আমার বাবা:দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহফুজ আনামকে নিয়ে লিখেছেন তাঁর মেয়ে তাহমিমা আনাম আমার আব্বু
বাংলাদেশের অনেক মানুষের কাছেই আমার আব্বু
একজন চেনা ব্যক্তিত্ব। সম্পাদক, সাংবাদিক, সংবাদ বিশ্লেষক—এমন অনেক
পরিচয়েই তাঁকে হয়তো চেনেন আপনারা। হয়তো তাঁর লেখা কলাম আপনারা পড়েছেন;
এমনকি তাঁকে টেলিভিশনেও দেখে থাকতে পারেন।
কিন্তু অনেকেই
জানেন না, আমার আব্বু মাহফুজ আনাম সবার আগে পুরোদস্তুর সংসারী এক মানুষ।
আব্বু পুরোপুরি আমার মা-অন্তঃপ্রাণ। বিয়ের ৪০ বছর পরও তাঁদের মধ্যে রয়েছে
গভীর ভালোবাসা। আমি আর ছোট বোন শাভিনা—দুই বোনের কাছেই তিনি অসাধারণ এক
বাবা।
মা-বাবা মোটামুটি অল্প বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। আমি যখন এলাম এই বিশ্বে, তখন আদতে তাঁদের সংসার শুরু করার সে রকম কোনো ইচ্ছাই ছিল না। মা আব্বুকে তাঁর অফিসে ফোন করেছিলেন খবরটা দেওয়ার জন্য। আব্বু তখন বাংলাদেশ অবজারভার-এর রিপোর্টার। আব্বু যদি অবাক হয়ে থাকেনও, সেটা কোনোভাবেই প্রকাশ করেননি। আমার পুরো জীবনে, যখন আব্বু আমার সঙ্গে ছিলেন, তাঁর চোখে খুশি ছাড়া অন্য কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
আমার বিশ্বাস, সেদিনের সেই ফোনকলের পর থেকেই আসলে আব্বু আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন।
আব্বু জাতিসংঘে কাজ শুরু করলেন। আমরা চলে গেলাম প্যারিসে। আমার তখন দুই বছর বয়স। সঙ্গে শিশুকন্যা; হুট করে একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে গিয়ে তাঁরা একরকম একাকী আটকা পড়েছিলেন বিচিত্র এক শহরে। মনে পড়ে, ক্যাসেট প্লেয়ারের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে আব্বু আমাকে আমাদের ডাটসান স্টেশন ওয়াগন গাড়িতে করে রোজ স্কুলে নিয়ে যেতেন।
বছর কয়েক পর আমরা চলে যাই নিউইয়র্কে। মা সকাল-সন্ধ্যা কাজ শুরু করলেন। আব্বুই আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন। আমরা দুজন হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। অন্ধকারে, ম্যানহাটনের স্ট্রিট লাইটের নিচে আব্বু আচমকা গলা উঁচিয়ে বলতেন, ‘আই লাভ ইউ।’ লোকজনের সামনে আমার একটু লজ্জাই লাগত। এখন যখন সেসব দিনের কথা ভাবি, ভালোই লাগে। আব্বু আমার প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা দেখাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি কখনো।
তাঁর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি যে হয়নি, এমন নয়। কিশোরী বয়সে সেই সব ঝগড়া সমাধানের বিশেষ একটা কৌশলও ছিল। স্নেহশীল শান্তিদূত এবং পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে আমাদের ঝগড়া মেটানোর কঠিন কাজটি করতে হতো মাকেই। এই ঝগড়ার ভালো দিকও ছিল। একজন জাতীয় বিতর্ক চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ লড়ার অভিজ্ঞতা আমার চিন্তাভাবনাগুলো সংগঠিত করার একটা চমৎকার প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজ দিয়েছিল।
আমার এই ৩৭ বছরের জীবনে যে কাজেই হাত দিয়েছি, আগাগোড়া আব্বু আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ক্যারিয়ার জেনেও আমার লেখক হওয়ার ইচ্ছায় অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল তাঁর। তিনি সব সময় উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন আমার লক্ষ্য অর্জনের পথে। আমি জানি, যা-ই ঘটুক, আব্বুকে আমি পাশে পাব সব সময়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া নিরাপত্তা আর নির্ভরতার অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটার আত্মবিশ্বাস।
সবাই ভাবে, তার বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা, কিন্তু আমার আব্বুর চেয়ে ভালো কোনো বাবার কথা আমি ভাবতেই পারি না। আব্বু এমন একজন, যাঁকে নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। এমন একজন, যিনি সতত উদার আর স্নেহশীল। একজন চিন্তাশীল ও প্রতিভাবান মানুষ। কিন্তু পরিবারকেই তিনি স্থান দিয়েছেন সবকিছুর ওপরে। একজন মেয়ে বাবার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কীই-বা চাইতে পারে? নিজেকে অসম্ভব সৌভাগ্যবতী মনে করি আমি।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
মা-বাবা মোটামুটি অল্প বয়সেই বিয়ে করেছিলেন। আমি যখন এলাম এই বিশ্বে, তখন আদতে তাঁদের সংসার শুরু করার সে রকম কোনো ইচ্ছাই ছিল না। মা আব্বুকে তাঁর অফিসে ফোন করেছিলেন খবরটা দেওয়ার জন্য। আব্বু তখন বাংলাদেশ অবজারভার-এর রিপোর্টার। আব্বু যদি অবাক হয়ে থাকেনও, সেটা কোনোভাবেই প্রকাশ করেননি। আমার পুরো জীবনে, যখন আব্বু আমার সঙ্গে ছিলেন, তাঁর চোখে খুশি ছাড়া অন্য কিছু দেখেছি বলে মনে পড়ে না।
আমার বিশ্বাস, সেদিনের সেই ফোনকলের পর থেকেই আসলে আব্বু আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন।
আব্বু জাতিসংঘে কাজ শুরু করলেন। আমরা চলে গেলাম প্যারিসে। আমার তখন দুই বছর বয়স। সঙ্গে শিশুকন্যা; হুট করে একান্নবর্তী পরিবার ছেড়ে গিয়ে তাঁরা একরকম একাকী আটকা পড়েছিলেন বিচিত্র এক শহরে। মনে পড়ে, ক্যাসেট প্লেয়ারের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে আব্বু আমাকে আমাদের ডাটসান স্টেশন ওয়াগন গাড়িতে করে রোজ স্কুলে নিয়ে যেতেন।
বছর কয়েক পর আমরা চলে যাই নিউইয়র্কে। মা সকাল-সন্ধ্যা কাজ শুরু করলেন। আব্বুই আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন। আমরা দুজন হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। অন্ধকারে, ম্যানহাটনের স্ট্রিট লাইটের নিচে আব্বু আচমকা গলা উঁচিয়ে বলতেন, ‘আই লাভ ইউ।’ লোকজনের সামনে আমার একটু লজ্জাই লাগত। এখন যখন সেসব দিনের কথা ভাবি, ভালোই লাগে। আব্বু আমার প্রতি তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা দেখাতে কুণ্ঠাবোধ করেননি কখনো।
তাঁর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি যে হয়নি, এমন নয়। কিশোরী বয়সে সেই সব ঝগড়া সমাধানের বিশেষ একটা কৌশলও ছিল। স্নেহশীল শান্তিদূত এবং পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে আমাদের ঝগড়া মেটানোর কঠিন কাজটি করতে হতো মাকেই। এই ঝগড়ার ভালো দিকও ছিল। একজন জাতীয় বিতর্ক চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ লড়ার অভিজ্ঞতা আমার চিন্তাভাবনাগুলো সংগঠিত করার একটা চমৎকার প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজ দিয়েছিল।
আমার এই ৩৭ বছরের জীবনে যে কাজেই হাত দিয়েছি, আগাগোড়া আব্বু আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ক্যারিয়ার জেনেও আমার লেখক হওয়ার ইচ্ছায় অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল তাঁর। তিনি সব সময় উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন আমার লক্ষ্য অর্জনের পথে। আমি জানি, যা-ই ঘটুক, আব্বুকে আমি পাশে পাব সব সময়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া নিরাপত্তা আর নির্ভরতার অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে স্বপ্নপূরণের পথে হাঁটার আত্মবিশ্বাস।
সবাই ভাবে, তার বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা, কিন্তু আমার আব্বুর চেয়ে ভালো কোনো বাবার কথা আমি ভাবতেই পারি না। আব্বু এমন একজন, যাঁকে নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। এমন একজন, যিনি সতত উদার আর স্নেহশীল। একজন চিন্তাশীল ও প্রতিভাবান মানুষ। কিন্তু পরিবারকেই তিনি স্থান দিয়েছেন সবকিছুর ওপরে। একজন মেয়ে বাবার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আর কীই-বা চাইতে পারে? নিজেকে অসম্ভব সৌভাগ্যবতী মনে করি আমি।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
No comments