যুদ্ধাপরাধের সুষ্ঠু বিচারে জাতিসঙ্ঘের আহ্বান- আইনের ঊর্ধ্বে আবেগ নয়
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে অতীত অপরাধের সুষ্ঠু বিচার
নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের হিউম্যান রাইটস অফিসের দু’জন
নিরপেক্ষ মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ বলেছেন,
বাংলাদেশের
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি রায়ের
ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি। তারা বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল
সম্প্রতি সুষ্ঠু বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত না করে মাওলানা আবুল
কালাম আযাদকে তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি
ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। আরো কয়েকটি
মামলার বিচারকাজ চলছে এই ট্রাইব্যুনালে। এসব মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড
হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব বিচারের ঐতিহাসিক এবং সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডের
গুরুত্ব বিবেচনায় ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে সব আসামির সুষ্ঠু বিচার পাওয়া
অত্যন্ত জরুরি । অতীত অপরাধের বিচার করার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্লাটফরম হচ্ছে
এই ট্রাইব্যুনাল। তাই এই ট্রাইব্যুনালকে অবশ্যই সুষ্ঠু বিচারের যথাযথ
উপাদান ও বিচারের যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। সর্বোচ্চ
সাজা কেবল তখনই দেয়া যায়, যখন সুষ্ঠু বিচারের সম্ভাব্য সব রক্ষাকবচ
নিশ্চিত করা হয় কিংবা অন্তত ইন্টারন্যাশনাল কোভেনেস্ট অন সিভিল অ্যান্ড
পলিটিক্যাল রাইটসে বর্ণিত বিধিবিধানগুলো মানা হয়। কেননা বাংলাদেশ এই
আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরদাতা একটি দেশ। ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও
প্রসিকিউশন সার্ভিসের নিরপেক্ষতা এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচারকদের
স্বাধীনতার ব্যাপারে যেসব প্রশ্নের উদ্ভব ঘটেছে, সে ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘের
বিশেষজ্ঞদ্বয় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বিবাদিপক্ষের সাক্ষী ও আইনজীবীরা
বৈরী আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির একটি আবহ তৈরি হওয়ার অভিযোগ
করেছেন। যথাযথ প্রক্রিয়ার ন্যূনতম দাবি হচ্ছে আসামিরা তাদের আইনজীবীর সাথে
অবাধে কথা বলতে পারবেন। তাদের বিষয়াদি উপস্থাপনে পর্যাপ্ত সময় পাবেন এবং
তাদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য পছন্দমাফিক সাক্ষী হাজির করাতে পারবেন।
সমগ্র বিচারপ্রক্রিয়ায় বাদি-বিবাদিকে সমান সুযোগ-সুবিধাদানের নীতির
প্রতিও সম্মান জানাতে হবে। জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদ্বয় নিম্ন আদালতে
বিচারপ্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি হয়েছে কি না, আপিল আদালতে সেগুলো
সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে বলে উল্লেখ করে বলেছেন, আপিলে
মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আপিলপ্রক্রিয়াকেও অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য হতে
হবে।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম এখন দেশে-বিদেশে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিস ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল জুরিস্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এটাকে একটি বিতর্কিত আদালত হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় ট্রাইবু্যুনালের বিচারকার্যক্রম অবশ্যই স্বচ্ছ এবং প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকা বাঞ্ছনীয়। আদালতের রায় প্রদান নিয়ে বিচারকদের ভীতি ও চাপের মধ্যে কাজ করতে হলে তারা কোনোভাবেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন না। সে ধরনের পরিবেশ গত কয়েক দিনে সৃষ্টি হয়েছে বলে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে।
আমরা মনে করি, যেকোনো অপরাধের বিচার আইনের নিজস্ব গতিতে সম্পন্ন হলে এবং বিচারপ্রক্রিয়া সরকার বা অন্য কোনো শক্তিশালী পক্ষের প্রভাবমুক্ত হলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে বিচারের বিষয়টিকে আইনের আওতার বাইরে নিয়ে এটাকে আবেগ, ঘৃণা ও প্রচারণার বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল পরিবেশ হতে পারে না। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসের উদ্বেগগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। তা না হলে এই বিচারপ্রক্রিয়া যেমন প্রশ্নসাপেক্ষ থেকে যাবে, তেমনিভাবে বাংলাদেশে আইনের শাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম এখন দেশে-বিদেশে অন্যতম আলোচ্য বিষয়। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিস ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল জুরিস্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এটাকে একটি বিতর্কিত আদালত হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই অবস্থায় ট্রাইবু্যুনালের বিচারকার্যক্রম অবশ্যই স্বচ্ছ এবং প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকা বাঞ্ছনীয়। আদালতের রায় প্রদান নিয়ে বিচারকদের ভীতি ও চাপের মধ্যে কাজ করতে হলে তারা কোনোভাবেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবেন না। সে ধরনের পরিবেশ গত কয়েক দিনে সৃষ্টি হয়েছে বলে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে অনেকের মধ্যে।
আমরা মনে করি, যেকোনো অপরাধের বিচার আইনের নিজস্ব গতিতে সম্পন্ন হলে এবং বিচারপ্রক্রিয়া সরকার বা অন্য কোনো শক্তিশালী পক্ষের প্রভাবমুক্ত হলেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে বিচারের বিষয়টিকে আইনের আওতার বাইরে নিয়ে এটাকে আবেগ, ঘৃণা ও প্রচারণার বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল পরিবেশ হতে পারে না। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসের উদ্বেগগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। তা না হলে এই বিচারপ্রক্রিয়া যেমন প্রশ্নসাপেক্ষ থেকে যাবে, তেমনিভাবে বাংলাদেশে আইনের শাসনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করি।
No comments