বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়...
‘রাত তখন একটা। দরজায় টক টক শব্দ। ভাই
এসেছে মনে করে দরজা খুলি। এমন সময় ধারালো ক্ষুর দিয়ে নির্মমভাবে আমার শরীরে
একের পর এক আঘাত। প্রথমে বুঝে উঠতে পারেনি কি ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু গাল,
গলা, পিঠ, ঊরু সবখানে আঘাত করলে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আর কিছু বলতে পারিনি।
জ্ঞান ফিরলে দেখি-হাসপাতালের বেডে।’ এ কথা বলে অঝোর ধারায় কাঁদছিল সিলেটের
মর্জিনা আক্তার কিরণ। গতকাল সে মানবজমিন-এর কাছে বলে, ‘এক সময়ের সহকর্মী
টিটু তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। রাজি হয়নি। এরপর বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু তাতেও আমার পরিবার রাজি হয়নি। প্রেম ও বিয়েতে সাড়া না পেয়ে আমাকে
খুন করতে নির্মমভাবে ক্ষুর দিয়ে কুপিয়েছে।’ মর্জিনা সিলেট নগরীর পশ্চিম পীর
মহল্লার বাসিন্দা। পেশা দর্জিগিরি। প্রায় ৬ বছর আগে তার বয়স যখন ১৬ বছর
তখন গোলাপগঞ্জের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্তু সন্তান গর্ভে থাকা
অবস্থায় ওই স্বামী তাকে রেখে অন্যত্র বিয়ে করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংসার
জীবনের ইতি ঘটে। সন্তান জন্মানোর পর মর্জিনা বেঁচে থাকার তাগিদে প্রায় ৪
বছর আগে নগরীর মীরের ময়দানের নাজমুন টেইলার্সে কারিগরের চাকরি নেয়। বেশ
সুন্দরী মর্জিনাকে এরপর নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করতে হয়। ওই
দোকানের আরেক কারিগর টিটুর নজর এড়াতে পারেনি সে। টিটুর নানা ছলে-বলে কৌশলে
তার কাছে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে সাড়া দেয়নি। এভাবে ৫-৬ মাস চলার
পর টিটুর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মর্জিনা ওই দোকান থেকে চাকরি ছেড়ে দেয়। এর
পরও টিটু পিছু ছাড়েনি মর্জিনার। তাদের বাসায় গিয়ে হানা দেয়। মর্জিনার মা
ফাতেমা বেগম গতকাল জানিয়েছেন, সিলেট নগরীর মুন্সিপাড়ার মসজিদ গলির বাসিন্দা
টিটু বিয়ে করতে প্রস্তাব দেয়। পরিপ্রেক্ষিতে টিটুকে জানানো হয় তার
পিতা-মাতা যেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। পরে বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে। কিন্তু
টিটু তার পিতা-মাতাকে না পাঠিয়ে নিজেই প্রস্তাব দেয় এবং বিয়ের জন্য চাপ
প্রয়োগ করে। ফাতেমা বেগম জানান, টিটুর উত্ত্যক্ত করা থেকে বাঁচতে তারা
সিলেট নগরীর বাদামবাগিচা ও পীর মহল্লা এলাকায় পরপর চার দফা বাসা পরিবর্তন
করেন। গেল ঈদুল আজহার সময় হঠাৎ রাস্তায় দেখা হয় টিটুর সঙ্গে মর্জিনার। আর
ওই সময় টিটু পিছু পিছু ছুটে যায় তাদের বাসায়। ঈদের পরদিন মঙ্গলবার আবার দেয়
বিয়ের প্রস্তাব। এ সময় মর্জিনার পরিবারের সদস্যরা টিটুকে গালাগাল করে
তাড়িয়ে দেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মর্জিনা জানান, সন্ধ্যায় গালাগালের পর
রাত একটার দিকে ৫-৬ জন যুবক নিয়ে তাদের পশ্চিম মহল্লাস্থ বাসায় গিয়ে
মর্জিনার ক্ষুর দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে আসে। এরপর অজ্ঞান
অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে
ভর্তি হওয়ার পর টিটুর লোকজন তাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়। আর মামলা না
করতে শাসিয়ে যায়। এদিকে এ ঘটনার খবর পেয়ে সিলেটের বিমানবন্দর থানার এসআই
আক্তারুজ্জামান পাঠান হাসপাতালে বক্তব্য নিয়েছেন। সে হাসপাতাল থেকে সুস্থ
হয়ে বাড়ি ফেরার পর মামলা গ্রহণ করবেন বলে পরিবারকে জানিয়ে গেছেন তিনি।
ফাতেমা বেগম জানান, তারা আজ-কালের মধ্যে থানায় মামলা করবেন।
No comments