যেখানে আইন নেই কর দিতে হয় না
আজকের বিশ্ব অনেক বেশি ছোট আর সুবিধাজনক।
এক ক্লিকের মাধ্যমেই আমরা চ্যানেল পাল্টিয়ে বিশ্বের সকল খবর মুহূর্তেই জেনে
নিতে পারি, বিশ্বের দূরতম দেশের টিকিটটাও কেটে ফেলি। আমাদের খাদ্য উৎপন্ন
হচ্ছে, নিজেদের পছন্দমতো জিনিস পৌঁছে যাচ্ছে ঘরের দ্বারে। বললেই ঘরে এসে
পৌঁছে যাচ্ছে পছন্দসই পণ্য, স্বাস্থ্যখাত হয়েছে অনেক উন্নত, শিক্ষার অধিকার
হয়েছে সুরক্ষিত। বলতে গেলে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আমাদের জীবন পালটে
গেছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায়। তবুও আমরা কেন চাপ অনুভব করি, এতটা ভার
বোধ করি কিংবা মুক্ত হতে চাই? এত এত সুবিধা কি আমাদের কিছুই দেয়নি? আমরা কি
এমন কিছু ভুলে গেছি যেটি আমাদের পূর্বপুরুষেরা জানতেন? তারা তো সুখীই
ছিলেন। আফ্রিকার হাদজা উপজাতিটির মধ্যে রয়েছে অতীতের মানুষের আচরণের সবচেয়ে
কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য। তাঞ্জানিয়ার উত্তরে লেইক এয়াসি। এখানেই বসবাস করে
বিশ্বের শেষ শিকার সংগ্রহকারী উপজাতিটি। তারা চাষবাস করে না, নিজেদের জন্য
স্থায়ী ঘরও বানায় না। প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে তারা একটি অপরিবর্তিত
জীবনযাপন করে আসছে। তাদের জগৎটি হচ্ছে একটি চূড়ান্ত স্বাধীনতার জগৎ, যেটি
আধুনিক সমাজ খুব সহজে কল্পনা করতে পারবে না। আর কখনও এমন জীবনধারণের
চিন্তাটি আরও সুদূরপরাহত। এখানে কোন ফোন কল নেই, নেই বার্তা পাঠানোর উপায়।
গাড়ি নেই, বিদ্যুৎও নেই। চাকরি নেই, তাই বসের ঝাড়ি খাবার ঝুঁকিও নেই। নেই
কোন সময়ের তাড়া, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় কোন বাধ্যবাধকতা। কোন আইন নেই, করও
দিতে হবে না কাউকে। সবচেয়ে আসল যে জিনিসটি, সেই টাকাও নেই এখানে। একে অপরের
সঙ্গে খুব কমই বিভিন্ন জিনিস বিনিময় হয়ে থাকে। এটাই হচ্ছে মুদ্রার
কাছাকাছি জিনিস। আর বিনিময় যেসব জিনিস হয়, সেগুলো হচ্ছে নিজের প্যান্ট
কিংবা স্যান্ডেল জোড়া নিয়ে সামান্য ব্যবসা করা। হাদজা উপজাতিদের মধ্যে
পুরুষরা বেবুন শিকারেই ব্যস্ত থাকে সারা দিন। এখানকার জলবায়ু বেশ উত্তপ্ত।
তাদের শিকার অভিযানও বেশ বিপজ্জনক। সমস্যা সংকুল ঝোপ, বিষধর সাপ, মানুষখেকো
সিংহ- কী নেই? তাঞ্জানিয়ার লেইক এয়াসিতে এখনও হাজারখানেক হাদজা উপজাতি বাস
করে। এর সামান্য দক্ষিণে পাওয়া গিয়েছিল অনেক আগের হমিনিডসদের সবচেয়ে
পুরোতন ফসিল। আধুনিক সকল দিক বিবেচনা করলে, এতদিনে হাদজা উপজাতিদের টিকে
থাকার কথা নয়। তাদের টিকে থাকাটাই একটি ব্যতিক্রম। তারা সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে
না। তাদের মধ্যে মহামারি, অনাহারিও কখনো ছিল না। তাদের জনসংখ্যা শিকারের
প্রাপ্তিতার তুলনায় কখনই খুব বেশি বাড়েনি।
তাদের খাদ্যাভ্যাসও অত্যন্ত সরল- পাখি, বেবুন, সারং ও মহিষের মাংস। এসব তারা নিজেদের হাতে তৈরি তীর কিংবা বর্শা দিয়ে শিকার করে। তাদের ভাষাকে মনে করা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে পুরানো প্রচলিত ভাষা, যেটি এখনও আছে লোকমুখে। আধুনিক মানুষের মতো ব্যস্ত নয় তারা, বরং প্রচুর পরিমাণে অবসর সময় পার করে। তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে খাবারের জন্য শিকার করা, প্রতিদিন পাঁচঘণ্টা সময় ব্যয় হয় এতে। ব্যাস! আর কোন কাজ নেই তাদের। হাজার হাজার বছর ধরে তারা এসব করে আসছে। এসব কেবল তাদের পদচিহ্নের অস্তিত্বই রেখে যাচ্ছে না পৃথিবীর বুকে, বরং এই হাদজা উপজাতি এমন সব কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে যেসব আমরা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
No comments