রাজধানীর চামড়ার বাজার দখলে মরিয়া ‘ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা’ by দীন ইসলাম
মহানগরীর গরুর হাটের ইজারা নিজেদের দখলে
নেয়ার পর এবার চামড়ার বাজার দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন দলের মওসুমি
ব্যবসায়ীরা। এজন্য ঢাকার ১৬টি চামড়া বেচাকেনার পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে
করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিষয়টি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত
করেছেন তারা। এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে
জানা গেছে, মহানগরীর চামড়া বেচাকেনার জন্য নির্ধারিত শের-ই-বাংলা নগর,
বাড্ডা মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন, রহিম মেটাল
জামে মসজিদ শিল্প এলাকা, কাওরানবাজারের আম্বরশাহ মসজিদ,
উত্তরা-আজমপুর-আবদুল্লাহপুর, তুরাগ থানা এলাকা, হাজারীবাগের ঢাকা ট্যানারি
মোড়, ঢাকা সিটি কলেজ মোড়, পোস্তা ওয়াটার ওয়ার্কার্স মোড় এবং টঙ্গী থানা
এলাকার হোসেন মার্কেট, দত্তপাড়া, আরিচপুর, টঙ্গী ভবন, শিলমুন পয়েন্ট বেশ
ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এসব এলাকা সম্পর্কে একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা তাদের
প্রতিবেদনে বলেছে, ঈদ পরবর্তী ২ বা ১ দিন মহানগরীর কিছু এলাকা বা পয়েন্টে
কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব
সংঘাত ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা
রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় উঠতি মাস্তান বা মহল বিশেষ অবৈধ প্রভাব
বিস্তারের সুযোগ পেয়ে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে
পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২০০
মিলিয়ন সিএফটি চামড়া উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে শতকরা ৪২ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৮৫
মিলিয়ন সিএফটি চামড়া ঈদুল আজহার কোরবানির পশু থেকে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। যার
মধ্যে প্রায় ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার কাঁচা চামড়া ও ৭৫ মিলিয়ন ডলার চামড়াজাত
দ্রব্য থেকে আয় হয়। বাংলাদেশ সারা বিশ্বের চামড়া বাজারকে প্রায় শতকরা ২ ভাগ
নিয়ন্ত্রণ করে এবং চামড়া খাতে এদেশের প্রবৃদ্ধি প্রতি বছর শতকরা প্রায় ১০
ভাগ। এ বছরের চামড়ার বাজার নিয়ে শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে
বলেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৭৫০ থেকে ১১০০ কোটি টাকার চামড়া ঢাকায় অবস্থিত
ট্যানারিগুলো সারা দেশ থেকে স্থানীয় ক্রেতাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে। এ
সময় বৈধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক মওসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কেনাবেচা
করে থাকেন। স্বল্পকালীন সময়ে চামড়া বেচাকেনা করা লাভজনক বলে স্থানীয় উঠতি
মাস্তান বা প্রভাবশালী মহল ও গোষ্ঠী এ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া সুযোগ বুঝে
অবৈধপথে চামড়া পাচারকারীরা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে চামড়ার বাজারকে
অস্থিতিশীল করে তোলে। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর এবং অনেক ক্ষেত্রে
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির উদ্ভব ঘটে। ওদিকে কোরবানির চামড়ার বাজারের
সার্বিক নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীগুলো। এসব সুপারিশে তারা বলেছে, ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে গোয়েন্দা
নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পোশাকধারী পুলিশের টহল ও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এছাড়া চামড়ার ট্রাক যাতে উপযুক্ত কারণ ছাড়া ঢাকার বাইরে যেতে না পারে
এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সব মিলিয়ে চামড়া বেচাকেনার
ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
No comments