বৈঠক বনাম ফটোসেশন by ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী
বাংলাদেশের বিতর্কিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ১৮৫ জন সফরসঙ্গী নিয়ে সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ ও যুক্তরাজ্য ঘুরে এসেছেন। এই সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী, বিতর্কিত লতিফ সিদ্দিকীসহ তার পরিবারের লোকজনেরা ও জেলাপর্যায়ের নেতাকর্মীরাও ছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়ীরাও। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এই বিশাল বহরে অংশগ্রহণকারীদের সুনির্দিষ্ট কাজ কী ছিল, সেটি জানা যায়নি। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বলেছে, সফরসঙ্গীদের অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন শুধু শপিংয়ে। ৭৫ জন ব্যবসায়ী অবশ্য নিজ খরচেই প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। বাকি ১১০ জনের ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করেছে। অথচ বিরাট দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গী ছিলেন মাত্র ৭৫ জন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীরাও ছিলেন। সরকারি খরচে গিয়েছিলেন অল্প কয়েকজন। বাকি সবাই যার যার খরচে। শেখ হাসিনার এই সফরকে অত্যন্ত ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ও ‘সফল’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এসব ফোরামে হাজির হওয়ার সুযোগ পেলে পারতপক্ষে তার কোনোটাই হাতছাড়া করা হয় না। কখনো কখনো তা কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদার চেয়ে ছোট হলেও। সে দিক থেকে অবশ্য জাতিসঙ্ঘ সফর মর্যাদার দিক থেকে কোনোমতেই ছোট ছিল না। এসব জায়গায় প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, ঝটপট জবাব দেয়া, মন্তব্য করতে বিচার বিবেচনা না করা, এগুলোও কাজ করে। এখন এই জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারের জন্য সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি আদায় করে নেয়া কিংবা অন্তত তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। সে প্রচেষ্টা যে একেবারে বিফলে যায়, এমন কথা বলা যাবে না। সে দিক থেকে এই সফরকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ও ‘সফল’ বলে কেউ কেউ দাবি করতেই পারেন; কিন্তু দেশে বা আন্তর্জাতিক ফোরামে, বরাবরের মতোই জাতিসঙ্ঘের ভাষণেও সরকারের এক-দেশদর্শী নীতির প্রতিফলন অস্পষ্ট থাকেনি। কোনো ফোরামেই বাংলাদেশকে এ সরকার একটি অভিন্ন দেশ হিসেবে দাঁড় করাতে পারেনি। দেশেও তারা পারেন না। জাতিসঙ্ঘে গিয়েও পারলেন না।
জাতিসঙ্ঘে গিয়ে মোদি ভারত তথা বিশ্বের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন; কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কেবল নিজ সরকারেরই সাফল্যগাথা তুলে ধরে এমন ধারণার সৃষ্টি করলেন তাতে মনে হতে পারে যে, তার সরকার ও দল ছাড়া দেশের উন্নয়নের আর কোনো পথ নেই। তিনি যেন থাকলেন অনেকটা আত্মপ্রশংসায় বিভোর হয়ে। মোদি যেখানে ঐক্যবদ্ধ ভারতের আওয়াজ তুললেন, সেখানে এ রকম একটি বিশ্ব ফোরামে শেখ হাসিনা দেশের বিরোধী দলকে একহাত নিয়ে ছেড়েছেন। নিউ ইয়র্কে আয়োজিত ভারতের সর্বস্তরের প্রবাসীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে নয়, নিউ ইয়র্কে বসবাসরত আওয়ামী লীগারদের উদ্দেশে। কেউ কেউ বলতে পারেন, শেখ হাসিনা ঠিক কাজটিই করেছেন। কেননা, নিউ ইয়র্কে বিরোধীরা শেখ হাসিনাকে স্বাগত তো জানানইনি, বরং জাতিসঙ্ঘের সামনে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন। রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রাখতে চাইলে শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশেই ভাষণ দিতে পারতেন। তাদের কথা শোনার চেষ্টা করতে পারতেন; কিন্তু তা তিনি করেননি। কারণ দেশে বিরোধী দলের ওপর যে সীমাহীন নির্যাতন পেটোয়া বাহিনী চালাচ্ছে, তাতে ওইসব লোকের সামনে কথা বলার নৈতিক শক্তি সরকারের শীর্ষব্যক্তিদের আর অবশিষ্ট নেই। জানা যায়, জাতিসঙ্ঘের মূল গেট দিয়ে তিনি সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। পেছনের দরজা দিয়ে তাকে সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছিল। যারা তাকে মূল দরজা দিয়ে জাতিসঙ্ঘে প্রবেশ করতে দিলো না, তার বিরুদ্ধে স্লেøাগান দিলো, তাদের উদ্দেশে তিনি কথা বলতে যাবেন কোন দুঃখে? কথা বলতে গেলে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। শেখ হাসিনা জানেন, সে প্রশ্নের জবাব দেয়ার সামর্থ্য তার নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে নয়, আওয়ামী লীগারদের উদ্দেশে তাকে ভাষণ দিতে হলো।
মোদি তার ভাষণে দেশের বিরোধী দল সম্পর্কে কোনো কটূক্তিই করেননি; কিন্তু শেখ হাসিনার ভাষণের বেশির ভাগই ছিল বিরোধী দলের নিন্দা। ফলে মোদির ভাষণটি হয়ে উঠেছিল প্রেরণাদায়ী। অপর দিকে শেখ হাসিনার ভাষণ ছিল বিরক্তিকর। মোদি এই বলে অবনত ছিলেন যে, তিনি তার দেশের জনগণের সেবক। আর আমরা নিজেদের এই বলে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছি যে, আমরাই হলাম দেশের অবিসংবাদিত নেতা। মোদির ভাষণে প্রবাসী ভারতীয় তরুণেরা উজ্জীবিত হয়েছে। আমরা আমাদের প্রবাসীদের ম্র্রিয়মাণ করেছি। জনপ্রতিনিধিত্বহীন এই সরকারের বিরাট সফরসঙ্গী বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্ভবত ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার ১৫ মিনিটের একটি বৈঠক এবং জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে দেখা হওয়া। তা নিয়ে দেশে একেবারে হৈ হৈ রৈ রৈ কাণ্ড ঘটিয়ে দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ঢাকায় ফিরে এসে ৩০ সেপ্টেম্বর বলেছেন যে, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য বৈঠকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক যাওয়ার আগে মহাসচিব এক বাণীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে বৃহত্তর আঙ্গিকে সমঝোতার তাগিদ দিয়েছিলেন। হাসিনার মূল বৈঠকে রাজনৈতিক সংলাপ বা সমঝোতা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই বার্তায় তিনি যা বলেছেন, যেভাবে সংলাপ ও সমঝোতার তাগিদ দিয়েছেন, বৈঠকে তার বিন্দুমাত্রও বলেননি। বরং জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব নির্বাচন-পরবর্তীকালে দেশে যে স্থিতিশীলতা এসেছে, শেখ হাসিনা এটি যেভাবে ধরে রেখেছেন, তার প্রশংসা করেছেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আমি বলছি, নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। বিশ্বাস না হলে বান কি মুন সাহেবকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।’
নরেন্দ্র মোদির সাথে শেখ হাসিনার আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা ও সীমান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মোদি। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে ট্রানজিটের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চান। তবে ভারতের তরফ থেকে এর কী জবাব মিলেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা জানাতে পারেননি। নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড সংখ্যক সফরসঙ্গী নিয়ে যাওয়া, জাতিসঙ্ঘ কার্যক্রমের তাদের সম্পৃক্ততা এবং বিশাল ওই বহরের ব্যয় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা; কিন্তু মন্ত্রী এগুলোর জবাব এড়িয়ে গিয়ে বিরক্তিসহকারে পররাষ্ট্র সচিবের দিকে মাইক্রোফোন ঠেলে দেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অধিবেশনের সাইড লাইনে প্রায় ৫০টি ইভেন্ট হয়েছে। এসব ইভেন্টে সফরসঙ্গীরা অংশ নিয়েছেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে সরকারি দল ও জোটের জেলাপর্যায়ের নেতা সুনির্দিষ্টভাবে কোন ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন, দেশের জন্য কী বয়ে এনেছেন, অব্যাহতভাবে এমন প্রশ্ন আসায় ফের মাইক্রোফোন টেনে নেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে কে গেছেন, কত খরচ হয়েছে, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন সার্বিকভাবে আমরা কী অর্জন করতে পেরেছি। সেই অর্জন নিয়ে বেশি বেশি প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। এ অবস্থায় মনে হয়, কেবল প্রমোদ ভ্রমণের জন্যই এই বিশাল বহরকে নিউ ইয়র্ক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জাতির জন্য কী অর্জিত হয়েছে সেটি বড় কথা নয়। সফরের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
এর বাইরেও এই সফরের সাফল্য যে নিতান্তই অতিরঞ্জিত কিংবা ভিত্তিহীন সেটি প্রমাণিত হয়ে গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। শেখ হাসিনার সাথে তার বৈঠক বলে যে স্টিল ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তা ছিল মূলত জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে প্রধানমন্ত্রীর একটি ফটোসেশন। কূটনৈতিক ভাষায় এটাকে বলা হয়, ‘ফটো অপরচুনিটি’। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রশ্নের জবাবে লিখিত বার্তায় জাতিসঙ্ঘ এ তথ্য জানিয়েছে। মহাসচিবের দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী গত ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে জেনারেল ডিবেট (মূল ভাষণ) শুরুর আগে সকাল ৯টায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে কোনো রিড আউট (মিডিয়ার জন্য রেকর্ড) রয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসঙ্ঘের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলবিষয়ক মুখপাত্র ম্যাথিয়াস লিন্ডারম্যান ৩০ সেপ্টেম্বর পত্রিকাকে লিখিত বার্তায় জানান, উল্লিখিত শিডিউল মোতাবেক জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের যে সাক্ষাৎটি হয়েছে, তা এত অল্প সময়ের জন্য যে, এই সাক্ষাতের কোনো রিড আউট রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, সাধারণ অফিসিয়াল বা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক না হলে ওই বৈঠকের কোনো রিড আউট থাকে না। লিন্ডারম্যানের ওই লিখিত বার্তা পাওয়ার পর এ বিষয়ে আরো জানতে তাকে ফোন করা হলে তিনি পত্রিকার প্রতিনিধিকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ডেপুটি স্পোক্সপার্সন ফারহান হকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। ফারহান হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি লিখিত বার্তায় বলেন, ‘দিস ওয়াজ এ ফটো অপরচুনিটি। দেয়ার ওয়াজ নো রিড আউট।’ অর্থাৎ সাক্ষাৎটি ছিল প্রধানমন্ত্রী ও তার সিনিয়র ডেলিগেটদের সাথে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের একটি ফটোসেশন। এটা কোনো অফিসিয়াল বা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছিল না। জাতিসঙ্ঘের প্রচলিত প্রথা মোতাবেক অধিবেশনে যোগদানকারী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে ফটোসেশনের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন।
কিন্তু এ নিয়ে বিভ্রান্তি প্রচার শুরু হয়েছে নিউ ইয়র্ক থেকেই। ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলেই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে বলে শেখ হাসিনার সাথে সফরকারী মিডিয়া টিমকে ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘বান কি মুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মিটিং অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বান কি মুন। এভাবেই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব।’ ওই দিন বিকেলে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। তাতেও বলা হয় যে, শেখ হাসিনার সাথে বান কি মুনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বরও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কার্যালয়, জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র অফিস, জাতিসঙ্ঘের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির কার্যালয় এবং তার স্ট্র্যাটেজিক বিষয়ক কর্মকর্তা হোসে লুইস দিয়াজের সাথে কথা বলে পত্রিকাটি নিশ্চিত হয় যে, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নেই। তারপরও সম্ভবত কেবল মুখ রক্ষার জন্যই নিছক একটি ফটোসেশনকেই ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠক’ বলে গল্প ফাঁদলো সরকার। কিন্তু তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে পার পাওয়া কঠিন। আরো একবার প্রমাণিত হলো, সরকার যেমন জনগণনির্ভর নয়, তেমনি জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই ব্যস্ত।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
জাতিসঙ্ঘে গিয়ে মোদি ভারত তথা বিশ্বের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন; কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কেবল নিজ সরকারেরই সাফল্যগাথা তুলে ধরে এমন ধারণার সৃষ্টি করলেন তাতে মনে হতে পারে যে, তার সরকার ও দল ছাড়া দেশের উন্নয়নের আর কোনো পথ নেই। তিনি যেন থাকলেন অনেকটা আত্মপ্রশংসায় বিভোর হয়ে। মোদি যেখানে ঐক্যবদ্ধ ভারতের আওয়াজ তুললেন, সেখানে এ রকম একটি বিশ্ব ফোরামে শেখ হাসিনা দেশের বিরোধী দলকে একহাত নিয়ে ছেড়েছেন। নিউ ইয়র্কে আয়োজিত ভারতের সর্বস্তরের প্রবাসীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে নয়, নিউ ইয়র্কে বসবাসরত আওয়ামী লীগারদের উদ্দেশে। কেউ কেউ বলতে পারেন, শেখ হাসিনা ঠিক কাজটিই করেছেন। কেননা, নিউ ইয়র্কে বিরোধীরা শেখ হাসিনাকে স্বাগত তো জানানইনি, বরং জাতিসঙ্ঘের সামনে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের আয়োজন করেছিলেন। রাষ্ট্রনায়কোচিত ভূমিকা রাখতে চাইলে শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশেই ভাষণ দিতে পারতেন। তাদের কথা শোনার চেষ্টা করতে পারতেন; কিন্তু তা তিনি করেননি। কারণ দেশে বিরোধী দলের ওপর যে সীমাহীন নির্যাতন পেটোয়া বাহিনী চালাচ্ছে, তাতে ওইসব লোকের সামনে কথা বলার নৈতিক শক্তি সরকারের শীর্ষব্যক্তিদের আর অবশিষ্ট নেই। জানা যায়, জাতিসঙ্ঘের মূল গেট দিয়ে তিনি সম্মেলন কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। পেছনের দরজা দিয়ে তাকে সম্মেলন কেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছিল। যারা তাকে মূল দরজা দিয়ে জাতিসঙ্ঘে প্রবেশ করতে দিলো না, তার বিরুদ্ধে স্লেøাগান দিলো, তাদের উদ্দেশে তিনি কথা বলতে যাবেন কোন দুঃখে? কথা বলতে গেলে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। শেখ হাসিনা জানেন, সে প্রশ্নের জবাব দেয়ার সামর্থ্য তার নেই। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশে নয়, আওয়ামী লীগারদের উদ্দেশে তাকে ভাষণ দিতে হলো।
মোদি তার ভাষণে দেশের বিরোধী দল সম্পর্কে কোনো কটূক্তিই করেননি; কিন্তু শেখ হাসিনার ভাষণের বেশির ভাগই ছিল বিরোধী দলের নিন্দা। ফলে মোদির ভাষণটি হয়ে উঠেছিল প্রেরণাদায়ী। অপর দিকে শেখ হাসিনার ভাষণ ছিল বিরক্তিকর। মোদি এই বলে অবনত ছিলেন যে, তিনি তার দেশের জনগণের সেবক। আর আমরা নিজেদের এই বলে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছি যে, আমরাই হলাম দেশের অবিসংবাদিত নেতা। মোদির ভাষণে প্রবাসী ভারতীয় তরুণেরা উজ্জীবিত হয়েছে। আমরা আমাদের প্রবাসীদের ম্র্রিয়মাণ করেছি। জনপ্রতিনিধিত্বহীন এই সরকারের বিরাট সফরসঙ্গী বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্ভবত ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার ১৫ মিনিটের একটি বৈঠক এবং জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে দেখা হওয়া। তা নিয়ে দেশে একেবারে হৈ হৈ রৈ রৈ কাণ্ড ঘটিয়ে দেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ঢাকায় ফিরে এসে ৩০ সেপ্টেম্বর বলেছেন যে, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্য বৈঠকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তিনি জানান, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক যাওয়ার আগে মহাসচিব এক বাণীতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে বৃহত্তর আঙ্গিকে সমঝোতার তাগিদ দিয়েছিলেন। হাসিনার মূল বৈঠকে রাজনৈতিক সংলাপ বা সমঝোতা নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই বার্তায় তিনি যা বলেছেন, যেভাবে সংলাপ ও সমঝোতার তাগিদ দিয়েছেন, বৈঠকে তার বিন্দুমাত্রও বলেননি। বরং জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব নির্বাচন-পরবর্তীকালে দেশে যে স্থিতিশীলতা এসেছে, শেখ হাসিনা এটি যেভাবে ধরে রেখেছেন, তার প্রশংসা করেছেন। ওই বৈঠকের বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ‘আমি বলছি, নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। বিশ্বাস না হলে বান কি মুন সাহেবকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন।’
নরেন্দ্র মোদির সাথে শেখ হাসিনার আলোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা ও সীমান্ত সমস্যা এবং অন্যান্য অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মোদি। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে ট্রানজিটের বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চান। তবে ভারতের তরফ থেকে এর কী জবাব মিলেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা জানাতে পারেননি। নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড সংখ্যক সফরসঙ্গী নিয়ে যাওয়া, জাতিসঙ্ঘ কার্যক্রমের তাদের সম্পৃক্ততা এবং বিশাল ওই বহরের ব্যয় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা; কিন্তু মন্ত্রী এগুলোর জবাব এড়িয়ে গিয়ে বিরক্তিসহকারে পররাষ্ট্র সচিবের দিকে মাইক্রোফোন ঠেলে দেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, অধিবেশনের সাইড লাইনে প্রায় ৫০টি ইভেন্ট হয়েছে। এসব ইভেন্টে সফরসঙ্গীরা অংশ নিয়েছেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে সরকারি দল ও জোটের জেলাপর্যায়ের নেতা সুনির্দিষ্টভাবে কোন ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন, দেশের জন্য কী বয়ে এনেছেন, অব্যাহতভাবে এমন প্রশ্ন আসায় ফের মাইক্রোফোন টেনে নেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে কে গেছেন, কত খরচ হয়েছে, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন সার্বিকভাবে আমরা কী অর্জন করতে পেরেছি। সেই অর্জন নিয়ে বেশি বেশি প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। এ অবস্থায় মনে হয়, কেবল প্রমোদ ভ্রমণের জন্যই এই বিশাল বহরকে নিউ ইয়র্ক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জাতির জন্য কী অর্জিত হয়েছে সেটি বড় কথা নয়। সফরের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
এর বাইরেও এই সফরের সাফল্য যে নিতান্তই অতিরঞ্জিত কিংবা ভিত্তিহীন সেটি প্রমাণিত হয়ে গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা গেছে, নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। শেখ হাসিনার সাথে তার বৈঠক বলে যে স্টিল ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে, তা ছিল মূলত জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে প্রধানমন্ত্রীর একটি ফটোসেশন। কূটনৈতিক ভাষায় এটাকে বলা হয়, ‘ফটো অপরচুনিটি’। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রশ্নের জবাবে লিখিত বার্তায় জাতিসঙ্ঘ এ তথ্য জানিয়েছে। মহাসচিবের দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী গত ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে জেনারেল ডিবেট (মূল ভাষণ) শুরুর আগে সকাল ৯টায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং এ বিষয়ে কোনো রিড আউট (মিডিয়ার জন্য রেকর্ড) রয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে জাতিসঙ্ঘের এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলবিষয়ক মুখপাত্র ম্যাথিয়াস লিন্ডারম্যান ৩০ সেপ্টেম্বর পত্রিকাকে লিখিত বার্তায় জানান, উল্লিখিত শিডিউল মোতাবেক জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের যে সাক্ষাৎটি হয়েছে, তা এত অল্প সময়ের জন্য যে, এই সাক্ষাতের কোনো রিড আউট রেকর্ড আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, সাধারণ অফিসিয়াল বা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক না হলে ওই বৈঠকের কোনো রিড আউট থাকে না। লিন্ডারম্যানের ওই লিখিত বার্তা পাওয়ার পর এ বিষয়ে আরো জানতে তাকে ফোন করা হলে তিনি পত্রিকার প্রতিনিধিকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের ডেপুটি স্পোক্সপার্সন ফারহান হকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। ফারহান হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি লিখিত বার্তায় বলেন, ‘দিস ওয়াজ এ ফটো অপরচুনিটি। দেয়ার ওয়াজ নো রিড আউট।’ অর্থাৎ সাক্ষাৎটি ছিল প্রধানমন্ত্রী ও তার সিনিয়র ডেলিগেটদের সাথে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের একটি ফটোসেশন। এটা কোনো অফিসিয়াল বা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছিল না। জাতিসঙ্ঘের প্রচলিত প্রথা মোতাবেক অধিবেশনে যোগদানকারী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে ফটোসেশনের জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন।
কিন্তু এ নিয়ে বিভ্রান্তি প্রচার শুরু হয়েছে নিউ ইয়র্ক থেকেই। ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলেই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে বলে শেখ হাসিনার সাথে সফরকারী মিডিয়া টিমকে ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘বান কি মুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মিটিং অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন বান কি মুন। এভাবেই বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব।’ ওই দিন বিকেলে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। তাতেও বলা হয় যে, শেখ হাসিনার সাথে বান কি মুনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বরও জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কার্যালয়, জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র অফিস, জাতিসঙ্ঘের রাজনৈতিকবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারির কার্যালয় এবং তার স্ট্র্যাটেজিক বিষয়ক কর্মকর্তা হোসে লুইস দিয়াজের সাথে কথা বলে পত্রিকাটি নিশ্চিত হয় যে, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক নেই। তারপরও সম্ভবত কেবল মুখ রক্ষার জন্যই নিছক একটি ফটোসেশনকেই ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠক’ বলে গল্প ফাঁদলো সরকার। কিন্তু তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে পার পাওয়া কঠিন। আরো একবার প্রমাণিত হলো, সরকার যেমন জনগণনির্ভর নয়, তেমনি জনগণকে বিভ্রান্ত করতেই ব্যস্ত।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com
No comments