চার ধাপ এগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বে ৮৬তম by মাসুদ মিলাদ
চার ধাপ এগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এখন বিশ্বের ৮৬তম অবস্থানে। ২০১৩ সালে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা হিসাব করে এই অবস্থান নির্ধারণ করেছে শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো সংবাদমাধ্যম ‘লয়েডস লিস্ট’। সম্প্রতি তালিকা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
মূলত কনটেইনার পরিবহনের অব্যাহত বৃদ্ধির কারণে সেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় এগিয়েছে চট্টগ্রাম। তবে এই তালিকায় বন্দরের সেবার মান এবং তুলনামূলক দক্ষতা বিবেচনা করা হয় না। এর পরও তালিকায় এগিয়ে থাকার অর্থ কনটেইনার পরিবহনের হার বাড়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বন্দরের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশের মংলা বন্দর বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় নেই। এই বন্দরে বছরে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা অর্ধ লাখেরও কম। সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিহনের মাত্র ৩ শতাংশ আনা-নেওয়া হয় মংলার মাধ্যমে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার ধাপ এগিয়ে যাওয়া দেশের জন্য সুখবর। তবে একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জও। কারণ সমুদ্রপথে কনটেইনার পরিবহন ক্রমাগতই বাড়ছে, যার ৯৭ শতাংশ একাই পরিবহন হচ্ছে এ বন্দরের মাধ্যমে। এই চাপ সামলে নিয়ে কনটেইনার পরিবহনের গতিশীলতা ঠিক রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এই বন্দর দিয়ে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৩০ লাখে (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার হিসেবে)। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পুরোদমে চালু করলে এই ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে চট্টগ্রাম। তবে ২০২০ সালের মধ্যে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ না হলে সমস্যায় পড়তে হবে। এটি স্বীকার করেছেন বন্দর চেয়ারম্যানও। তিনি বলেন, ২০২০ সালের পর নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণ করে পুরোদমে চালু করার বিকল্প নেই। নতুন উদ্বোধন হওয়া পায়রা সমুদ্রবন্দরে ২০১৮ সালে কনটেইনার টার্মিনাল চালুর চিন্তাভাবনা আছে আমাদের। সে জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, কনটেইনার পরিবহনের হার বৃদ্ধি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্দেশ করে। কারণ, রপ্তানিপণ্যের প্রায় পুরোটাই পরিবহন হয় কনটেইনারে করে। আবার কনটেইনারে আমদানিপণ্যের সিংহভাগই শিল্পের কাঁচামাল। পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বাড়ার কারণে বন্দরে কনটেইনার পরিবহনেও অগ্রগতি হচ্ছে। কনটেইনার আমদানি-রপ্তানির বড় অংশই পোশাকশিল্পের কাঁচামাল এবং তৈরি পোশাক।
কনটেইনার পরিবহনের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপক এনামুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর শেষে কনটেইনার পরিবহনের সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রতিবছর বাড়তে থাকা কনটেইনার পরিবহনের জন্য এত দিন শুধু বন্দরই কনটেইনার ইয়ার্ড, যন্ত্রপাতিসহ অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। এখন ব্যবহারকারীরাও বিশেষ করে আমদানিকারকেরা আগের চেয়ে কম সময়ে কনটেইনার ছাড় করে নিচ্ছে বন্দর থেকে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে।
সেরা ১০০: সেরা তালিকার এক নম্বরে চীনের সাংহাই। ২০১৩ সালে এই বন্দর দিয়ে পরিবহন হয় তিন কোটি ৩৬ লাখ একক কনটেইনার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সিঙ্গাপুর বন্দরে ওঠানো-নামানো হয় তিন কোটি ২২ লাখ একক কনটেইনার। সেরা ১০০ বন্দর মিলে গত বছর কনটেইনার পরিবহন করেছে ৫১ কোটি ৩২ লাখ একক। সেরার মধ্যে প্রতিবেশী ভারতের তিনটি, পাকিস্তানের একটি ও চীনের ২০টি বন্দরের নাম রয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর চট্টগ্রামে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয় ১৫ লাখ ৪১ হাজার ৫১৭টি। ২০১২ সালের তুলনায় কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে নয় দশমিক ৬০ শতাংশ। নিয়মিত চলাচলকারী প্রায় ৪০টি ফিডার জাহাজে (ছোট আকারের জাহাজ) করে এসব কনটেইনার আনা-নেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানিপণ্য এ বন্দরে আনা-নেওয়া হয় সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং মালয়েশিয়ার তানজুম পালাপাস ও কেলাং বন্দরের মাধ্যমে। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর বন্দরের মাধ্যমে ৫৪ শতাংশ কনটেইনারের আনা-নেওয়া হয়।
ওয়ার্ল্ড পোর্ট সোর্স ওয়েব পোর্টাল অনুযায়ী, বিশ্বে আনুমানিক চার হাজার সক্রিয় বন্দর রয়েছে। কনটেইনারাইজেশন ইন্টারন্যাশন ইয়ারবুক ২০১০ বইতে ৩৬৫টি বন্দরের তথ্য তালিকভুক্ত করা হয়। যেখানে সর্বশেষ ৩৬৫তম বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়েছিল ৪৩ হাজার একক। তবে এক হাজারের চেয়ে বেশি কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয় এমন বন্দরের সংখ্যা প্রায় ৫০০টি।
No comments