বছরজুড়ে ব্যবসা বাণিজ্যে ভাটা by মিরাজ শামস
নির্বাচনী
বছরজুড়ে রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এ
নিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে বছর পার করেছেন। আগামী বছর কখন
পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং কেমন সুযোগ পাওয়া যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায়
রয়েছেন তারা। তবে এতকিছুর মধ্যেও হাল ছাড়েননি ব্যবসায়ীরা। সংকট উত্তরণে
নিয়েছেন একাধিক উদ্যোগ। ২০১৩ সালের শুরু থেকেই বিরোধী জোটের বিক্ষোভ
সমাবেশ, হরতাল, অবরোধ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন
ব্যবসায়ীরা। বছরজুড়ে ব্যবসা বাণিজ্যে ছিল ভাটা।সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগ ক্ষতি অদৃশ্য
থেকে যাচ্ছে। ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতের তাণ্ডবে শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী
পুঁজি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। এর পর নতুন করে শুরু করলেও এগোতে পারেননি
তারা। হরতালের কারণে বছরের বেশির ভাগ সময় বন্ধ ছিল তাদের ব্যবসা।
বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় হরতালের পর শেষ সময়ে টানা অবরোধে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলো। এ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা স্বল্প পরিসরে পণ্য উৎপাদন করে সময় মতো বিক্রি করতে পারেননি। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন সব ব্যবসায়ী। এফবিসিসিআইর হিসাব মতে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে একদিন বন্ধ থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ক্ষতি হয় ৬০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে ৬২ দিন হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা।
শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ই নয়, সব খাতে এ বিপর্যয়ের ছোঁয়া লেগেছে। শিল্প-কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে বছরের প্রথম ছয় মাসে উৎপাদন ব্যাহত হলেও শেষ ছয় মাসে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন উদ্যোক্তারা। দেশের শীর্ষ রফতানি খাত তৈরি পোশাকে বিভিন্ন সময় নাশকতা ও দুর্ঘটনায় প্রভাব পড়েছে। এ খাতে বছরের শেষ দুই মাসে ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেশির ভাগ সময় বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে লোকসানে পড়েছে পরিবহন খাত। গত এক বছরে এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি। পরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের ৬০০ সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ ছিল। এতে বছরের শুরুতে তেমন প্রভাব না পড়লেও গত এক মাসে টানা অবরোধে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নানা জটিলতায় সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের দুর্দিন যাচ্ছে বছরজুড়ে। এবার বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২০টি পাটকল। লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি পোলট্রি খামার। পোলট্রি খাতে বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
এ বছরে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে মজুদ নিয়ে বিপাকে ট্যানারি মালিকরা। এ খাতে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। হিমায়িত মাছ রফতানিতে অপদ্রব্যের ব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করলেও শেষ সময়ে বড়দিনের বাজার ধরতে পারেনি। এতে বছরের শেষ ভাগে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ শতাংশ রফতানি কমেছে।
জানা গেছে, বছরের শুরুতে বাগানে পোকার আক্রমণে ৩০ শতাংশের বেশি চা উৎপাদন কম হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে হরতাল ও অবরোধে ১০০ কোটি টাকার চা মজুদ রয়েছে। আবাসন খাতের ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে গত বছরের চেয়ে এবার ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। এ খাতের বড় বেচাকেনার আসর রিহ্যাব ফেয়ার হচ্ছে না। এতে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে রিহ্যাব।
প্লাস্টিক শিল্পে বছরের শেষ ছয় মাসে অস্থিরতার কারণে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমেছে ৬ শতাংশ। একইভাবে পেট্রোলিয়াম বাইপ্রডাক্ট ৪৫ শতাংশ এবং প্রসাধনী ৫৭ শতাংশ রফতানি কমেছে। এ ছাড়া সিরামিকস, আয়রন-স্টিল, রাবার, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নানা জটিলতার কারণে এসব খাতে খেলাপি ঋণের বোঝা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বছরজুড়েই নানা সমাস্যার কারণে বেশির ভাগ ব্যবসা সংকুচিত করেছেন উদ্যোক্তারা। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতিতে কৃষকরা বড় ভূমিকা রাখলেও এবার তেমন এগোতে পারেননি। আগের চেয়ে উৎপাদন খরচ বাড়লেও মোকামে বাড়েনি পণ্যের দাম। বছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষিপণ্যের রফতানি ভালো থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শেষ ভাগে কমেছে ৬ শতাংশ। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে তাদের আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধানে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবুও আগামী বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের সুদিন ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন উদ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের। এ জন্য ছুটে গেছেন রাজনীতিবিদদের কাছে। সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বছরজুড়ে বিভিন্ন সময় হরতালের পর শেষ সময়ে টানা অবরোধে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলো। এ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা স্বল্প পরিসরে পণ্য উৎপাদন করে সময় মতো বিক্রি করতে পারেননি। পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ থাকায় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন সব ব্যবসায়ী। এফবিসিসিআইর হিসাব মতে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে একদিন বন্ধ থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায় ক্ষতি হয় ৬০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরে ৬২ দিন হরতাল, অবরোধ ও সহিংসতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এক লাখ কোটি টাকা।
শুধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ই নয়, সব খাতে এ বিপর্যয়ের ছোঁয়া লেগেছে। শিল্প-কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে বছরের প্রথম ছয় মাসে উৎপাদন ব্যাহত হলেও শেষ ছয় মাসে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন উদ্যোক্তারা। দেশের শীর্ষ রফতানি খাত তৈরি পোশাকে বিভিন্ন সময় নাশকতা ও দুর্ঘটনায় প্রভাব পড়েছে। এ খাতে বছরের শেষ দুই মাসে ক্ষতি হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
রাজনৈতিক অস্থিরতায় বেশির ভাগ সময় বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে লোকসানে পড়েছে পরিবহন খাত। গত এক বছরে এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি। পরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের ৬০০ সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ ছিল। এতে বছরের শুরুতে তেমন প্রভাব না পড়লেও গত এক মাসে টানা অবরোধে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নানা জটিলতায় সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের দুর্দিন যাচ্ছে বছরজুড়ে। এবার বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২০টি পাটকল। লোকসানের কারণে বন্ধ হয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি পোলট্রি খামার। পোলট্রি খাতে বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।
এ বছরে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে মজুদ নিয়ে বিপাকে ট্যানারি মালিকরা। এ খাতে বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। হিমায়িত মাছ রফতানিতে অপদ্রব্যের ব্যবহার রোধে সক্ষমতা অর্জন করলেও শেষ সময়ে বড়দিনের বাজার ধরতে পারেনি। এতে বছরের শেষ ভাগে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৪ শতাংশ রফতানি কমেছে।
জানা গেছে, বছরের শুরুতে বাগানে পোকার আক্রমণে ৩০ শতাংশের বেশি চা উৎপাদন কম হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে হরতাল ও অবরোধে ১০০ কোটি টাকার চা মজুদ রয়েছে। আবাসন খাতের ৯০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে গত বছরের চেয়ে এবার ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। এ খাতের বড় বেচাকেনার আসর রিহ্যাব ফেয়ার হচ্ছে না। এতে ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছে রিহ্যাব।
প্লাস্টিক শিল্পে বছরের শেষ ছয় মাসে অস্থিরতার কারণে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমেছে ৬ শতাংশ। একইভাবে পেট্রোলিয়াম বাইপ্রডাক্ট ৪৫ শতাংশ এবং প্রসাধনী ৫৭ শতাংশ রফতানি কমেছে। এ ছাড়া সিরামিকস, আয়রন-স্টিল, রাবার, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নানা জটিলতার কারণে এসব খাতে খেলাপি ঋণের বোঝা কাটিয়ে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বছরজুড়েই নানা সমাস্যার কারণে বেশির ভাগ ব্যবসা সংকুচিত করেছেন উদ্যোক্তারা। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতিতে কৃষকরা বড় ভূমিকা রাখলেও এবার তেমন এগোতে পারেননি। আগের চেয়ে উৎপাদন খরচ বাড়লেও মোকামে বাড়েনি পণ্যের দাম। বছরের প্রথম ছয় মাসে কৃষিপণ্যের রফতানি ভালো থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শেষ ভাগে কমেছে ৬ শতাংশ। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কৃষকদের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা ফসল নষ্ট হয়েছে। এ কারণে তাদের আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধানে হিমশিম খেতে হয়েছে। তবুও আগামী বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের সুদিন ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন উদ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের। এ জন্য ছুটে গেছেন রাজনীতিবিদদের কাছে। সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ করে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের দাবি জানিয়েছেন তারা।
No comments