অযাচিত কথার খেসারত দিতে হবে লতিফকে -সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী
পবিত্র হজ ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে
নিয়ে ‘অযাচিত মন্তব্য’ করায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকেই খেসারত দিতে হবে। তাঁর এই মন্তব্যের জন্য সরকার ও
আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই বেকায়দায় পড়েনি। বেকায়দায় পড়েছেন লতিফ
সিদ্দিকী নিজেই। এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশে ফেরার পর তা কার্যকর হবে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গটিই মুখ্য হয়ে ওঠে।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর জীবনের ওপর ঝুঁকি, বিএনপির কঠোর আন্দোলনের হুমকি ও সংলাপ এবং মুক্তিযুদ্ধের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এ কে খন্দকারের লেখা ১৯৭১: ভেতরে বাইরে এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমেদের লেখা তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা বই নিয়ে কথা বলেন।
গণভবনে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় নির্ধারিত সম্মেলন শুরু হয় ১৫ মিনিট দেরিতে। প্রায় এক ঘণ্টার এ সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সফরের সময় তাঁর বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফর ‘সফল ও ফলপ্রসূ’ হয়েছে। ১৮ মিনিটের লিখিত বক্তব্য শেষ করেই তিনি প্রশ্ন আহ্বান করেন।
ঘুরেফিরেই লতিফ সিদ্দিকী: প্রশ্নোত্তর-পর্বের শুরুতেই আসে হজ, তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর কটূক্তি প্রসঙ্গ। ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য এড়াতে সরকার ও দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যদি অবিবেচকের মতো কথা বলে, সেটা সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছি। ইতিমধ্যেই যেটা বলেছি, সেটা করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে উনি নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন, সরকার নয়। তার খেসারত ওনাকেই দিতে হবে। বিপদ ওনারই। সরকারের কোনো বিপদ নেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতি-মণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত কবে ও কীভাবে কার্যকর হবে, তাঁকে গ্রেপ্তার ও তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেটা আমি বলেছি, সেটাই হবে। আমি বলেছি, তাঁকে মন্ত্রিসভায় রাখব না। উনি থাকবেন না। আর কখন করা হবে, আমি আপনাদের একটু অনুরোধ করব, একটি সরকার কীভাবে চলে, একজন মন্ত্রীকে অপসারণের প্রসিডিউরগুলো (নিয়মকানুন) দয়া করে একটু পড়ে নেবেন। দেখে নেবেন।’
একজন মন্ত্রীকে অপসারণের ক্ষেত্রে সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মন্ত্রীকে বিদায় করতে হলে কিছু নিয়ম মানতে হয়। আমি নির্দেশ দিলে পদত্যাগ করতে হবে। নইলে বিদায় করে দিতে হবে। কিন্তু বিদায় দিতে হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ফাইল যাবে। রাষ্ট্রপতি এখন হজে রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হজে আছেন। ফাইলটা আসবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। যদিও আমি ফাইল প্রস্তুত করে রাখতে বলেছি। অফিস খুললেই ফাইল যাবে।’
দল থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা ডাকতে হবে। এ বিষয়ে কার্যনির্বাহী সংসদ সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আশা করেন, তাঁর দলের কেউ এতে আপত্তি করবে না।
লতিফ সিদ্দিকীর প্রসঙ্গ নিয়ে রাজনৈতিক ইস্যু করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো বলে দিলাম, এটাকে ইস্যু করার কিছু নেই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেটা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য না। লন্ডনের পথে নিউইয়র্ক থেকে প্লেনে ওঠার পর বিষয়টি জেনে এ নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সিদ্ধান্ত নিতে এতটুকু দেরি করিনি।’
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নয়: জাতিংসঘের মহাসচিব বান কি মুন অতীতে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এবার আলোচনায় তিনি কি এ বিষয়ে কিছু বলেননি? জবাবে শেখ হাসিনা হাসিমুখে বলেন, ‘এবার কিন্তু বলেন-টলেন নাই। বোধ হয় আর কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন না।’ প্রধানমন্ত্রীর এ উত্তরে সবাই হেসে ওঠেন। প্রশ্নকর্তার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি কি খুনিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারবেন? আমি তো দেশের স্বার্থে সেটাও চেষ্টা করেছি। যারা বোমাবাজি করে, দুর্নীতি করে, সাংসদকে হত্যা করে, আইভী রহমানকে হত্যা করে, তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে? এত রাজনৈতিক দৈনতায় আমরা ও বাংলাদেশের মানুষ পড়েনি।’
বিএনপির কঠোর আন্দোলনের হুমকির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, কঠোর আন্দোলন কত কঠোর হতে পারে, সেই কঠোরতা দেখার ক্ষমতা সরকারের আছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ২১ আগস্টের হামলার বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এফবিআই পর্যন্ত সাক্ষ্য দেওয়ার পরও আসামি খালাস হয়ে যায়। কয়েকটি নামীদামি পত্রিকা এগুলো লেখে না। তারা শুধু বাইনোকুলার, অনুবীক্ষণযন্ত্র নিয়ে বসে থাকে, আওয়ামী লীগের কালো দাগ আছে কি না। রাতকানারা খুঁজে বেড়ায় শুধু সরকারের দোষ।
ইতিহাস বিকৃতি প্রসঙ্গে: ইতিহাস বিকৃতির অংশ হিসেবে শারমিন আহমেদ এবং এ কে খন্দকারের বইয়ের সঙ্গে তারেকের বক্তব্য এক সূত্রে গাঁথা কি না, জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে যা পারে, মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে যাচ্ছে। একটা খোঁজ নেওয়া যে, যে সময়কার বই লিখে যাচ্ছে, তখন এদের বয়সই বা কত ছিল। বা আমার একজন মন্ত্রী যেটা লিখেছেন, ওটা আদৌ উনি, উনি...। আমার একটা প্রশ্ন, একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন আর উনি ওটা লিখলেন আর সেই সাথে সাথে যারা এটা প্রকাশ করল, সেই প্রকাশকইবা এ ধরনের একটা মিথ্যা তথ্য-সংবলিত(বই) কী করে কীভাবে প্রকাশ করলেন! সেই প্রকাশককেও জিজ্ঞেস করা উচিত, তাঁরা কীভাবে এগুলো প্রকাশ করেন বা কীভাবে উৎসাহ দেন। আর আপনারা দুটি বইয়ের লেখার ধরনটা যদি দেখেন, মনে হয় লেখক বোধ হয় সেইম (একই)।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসা ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
No comments