ব্যাংক খাতে দুর্নীতি রোধে সংস্কার by হারুন-আর-রশিদ
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকায় লিড নিউজ হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই পদত্যাগ করেছেন। এর আগে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়ে ব্যাংক খাতে কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক সম্পর্কেও। এসব আর্থিক কেলেঙ্কারি, অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মক আঘাত হেনেছে। আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় তিন হাজার শতাংশ। এসব পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে (সূত্র : প্রথম আলো, ১০-১-২০১৩)।
গত ২৭ জুলাই প্রথম আলো পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক কোনো খাতেই অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার পেছনে দায়ী মাফিয়া চক্রের দৌরাত্ম্য। যেহেতু সরকারের ওপর এই মাফিয়া চক্রের প্রভাব খুব বেশি, তাই তারা বিচার না হওয়ার জন্য কাজ করে থাকে। ১৯৯৬ সালে বর্তমান সরকারের শাসনামলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির শাস্তি তো দূরের কথা, বিচারই হয়নি। ২০১০ সালেও একই অবস্থা বিরাজমান। এসব দেখে মনে হয়, সরকারের ওপর মাফিয়া চক্রের প্রভাব খুব বেশি। এ কারণে আর্থিক খাতেও এর কালো ছায়া পড়েছে। বেসিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকিং খাতে যেসব অনিয়ম ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে (সরকারি ব্যাংক) বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইনে সরকারি ব্যাংকের কোনো পরিচালক বা চেয়ারম্যান অনিয়ম করলে তাকে অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। তবে বেসরকারি ব্যাংকের কোনো চেয়ারম্যান, পরিচালক অনিয়ম করলে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ করতে পারে; কিন্তু সরকারি ব্যাংকের বেলায় সেই ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই। ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এক দেশে দুই ধরনের আইন চলতে পারে না।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ একটি জাতীয় দৈনিকের লিড নিউজ ছিলÑ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসের জালে ২০ ব্যাংক। বিশ্বাসী ঋণের নয় হাজার কোটি টাকা খেলাপি, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ বিপুল অঙ্কের অর্থ ভিন্ন খাতে নিয়ে গেছে। চট্টগ্রামের ব্যাংকগুলো বিশ্বাসী ঋণ দিয়ে এখন বিপদের প্রহর গুনছে। এর বেশির ভাগ ঋণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আমদানিপণ্য বাজারজাত করতে স্বল্প সময় (৯০ থেকে ১২০ দিন) নেয়া বিশ্বাসী ঋণের (এলটিআর ঋণ) নয় হাজার ৩৫২ কোটি টাকা মেয়াদি ঋণে (পাঁচ বছরের) পরিণত হয়েছে। এই মেয়াদি ঋণের বেশির ভাগ এখন খেলাপি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংকগুলো এই বিশ্বাসী ঋণ (স্বল্পমেয়াদি) দিয়েছে ৪৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে অবস্থিত ২০টি ব্যাংকের এই ঋণ ফেরত না পাওয়াই এখন প্রধান সমস্যা। পত্রিকায় উঠেছে, এরই মধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে ব্যাংক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। কয়েকটি কোম্পানি ব্যাংকঋণের অর্থ বিদেশেও পাচার করেছে। এ ধরনের দু’জন ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এরা হলেন ইয়াসির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাহের হোসেন। ব্যাংকগুলোতে তার ৪৮১ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। আরেকজন ব্যবসায়ী হলেন গিয়াসউদ্দিন কুসুম, জাহাজ ভাঙা শিল্পের সাথে জড়িত, যার কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৩০০ কোটি টাকার মতো। অর্থঋণ আদালতে মামলা হলেও অনেক ব্যবসায়ী এসব মামলার বিপরীতে উচ্চ আদালতে আপিল করে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, এর জামানত (মর্টগেজ) অপর্যাপ্ত। ব্যাংকের গুদামে পণ্য নেই এবং বাজারদরে ওঠা-নামা। আবার অসংখ্য আমদানিকারক বা গ্রাহক তাদের ঋণের টাকা ভিন্ন খাতে নিয়ে গেছেন। অর্থাৎ জমি কিনেছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন এবং নতুন ব্যবসায় খাটিয়েছেন। ব্যাংক খাতে কী যে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে, বিস্তারিত বর্ণনা করলে তা একটি বড় গ্রন্থে রূপ নেবে। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ জাতীয় দৈনিক লিখেছেÑ জনতা ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নানা বিশেষণে অলঙ্কৃত করেছেন। তার মতে, অর্থমন্ত্রী একজন ইন্টেলেকচুয়াল ফ্রড, মিথ্যাবাদী, তদবিরকারী, প্রতিহিংসাপরায়ণ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, হেয়কারী, আঞ্চলিকতায় পক্ষপাতদুষ্ট, এলিটিস্ট। অর্থমন্ত্রীর বর্তমান পদবির সাথে এসব নামের যোগসূত্র স্থাপন করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বারকাত। আরো একধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর ভূমিকা, অর্থাৎ ওই সময়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী কী করেছেন তা জাতিকে জানানো উচিত।
বিগত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে নিট মুনাফা কমেছে ২১টির। এর মধ্যে বেশি কমেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের, যার পরিমাণ প্রায় ১৮-২৩ শতাংশ। লোকসানে রয়েছে তিনটি ব্যাংক। মুনাফা কমে যাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক। মুনাফা বেড়ে যাওয়া ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক।
২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংকঋণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হলেও মূল বাজেটে নেয়া লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। আইএমএফের চোখে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিস্থিতির আরো অবনতি। ২০১২ সাল থেকে এই অবনতি শুরু হয়েছে। এই অবনতি ঠেকাতে সম্ভাব্য পুনঃমূলধনীকরণের জন্য জিডিপির প্রায় দেড় শতাংশ অর্থ প্রয়োজন। করণীয় নীতি হিসেবে আইএমএফ বলেছেÑ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, যেন তাদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ঋণ দিতে অধিকতর বিচক্ষণতা ও বকেয়া ঋণ আদায়ে আগ্রাসী তৎপরতা প্রয়োজন (সূত্র : প্রথম আলো, ১১-৬-২০১৩)।
এখন প্রশ্ন হলোÑ ব্যাংকিং খাতে উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানে ব্যর্থ হলে দেশের প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে। দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি মুখথুবড়ে পড়বে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা সত্যিকার অর্থে কঠিন হয়ে পড়বে। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের যে চেহারা দেখলাম, তাতে মনে হলোÑ দীর্ঘ চার বছরেও শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাত সর্বনি¤œ অবস্থায় রয়েছে। ফেস ভ্যালুর নিচে দাম রয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের। ব্যাংকিং খাতে শেয়ার কেনাবেচা নেই বললেই চলে। লভ্যাংশও অনেক কমে গেছে। উল্লিখিত অব্যবস্থাপনায় ব্যাংকিং খাতে সংস্কার জরুরি।
লেখক : গ্রন্থকার ও গবেষক
E-mail : harunrashid1952yahoo.com
গত ২৭ জুলাই প্রথম আলো পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক কোনো খাতেই অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ার পেছনে দায়ী মাফিয়া চক্রের দৌরাত্ম্য। যেহেতু সরকারের ওপর এই মাফিয়া চক্রের প্রভাব খুব বেশি, তাই তারা বিচার না হওয়ার জন্য কাজ করে থাকে। ১৯৯৬ সালে বর্তমান সরকারের শাসনামলে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির শাস্তি তো দূরের কথা, বিচারই হয়নি। ২০১০ সালেও একই অবস্থা বিরাজমান। এসব দেখে মনে হয়, সরকারের ওপর মাফিয়া চক্রের প্রভাব খুব বেশি। এ কারণে আর্থিক খাতেও এর কালো ছায়া পড়েছে। বেসিক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকিং খাতে যেসব অনিয়ম ঘটেছে, সেগুলোর ব্যাপারে (সরকারি ব্যাংক) বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইনে সরকারি ব্যাংকের কোনো পরিচালক বা চেয়ারম্যান অনিয়ম করলে তাকে অপসারণের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই। তবে বেসরকারি ব্যাংকের কোনো চেয়ারম্যান, পরিচালক অনিয়ম করলে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক অপসারণ করতে পারে; কিন্তু সরকারি ব্যাংকের বেলায় সেই ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই। ব্যাংকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, এক দেশে দুই ধরনের আইন চলতে পারে না।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ একটি জাতীয় দৈনিকের লিড নিউজ ছিলÑ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসের জালে ২০ ব্যাংক। বিশ্বাসী ঋণের নয় হাজার কোটি টাকা খেলাপি, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ বিপুল অঙ্কের অর্থ ভিন্ন খাতে নিয়ে গেছে। চট্টগ্রামের ব্যাংকগুলো বিশ্বাসী ঋণ দিয়ে এখন বিপদের প্রহর গুনছে। এর বেশির ভাগ ঋণ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আমদানিপণ্য বাজারজাত করতে স্বল্প সময় (৯০ থেকে ১২০ দিন) নেয়া বিশ্বাসী ঋণের (এলটিআর ঋণ) নয় হাজার ৩৫২ কোটি টাকা মেয়াদি ঋণে (পাঁচ বছরের) পরিণত হয়েছে। এই মেয়াদি ঋণের বেশির ভাগ এখন খেলাপি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশের ব্যাংকগুলো এই বিশ্বাসী ঋণ (স্বল্পমেয়াদি) দিয়েছে ৪৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামে অবস্থিত ২০টি ব্যাংকের এই ঋণ ফেরত না পাওয়াই এখন প্রধান সমস্যা। পত্রিকায় উঠেছে, এরই মধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ না করে দেশ ত্যাগ করেছেন বলে ব্যাংক ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে। কয়েকটি কোম্পানি ব্যাংকঋণের অর্থ বিদেশেও পাচার করেছে। এ ধরনের দু’জন ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এরা হলেন ইয়াসির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাহের হোসেন। ব্যাংকগুলোতে তার ৪৮১ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। আরেকজন ব্যবসায়ী হলেন গিয়াসউদ্দিন কুসুম, জাহাজ ভাঙা শিল্পের সাথে জড়িত, যার কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৩০০ কোটি টাকার মতো। অর্থঋণ আদালতে মামলা হলেও অনেক ব্যবসায়ী এসব মামলার বিপরীতে উচ্চ আদালতে আপিল করে স্থগিতাদেশ পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, এর জামানত (মর্টগেজ) অপর্যাপ্ত। ব্যাংকের গুদামে পণ্য নেই এবং বাজারদরে ওঠা-নামা। আবার অসংখ্য আমদানিকারক বা গ্রাহক তাদের ঋণের টাকা ভিন্ন খাতে নিয়ে গেছেন। অর্থাৎ জমি কিনেছেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন এবং নতুন ব্যবসায় খাটিয়েছেন। ব্যাংক খাতে কী যে অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে, বিস্তারিত বর্ণনা করলে তা একটি বড় গ্রন্থে রূপ নেবে। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ জাতীয় দৈনিক লিখেছেÑ জনতা ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে নানা বিশেষণে অলঙ্কৃত করেছেন। তার মতে, অর্থমন্ত্রী একজন ইন্টেলেকচুয়াল ফ্রড, মিথ্যাবাদী, তদবিরকারী, প্রতিহিংসাপরায়ণ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, হেয়কারী, আঞ্চলিকতায় পক্ষপাতদুষ্ট, এলিটিস্ট। অর্থমন্ত্রীর বর্তমান পদবির সাথে এসব নামের যোগসূত্র স্থাপন করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বারকাত। আরো একধাপ এগিয়ে তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর ভূমিকা, অর্থাৎ ওই সময়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী কী করেছেন তা জাতিকে জানানো উচিত।
বিগত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংকের মধ্যে নিট মুনাফা কমেছে ২১টির। এর মধ্যে বেশি কমেছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের, যার পরিমাণ প্রায় ১৮-২৩ শতাংশ। লোকসানে রয়েছে তিনটি ব্যাংক। মুনাফা কমে যাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংক। মুনাফা বেড়ে যাওয়া ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক।
২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংকঋণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হলেও মূল বাজেটে নেয়া লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। আইএমএফের চোখে বাংলাদেশের অর্থনীতির ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিস্থিতির আরো অবনতি। ২০১২ সাল থেকে এই অবনতি শুরু হয়েছে। এই অবনতি ঠেকাতে সম্ভাব্য পুনঃমূলধনীকরণের জন্য জিডিপির প্রায় দেড় শতাংশ অর্থ প্রয়োজন। করণীয় নীতি হিসেবে আইএমএফ বলেছেÑ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে, যেন তাদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ঋণ দিতে অধিকতর বিচক্ষণতা ও বকেয়া ঋণ আদায়ে আগ্রাসী তৎপরতা প্রয়োজন (সূত্র : প্রথম আলো, ১১-৬-২০১৩)।
এখন প্রশ্ন হলোÑ ব্যাংকিং খাতে উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানে ব্যর্থ হলে দেশের প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে। দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি মুখথুবড়ে পড়বে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা সত্যিকার অর্থে কঠিন হয়ে পড়বে। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পুঁজিবাজারে ব্যাংক খাতের যে চেহারা দেখলাম, তাতে মনে হলোÑ দীর্ঘ চার বছরেও শেয়ারবাজারে ব্যাংকিং খাত সর্বনি¤œ অবস্থায় রয়েছে। ফেস ভ্যালুর নিচে দাম রয়েছে কয়েকটি ব্যাংকের। ব্যাংকিং খাতে শেয়ার কেনাবেচা নেই বললেই চলে। লভ্যাংশও অনেক কমে গেছে। উল্লিখিত অব্যবস্থাপনায় ব্যাংকিং খাতে সংস্কার জরুরি।
লেখক : গ্রন্থকার ও গবেষক
E-mail : harunrashid1952yahoo.com
No comments