লতিফ সিদ্দিকীর বিচার কেন জরুরি by মাহমুদ সাজ্জাদ
মহানবী সা: ও পবিত্র হজ নিয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য যে ধর্মবিরোধী ও মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, এ নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই। তিনি ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসে আক্রমণ করে অনেক কথা বলেছেন। প্রথমে তিনি আঘাত করেন ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজকে। তার ভাষায় ‘এই হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়! হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নেই। এদের কোনো প্রডাকশন নেই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। অ্যাভারেজে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায় প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়।’
এরপর তিনি আক্রমণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে। তিনি নিজেই হজের এক কাল্পনিক ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায় ‘আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটি ব্যবস্থা করল যে আমার অনুসারীরা প্রতি বছর একবার একসাথে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটি আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’ এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট আবেগতাড়িত হয়ে বা কথা প্রসঙ্গে নয় সুস্পষ্টভাবে তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয়কে অবমাননার চেষ্টা করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কী ধরনের অপরাধ করেছেন? আর তার শাস্তিই বা কী? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন তার এই বক্তব্যের জন্য তাকে খেসারত দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নিউ ইয়র্কে গিয়ে এসব মন্তব্য করেছিলেন। নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকীর এ মন্তব্যের পর তিনি সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাকে দিয়ে মন্ত্রিত্ব চালানো সম্ভব হবে না এটা বোঝা খুব কঠিন বিষয় নয়। তাকে মন্ত্রিপরিষদ বা দল থেকে সরানো সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মহানবী সা: ও হজ নিয়ে এমন মন্তব্য করার পরও তাকে যদি মন্ত্রিপরিষদে রাখা হতো তাহলে তার খেসারত সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হতো। প্রধানমন্ত্রী তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত নিতান্তই সরকারের ইমেজ রক্ষার সিদ্ধান্ত।
মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে এই বক্তব্য রাখার পর দেশের মানুষ চেয়েছে এই অপরাধের শাস্তি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে তার শাস্তি সম্ভব বলে মত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতারাও তার শাস্তি দাবি করেছেন।
আজকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। রাষ্ট্র কার? দেশের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র দেশের মানুষের আকাক্সার প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকে। গুটি কয়েক লোক ছাড়া দেশের সব মানুষ এমন ধর্মদ্রোহীদের শাস্তি দেয়ার পক্ষে। কিন্তু আমরা লক্ষ করলাম প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দেশের মানুষের মূল দাবি লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির বিষয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি। একজন সাংবাদিক তার শাস্তির দাবি উঠেছে বলে প্রশ্ন করলেও সে বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দেননি।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে শুধু মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে অব্যাহতির প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন; কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত তো কোনো শাস্তি হতে পারে না। এগুলো একান্তই ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে এর আগে একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও রয়েছেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে গ্রেফতারের অনেক পর তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়; কিন্তু নিজামী বা সাঈদী নবী রাসূল বা ইসলাম প্রসঙ্গে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেছেন এমন অভিযোগ তখন কেউ তোলেনি। তাদের যদি গ্রেফতার করা যায় তাহলে লতিফ সিদ্দিকীকে কেন আইনের আওতায় আনা যাবে না?
অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন তিনি তো এখন দেশে নেই। সরকার তাহলে কাকে গ্রেফতার করবে। এখানেই সরকারের সদিচ্ছার প্রশ্ন রয়েছে। সরকার তার বিরুদ্ধে আসলে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না সেটি এখনো স্পষ্ট করেনি। এ ছাড়া সরকার চাইলে তাকে বিদেশ থেকে ফেরত আনার প্রক্রিয়াও শুরু করতে পারে। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের বিদেশ থেকে ফেরত আনার নজির রয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেনÑ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করায় সাত বছরের জেল হয় আর মহানবীকে অবমাননা করলে কিছুই হয় না। এসব প্রশ্নের জবাব সরকারকে দিতে হবে। লতিফ সিদ্দিকীকে যদি আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে এসব প্রশ্ন সামনে আরো বড় হয়ে আসবে। আসলে দেশের মানুষ চায় এ ধরনের ধর্মদ্রোহী যারা প্রকাশ্যে মানুষের বিশ্বাসের অনুভূতিতে আঘাত হানেন তাদের বিচার। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিচার খুবই জরুরি। মানুষ যখন দেখবে অপরাধ করলে বিচার ও শাস্তি হয় তখনই শুধু অপরাধ বন্ধ হয়। শাস্তি না হলে এ ধরনের অপরাধ চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেও স্বীকার করেছেন যে তিনি অপরাধ করেছেন। তাহলে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সমস্যা কোথায়? ক্ষমতাসীন দলের আইনমন্ত্রী ও বুদ্ধিজীবীরা একটা কথা প্রায়ই বলেন দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চান। এ জন্য তার অতীতে যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাহলে বর্তমানে যারা অপরাধ করছে তাদের বিচার হবে না কেন? বর্তমানের অপরাধের বিচার না হলে তো সমাজ ও রাষ্ট্র ভেঙে পড়বে। এখন দেশের মানুষ ধর্মদ্রোহিতার বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান চায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন লতিফ সিদ্দিকীর এই বক্তব্যের দায় সরকার বা দল নেবে না। আমরা লক্ষ করছি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোনো নেতা যখন অপরাধ করেন তখন বলেন এর দায় দল বা সরকার নেবে না। তারা শুধু ব্যক্তির ওপর দায় চাপান; কিন্তু এই ব্যক্তিকে তৈরি করেছে কে? লতিফ সিদ্দিকী যদি আওয়ামী লীগের নেতা না হতেন তাহলে তিনি কি রাষ্ট্র পরিচালনার এই পর্যায়ে যেতে পারতেন? তার মধ্যে যে ঔদ্ধত্য চলে এসেছে তাতে কি ক্ষমতার বড়াই নেই? এই ক্ষমতা তো দল ও সরকারের। এখন গণমাধ্যমে খবর এসেছে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় তিনি অশোভন বক্তব্য রেখেছেন। সরকারি কর্মচারীদের মারধর করেছেন।
আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ ধরনের অভিযোগ জমা থাকার পরও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে তাকে আরো বড় মন্ত্রণালয় ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী করা হয়। দুর্নীতি আর খারাপ আচরণের জন্য কি তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন? এ পদোন্নতির দায় তো প্রধানমন্ত্রীর ওপরও বর্তায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন বলে দুর্নীতি অনিয়ম এবং ধর্মবিরোধী বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি নিশ্চয়ই নিজে নিজে মন্ত্রী হননি? দল বা সরকার তাকে মন্ত্রী না করলে তো তিনি মন্ত্রী হতে পারতেন না, এ রকম মন্তব্যও করতে পারতেন না। এ কারণে লতিফ সিদ্দিকীর দায় সরকার বা দল নেবে না বলে পার পাওয়া যাবে না। অবশ্যই এর দায় সরকারের ওপর বর্তায় এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব সরকারের।
এরপর তিনি আক্রমণ করেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:কে। তিনি নিজেই হজের এক কাল্পনিক ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। তার ভাষায় ‘আবদুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটি ব্যবস্থা করল যে আমার অনুসারীরা প্রতি বছর একবার একসাথে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটি আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’ এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট আবেগতাড়িত হয়ে বা কথা প্রসঙ্গে নয় সুস্পষ্টভাবে তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয়কে অবমাননার চেষ্টা করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে বক্তব্য রাখার জন্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কী ধরনের অপরাধ করেছেন? আর তার শাস্তিই বা কী? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন তার এই বক্তব্যের জন্য তাকে খেসারত দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নিউ ইয়র্কে গিয়ে এসব মন্তব্য করেছিলেন। নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও দল থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন। লতিফ সিদ্দিকীর এ মন্তব্যের পর তিনি সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাকে দিয়ে মন্ত্রিত্ব চালানো সম্ভব হবে না এটা বোঝা খুব কঠিন বিষয় নয়। তাকে মন্ত্রিপরিষদ বা দল থেকে সরানো সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মহানবী সা: ও হজ নিয়ে এমন মন্তব্য করার পরও তাকে যদি মন্ত্রিপরিষদে রাখা হতো তাহলে তার খেসারত সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হতো। প্রধানমন্ত্রী তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত নিতান্তই সরকারের ইমেজ রক্ষার সিদ্ধান্ত।
মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দিয়ে এই বক্তব্য রাখার পর দেশের মানুষ চেয়েছে এই অপরাধের শাস্তি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে তার শাস্তি সম্ভব বলে মত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতারাও তার শাস্তি দাবি করেছেন।
আজকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। রাষ্ট্র কার? দেশের মানুষকে নিয়ে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র দেশের মানুষের আকাক্সার প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকে। গুটি কয়েক লোক ছাড়া দেশের সব মানুষ এমন ধর্মদ্রোহীদের শাস্তি দেয়ার পক্ষে। কিন্তু আমরা লক্ষ করলাম প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে দেশের মানুষের মূল দাবি লতিফ সিদ্দিকীর শাস্তির বিষয়ে কোনো বক্তব্য রাখেননি। একজন সাংবাদিক তার শাস্তির দাবি উঠেছে বলে প্রশ্ন করলেও সে বিষয়ে তিনি কোনো জবাব দেননি।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে শুধু মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে অব্যাহতির প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন; কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত তো কোনো শাস্তি হতে পারে না। এগুলো একান্তই ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে এর আগে একাধিক রাজনৈতিক নেতাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও রয়েছেন।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে গ্রেফতারের অনেক পর তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়; কিন্তু নিজামী বা সাঈদী নবী রাসূল বা ইসলাম প্রসঙ্গে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেছেন এমন অভিযোগ তখন কেউ তোলেনি। তাদের যদি গ্রেফতার করা যায় তাহলে লতিফ সিদ্দিকীকে কেন আইনের আওতায় আনা যাবে না?
অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন তিনি তো এখন দেশে নেই। সরকার তাহলে কাকে গ্রেফতার করবে। এখানেই সরকারের সদিচ্ছার প্রশ্ন রয়েছে। সরকার তার বিরুদ্ধে আসলে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না সেটি এখনো স্পষ্ট করেনি। এ ছাড়া সরকার চাইলে তাকে বিদেশ থেকে ফেরত আনার প্রক্রিয়াও শুরু করতে পারে। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের বিদেশ থেকে ফেরত আনার নজির রয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেনÑ প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করায় সাত বছরের জেল হয় আর মহানবীকে অবমাননা করলে কিছুই হয় না। এসব প্রশ্নের জবাব সরকারকে দিতে হবে। লতিফ সিদ্দিকীকে যদি আইনের আওতায় আনা না হয় তাহলে এসব প্রশ্ন সামনে আরো বড় হয়ে আসবে। আসলে দেশের মানুষ চায় এ ধরনের ধর্মদ্রোহী যারা প্রকাশ্যে মানুষের বিশ্বাসের অনুভূতিতে আঘাত হানেন তাদের বিচার। সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিচার খুবই জরুরি। মানুষ যখন দেখবে অপরাধ করলে বিচার ও শাস্তি হয় তখনই শুধু অপরাধ বন্ধ হয়। শাস্তি না হলে এ ধরনের অপরাধ চলতে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিপরিষদ ও দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেও স্বীকার করেছেন যে তিনি অপরাধ করেছেন। তাহলে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সমস্যা কোথায়? ক্ষমতাসীন দলের আইনমন্ত্রী ও বুদ্ধিজীবীরা একটা কথা প্রায়ই বলেন দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তা থেকে তারা বেরিয়ে আসতে চান। এ জন্য তার অতীতে যারা অপরাধ করেছেন তাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাহলে বর্তমানে যারা অপরাধ করছে তাদের বিচার হবে না কেন? বর্তমানের অপরাধের বিচার না হলে তো সমাজ ও রাষ্ট্র ভেঙে পড়বে। এখন দেশের মানুষ ধর্মদ্রোহিতার বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান চায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন লতিফ সিদ্দিকীর এই বক্তব্যের দায় সরকার বা দল নেবে না। আমরা লক্ষ করছি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোনো নেতা যখন অপরাধ করেন তখন বলেন এর দায় দল বা সরকার নেবে না। তারা শুধু ব্যক্তির ওপর দায় চাপান; কিন্তু এই ব্যক্তিকে তৈরি করেছে কে? লতিফ সিদ্দিকী যদি আওয়ামী লীগের নেতা না হতেন তাহলে তিনি কি রাষ্ট্র পরিচালনার এই পর্যায়ে যেতে পারতেন? তার মধ্যে যে ঔদ্ধত্য চলে এসেছে তাতে কি ক্ষমতার বড়াই নেই? এই ক্ষমতা তো দল ও সরকারের। এখন গণমাধ্যমে খবর এসেছে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় তিনি অশোভন বক্তব্য রেখেছেন। সরকারি কর্মচারীদের মারধর করেছেন।
আমরা দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ ধরনের অভিযোগ জমা থাকার পরও বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে তাকে আরো বড় মন্ত্রণালয় ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী করা হয়। দুর্নীতি আর খারাপ আচরণের জন্য কি তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন? এ পদোন্নতির দায় তো প্রধানমন্ত্রীর ওপরও বর্তায়। বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন বলে দুর্নীতি অনিয়ম এবং ধর্মবিরোধী বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি নিশ্চয়ই নিজে নিজে মন্ত্রী হননি? দল বা সরকার তাকে মন্ত্রী না করলে তো তিনি মন্ত্রী হতে পারতেন না, এ রকম মন্তব্যও করতে পারতেন না। এ কারণে লতিফ সিদ্দিকীর দায় সরকার বা দল নেবে না বলে পার পাওয়া যাবে না। অবশ্যই এর দায় সরকারের ওপর বর্তায় এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব সরকারের।
No comments