কাণ্ডজ্ঞানহীন একটি বিজ্ঞাপন by অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ
পৃথিবী-বিখ্যাত ভাষণগুলোর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ অনন্যসাধারণ। বলতে গেলে তুলনাহীন। এই ভাষণে সে সময়ের জাতিগত অত্যাচার, নিপীড়ন, শাসন-শোষণ, বৈষম্য এবং বাঙালি জাতিকে কীভাবে পদদলিত করা হয়েছে তার উল্লেখ যেমন রয়েছে, তেমনি বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামের বজ্রকণ্ঠ উচ্চারিত হয়েছে। ঘোষিত হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা, কৌশল ও পদ্ধতি। একই সঙ্গে সমগ্র জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক যেমন দৃশ্যমান হয়েছে তেমনি কাব্যিক ছন্দে এই ভাষণে তিনি 'রাজনীতির কবি' (পোয়েট অব পলিটিক্স) হিসেবে বরিত হয়েছেন। এই কালজয়ী ভাষণ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পর্যন্ত জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে প্রবহমান থাকবে। তাই যথার্থভাবে ভাষণটি আজ সংবিধানের অংশ।
কিন্তু অবাক বিস্ময় ও বেদনার্ত চিত্তে যখন দেখি এই ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিজ্ঞাপনে বিদঘুটে গোঁজামিল ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থার স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন এ সম্পর্কে যে কোনো নাগরিকেরই দায়িত্ব এর প্রতিবাদ করা। সম্প্রতি সেই বিজ্ঞাপনটি প্রায় সব টেলিভিশনে সপ্তাহ ধরে সম্প্রচারিত হচ্ছে। ৭ মার্চের ওই ঐতিহাসিক ভাষণকে খণ্ডিত করে, কাটাছেঁড়া করে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে কথিত 'ইয়ং বাংলা' সংস্থা(?) যে অপকর্মটি করে চলেছে তা যেমন নিন্দনীয় তেমনি যারা এটা প্রচার করছেন, তাদের চোখ অন্ধ এবং কর্ণ বধির। এটি বিজ্ঞাপন হিসেবে কীভাবে প্রচারিত হয়? যেখানে জাতির পিতার ভাষণকে প্রকারান্তরে বিকৃত ও অপমান করা হয়। পাঠকদের সুবিধার্থে বিজ্ঞাপনটিতে কীভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের অংশ বা বাক্য-অংশ বা শব্দরাজি এক অখ্যাত যুবকের কণ্ঠস্বরের অনুষঙ্গ হিসেবে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে তার চিত্ররূপ এরূপ :
বিজ্ঞাপনে কথিত যুবকের সম্বোধন 'প্রিয় বন্ধুরা আমার'... এর সঙ্গে সঙ্গেই যুক্ত করা হয়েছে 'আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন' এবং দেখানো হলো ৭ মার্চের লাখো মানুষের জনসভার চিত্র। তার পরে শোনা গেল না বঙ্গবন্ধুর সেই আবেগি কণ্ঠস্বর, 'ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।' বরং এসব কিছুকে ছাঁটাই করে কথিত বিজ্ঞাপনের যুবক ভাষণে বলে ওঠে_ 'সায়েন্স, ইনোভেশন ও তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।' পরক্ষণেই আবার নিয়ে আসা হলো লাখো জনতার দৃশ্য ও বঙ্গবন্ধুর সচিত্র কণ্ঠস্বর_ 'আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে...' এটুকু বলে পরক্ষণেই যুবকের কণ্ঠে শোনা গেল 'আমাদের ছেলেরা ড্রোন বানিয়েছে, রোবট বানিয়েছে'_ এর সঙ্গে যোগ হলো বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর 'আজ বাংলার মানুষ' পরপরই যুবক বলল 'উন্নত জীবন চায়'। তারপর শোনা গেল বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর '৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবে না'; পরপরই যুবকের কণ্ঠে 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দিতে আমি কাজ করে যাচ্ছি, আমি কাজ করে যাব।' এরপর শোনা গেল, যারা জয় বাংলার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের জন্য থাকছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। রেজিস্ট্রেশন করতে ভিজিট করুন.www.youngbangl.org। ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে এই বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞাপনী যুবকের বক্তব্যের সম্পর্ক বা সামঞ্জস্য কোথায়? স্পিরিটকে লণ্ডভণ্ড করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের কথিত কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রলাপ জুড়ে দিয়ে যে বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হচ্ছে তাতে বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণকে জবাই করে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এ অধিকার তাকে কে দিয়েছে? অবিলম্বে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন বিজ্ঞাপনটির সল্ফপ্রচার বন্ধ করা হোক এবং এই জঘন্য বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং চিরগর্বের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা ও অহংকারের আত্মবোধকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে তার জন্য শাস্তি হওয়া উচিত।
'৭২-এর খসড়া সংবিধান প্রণেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী
কিন্তু অবাক বিস্ময় ও বেদনার্ত চিত্তে যখন দেখি এই ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিজ্ঞাপনে বিদঘুটে গোঁজামিল ও কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করে ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থার স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন এ সম্পর্কে যে কোনো নাগরিকেরই দায়িত্ব এর প্রতিবাদ করা। সম্প্রতি সেই বিজ্ঞাপনটি প্রায় সব টেলিভিশনে সপ্তাহ ধরে সম্প্রচারিত হচ্ছে। ৭ মার্চের ওই ঐতিহাসিক ভাষণকে খণ্ডিত করে, কাটাছেঁড়া করে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে কথিত 'ইয়ং বাংলা' সংস্থা(?) যে অপকর্মটি করে চলেছে তা যেমন নিন্দনীয় তেমনি যারা এটা প্রচার করছেন, তাদের চোখ অন্ধ এবং কর্ণ বধির। এটি বিজ্ঞাপন হিসেবে কীভাবে প্রচারিত হয়? যেখানে জাতির পিতার ভাষণকে প্রকারান্তরে বিকৃত ও অপমান করা হয়। পাঠকদের সুবিধার্থে বিজ্ঞাপনটিতে কীভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের অংশ বা বাক্য-অংশ বা শব্দরাজি এক অখ্যাত যুবকের কণ্ঠস্বরের অনুষঙ্গ হিসেবে জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে তার চিত্ররূপ এরূপ :
বিজ্ঞাপনে কথিত যুবকের সম্বোধন 'প্রিয় বন্ধুরা আমার'... এর সঙ্গে সঙ্গেই যুক্ত করা হয়েছে 'আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন' এবং দেখানো হলো ৭ মার্চের লাখো মানুষের জনসভার চিত্র। তার পরে শোনা গেল না বঙ্গবন্ধুর সেই আবেগি কণ্ঠস্বর, 'ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।' বরং এসব কিছুকে ছাঁটাই করে কথিত বিজ্ঞাপনের যুবক ভাষণে বলে ওঠে_ 'সায়েন্স, ইনোভেশন ও তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।' পরক্ষণেই আবার নিয়ে আসা হলো লাখো জনতার দৃশ্য ও বঙ্গবন্ধুর সচিত্র কণ্ঠস্বর_ 'আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে...' এটুকু বলে পরক্ষণেই যুবকের কণ্ঠে শোনা গেল 'আমাদের ছেলেরা ড্রোন বানিয়েছে, রোবট বানিয়েছে'_ এর সঙ্গে যোগ হলো বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর 'আজ বাংলার মানুষ' পরপরই যুবক বলল 'উন্নত জীবন চায়'। তারপর শোনা গেল বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর '৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবে না'; পরপরই যুবকের কণ্ঠে 'প্রত্যেক ঘরে ঘরে স্বল্প খরচে বিদ্যুৎ পেঁৗছে দিতে আমি কাজ করে যাচ্ছি, আমি কাজ করে যাব।' এরপর শোনা গেল, যারা জয় বাংলার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের জন্য থাকছে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। রেজিস্ট্রেশন করতে ভিজিট করুন.www.youngbangl.org। ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে এই বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞাপনী যুবকের বক্তব্যের সম্পর্ক বা সামঞ্জস্য কোথায়? স্পিরিটকে লণ্ডভণ্ড করা হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণের কথিত কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রলাপ জুড়ে দিয়ে যে বিজ্ঞাপনটি প্রচার করা হচ্ছে তাতে বঙ্গবন্ধুর সেই অমর ভাষণকে জবাই করে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এ অধিকার তাকে কে দিয়েছে? অবিলম্বে এই কাণ্ডজ্ঞানহীন বিজ্ঞাপনটির সল্ফপ্রচার বন্ধ করা হোক এবং এই জঘন্য বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং চিরগর্বের মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা ও অহংকারের আত্মবোধকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে তার জন্য শাস্তি হওয়া উচিত।
'৭২-এর খসড়া সংবিধান প্রণেতা ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী
No comments