শ্রদ্ধাঞ্জলি সমাজ ও মানুষ গড়ার কারিগর by ফারুক মঈনউদ্দীন
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে
কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ছুটে আসা পাকিস্তানি মিলিটারি কনভয়টি যখন ছোট
কুমিরা বাজারের বুক চিরে চলে যাওয়া সর্পিল রাস্তা বেয়ে সামনে গিয়ে গাছ ফেলে
তৈরি করা দুর্বল ব্যারিকেডের কাছে থামে,
তখন মোড়ের ওপর
মাঠের পাশে দাঁড়ানো মসজিদ্দা স্কুলের দোতলা ভবনটার নিচের বারান্দায় দাঁড়িয়ে
দৃশ্যটা দেখলেন প্রধান শিক্ষক এম এ মামুন। প্রচণ্ড ব্যক্তিত্বশালী মানুষটি
উত্তেজনায় তাঁর অভ্যাসবশত অদৃশ্য সাবান দিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে হয়তো
ভাবছিলেন তাঁর পরবর্তী করণীয়গুলোর কথা। গতকালই মাঝরাতের পর কুমিরার স্টেশন
মাস্টার তাঁকে ঘুম থেকে জাগিয়ে খবর দিয়ে গেছেন যে তাঁরা রেলওয়ের সিগন্যাল
ব্যবহার করে পাঠানো একটি বার্তা রিসিভ করেছেন, যেটি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা
ঘোষণার বার্তা। গুরুত্বপূর্ণ এই বার্তাটি তৎকালীন সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী
লীগের সভাপতি এম এ মামুনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই
হয়তো তাঁকে জানিয়ে গিয়েছিলেন স্টেশন মাস্টার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার
বিষয়টি নিয়ে অনর্থক বিতর্কের বিরুদ্ধে এ ঘটনাটি সাক্ষ্য হিসেবে কখনোই তেমন
প্রচার বা গুরুত্ব পায়নি। বিষয়টি নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হয়, তখন
গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসটি আমরা কেন ব্যবহার করতে পারিনি সেটি বোধগম্য নয়, কারণ
রেলস্টেশনে প্রাপ্ত সিগন্যালের লগ বুক কিংবা কোনো ধরনের রেকর্ড থাকা খুব
স্বাভাবিক। অবশ্য ১৯৭১ সালের কোনো রেকর্ড বা রেজিস্টার স্টেশনগুলোতে আদৌ
রক্ষিত ছিল কি না, সেটি যেমন অনিশ্চিত, তেমনি আশঙ্কা প্রবল যে
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের প্রতিকূল সময়ে স্পর্শকাতর সেসব রেকর্ড হয়তো বিনষ্ট
করে ফেলা হয়েছে।
কুমিরার অদূরে পাকিস্তানি বাহিনী যেখানে বাধা পায়, তার এক কিলোমিটার উত্তরে কাছিমের পিঠের মতো উঁচু সেতুটির অন্য পাড়ে ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআরের মিলিত প্রতিরোধ। সেদিন ঠিক সন্ধ্যায় হঠাৎ খই ফোটার মতো গুলির শব্দের সঙ্গে শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বাঙালিদের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। ভীতিকর সেই গোধূলিবেলায় পলায়নপর নারী-পুরুষের সমবেত চিৎকার যখন মাঠ ছাপিয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল চারপাশে, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে রেখে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন এম এ মামুন। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নানান কৌশলে শেষ পর্যন্ত পৌঁছেন ত্রিপুরার হরিণা ক্যাম্পে, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ঘটে সেখানে রাজনৈতিক প্রশিক্ষকের দায়িত্বলাভের মাধ্যমে।
ভারত ভাগের আগের অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে এক বিএ পরীক্ষা বর্জনকারী পিতার পুত্র এম এ মামুন গ্র্যাজুয়েশন করে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। চট্টগ্রামের দুটি স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৫৭ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত খ্যাতিহীন মসজিদ্দা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে তাঁর সব স্বপ্ন, কীর্তি ও জীবনবোধ। মূলত ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর তিনি যখন শিক্ষকতা শুরু করেন, তখন থেকেই বোধ করি তাঁর চোখে ছিল মানুষ গড়ার স্বপ্ন। সেই লক্ষ্যে অখ্যাত স্কুলটিকে গড়ে তোলার জন্য শুরু হয় তাঁর দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। এমনকি বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর শিক্ষা এবং বিলাত থেকে ইরেজিতে ডিপ্লোমা করার জন্য দুটি বৃত্তি পেয়েও নতুন স্কুলটির ভবিষ্যৎ ভেবে ঈর্ষণীয় সেই সুযোগটি গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রচণ্ড পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় গড়ে তোলা স্কুলটির প্রথাভাঙা সংশোধনমূলক একটি অনবদ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া তাঁর সেদিনের সেই নির্মোহ সিদ্ধান্তেরই যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করে। কঠিন নিয়মকানুন, নিবিড় পাঠদান এবং নিয়মিত ধর্ম চর্চার মধ্যে পরিচালিত অর্ধ আবাসিক স্কুলটি সে সময় হয়ে উঠেছিল পড়াশোনায় অমনোযোগী এবং ডানপিটে ছেলেদের অভিভাবকদের কাছে কাঙ্ক্ষিত এক গন্তব্য। ফলে চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও ছাত্রদের এখানে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হতো। তাঁদের অনেকেই অর্থে, বিত্তে এবং শিক্ষায় পরবর্তীকালে দেশ ও সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষে পরিণত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবেন, কারণ তাঁর যোগ্য অভিভাবকত্ব না পেলে এঁদের অনেকেই হয়তো আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পারতেন না। তাঁর শিক্ষানুরাগ এবং স্বপ্নের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পরবর্তী সময়ে স্কুলসংলগ্ন জমিতে তিনি গড়ে তোলেন মেয়েদের জন্য একটি কলেজ এবং শিক্ষা কমপ্লেক্স। এই উদ্যোগের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী এবং শিল্পপতি এম আর সিদ্দিকীর পরিবারকে।
মসজিদ্দা স্কুলে যোগ দেওয়ার কয়েক বছর আগে তিনি রাজনীতিতে নাম লেখালেও সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে। তার পর থেকে টানা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরম নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রাদেশিক পরিষদের আসনটিতে মনোনয়ন নেননি তিনি। একজন দায়িত্বপরায়ণ শিক্ষাবিদ হিসেবে এম এ মামুনকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ যে রকম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন, সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেও দলমত-নির্বিশেষে তাঁর কথা বিস্মৃত হবে না মানুষ। আজকালের সততাবিবর্জিত রাজনীতির যুগে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারত একটি অনন্য উদাহরণ।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে আসেন, তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি দেশের নিয়মিত প্রশাসনযন্ত্র, যোগাযোগ এবং আইনশৃঙ্খলা প্রায় বিপর্যস্ত। সীতাকুণ্ডের শিল্পাঞ্চলে ছিল পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া পশ্চিম পাকিস্তানি মালিকানাধীন বহু শিল্প-কারখানা। সেগুলোকে রক্ষা করাও ছিল সে সময়কার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই দুরূহ কাজটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এম এ মামুনকে নিয়োগ করা হয় সে অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রশাসক হিসেবে। কারণ, দায়িত্বটি পালনের জন্য দরকার ছিল তাঁর মতো একজন ধর্মপ্রাণ, সৎ, নির্লোভ দক্ষ প্রশাসকের। দায়িত্বটি সুষ্ঠুভাবে পালন করে তিনি প্রমাণ দিয়েছিলেন তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের।
খুব নিভৃতে থেকে তিনি সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন, অথচ তাঁর উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে যেতে পারেননি কোনো জাগতিক বিত্তবৈভব। তবে দেশ ও সমাজের জন্য যা রেখে যেতে পেরেছেন, তার জন্য তাঁকে আজীবন স্মরণ ও শ্রদ্ধা করবেন তাঁর কাছের ও দূরের পরিচিত ও অপরিচিত বহু বিবেকবান মানুষ।
ফারুক মঈনউদ্দীন: ব্যাংকবিষয়ক বিশ্লেষক।
fmainuddin@hotmail.com
কুমিরার অদূরে পাকিস্তানি বাহিনী যেখানে বাধা পায়, তার এক কিলোমিটার উত্তরে কাছিমের পিঠের মতো উঁচু সেতুটির অন্য পাড়ে ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিআরের মিলিত প্রতিরোধ। সেদিন ঠিক সন্ধ্যায় হঠাৎ খই ফোটার মতো গুলির শব্দের সঙ্গে শুরু হয় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বাঙালিদের প্রথম সম্মুখযুদ্ধ। ভীতিকর সেই গোধূলিবেলায় পলায়নপর নারী-পুরুষের সমবেত চিৎকার যখন মাঠ ছাপিয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল চারপাশে, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে রেখে আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন এম এ মামুন। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে নানান কৌশলে শেষ পর্যন্ত পৌঁছেন ত্রিপুরার হরিণা ক্যাম্পে, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ঘটে সেখানে রাজনৈতিক প্রশিক্ষকের দায়িত্বলাভের মাধ্যমে।
ভারত ভাগের আগের অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে এক বিএ পরীক্ষা বর্জনকারী পিতার পুত্র এম এ মামুন গ্র্যাজুয়েশন করে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। চট্টগ্রামের দুটি স্কুলে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৫৭ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত খ্যাতিহীন মসজিদ্দা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে তাঁর সব স্বপ্ন, কীর্তি ও জীবনবোধ। মূলত ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর তিনি যখন শিক্ষকতা শুরু করেন, তখন থেকেই বোধ করি তাঁর চোখে ছিল মানুষ গড়ার স্বপ্ন। সেই লক্ষ্যে অখ্যাত স্কুলটিকে গড়ে তোলার জন্য শুরু হয় তাঁর দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা। এমনকি বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে উচ্চতর শিক্ষা এবং বিলাত থেকে ইরেজিতে ডিপ্লোমা করার জন্য দুটি বৃত্তি পেয়েও নতুন স্কুলটির ভবিষ্যৎ ভেবে ঈর্ষণীয় সেই সুযোগটি গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তাঁর প্রচণ্ড পরিশ্রম ও নিষ্ঠায় গড়ে তোলা স্কুলটির প্রথাভাঙা সংশোধনমূলক একটি অনবদ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া তাঁর সেদিনের সেই নির্মোহ সিদ্ধান্তেরই যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত করে। কঠিন নিয়মকানুন, নিবিড় পাঠদান এবং নিয়মিত ধর্ম চর্চার মধ্যে পরিচালিত অর্ধ আবাসিক স্কুলটি সে সময় হয়ে উঠেছিল পড়াশোনায় অমনোযোগী এবং ডানপিটে ছেলেদের অভিভাবকদের কাছে কাঙ্ক্ষিত এক গন্তব্য। ফলে চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও ছাত্রদের এখানে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হতো। তাঁদের অনেকেই অর্থে, বিত্তে এবং শিক্ষায় পরবর্তীকালে দেশ ও সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষে পরিণত হয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবেন, কারণ তাঁর যোগ্য অভিভাবকত্ব না পেলে এঁদের অনেকেই হয়তো আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পারতেন না। তাঁর শিক্ষানুরাগ এবং স্বপ্নের বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পরবর্তী সময়ে স্কুলসংলগ্ন জমিতে তিনি গড়ে তোলেন মেয়েদের জন্য একটি কলেজ এবং শিক্ষা কমপ্লেক্স। এই উদ্যোগের সঙ্গে তিনি যুক্ত করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যমন্ত্রী এবং শিল্পপতি এম আর সিদ্দিকীর পরিবারকে।
মসজিদ্দা স্কুলে যোগ দেওয়ার কয়েক বছর আগে তিনি রাজনীতিতে নাম লেখালেও সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬৭ সালে। তার পর থেকে টানা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পরম নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ের সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রাদেশিক পরিষদের আসনটিতে মনোনয়ন নেননি তিনি। একজন দায়িত্বপরায়ণ শিক্ষাবিদ হিসেবে এম এ মামুনকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ যে রকম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন, সৎ এবং ন্যায়নিষ্ঠ একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেও দলমত-নির্বিশেষে তাঁর কথা বিস্মৃত হবে না মানুষ। আজকালের সততাবিবর্জিত রাজনীতির যুগে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারত একটি অনন্য উদাহরণ।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ফিরে আসেন, তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি দেশের নিয়মিত প্রশাসনযন্ত্র, যোগাযোগ এবং আইনশৃঙ্খলা প্রায় বিপর্যস্ত। সীতাকুণ্ডের শিল্পাঞ্চলে ছিল পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়া পশ্চিম পাকিস্তানি মালিকানাধীন বহু শিল্প-কারখানা। সেগুলোকে রক্ষা করাও ছিল সে সময়কার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই দুরূহ কাজটির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এম এ মামুনকে নিয়োগ করা হয় সে অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রশাসক হিসেবে। কারণ, দায়িত্বটি পালনের জন্য দরকার ছিল তাঁর মতো একজন ধর্মপ্রাণ, সৎ, নির্লোভ দক্ষ প্রশাসকের। দায়িত্বটি সুষ্ঠুভাবে পালন করে তিনি প্রমাণ দিয়েছিলেন তাঁর যোগ্য নেতৃত্বের।
খুব নিভৃতে থেকে তিনি সম্প্রতি মৃত্যুবরণ করেছেন, অথচ তাঁর উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে যেতে পারেননি কোনো জাগতিক বিত্তবৈভব। তবে দেশ ও সমাজের জন্য যা রেখে যেতে পেরেছেন, তার জন্য তাঁকে আজীবন স্মরণ ও শ্রদ্ধা করবেন তাঁর কাছের ও দূরের পরিচিত ও অপরিচিত বহু বিবেকবান মানুষ।
ফারুক মঈনউদ্দীন: ব্যাংকবিষয়ক বিশ্লেষক।
fmainuddin@hotmail.com
No comments