রিয়টিই সম্ভবত সবচেয়ে স্পষ্ট। বাংলাদেশ সফরে আসা ইইউর প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে হতে পারে না। সহিংসতা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। গণতন্ত্র আর মানবাধিকারকে বর্ণনা করা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবানও জানানো হয়েছে।
স্টিফেন ডুজাররিকের সর্বশেষ ব্রিফিং এক ধরনের হুঁশিয়ারিও। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন এবং প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। সন্ত্রাস বিরোধী সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ওয়াশিংটনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব ফের আহবান জানান সংলাপের। আর জন কেরি প্রস্তাব করেছেন সহযোগিতার।
সরকার যথারীতি অনড় অবস্থায় রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনতো দূরের কথা কোন ধরনের সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, বিএনপি জোট বরাবরই সংলাপের পক্ষে রয়েছে। তবে তাদের আন্দোলন সমালোচিত হচ্ছে সহিংসতার জন্য। হরতাল-অবরোধ ক্রমশ ঢিলা হয়ে যাচ্ছে। রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম।
সরকারের অনড় অবস্থানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিরোধী জোটের আন্দোলনকে জঙ্গি তৎপরতা হিসেবে প্রমাণের সরকারি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সারা দুনিয়াই বাংলাদেশের সঙ্কটকে রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। তবে জাতিসংঘ, ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর উদ্যোগ কোন ফল বয়ে আনবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টই আলোচিত হচ্ছে-
১. জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সহকারী মহাসচিব তারানকোকে বাংলাদেশ সঙ্কটের সমাধানে যে দায়িত্ব দিয়েছেন- তা কতদূর এগুবে? এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ সরকার তারানকোকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘের উদ্যোগ কি সামনে এগুবে না থমকে যাবে? তারানকো প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন- ডুজাররিকের এ কথা কি বাতকি বাত?
২. বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে ফেরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব কি কোন ইঙ্গিতবহ? জন কেরির আহবানের কি কোন ফল আছে?
৩. বাংলাদেশ প্রশ্নে কংগ্রেস-বিজেপি সরকারের নীতির প্রকাশ্য কিছু পরিবর্তন হলেও অন্দরমহলে বড় কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে বাংলাদেশে কোন জাতীয় ঐকমত্যের সরকার হলে তাতে ভারতের আপত্তি থাকবে না বলে সাউথ ব্লক সূত্রে আগেই খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বিএনপিরও একধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারত আর আগের মতো সব আম এক ঝুঁড়িতে রাখতে চাচ্ছে না।
৪. নাগরিক সমাজের সংলাপ উদ্যোগ এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর তেমন বড় কোন চাপ তৈরি করতে পারেনি। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও বঙ্গভবন থেকে এ ব্যাপারে এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। সঙ্কটকালীন সময়ে বঙ্গভবনের নীরবতা অবশ্য নানা মহলে বিস্ময়ের তৈরি করেছে।
৫. ক্রসফায়ার-গ্রেপ্তার-বন্দুকযুদ্ধের প্রশাসনিক পদক্ষেপের বাইরে প্রায় অনুকূল সব শক্তিকেই মাঠে নামিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন প্রতিদিনই বিশেষ করে রাজধানীতে শোডাউন করছে। বেগম খালেদা জিয়া যেন কার্যালয় ছেড়ে বাড়ি যান এ ব্যাপারে তার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে।
৬. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপকে বিএনপি তাদের আন্দলনের এক ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখছে। তবে আন্দোলন চালিয়ে নেয়া এবং গতি বাড়ানোকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দলটি।
শেষ কথা: একধরনের পরিবর্তনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা খুবই ক্ষীণ। কেউ বাধ্য না করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান দেখছেন না পর্যবেক্ষকরা।
‘৫ই জানুয়ারি’ থেকে সৃষ্ট সঙ্কটে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা চলছে বাংলাদেশে। মারা যাচ্ছে মানুষ। কেউ পেট্রলবোমায়, কেউ বন্দুকযুদ্ধে। ভিড় বার্ন ইউনিট আর পঙ্গু হাসপাতালে। এ অবস্থায় গত তিনদিনে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম ক্রীড়ণক তিন শক্তির প্রতিক্রিয়া জানা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিক্রিয়টিই সম্ভবত সবচেয়ে স্পষ্ট। বাংলাদেশ সফরে আসা ইইউর প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে হতে পারে না। সহিংসতা, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। গণতন্ত্র আর মানবাধিকারকে বর্ণনা করা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবানও জানানো হয়েছে।
স্টিফেন ডুজাররিকের সর্বশেষ ব্রিফিং এক ধরনের হুঁশিয়ারিও। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন এবং প্রয়োজনে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। সন্ত্রাস বিরোধী সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ওয়াশিংটনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জাতিসংঘ মহাসচিব ফের আহবান জানান সংলাপের। আর জন কেরি প্রস্তাব করেছেন সহযোগিতার।
সরকার যথারীতি অনড় অবস্থায় রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনতো দূরের কথা কোন ধরনের সংলাপের সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, বিএনপি জোট বরাবরই সংলাপের পক্ষে রয়েছে। তবে তাদের আন্দোলন সমালোচিত হচ্ছে সহিংসতার জন্য। হরতাল-অবরোধ ক্রমশ ঢিলা হয়ে যাচ্ছে। রাজপথে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম।
সরকারের অনড় অবস্থানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিরোধী জোটের আন্দোলনকে জঙ্গি তৎপরতা হিসেবে প্রমাণের সরকারি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সারা দুনিয়াই বাংলাদেশের সঙ্কটকে রাজনৈতিক সঙ্কট হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। তবে জাতিসংঘ, ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর উদ্যোগ কোন ফল বয়ে আনবে কি-না তা এখনও নিশ্চিত নয়। এ অবস্থায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টই আলোচিত হচ্ছে-
১. জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সহকারী মহাসচিব তারানকোকে বাংলাদেশ সঙ্কটের সমাধানে যে দায়িত্ব দিয়েছেন- তা কতদূর এগুবে? এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ সরকার তারানকোকে ঢাকায় স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘের উদ্যোগ কি সামনে এগুবে না থমকে যাবে? তারানকো প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন- ডুজাররিকের এ কথা কি বাতকি বাত?
২. বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে ফেরাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব কি কোন ইঙ্গিতবহ? জন কেরির আহবানের কি কোন ফল আছে?
৩. বাংলাদেশ প্রশ্নে কংগ্রেস-বিজেপি সরকারের নীতির প্রকাশ্য কিছু পরিবর্তন হলেও অন্দরমহলে বড় কোন পরিবর্তন হয়নি। তবে বাংলাদেশে কোন জাতীয় ঐকমত্যের সরকার হলে তাতে ভারতের আপত্তি থাকবে না বলে সাউথ ব্লক সূত্রে আগেই খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিজেপি নেতাদের সঙ্গে বিএনপিরও একধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারত আর আগের মতো সব আম এক ঝুঁড়িতে রাখতে চাচ্ছে না।
৪. নাগরিক সমাজের সংলাপ উদ্যোগ এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর তেমন বড় কোন চাপ তৈরি করতে পারেনি। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও বঙ্গভবন থেকে এ ব্যাপারে এখনও সাড়া পাওয়া যায়নি। সঙ্কটকালীন সময়ে বঙ্গভবনের নীরবতা অবশ্য নানা মহলে বিস্ময়ের তৈরি করেছে।
৫. ক্রসফায়ার-গ্রেপ্তার-বন্দুকযুদ্ধের প্রশাসনিক পদক্ষেপের বাইরে প্রায় অনুকূল সব শক্তিকেই মাঠে নামিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন প্রতিদিনই বিশেষ করে রাজধানীতে শোডাউন করছে। বেগম খালেদা জিয়া যেন কার্যালয় ছেড়ে বাড়ি যান এ ব্যাপারে তার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে।
৬. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপকে বিএনপি তাদের আন্দলনের এক ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখছে। তবে আন্দোলন চালিয়ে নেয়া এবং গতি বাড়ানোকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দলটি।
শেষ কথা: একধরনের পরিবর্তনের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তবে তা খুবই ক্ষীণ। কেউ বাধ্য না করলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান দেখছেন না পর্যবেক্ষকরা।
No comments