সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য -১৫৫ by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
বিদ্যাসাগর কোনো কুসংস্কার মানতেন না। তিনি সংস্কৃত কলেজের দরজা নিম্নবর্ণের ছাত্রদের জন্যও খুলে দিয়েছিলেন। কলেরা আক্রান্ত রোগীর সেবায় ছুটে যেতেও দ্বিধা করতেন না তিনি। মাইলের পর মাইল হেঁটে অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। তিনি নিজ খরচে বেওয়ারিশ মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতেন। উনিশ শতকের খ্যাতিমান কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ফ্রান্সের ভার্সাইতে অবস্থানকালে যখন অর্থাভাবে বিপন্ন দশায়, তখন ঈশ্বরচন্দ্রের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র নিজের সম্পত্তি বিক্রি করে কবিকে টাকা পাঠিয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে এ সময় ভারতীয় নারীরা দুর্দশাগ্রস্ত ছিলেন। এ অবস্থা ব্যথিত করেছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। বিশেষ করে হিন্দু মেয়েদের বাল্যবিয়ে ও বিধবা বিয়ে নিষিদ্ধ থাকাকে তিনি অন্যায় ও অমানবিক মনে করেছিলেন। সামাজিক প্রথামতো কোনো মেয়ের ১২ বছরের মধ্যে বিয়ে না হলে তা সামাজিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। এমন পরিবারকে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হতো। কখনও কখনও পুরো পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হতো। আবার ব্রাহ্মণ কন্যাকে কুলীন ব্রাহ্মণ ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না বলে সমাজে বিধান ছিল। ফলে এক ধরনের কুলীন ব্রাহ্মণের বিয়ে করা পেশা হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক চাপে পড়ে সাত বছরের কন্যার সঙ্গে সত্তর বছরের কুলীন ব্রাহ্মণ বৃদ্ধের বিয়ে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। স্বাভাবিক নিয়মেই এ বৃদ্ধদের বা অন্য বয়সী বরদের মৃত্যু হলে বালিকা বধূ বিধবা হয়ে যেত। কিন্তু এদের আর পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি ছিল না। উপরন্তু এই বাল্য বিধবাদের সারা জীবন নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে চলতে হতো। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অনেক সামাজিক অনাচারও তৈরি হতে থাকে। বাল্যবিয়ের কুফল এবং বিধবাদের করুণ জীবন ঈশ্বরচন্দ্রকে ব্যথিত করে।
ঈশ্বরচন্দ্রের ঐকান্তিকতায় ও চেষ্টায় সরকার এগিয়ে আসে। অবশেষে ১৮৫৬ সালে বিধবা পুনর্বিবাহ আইন পাস হয়। সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য বিদ্যাসাগর নিজের পুত্রকেও একজন বিধবার সঙ্গে বিয়ে দেন। বিধবা বিয়ে কার্যকর করা, দ্বি-বিবাহ ও বাল্যবিয়ে রহিতকরণ এং বিধবা বিয়েকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ১৮৭২ সালে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট পাস করা হয়। এই আইন পাসেও বিদ্যাসাগরের যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বিদ্যাসাগর : স্যার উইলিয়াম কেরি বাংলা ব্যাকরণ লেখার যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর পূর্ণতা দেন। তার হাতে বাংলা ব্যাকরণ পরিপূর্ণতা লাভ করে। বাংলা হরফেরও তিনি সংস্কার করেছিলেন। ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণের বিভাজনও করেন সাফল্যের সঙ্গে। বিদ্যাসাগর নিজে একজন লেখক ছিলেন। তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে- বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭), বাংলার ইতিহাস (১৮৪৮), জীবনচরিত (১৮৫০), বোধদয় (১৮৫১), উপক্রমণিকা (১৮৫১). শকুন্তলা (১৮৫৫), বিধবা বিবাহ বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৯০), বর্ণ পরিচয় (১৮৫৪), কথামালা (১৮৫৬), সিতার বনবাস (১৮৬০) ইত্যাদি।
বিদ্যাসাগর বিশেষ স্কুল পরিদর্শক থাকায় শিক্ষা বিস্তার ও নারী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে তার সুবিধা হয়েছিল। জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বিদ্যালয় গড়ায় উৎসাহ দিতেন। তিনি অনেক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজ অর্থ ব্যয়ে ১৮৬৪ সালে কলিকাতা মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা বিস্তারে এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই এই মহৎপ্রাণ সমাজ সংস্কারক ও পণ্ডিত ব্যক্তির জীবনাবসান ঘটে।
দীর্ঘদিন থেকে প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে এ সময় ভারতীয় নারীরা দুর্দশাগ্রস্ত ছিলেন। এ অবস্থা ব্যথিত করেছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে। বিশেষ করে হিন্দু মেয়েদের বাল্যবিয়ে ও বিধবা বিয়ে নিষিদ্ধ থাকাকে তিনি অন্যায় ও অমানবিক মনে করেছিলেন। সামাজিক প্রথামতো কোনো মেয়ের ১২ বছরের মধ্যে বিয়ে না হলে তা সামাজিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। এমন পরিবারকে নানাভাবে নিগৃহীত হতে হতো। কখনও কখনও পুরো পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হতো। আবার ব্রাহ্মণ কন্যাকে কুলীন ব্রাহ্মণ ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না বলে সমাজে বিধান ছিল। ফলে এক ধরনের কুলীন ব্রাহ্মণের বিয়ে করা পেশা হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক চাপে পড়ে সাত বছরের কন্যার সঙ্গে সত্তর বছরের কুলীন ব্রাহ্মণ বৃদ্ধের বিয়ে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। স্বাভাবিক নিয়মেই এ বৃদ্ধদের বা অন্য বয়সী বরদের মৃত্যু হলে বালিকা বধূ বিধবা হয়ে যেত। কিন্তু এদের আর পুনরায় বিয়ে করার অনুমতি ছিল না। উপরন্তু এই বাল্য বিধবাদের সারা জীবন নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করে চলতে হতো। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অনেক সামাজিক অনাচারও তৈরি হতে থাকে। বাল্যবিয়ের কুফল এবং বিধবাদের করুণ জীবন ঈশ্বরচন্দ্রকে ব্যথিত করে।
ঈশ্বরচন্দ্রের ঐকান্তিকতায় ও চেষ্টায় সরকার এগিয়ে আসে। অবশেষে ১৮৫৬ সালে বিধবা পুনর্বিবাহ আইন পাস হয়। সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য বিদ্যাসাগর নিজের পুত্রকেও একজন বিধবার সঙ্গে বিয়ে দেন। বিধবা বিয়ে কার্যকর করা, দ্বি-বিবাহ ও বাল্যবিয়ে রহিতকরণ এং বিধবা বিয়েকে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ১৮৭২ সালে সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্ট পাস করা হয়। এই আইন পাসেও বিদ্যাসাগরের যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ছিল।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বিদ্যাসাগর : স্যার উইলিয়াম কেরি বাংলা ব্যাকরণ লেখার যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর পূর্ণতা দেন। তার হাতে বাংলা ব্যাকরণ পরিপূর্ণতা লাভ করে। বাংলা হরফেরও তিনি সংস্কার করেছিলেন। ব্যঞ্জনবর্ণ ও স্বরবর্ণের বিভাজনও করেন সাফল্যের সঙ্গে। বিদ্যাসাগর নিজে একজন লেখক ছিলেন। তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে- বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭), বাংলার ইতিহাস (১৮৪৮), জীবনচরিত (১৮৫০), বোধদয় (১৮৫১), উপক্রমণিকা (১৮৫১). শকুন্তলা (১৮৫৫), বিধবা বিবাহ বিষয়ক প্রস্তাব (১৮৯০), বর্ণ পরিচয় (১৮৫৪), কথামালা (১৮৫৬), সিতার বনবাস (১৮৬০) ইত্যাদি।
বিদ্যাসাগর বিশেষ স্কুল পরিদর্শক থাকায় শিক্ষা বিস্তার ও নারী শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে তার সুবিধা হয়েছিল। জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বিদ্যালয় গড়ায় উৎসাহ দিতেন। তিনি অনেক বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজ অর্থ ব্যয়ে ১৮৬৪ সালে কলিকাতা মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা বিস্তারে এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ ভূমিকা ছিল।
১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই এই মহৎপ্রাণ সমাজ সংস্কারক ও পণ্ডিত ব্যক্তির জীবনাবসান ঘটে।
No comments