কুকুরের জন্য চাই মুগুর by কাজল ঘোষ
এবারের ঈদ ছুটিতে ছিলাম কুলাউড়ায়। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ। বিধাতা এ এলাকাকে সবুজ দিতে কার্পণ্য করেননি। হয়তো মানুষের লোভের গ্রাসে এখনও উজাড় হয়নি বৃক্ষরাজি। না হলে এমন সবুজ এখান থেকেও হয়তো বিলুপ্তির তালিকায় নাম লেখাতো। পথে-ঘাটে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে কিভাবে এ সবুজকে রক্ষা করা যায়। কারণ, গত ক’দিন আগে কৃষি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির একটি উদ্বেগ নজর কেড়েছে। সেখানে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা দিন দিন কৃষিজমি কমে যাওয়ায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। সংবাদটি পড়ে আমার খুব সহজেই একটি কথাই মনে পড়লো। তাহলো কৃষি জমিতে কোন বাড়ি বা অন্য কোন ধরনের স্থাপনায় নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে আর ভাবাভাবির কি আছে? তাই কি হয় এ দেশে। আমাদের এখানে যেমন খুশি তেমনভাবেই চলছে। কারণ, রাজধানী ঢাকায় ছয় তলার বেশি ভবন নির্মাণে রাজউকের এলাকাভিত্তিক একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু রাজউক কর্মকর্তারাই বিভিন্ন কারসাজিতে সমানতালে এই বে-আইনি স্থাপনাগুলোর বৈধতা দিয়ে যাচ্ছেন। আর রাজধানী ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। প্রসঙ্গক্রমে ভুটান রাজার একটি গল্প বলতে চাই। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, পোলট্রি সেক্টরে বার্ড ফ্লু দেখা দেয়ায় দেশে-দেশে নানান ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে আলোচনার কথা। সার্কভুক্ত এ দেশটির রাজা তখন সিনিয়র মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের নিয়ে বসলেন করণীয় ঠিক করতে। কথায় কথায় রাজা বললেন, আমার মনে হয় যত দিন প্রতিষেধক না আবিষ্কার হয়েছে তত দিন ডিম না খাওয়াই ভাল। এ আলোচনা ছড়িয়ে গেল ভুটানজুড়ে। আর পরদিন থেকেই পুরো রাজ্যে ডিম খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। অথচ আমাদের এখানে আইন করেও এর বাস্তবায়ন নেই। আর দেশের চলমান রাজনীতির মতোই এসব দেশরক্ষার ইস্যুতে আমাদের এখানে ঐক্য নেই।
যেখানেই থাকি না কেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই খোঁজ নিই চলমান ঘটনার। ঈদের পরদিন সকালে টেলিভিশনের একটি স্ক্রল মনকে বিষাদাচ্ছন্ন করে তুললো। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বখাটেরা নির্মমভাবে পেট্রলের আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে মা-তিন মেয়েকে। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নরপশু জাহাঙ্গীর এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যখন এ লেখা লিখছি ঠিক সে সময়ই খবর এসেছে রাজধানীর ভাষানটেকে একই রকমের একটি ঘটনার। সেখানে বখাটেদের নির্যাতন থেকে বোনকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ভাইকে। একইভাবে ধলপুরে এক বিমাতা তার নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করে টয়লেটের ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছে।
ইত্তেফাক খবর দিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সারা দেশে ২০ হাজার ৬৮০ জন খুন হয়েছেন। শুধু চলতি বছরেই আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ৩ হাজার ৬১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে রাজধানীতে ১৭২ জন খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ জন খুন হয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। বাকি ১৬২টি খুনের বেশির ভাগই ঘটেছে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে। পারিবারিক কলহ, অর্থ লেনদেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই প্রতিপক্ষের হাতে এরা খুন হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্যমতে গড়ে প্রায় ১৪-১৫টি খুনের ঘটনা ঘটছে। যার বেশির ভাগই রাজধানীতে। অথচ রাজধানীতেই যেখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা থাকার কথা।
কি মানসিক বিকৃতি নিয়ে আমরা বসবাস করছি। কোরবানি নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি চমৎকার কবিতা আছে। মনের পশুরে করো জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই। চারপাশের এ ঘটনাগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমাদের মনের পশুরা আরও অতিমাত্রায় পশুতেই পরিণত হচ্ছে। না হলে কি অপরাধ ছিল মির্জাপুরের সোহাগপাড়ার মনিরা, মিলি ও মিমের। আর কি অপরাধ ছিল তাদের মা হাসনা বেগমের। একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। তাকে বিয়ে করার যে লোভ তাতে রাজি না হওয়াই এ জিঘাংসা। কি দুর্ভাগ্য আমাদের। ৭ই অক্টোবর মঙ্গলবার এ ঘটনার পর পাঁচ দিন চলে গেছে এখনও পর্যন্ত ঘাতক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশ এ নরঘাতকে ধরতে লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। দেশবাসীর কাছে এ লেখার মাধ্যমে আবেদন রাখতে চাই, যেখানেই এ নরঘাতককে পাবেন ধরিয়ে দিন। আমরা আমাদের সন্তানদের একটি সুস্থ-সুন্দর সমাজ উপহার দিতে চাই। যেখানে থাকবে না কোন হানাহানি। থাকবে না রক্তপাত। আমাদের মেয়েরা কোন বখাটের ভয় মাথায় নিয়ে স্কুলে যাবে না। সরকারের প্রতি আবেদন রাখতে চাই, নরঘাতক জাহাঙ্গীরের দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। যেন কেউ এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ড করার সাহস না পায়। কথায় আছে, যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে চলে না। এসব নরঘাতকের বিরুদ্ধে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন।
২
ভাষা-মতিন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি কোন মত বা দলের আদর্শ পোষণ করতেন তা নিয়ে বোধকরি রাজনীতি করা কোন সুস্থ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে না। এ মানুষের বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নেমেছিল। কিন্তু নানা মহলের দাবি করা সত্ত্বেও ভাষা সেনাপতি আবদুল মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়নি। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, পর্যাপ্ত প্রটোকল না থাকায় এ মানুষটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া যায়নি। ভাষা মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে প্রটোকলের ঘাটতি কতটা ফাঁপা বক্তব্য হতে পারে ভাবাই যায় না। আমাদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, ভিআইপি, ভিভিআইপিদের প্রটোকলে কোন ঘাটতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি রকমের প্রটোকলে সাধারণের নাভিশ্বাস ওঠে। কিন্তু ওই প্রটোকলের অভাববোধ কেবল এবিএম মূসা আর ভাষা মতিনদের বেলায়ই ঘটে। ভাষা মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে এ রাষ্ট্রের অনুদারের ছোটখাটো যুক্তি হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার বেলায়। তিনি তো সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কই সব আইন ও বিধান থাকার পরও তো এ মানুষটির জানাজা সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়নি। সংসদের স্পিকারও এ ইস্যুতে রহস্যজনক কারণে নীরব থেকেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, এবিএম মূসার মতো সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষটিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান না নিয়েই চিরবিদায় নিতে হয়েছে। একইভাবে ভাষা-মতিনকেও। বলাবলি আছে, সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে অবস্থান নেয়ায় এ দু’জনকে এভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র সম্মান না দিলেও কোটি মানুষের শ্রদ্ধার আসন থাকলো এ দু’জনের জন্য।
৩
ভারতের একটি ঘটনায় বিস্মিত হয়েছি। ৩রা অক্টোবর দশেরা উপলক্ষে সেখানে এক মঞ্চে বসেছিলেন প্রণব মুখার্জি, নরেন্দ্র মোদি ও সোনিয়া গান্ধী। একই সুরে কথা বলেছেন ভারতের উন্নয়নে। অথচ অল্পদিন আগেই নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয় ঘটেছে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের। তাতে কি গণতন্ত্রের মূল সুর যদি হয় জনগণের উন্নয়ন তার জন্য একমঞ্চে বসতে আপত্তি কি? দশেরা উপলক্ষে উন্মুক্ত জনসভায় ভারতের উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রণব মুখার্জি। অথচ কি বিপরীত চিত্র আমাদের এখানে। ঈদ-পরবর্তীতে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা খুললেই দেখতে পাবো দু’নেত্রী ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ভিন্ন দু’টি প্লাটফরমে। তাদের কথায় ছিল রাজনীতি। আর তাও আন্দোলন, সরকার ও বিরোধী পক্ষের নিজের এজেন্ডা নিয়েই পাল্টাপাল্টি। আমরা অন্তত এ উৎসবের দিনে টেলিভিশন বা অনলাইনে প্রচারিত সংবাদে কখনও অন্যের গিবত গাওয়ার পরিবর্তে ভাল কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না? এমন কঠিন গণতন্ত্রের মারপ্যাঁচে বন্দি বাংলাদেশ।
৪
হুদহুদকে ধন্যবাদ দিতে হয় একপশলা বৃষ্টি উপহার দেয়ার জন্য। রাজধানীর পথঘাট পরিষ্কার আর কোরবানির বর্জ্য থেকে নির্গত গন্ধ থেকে মুক্তি দিতে এর বিকল্প ছিল না।
যেখানেই থাকি না কেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবেই খোঁজ নিই চলমান ঘটনার। ঈদের পরদিন সকালে টেলিভিশনের একটি স্ক্রল মনকে বিষাদাচ্ছন্ন করে তুললো। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বখাটেরা নির্মমভাবে পেট্রলের আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে মা-তিন মেয়েকে। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নরপশু জাহাঙ্গীর এ ঘটনা ঘটিয়েছে। যখন এ লেখা লিখছি ঠিক সে সময়ই খবর এসেছে রাজধানীর ভাষানটেকে একই রকমের একটি ঘটনার। সেখানে বখাটেদের নির্যাতন থেকে বোনকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে ভাইকে। একইভাবে ধলপুরে এক বিমাতা তার নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করে টয়লেটের ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছে।
ইত্তেফাক খবর দিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সারা দেশে ২০ হাজার ৬৮০ জন খুন হয়েছেন। শুধু চলতি বছরেই আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ৩ হাজার ৬১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে রাজধানীতে ১৭২ জন খুন হয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১০ জন খুন হয়েছেন রাজনৈতিক কারণে। বাকি ১৬২টি খুনের বেশির ভাগই ঘটেছে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে। পারিবারিক কলহ, অর্থ লেনদেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই প্রতিপক্ষের হাতে এরা খুন হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্যমতে গড়ে প্রায় ১৪-১৫টি খুনের ঘটনা ঘটছে। যার বেশির ভাগই রাজধানীতে। অথচ রাজধানীতেই যেখানে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা থাকার কথা।
কি মানসিক বিকৃতি নিয়ে আমরা বসবাস করছি। কোরবানি নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি চমৎকার কবিতা আছে। মনের পশুরে করো জবাই, পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই। চারপাশের এ ঘটনাগুলো দেখে মনে হচ্ছে আমাদের মনের পশুরা আরও অতিমাত্রায় পশুতেই পরিণত হচ্ছে। না হলে কি অপরাধ ছিল মির্জাপুরের সোহাগপাড়ার মনিরা, মিলি ও মিমের। আর কি অপরাধ ছিল তাদের মা হাসনা বেগমের। একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ে। তাকে বিয়ে করার যে লোভ তাতে রাজি না হওয়াই এ জিঘাংসা। কি দুর্ভাগ্য আমাদের। ৭ই অক্টোবর মঙ্গলবার এ ঘটনার পর পাঁচ দিন চলে গেছে এখনও পর্যন্ত ঘাতক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশ এ নরঘাতকে ধরতে লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। দেশবাসীর কাছে এ লেখার মাধ্যমে আবেদন রাখতে চাই, যেখানেই এ নরঘাতককে পাবেন ধরিয়ে দিন। আমরা আমাদের সন্তানদের একটি সুস্থ-সুন্দর সমাজ উপহার দিতে চাই। যেখানে থাকবে না কোন হানাহানি। থাকবে না রক্তপাত। আমাদের মেয়েরা কোন বখাটের ভয় মাথায় নিয়ে স্কুলে যাবে না। সরকারের প্রতি আবেদন রাখতে চাই, নরঘাতক জাহাঙ্গীরের দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। যেন কেউ এ ধরনের নৃশংস কর্মকাণ্ড করার সাহস না পায়। কথায় আছে, যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে চলে না। এসব নরঘাতকের বিরুদ্ধে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ গড়ে তুলুন।
২
ভাষা-মতিন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি কোন মত বা দলের আদর্শ পোষণ করতেন তা নিয়ে বোধকরি রাজনীতি করা কোন সুস্থ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে না। এ মানুষের বিদায়ে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নেমেছিল। কিন্তু নানা মহলের দাবি করা সত্ত্বেও ভাষা সেনাপতি আবদুল মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়নি। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, পর্যাপ্ত প্রটোকল না থাকায় এ মানুষটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া যায়নি। ভাষা মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে প্রটোকলের ঘাটতি কতটা ফাঁপা বক্তব্য হতে পারে ভাবাই যায় না। আমাদের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, ভিআইপি, ভিভিআইপিদের প্রটোকলে কোন ঘাটতি নেই। অনেক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি রকমের প্রটোকলে সাধারণের নাভিশ্বাস ওঠে। কিন্তু ওই প্রটোকলের অভাববোধ কেবল এবিএম মূসা আর ভাষা মতিনদের বেলায়ই ঘটে। ভাষা মতিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়ার ক্ষেত্রে এ রাষ্ট্রের অনুদারের ছোটখাটো যুক্তি হয়তো থাকতে পারে। কিন্তু প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসার বেলায়। তিনি তো সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কই সব আইন ও বিধান থাকার পরও তো এ মানুষটির জানাজা সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়নি। সংসদের স্পিকারও এ ইস্যুতে রহস্যজনক কারণে নীরব থেকেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, এবিএম মূসার মতো সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষটিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান না নিয়েই চিরবিদায় নিতে হয়েছে। একইভাবে ভাষা-মতিনকেও। বলাবলি আছে, সরকারের বিরুদ্ধে নানা ইস্যুতে অবস্থান নেয়ায় এ দু’জনকে এভাবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র সম্মান না দিলেও কোটি মানুষের শ্রদ্ধার আসন থাকলো এ দু’জনের জন্য।
৩
ভারতের একটি ঘটনায় বিস্মিত হয়েছি। ৩রা অক্টোবর দশেরা উপলক্ষে সেখানে এক মঞ্চে বসেছিলেন প্রণব মুখার্জি, নরেন্দ্র মোদি ও সোনিয়া গান্ধী। একই সুরে কথা বলেছেন ভারতের উন্নয়নে। অথচ অল্পদিন আগেই নির্বাচনে ভূমিধস পরাজয় ঘটেছে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের। তাতে কি গণতন্ত্রের মূল সুর যদি হয় জনগণের উন্নয়ন তার জন্য একমঞ্চে বসতে আপত্তি কি? দশেরা উপলক্ষে উন্মুক্ত জনসভায় ভারতের উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রণব মুখার্জি। অথচ কি বিপরীত চিত্র আমাদের এখানে। ঈদ-পরবর্তীতে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা খুললেই দেখতে পাবো দু’নেত্রী ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন ভিন্ন দু’টি প্লাটফরমে। তাদের কথায় ছিল রাজনীতি। আর তাও আন্দোলন, সরকার ও বিরোধী পক্ষের নিজের এজেন্ডা নিয়েই পাল্টাপাল্টি। আমরা অন্তত এ উৎসবের দিনে টেলিভিশন বা অনলাইনে প্রচারিত সংবাদে কখনও অন্যের গিবত গাওয়ার পরিবর্তে ভাল কিছু প্রত্যাশা করতে পারি না? এমন কঠিন গণতন্ত্রের মারপ্যাঁচে বন্দি বাংলাদেশ।
৪
হুদহুদকে ধন্যবাদ দিতে হয় একপশলা বৃষ্টি উপহার দেয়ার জন্য। রাজধানীর পথঘাট পরিষ্কার আর কোরবানির বর্জ্য থেকে নির্গত গন্ধ থেকে মুক্তি দিতে এর বিকল্প ছিল না।
No comments