ক্রিকেটের ফেয়ারওয়েল by জগন্নাথ বিশ্বাস
প্রায়
এক যুগ আগের ঘটনা। শচীনের বয়স তখন ২৭। সবে ওয়ানডে ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড
গড়েছেন। ক্রিকইনফোর আনন্দ বাসু একটা বিশ্লেষণী লেখা লিখেছিলেন। তাতে
পরিসংখ্যানের কচকচি তেমন ছিল না। ছিল সময়ের ওপর শচীনের প্রভাব নিয়ে নানা
ভঙ্গির আলোচনা। সেখানে শচীনকে 'ব্লাডি ফেনোমেনন' বলেছিলেন মি. বাসু। তখন
শব্দটার মানে বোঝা না গেলেও ১৬ নভেম্বর ওয়াংখেড়ের 'ফেয়ারওয়েল' দেখার পর আর
কারও বুঝতে বাকি নেই। আসলে অন্য তারকারা যদি ক্রিকেটের 'ফেনোমেনন' হন, শচীন
তাহলে নিশ্চিতভাবেই 'ব্লাডি ফেনোমেনন'। ২০১৩ সালটা এহেন অদ্বিতীয় এক শচীন
রমেশ টেন্ডুলকারের ফুরিয়ে যাওয়ার বছর। ক্রিকেটে শচীনের অর্জনের দিকে তাকিয়ে
অনেকেই বলছেন, 'এক মহান ক্রিকেট সভ্যতার' অবসান। খুব সত্যি কথা। তবে এ
লেখা সেই সভ্যতার প্রশস্তিগাথা নয়। এটা ক্রিকেটের প্রতি শচীনের
আত্মনিবেদনের গল্প। শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। করাচিতে। তারপর কেমন এক
সন্মোহন নিয়ে কেটে গেল ২৪ বছর। ওয়াংখেড়েতে যখন শেষ দৃশ্যের সামনে দাঁড়িয়ে
আছেন শচীন, ক্রিকেটভক্তরা বিড়বিড় করছেন ... শচীন ইজ ফরটি, হি উইল প্লে
ক্রিকেট নো মোর। বিদায়ের দৃশ্যটাও কী সকরুণ। তিনি একা হেঁটে গেলেন উইকেটের
দিকে। শেষবারের মতো। হাতে ব্যাট নেই। মাঠে অপার্থিব নিস্তব্ধতা। উইকেটের
ধুলো মাথায় নিলেন। শচীনের ক্রিকেট-প্রণাম সারা হলো। যেন বলতে চাইলেন ...
আমারে তুমি অশেষ করেছো এমনই লীলা তব ... তারপর ... ফুরিয়ে গেল ২৪ বছরের
যুদ্ধ, প্রেম আর মহানুভবতার গল্প। ফুরিয়ে গেল ক্রিকেটের জীবনতৃষ্ণা। দারুণ
লিখেছিলেন রবি শাস্ত্রী_ 'শেষ ধন্যবাদটা তোলা ছিল সেই জায়গাটার জন্য, যা
এতদিন ছিল শচীনের আসল ঠিকানা, ওর কর্মভূমি, উপাসনাস্থল, আশ্রয় ও অভয়কানন ওর
মন্দির। চবি্বশ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে দানবীয়, দুর্বোধ্য আর
বিশ্বাসঘাতক পিচও শচীনের আধিপত্যের কাছে নতি স্বীকার করেছে। ক্রিকেটের সেই
বাইশ গজকে ছুঁয়ে কুর্নিশ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে গেল ও। ওর মধ্যে যেন
এক ঋষি আর দুর্নিবার যোদ্ধার আদর্শ সহাবস্থান! শচীনের মতো কাউকে আমরা আর
কখনও কোনোদিন দেখব না। ক্রিকেটার হিসেবেও না। মানুষ হিসেবেও না। দুর্বল,
ভঙ্গুর মানুষদের মাঝে শচীন সত্যিই ঈশ্বরের মতো!'
আজ দিনপঞ্জির পাতা থেকে আলগোছে মুছে যাবে একটা বছর। নতুনের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে জানা নেই। ইতিহাস শুধু জানা। যে ইতিহাস সোনার হরফে শচীনের বিদায় লিখে গেল। এ যেন সবুজ ঘাসে, ধূলির লিখন।
আজ দিনপঞ্জির পাতা থেকে আলগোছে মুছে যাবে একটা বছর। নতুনের গর্ভে কী লুকিয়ে আছে জানা নেই। ইতিহাস শুধু জানা। যে ইতিহাস সোনার হরফে শচীনের বিদায় লিখে গেল। এ যেন সবুজ ঘাসে, ধূলির লিখন।
No comments