কষ্টের শেষ প্রান্তে আলীফজান বিবি by আবু হানিফ চৌধুরী
বড় কষ্টে আছেন বীরাঙ্গনা আলীফজান বিবি। অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের। দিরাই পৌরসভার মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুলের বদান্যতায় স্থায়ী নিবাস পেলেও তার যেন দুঃখের শেষ নেই। জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, দেশ যেন তার স্বীকৃতিটুকু দেয়। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের আজিম উল্লার মেয়ে বীরাঙ্গনা আলীপজান বিবি ’৭১-এ নির্যাতনের শিকার হন। লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতনের ঘটনা আড়াল করে রাখে পরিবারের লোকজন। স্বাধীনতার পর ঘটনাটি গোপন রেখে উপজেলার করিমপুর গ্রামে তাকে বিয়ে দেন তার মা। ঘটনা জানার পর স্বামীর ঘরেও জায়গা হয়নি তার। একমাত্র ভাই মারা যাওয়ার পর গ্রামে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে ঝি’র কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কোনদিন কারও সামনে মুখ খোলেননি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুকের ভেতর চেপে রাখা কষ্ট ২০০৯ সালে তার প্রতিবেশী দিরাই উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী রুনা বেগমের কাছে খুলে বলেন। একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হাতে সর্বস্ব হারানোর বর্ণনা দেন তিনি। ২০০৯ সালের ২৪শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য লেখা আহবান করা হয়। সেই অনুষ্ঠানের জন্য রুনা বেগম আলিফজান বিবির এ ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে প্রেরণ করেন। এবং অনুষ্ঠানে পাঠ করার জন্য ওই লেখাটি নির্বাচিত হয়। এর সূত্র ধরে স্বাধীনতার ৪০ পর খুঁজে পাওয়া যায় দেশমাতৃকার জন্য সব হারানো বীরাঙ্গনা আলীফজান বিবিকে। ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন পত্রিকায় তাকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পত্রিকার মাধ্যমে জানার পর বীরাঙ্গনা আলীফজান বিবির বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হন দিরাই পৌর মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল। দিনভর সেখানে অবস্থান করে স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বস্ব হারানো আলীফজান বিবির দুঃখ দুর্দশার বর্ণনা শোনেন। মেয়র তার নিজস্ব তহবিল থেকে আলীফজান বিবিকে স্থায়ী নিবাসের জন্য ১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন। মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য তার মতো মহীয়সী নারীরা অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন। তাদেরকে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। দিরাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আতাউর রহমান বলেন, বিষয়টি পরিবারের লোকজন গোপন রাখার কারণে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম আসেনি। আমরা জানার পর তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য তার নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। বার্ধক্যের ভারে ন্যুব্জ আলিফজান বিবি বলেন, মেয়র সাহেব একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়ায় থাকতে পারছি। দুই বছর আগে ঢাকা থেকে এক ডাক্তার সাহেব এসেছিলেন। তিনি কিছু টাকা দিয়েছিলেন। শেষ বয়সে এসে আমার একটাই চাওয়া, জীবিত বীর বীরাঙ্গনাদের যেন রাষ্ট্রীয় সম্মান দেয়া হয়।
No comments