জাতিসঙ্ঘের কী পরিণতি by জসিম উদ্দিন

লিগ অব নেশনস বিশ্বপর্যায়ে জাতিরাষ্ট্রগুলোর প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠন। যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে যুদ্ধ রোধ করে আন্তর্জাতিক পরিসরে শান্তি রক্ষা ছিল এর প্রধান লক্ষ্য। তিন বছরের মাথায় ১৯২৩ সালে ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের মিলিত বাহিনী জার্মানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে আক্রমণ করে বসে। ব্রিটেন এ আক্রমণকে সমর্থন করে। ব্রিটেনের পাশাপাশি লিগের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য ছিল ফ্রান্স। জার্মানদের বিরুদ্ধে দেশ দু’টির ছিল শত্রুতা। লিগের উদ্যোক্তা দেশ ব্রিটেন-ফ্রান্স আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার বদলে নিজেদের শত্রু দমনে ইউরোপজুড়ে জার্মানবিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগাতে বেশি উৎসাহিত হয়। সরাসরি নিয়ম ভঙ্গ করলেও সদস্য দেশ দু’টির বিরুদ্ধে লিগ অব নেশনস কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ব্যবস্থা নেবে কারা, হর্তাকর্তারাই এ কর্মের কর্তা।
অন্য সদস্যদের মধ্যে এ বার্তা পৌঁছাল যে, চাইলে লিগের নিয়মকানুন ভঙ্গ করা যায়। তখন জার্মান বিরোধিতা পুরো ইউরোপে জোরালো ছিল। সদস্যদের মধ্যে তাই অল্প কয়েকটি দেশ জার্মান আক্রমণের সমালোচনা করে। কিন্তু দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো ভবিষ্যতের জন্য। একই বছর ইতালি-আলবেনিয়ার বিতর্কিত এলাকায় জনমত জরিপের জন্য নিজেরা একটি যৌথ টিম পাঠায়। টিমের পাঁচ ইতালীয় সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জন্য গ্রিসকে দায়ী করে ইতালি বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করে। গ্রিস ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করে। জবাবে ইতালি তার নৌবাহিনীকে গ্রিক দ্বীপ কর্ফুতে পাঠায়। এরা উপকূলে বোমা বর্ষণ করে। লিগ অব নেশনসের কাছে সাহায্য চেয়ে গ্রিস ব্যর্থ হয়। এবার বেনিতো মুসোলিনি লিগকে নিজের পক্ষে প্রভাবিত করে। গ্রিসকে বাধ্য করা হয় পাঁচ কোটি লিরা ক্ষতিপূরণ দিতে।
রাশিয়ার ফিনল্যান্ড আক্রমণ লিগের বারোটা বাজিয়ে দেয়। ইউরোপের কিছু দেশের স্বেচ্ছাচারিতার দায় তখন নিজেদের ঘাড়ে চেপে বসে। এরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু করার নৈতিক অধিকার হারায়। রাশিয়াকে যদিও এর সদস্যপদ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে বহিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর মধ্য দিয়ে লিগ পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে। লিগের দুর্বলতা ও ব্যর্থতা মাথায় রেখে ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে গঠিত হয় জাতিসঙ্ঘ। এর প্রধান উদ্যোক্তা রাষ্ট্র আমেরিকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটি রাশিয়ার সাথে শীতল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী আরো বেশ কিছু আঞ্চলিক যুদ্ধ হয়েছে এর পর। কোনোটি ঠেকাতে পারেনি জাতিসঙ্ঘ। তবে দু’টি বড় রাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা বিশ্বে একটি ভারসাম্য সৃষ্টি করে। এর ফলে একচেটিয়া কোনো দেশকে একেবারে নিঃশেষ করে দখল করার মতো ঘটনা ঘটেনি। নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত রাশিয়ার ভাঙনের মাধ্যমে আমেরিকার একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হয়। জাতিসঙ্ঘের আশ্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন বৈষম্যের জন্ম দেয় এবং স্বেচ্ছাচারিতা করে। লিগ অব নেশনসের বৈষম্যমূলক নীতি যেমন ইউরোপে অনাচার সৃষ্টি করে, একইভাবে জাতিসঙ্ঘ বিশ্বব্যাপী এমন অনেক অনাচারে সহযোগিতা করে চলেছে।
বিশ্বসংস্থা হিসেবে জাতিসঙ্ঘ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে। লিগ অব নেশনসের মতো বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা জাতিসঙ্ঘের প্রধান লক্ষ্য হলেও ঠিক অস্থিরতা ও যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়ার জন্যই যেন এটি ব্যবহার হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ ইরাকের আজকের করুণ পরিণতি রোধে জাতিসঙ্ঘ কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি। মানববিধ্বংসী অস্ত্রের সম্ভার রয়েছে এমন অজুহাতে জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করে আমেরিকা দেশটিতে হামলা চালায়। সাদ্দামকে প্রহসনের বিচারের নামে হত্যা এবং সার্বভৌম দেশ ইরাকের পতন হওয়ার পর এটা প্রমাণ হয়েছে দেশটিতে মানববিধ্বংসী অস্ত্রের সম্ভার ছিল না। ২০১৪ সালে সেখানে নিহত মানুষের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
পরিস্থিতি উন্নতির পরিবর্তে ইরাকে নতুন একটি অবৈধ শক্তির উদ্ভব হয়েছে। আইসিস নামে সংগঠিত এ শক্তি নিষ্ঠুর সব ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী তাদের বর্বর সব কর্মকাণ্ডের ছবি ও খবর প্রচারিত হচ্ছে জোরেশোরে। এরা হত্যা করছে সাংবাদিক, এনজিওকর্মী এমনকি নিরীহ সাধারণ মানুষকে। ইসলামের নামে এমন নিষ্ঠুর কাজ এরা চালালেও এর কোনোটি ইসলাম অনুমোদন করে না। সংগঠনটির এসব কাজ ইসলামের ওপর অপবাদ তৈরির প্রচারণা হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র্র দীর্ঘ দিন দেশটি দখল করে রাখার পর কিভাবে আরো খারাপ একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে গেল ইরাক? বিশ্ববাসীর সামনে সে প্রশ্নটি বড় করে দেখা দিয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সেখানে বিমান হামলা শুরু হয়েছে। এরা পূর্বাভাস দিচ্ছে সংগঠিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে পরাস্ত করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে নতুন আরো একটি গোষ্ঠীর কথাও। ‘খোরাসান’ নামে এ গোষ্ঠী আরো ভয়ানক বলে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করছে। আলাকায়েদার সদস্যারা এটি সংঘটিত করছে। মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ভূমি ইরাক যে নাগরিকশূন্য করে ফেলা হবে, এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইরাকিরা পুরো ব্যাপারটিকে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। উদ্ভূত গোষ্ঠীকে সামনে আনা হয়েছে চিরতরে ইরাককে দখলে নেয়ার জন্য। সেখানে আরব বসতিশূন্য করে ইসরাইলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কাজ মূলত এগিয়ে চলছে। বিশ্ববাসী দেখছে খেলাফত কায়েমকারী মুসলমানেরা বর্বর!
আফগানিস্তানে ইরাকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তর এবং আলকায়েদাকে বহিষ্কার করার দাবি জানানোর মধ্য দিয়ে বুশের অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম শুরু হয়। জবাবে লাদেনকে দেশ ত্যাগ করার অনুরোধ করে তালেবান সরকার। তবে নাইন-ইলেভেন আক্রমণের জন্য তিনি দায়ী, এ ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়া তাকে তাড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় তালেবান। ৭ অক্টোবর যুক্তরাজ্যকে সাথে নিয়ে আক্রমণ সূচনা করে এরা। দীর্ঘ যুদ্ধে আফগানিস্তান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তালেবান, আলকায়েদা, ওসামা বিন লাদেন রহস্যই থেকে গেছে। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে এক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আমেরিকা দাবি করেছে, লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সেখানে মে মাসের ২ তারিখে কী ঘটেছিল, বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্ট হয়নি। আফগান যুদ্ধ থেকে আমেরিকার প্রকৃত অর্জন কী বা মানবতার জন্য কী শিক্ষা অর্জিত হলো, সঠিকভাবে নিরূপণ করার কেউ নেই। তবে একটি দেশ এরা তছনছ করে দিয়েছে। আমেরিকার এ যুদ্ধে সহযোগিতা করতে গিয়ে পাকিস্তানের অবস্থা এখন সঙ্কটাপন্ন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘শত্রু’ আলকায়েদা নিঃশেষ হয়ে যায়নি, আফগানিস্তানে শান্তি নেমে আসেনি। আফগানিস্তানের সামনে এখন দীর্ঘ অনিশ্চয়তা আর অন্ধকার দেখা যাচ্ছে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে মার্কিন কংগ্রেস একটি বিল পাস করে। ২০০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এটি পাস হয় আর প্রেসিডেন্ট বুশ তাতে সই করেন ১৮ সেপ্টেম্বর। নাইন-ইলেভেন আক্রমণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক শক্তি ব্যবহারের আইনগত ভিত্তি এটি। বেশ চাতুর্যের সাথে এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার দায় এড়ায় বুশ প্রশাসন। তালেবান সৈন্যকে একটি জাতীয় সেনাবাহিনীর পরিবর্তে গণ্য করা হয় সন্ত্রাসীদের সমর্থক হিসেবে। এর মাধ্যমে জেনেভা কনভেনশন এবং আইনের প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘ অবৈধ যুদ্ধ প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
জাতিসঙ্ঘ আর ইসরাইলের উত্থান হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও তাদের বাড়িঘর দখল করে ইহুদি বসতি স্থাপনের কার্যক্রম জাতিসঙ্ঘের আশ্রয়ে থেকে করে যাচ্ছে ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র এ কর্মে প্রধান আনুকূল্যদাতা। আগ্রাসন বন্ধে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে একটি সুনির্দিষ্ট সীমারেখা বেঁধে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া তার ভাষণে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। আলোচনা পুনরায় সচল করা অন্যথায় অসম্ভব হবে বলে জোর দিয়ে বলেন আব্বাস।
জাতিসঙ্ঘে দেয়া মাহমুদ আব্বাসের ভাষণকে আমেরিকা যেভাবে সমালোচনা করেছে, তা ন্যক্কারজনক। নিজেদের বসতবাড়িতে অবস্থান বজায় রাখা যেন ফিলিস্তিনিদের অপরাধ। অন্য দিকে ইসরাইলের জোরপূর্বক বসতি স্থাপনকে সমর্থন করা হচ্ছে এর মাধ্যমে। এরা আব্বাসের এ ভাষণকে ‘আক্রমণাত্মক’ বলে অভিহিত করেছে। এরা বলেছে, এ ভাষণ ইসরাইলকে উসকে দেবে। প্রকৃত ব্যাপার হলো, ইসরাইলকে উসকানি দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এরা নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের যখন তখন হত্যা করার অধিকার সংরক্ষণ করে। কারণ, জাতিসঙ্ঘ সব সময় প্রস্তুত হয়ে থাকে তাদের দায়মুক্ত করার জন্য। আমেরিকার এ অবস্থান খোলাসা করে বললে বলতে হয়, ইসরাইলি সন্ত্রাসের পক্ষে, অন্য দিকে ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকারের বিপক্ষে।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনের ঠিক আগে মানবাধিকার কর্মীকে ফিলিস্তিনে ঢুকতে দেয়নি ইসরাইল। জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোটিয়ার সেই মানবাধিকার কর্মী মাকারিম ইউবিসোনো বলেন, ‘আমি গভীরভাবে মর্মাহত পশ্চিম তীরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আক্রান্ত ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে সাক্ষাতের জন্য সেখানে আমার যাওয়ার প্রয়োজন।’ এর আগেও তার পূর্বসূরি রিচার্ড ফককে ২০০৮ সালে ২০ ঘণ্টা আটক রাখার পর বেন গুরিয়ান বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে স্বাধীনতার প্রশ্নে জাতিসঙ্ঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর বিপরীতে কাশ্মির, মিন্দানাও, উইঘুর, রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার আদায়ে জাতিসঙ্ঘ কোনো ভূমিকা রাখেনি। এ চারটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় গণহত্যা ঘটলেও কোনো আওয়াজ নেই জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে। পূর্ব তিমুরের অধিবাসীরা খ্রিষ্টান, অন্য যে জাতিগোষ্ঠীগুলো চরম নিপীড়নের শিকার তারা সবাই মুসলিম। জাতিসঙ্ঘ চরম সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেদের এজেন্ডা নির্ধারণ করছে, এমন প্রমাণ মিলছে। পরমাণু প্রযুক্তির আবিষ্কার, উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে পারেনি। পরমাণু অস্ত্র উৎপাদনের অভিযোগ এনে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাখা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের এ অস্ত্রটি সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে আমেরিকার শত্রুরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধেও।
উগ্র জাতীয়তাবাদী পুতিনের নেতৃত্বে নতুন করে উত্থান ঘটছে রাশিয়ার। এরা জোর করে দখল করে নিয়েছে ইউক্রেনের অংশ ক্রিমিয়াকে। এখন অভিযান চলছে খোদ ইউক্রেন অভিমুখে। জাতিসঙ্ঘ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। স্বাধীন দেশ ইউক্রেন সার্বভৌমত্ব হারাতে বসেছে। রাশিয়ার এ আগ্রাসনকে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য সদস্য চীন নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার পতনের পর জাতিসঙ্ঘকে দাবার ঘুঁটির মতো একক ব্যবহারকারী যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। চীন-রাশিয়ার যৌথ আকাক্সা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে খর্ব করছে। বিশ্বক্ষমতার লড়াইয়ে শান্তিরক্ষায় ব্যর্থ জাতিসঙ্ঘ লিগ অব নেশনের পরিণতি পেতে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের ৬৯তম সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে সদর দফতর নিউ ইয়র্কে। এ উপলক্ষে গরিব দেশগুলোর শাসকেরা বেশি তৎপর। তাদের মধ্যে অনেকটা পিকনিক মুড। বিশাল বহর নিয়ে সেখানে বেড়ানোর একটা সুযোগ নিচ্ছে তারা। জাতিসঙ্ঘের কার্যকর বডি হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ। এর প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রগুলো বিশ্বের অর্ধেক মানুষেরও প্রতিনিধিত্ব করে না। ইউরোপ ও আমেরিকার মাত্র ৫০ কোটির কম মানুষের জন্য তিনটি সদস্যপদ। অন্য দিকে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এ ধরনের বৈষম্যমূলক বিশ্বসংস্থা অবশ্যম্ভাবীরূপে ভেঙে পড়বে।
নিরস্ত্রীকরণ এবং পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সমঝোতার ওপর জোর দেয়া হয় লিগ অব নেশনসে। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সমান দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এর কর্মসূচির মধ্যে ছিল। মানব পাচার, অস্ত্র কেনাবেচা, বিশ্বস্বাস্থ্য ও যুদ্ধবন্দীর মতো বিষয়গুলোকে এজেন্ডার মধ্যে রাখা হয়েছিল। জাতিসঙ্ঘেও একই এজেন্ডা গুরুত্ব পায়। এবার আফ্রিকায় ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া ইবোলা ভাইরাস নিয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে মহাসচিব বান কি মুন সাধারণ পরিষদের সূচনা বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আসল কাজ শান্তিরক্ষায় ব্যর্থতা জাতিসঙ্ঘকে অচিরেই মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
jjshim146@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.