সুস্বাস্থ্যের জন্য সুন্দর মন by তাজওয়ার তাহমীদ

The happiness of the believer
Lies in loving Allah.
জীবনকে ভালোবাসলে হতাশা, আল্লাহকে ভালোবাসলে ভরসা। জীবনের ভালোবাসায় নিত্য লেগে থাকে ঝামেলা, অশান্তি, হতাশা ও কান্তি। জীবনকে ভালোবাসায় মনের জগতে বাসা বাঁধে ‘আমি আমি (Antime’ সত্তা। প্রতিদিন কারণে অকারণে আমার আমি দখল করে নেয় মনের স্বাধীন সত্তাকে। মনকে আবৃত করে রাখে হীনম্মন্যতা, ভীরুতা, পাপকামিতা, লজ্জাহীনতা আর পরমুখাপেক্ষিতা। ফলে মনের ভেতর চলতে থাকে আত্মনিগ্রহ ও আত্মগ্লানি। মন হয়ে ওঠে অশান্ত, অস্থির। শ্রান্তি, কান্তি আর বিরক্তির আত্মপীড়নে মন হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। প্রতিক্রিয়াশীল মনে তখন ফুটে ওঠে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার করুণ প্রতিচ্ছবি। ফেল, ব্যর্থতা, হতাশার মাঝে মন হারিয়ে ফেলে তার আপন সত্তাকে। মনের মাঝে শত্রুসেনার মতো স্থায়ী ঘাঁটি গেড়ে বসে হতাশা, বিষণœতা, হীনম্মন্যতার শয়তানি দর্শন, নেতিবাচক চেতনা। নেতিবাচক চেতনার কারণে গড়ে ওঠে নেতিবাচক বিশ্বাস। তাই তার চিন্তায় আসে বিকৃতি। চিন্তা বিকৃতির প্রকাশ ঘটে তার আচার-আচরণে। সে মানুষের দোষ, খুঁত, দুর্বলতা খুঁজে বেড়ায়। হিংসুটে, ঈর্ষাকাতর, বিদ্বেষী ভাব তার মধ্যে প্রবল থাকে। সে সবাইকে শত্রু ভাবে। সবাই তার ক্ষতি করতে চায়, কেউ তাকে ভালোবাসে না, পছন্দ করে না। আবার ভাবে আমি অপরাধী, পাপী। আমার মতো খারাপ মানুষ আর নেই। অর্থাৎ সে নিজের সম্পর্কে নানারকম নেতিবাচক বিশ্লেষণ করে তার নেতিবাচক বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ফলে তার মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা, নৈরাশ্য আর আশাহীনতা। তার এই বিপথগামী মনের পথপ্রদর্শক স্বয়ং শয়তান। তাই যে মন নেতিবাচক চিন্তা করে সে মন বিষণœতায় আক্রান্ত হয়। বিষণœ মন অসত্যকে সত্য মনে করে। অবাস্তবকে বাস্তব বলে বিশ্বাস করে। এভাবে মনের মাঝে নেতিবাচক চিন্তা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

মনকে যৌক্তিক বিশ্লেষণের আওতায় রাখলে সে মন সততানির্ভর হয়। সততানির্ভর মন সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে। ইতিবাচক মন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে। বিশ্বাসই তার কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে। অর্থাৎ তার বিশ্বাস থাকে সৃষ্টিকর্তা সব সৃষ্টির মালিক। সৃষ্টিকর্তাই সব ক্ষমতার উৎস। সৃষ্টিকর্তা একক। তিনি একক শক্তির নিয়ন্ত্রণে বিশ্বকে পরিচালিত করেন। তিনি জীবজগতের প্রত্যেকের খাবার সরবরাহ করেন। আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছু তারই একক নির্দেশের অনুগামী। তাই মনকে তার সৃষ্টিকর্তার একক আনুগত্য মেনে নিতে হবে। মনকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। মনকে প্রভুর দেয়া বিধানের অনুসরণ করতে হবে। মন স্বয়ংক্রিয় কোনো বস্তু নয়। মনের প্রতি ‘আমি’ বলে কোনো সত্তা নেই। মনের কোনো স্বাধীনতা নেই। মন সৃষ্টিকর্তার হুকুমের অনুসারী সত্তা। মনের অবকাঠামো নির্মিত হয় বিধাতার বিধানের আলোকে। সেই বিধান অনুযায়ী আমাদের চিন্তা, বিশ্বাস, আবেগ আচরণের ধরন নির্ধারিত হয়। এ ধরনের বিশ্বাসী মনে কখনো হতাশা, বিষণœতা, অবসাদগ্রস্ততার স্থান নেই। বিশ্বাসী মন সব সময় আশাবাদী। বিশ্বাসী মন সত্যের অনুসারী। বিশ্বাসী মন শয়তানের বিদ্রোহী। বিশ্বাসী মন প্রতিবাদী। বিশ্বাসী মন পরপোকারী। বিশ্বাসী মন আল্লাহর প্রতিনিধি। তাই এ মন সব সময় থাকে প্রফুল্ল। আনন্দচিত্তে সে সব কাজ করে থাকে। সদা হাস্য, সদা আনন্দ এ মনে থাকে পরামানন্দ। এ মন সমাজের জন্য উপকারী। এ মন স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি। এ মনে থাকে না কোনো হিংসা, বিদ্বেষ, হীনম্মন্যতা কিংবা অপরাধপ্রবণতা। এ মনের অধিকারী মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। এ মনের মানুষ সুহৃদয়ের প্রতিনিধি। হৃদয়ের ব্যাকুলতা, অস্থিরতা, প্রতিকূলতা কিংবা প্রতিবন্ধকতার যন্ত্রণা থাকে না আদর্শবাদী মনে। এ মন প্রতিরোধ করে উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ এবং কিডনির অস্বাভাবিক সব কার্যকলাপ। ুধার খাদ্যে আনে তৃপ্তির ঢেঁকুর। পাকস্থলীর রসায়নে থাকে সুসামঞ্জস্য পাচকরস। লিভারের কাজেও থাকে সমতা। ঘুমের রাজ্যে থাকে আনন্দের জোয়ার। এক কথায় আমাদের মনোদৈহিক রাজ্যে আদর্শবাদী মন সব সময় সুস্বাস্থ্যের পরশ বুলিয়ে দেয়।

আদর্শবাদী মন তাকদিরে বিশ্বাসী বলে কোনো ধরনের মনোকষ্টের জায়গা থাকে না এ মনে। বিধাতার নিয়তি মেনে সব কাজ পরিচালনা করে এ মন। যে মন তকদিরের সঠিক অনুসারী সে মন কখনো অসুস্থ হয় না। সে মনে কখনো হতাশা, বিষণœতা স্থান পায় না। এ মন সবচেয়ে সুখী মন। এ মন সুস্থ মন। সুস্থ মনের মানুষ পীড়িত হয় কম। সুস্থ মন মানুষকে সুখী করে। আর সুখী হওয়ার জন্য চাই সুন্দর মন। সুন্দর মনই সুস্বাস্থ্য দিতে পারে।

ইসলামিক সাইকোথেরাপি ফিচার

মোবা : ০১৭১২৮১৭১৪৪

No comments

Powered by Blogger.