দুর্বৃত্তদের গুলিতে আরেকজন নিহত -জীবন ঝুকিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশী প্রবাসীরা by আবুল হাসান
দক্ষিণ আফ্রিকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আবদুল কুদ্দুছ ( ৩২) নামের আরো এক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ইলিয়াছ ভূঞা নামের আরো এক বাংলাদেশী । নিহত কুদ্দুছ ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ সতর গ্রামের মৃত রহিম উল্লাহর ছেলে । এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা ও খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠছেন সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা এবং দেশে থাকা তাদের স্বজনেরা । জানাগেছে, ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ সতর গ্রামের আবদুল কুদ্দুছ আয় রোজগারের আশায় নয় বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় যায় । কুমালাঙ্গার নেল স্ট্রিট নামক শহরে এক জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে তার দোকান- পাঠ রয়েছে । গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় আবদুল কুদ্দুছ দোকান বন্ধ করে বাসায় আসলে পূর্ব থেকে বাসায় ঢুকে থাকা কৃঞ্চাঙ্গ ডাকাতরা কুদ্দুছ ও ইলিয়াছকে আটক করে টাকা দিতে বলে । টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ডাকাতরা কুদ্দুছের পেটে গরম পানি ঢালতে থাকে । এ পর্যায়ে ডাকাতরা কুদ্দুছের মাথায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে পরে গুলি করে ফেলে যায় । স্থানীয় টংগা হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন । দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়েকজন বাংলাদেশী জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন শহরে নানামুখি ঝুকির মধ্যেও বাংলাদেশীর অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন । আফ্রিকার নামিদামি সব শহরেই বাংলাদেশীরা দোকা পাট গড়ে তুলেছেন । অসংখ্য বাংলাদেশী বিভিন্ন দোকান পাটে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে ভাল রোজগার করছেন । কিন্তু আফ্রিকার হিংস্্র ও বেপরোয়া এক শ্রেণির কৃঞ্চাঙ্গ যুবকরা প্রায়ই ডাকাতি, চুরি ও চাঁদা দাবিতে হামলা ও খুনের নেশায় মেতে রয়েছে । সম্প্রতি ফেনীর দাগনভূঞা ও ছাগলনাইয়ার দুই বাংলাদেশীকে রাতে দোকানের মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা । সেখান থেকে কয়েকজন জানান, মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশীরা ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছেন । কখন কার ভাগ্যে কি গড়ে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় সব সময় তাদের । সেখানে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরাই দুর্বৃত্ত ও ডাকাতদের বেশি টার্গেটে বলে জানাগেছে । গত কয়েক বছরে ভাগ্যাণেষাণে আফ্রিকায় রোজগারের আশায় যাওয়া ফ্রি ষ্ট্রেট ব্লুম পটিন, কেপটাউন, ডারবান, জোয়ান্সবার্গ, কমালাঙ্গা, পলকুয়ানি, ইষ্ট লন্ডন, প্যারিস, ডিননি,সুয়েটা, মিটারেন্স,নেটাল,জানিনসহ বিভিন্ন শহরে অসংখ্য ছোট-বড় দোকান পাট দিয়ে ব্যবসা করছেন বাংলাদেশী যুবকরা । দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত ও বর্তমানে আফ্রিকায় অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা জানান, সততা,দক্ষতা ও কর্মতৎপরতার কারণে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের দিন দিন উথানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীরা বাংলাদেশীদের হিংসা করে ক্ষতি সাধনে তৎপর থাকে । আবার বাংলাদেশীরা ব্যবসায়িক দ্বন্ধের জেরে আফ্রিকানদের ভাড়া করে নিজ দেশের ভাইয়ের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটাচ্ছে সেখানে । প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে,কয়েক বছরে কুমিল্লার রোমান, নোয়াখালির মিলন,জয়নাল, ফেনীর দাগনভূঞার আলী, আজাদকে পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা । এ ছাড়া ফেনীর রাজু, আইয়ুব,জনি, মাসুম, দাগনভূঞার কফিল,নয়ন,ছাগলনাইয়ার আলিম,কিরন, স্বপনসহ অসংখ্য বাংলাদেশী দুর্বৃত্তদের হামলা ও গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানান । অনেকে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দেশে পাড়ি জমিয়েছেন । তবে , অসংখ্য বাংলাদেশী এখনো দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা বানিজ্যে ও চাকুরী করে অর্থ উপার্জন করছেন এখনো । ব্যবসায়ীরা ঝুকি নিয়ে ব্যবসা করলেও চাকুরীজীবীদের সেখানে খুব বেশি সমস্যা নেই বলেও তারা জানিয়েছেন । সূত্রে জানাগেছে, সেদেশে বাংলাদেশীদের দোকান পাট ডাকাতি কালে বাঁধা দিলেই আফ্রিকানরা গুলি অথবা রাতে দোকানে আগুন দিয়ে মালিক ও দোকান পুড়িয়ে দিচ্ছে । আবার, বাংলাদেশীরা পরস্পরের সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্ধের কারণে সে দেশের সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে এক বাংলাদেশী অপর বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে ভাড়া করে লেলিয়ে দেয়ারও অসংখ্য ঘটনা ঘটছে । আবার নারী গঠিত বিরোধের জের ধরেও সেখানে বাংলাদেশীদের ওপর হামলা, খুনের ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশীদের ওপর । এদিকে, গতকাল রোববার নিহত কুদ্দুছের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তার বৃদ্ধ মা ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বুক দাফটিয়ে আহাজারি করে বাতাসভারী করে তুলছেন । সঙ্গে স্বজনদের গগণ বিধারি শোরচিৎকারে প্রতিবেশিরাও চোঁখের পানি ধরে রাখতে পারেননি । গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে কুদ্দুছের লাশ বিমানে দেশে পাঠানোর কথা রয়েছে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে ।
No comments