শিশুমনে হিন্দির আগ্রাসন by তারেক মোরতাজা
‘শিশুমনে হিন্দির প্রভাব পড়ছে। বাংলার চেয়ে শিশুরা হিন্দিতে কথা বলতে
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এটা আমাদের সত্তা ও সংস্কৃতির ওপর বড় রকমের
আঘাত।’
এ ভাবেই ডোরিমন কার্টুনের সুযোগে বাংলাদেশের ঘরে
ঘরে ছড়িয়ে পড়া হিন্দির নেতিবাচক দিক তুলে ধরছিলেন মোহাম্মদপুরের
বাসিন্দা সামিয়া নূর। তিনি বলেন, এ কার্টুনটি বাংলায় অনুবাদ করে কেউ
প্রচার করতে পারে। অথবা বন্ধ করে দেয়া ভালো উপায় হতে পারে। তার মতে, এমন
একটা কার্টুন কোনোভাবেই চলতে পারে না।
অভিভাবকেরা বলছেন, হিন্দির আগ্রাসনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের শিশুরা। ডোরেমন নামে যে কার্টুনটি ঘিরে হিন্দির এ আগ্রাসন, সেখানে কেবল ভাষা নয়, মৌল বিশ্বাসেরও বেশ ভিন্নতা রয়েছে। তাই এ নিয়ে পরিবার ও শিক্ষাঙ্গন পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
শিশু শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক শারমিন হক বলেছেন, হিন্দির এই আগ্রাসন এখনই থামাতে হবে, নইলে সঙ্কট বাড়বে। অভিভাবকেরা বলছেন, বিকল্পেরও দরকার রয়েছে। তবে তারা কোনোভাবেই চান না তাদের সন্তান হিন্দিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক।
ডোরিমনের কল্পকাহিনী গড়ে উঠেছে ভবিষ্যৎ থেকে আসা একটি রোবট বিড়ালকে ঘিরে। যে বিড়ালটি নোবিতা নামের একটি ছেলেকে সাহায্য করার জন্য বিংশ শতাব্দীতে এসে হাজির হয়।
১৯৬৯ সালে সর্বপ্রথম জাপানি এই কার্টুনটি কমিকস হিসেবে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে জাপানের সংস্কৃতিকে অন্যান্য দেশের কাছে তুলে ধরার জন্য, জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডোরিমনকে দেশটির প্রথম কার্টুন দূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ দিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা চিত্র আসলেই উদ্বেগজনক। ৪ থেকে ১০ বছরের শিশুরা হিন্দিতে পুরোদস্তুর কথা বলতে পারে। এটি হয়েছে তাদের প্রিয় কার্টুন ডোরিমন দেখে। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের অন্তত ছয়টি স্কুল ঘুরে এ চিত্র মিলেছে।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী রাইসা বললো, ডোরিমন ছাড়া তার চলে না। বাসায় যতক্ষণ থাকে তার বেশির সময়কাটে ডোরিমন দেখে। তার মা এমন তথ্য উল্লেখ করে বলেন, বিকল্প না থাকায় শিশুকে কোনো একটা বিষয়ে ব্যস্ত রাখার জন্য কার্টুনের এ আগ্রাসন তিনি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
একই স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়ামের মা বললেন, এতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। হিন্দি হয়ে যাচ্ছে শিশুর দ্বিতীয় ভাষা। বাসায় তো ও হিন্দি বলেই, স্কুলেও অনেক সময় শিক্ষকদের সাথে হিন্দিতে কথা বলে। এ থেকে তার সন্তানের সঠিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে বলে তিনি উপলব্ধি করছেন।
জানা গেছে, জাপানি ভাষা থেকে হিন্দিতে ভাষান্তরিত ডোরিমন শিশুদের জন্য ভারতীয় একটি হিন্দি চ্যানেলে প্রতিদিনই দেখিয়ে থাকে। ক্যাবল কানেকশনের কল্যাণে এ কার্টুন বাংলাদেশের শহরে ও মফস্বলের শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী এবং তারও ওপরের দিকের শিশুরা খুব সাবলীলভাবেই হিন্দিতে ডোরিমন কার্টুনের গান গাইতে পারে।
লালমাটিয়ার একজন অভিভাবক লামিয়া আহমেদ বলেছেন, ‘এটা আমাদের একটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক শিশুই এখন বাসায়, বন্ধুদের সাথে এমনকি স্কুলেও হিন্দি ভাষায় কথা বলছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিশুদেরও দ্বিতীয় ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে হিন্দি।’
শিশু শিা গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন হক বলেন, ভিন্ন সংস্কৃতির এ কার্টুনের প্রতি শিশুরা যদি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ে, তবে তা সামাজিকভাবেও বিভিন্ন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে।
তাহলে অভিভাবকেরা কেন তাদের সন্তানদের এ কার্টুন দেখতে দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে ড. শারমিন বলেন, অভিভাবকেরাও অনেক সময়ই চান, শিশুরা যেন কিছু একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক। তাই তারা এতে বাধা দিচ্ছেন না।
তবে এ সমস্যার একটি বড় কারণ হিসেবে অভিভাবকেরা বলছিলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে শিশুতোষ অনুষ্ঠানের স্বল্পতার কথা।
দেশে বর্তমানে সরকারি বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থাকার পরেও শিশুতোষ অনুষ্ঠানের এই স্বল্পতা কেন? এমন প্রশ্নে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, ‘কেউ কেউ আগ্রহী। তবে এ েেত্র দ নির্মাতার অভাব এবং বাজেট স্বল্পতার কারণে অনেকেই শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মাণের ঝুঁকি নিতে চান না।’
কিন্তু অনেক অভিভাবক বলছিলেন, কার্টুনটি বাংলায় বা ইংরেজিতে ভাষান্তরিত করে বাংলাদেশে প্রচার করা হোক। তবে সেটিও বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর জন্য লাভজনক হবে না বলেই ধারণা করছেন শামীম শাহেদ।
তবে বাংলাদেশে দিগন্ত, বাংলাভিশন, বিটিভিসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল শিশুদের জন্য কিছু অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার করে থাকে। অভিভাবকেরা বলেছেন, এ সব অনুষ্ঠানের বেশির ভাগই শিশুদের আকৃষ্ট করতে পারে না।
ডোরিমন কেবল ভাষা শিক্ষাই দিচ্ছে না, এখন শিশুদের মধ্যে ডোরিমন কার্টুনের বিভিন্ন উপকরণও আকৃষ্ট করছে। গুলশানের সিটি করপোরেশন বিপণিবিতানের মা-মনি স্টোরের ব্যবস্থাপক বলেন, অনেক অভিভাবক এসে ডোরিমন ব্যাগ চান, কেউ ডোরিমন পুতুলের সন্ধান করেন। আমরা সেটি রাখি এবং এর বিক্রি যথেষ্ট ভালো।
অভিভাবকেরা বলছেন, হিন্দির আগ্রাসনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের শিশুরা। ডোরেমন নামে যে কার্টুনটি ঘিরে হিন্দির এ আগ্রাসন, সেখানে কেবল ভাষা নয়, মৌল বিশ্বাসেরও বেশ ভিন্নতা রয়েছে। তাই এ নিয়ে পরিবার ও শিক্ষাঙ্গন পর্যায়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
শিশু শিক্ষা গবেষক অধ্যাপক শারমিন হক বলেছেন, হিন্দির এই আগ্রাসন এখনই থামাতে হবে, নইলে সঙ্কট বাড়বে। অভিভাবকেরা বলছেন, বিকল্পেরও দরকার রয়েছে। তবে তারা কোনোভাবেই চান না তাদের সন্তান হিন্দিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক।
ডোরিমনের কল্পকাহিনী গড়ে উঠেছে ভবিষ্যৎ থেকে আসা একটি রোবট বিড়ালকে ঘিরে। যে বিড়ালটি নোবিতা নামের একটি ছেলেকে সাহায্য করার জন্য বিংশ শতাব্দীতে এসে হাজির হয়।
১৯৬৯ সালে সর্বপ্রথম জাপানি এই কার্টুনটি কমিকস হিসেবে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে জাপানের সংস্কৃতিকে অন্যান্য দেশের কাছে তুলে ধরার জন্য, জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডোরিমনকে দেশটির প্রথম কার্টুন দূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এ দিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা চিত্র আসলেই উদ্বেগজনক। ৪ থেকে ১০ বছরের শিশুরা হিন্দিতে পুরোদস্তুর কথা বলতে পারে। এটি হয়েছে তাদের প্রিয় কার্টুন ডোরিমন দেখে। বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের অন্তত ছয়টি স্কুল ঘুরে এ চিত্র মিলেছে।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের শিক্ষার্থী রাইসা বললো, ডোরিমন ছাড়া তার চলে না। বাসায় যতক্ষণ থাকে তার বেশির সময়কাটে ডোরিমন দেখে। তার মা এমন তথ্য উল্লেখ করে বলেন, বিকল্প না থাকায় শিশুকে কোনো একটা বিষয়ে ব্যস্ত রাখার জন্য কার্টুনের এ আগ্রাসন তিনি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
একই স্কুলের শিক্ষার্থী সিয়ামের মা বললেন, এতে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। হিন্দি হয়ে যাচ্ছে শিশুর দ্বিতীয় ভাষা। বাসায় তো ও হিন্দি বলেই, স্কুলেও অনেক সময় শিক্ষকদের সাথে হিন্দিতে কথা বলে। এ থেকে তার সন্তানের সঠিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে বলে তিনি উপলব্ধি করছেন।
জানা গেছে, জাপানি ভাষা থেকে হিন্দিতে ভাষান্তরিত ডোরিমন শিশুদের জন্য ভারতীয় একটি হিন্দি চ্যানেলে প্রতিদিনই দেখিয়ে থাকে। ক্যাবল কানেকশনের কল্যাণে এ কার্টুন বাংলাদেশের শহরে ও মফস্বলের শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়।
বাংলাদেশের ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী এবং তারও ওপরের দিকের শিশুরা খুব সাবলীলভাবেই হিন্দিতে ডোরিমন কার্টুনের গান গাইতে পারে।
লালমাটিয়ার একজন অভিভাবক লামিয়া আহমেদ বলেছেন, ‘এটা আমাদের একটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক শিশুই এখন বাসায়, বন্ধুদের সাথে এমনকি স্কুলেও হিন্দি ভাষায় কথা বলছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিশুদেরও দ্বিতীয় ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে হিন্দি।’
শিশু শিা গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন হক বলেন, ভিন্ন সংস্কৃতির এ কার্টুনের প্রতি শিশুরা যদি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ে, তবে তা সামাজিকভাবেও বিভিন্ন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে।
তাহলে অভিভাবকেরা কেন তাদের সন্তানদের এ কার্টুন দেখতে দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নে ড. শারমিন বলেন, অভিভাবকেরাও অনেক সময়ই চান, শিশুরা যেন কিছু একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাক। তাই তারা এতে বাধা দিচ্ছেন না।
তবে এ সমস্যার একটি বড় কারণ হিসেবে অভিভাবকেরা বলছিলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে শিশুতোষ অনুষ্ঠানের স্বল্পতার কথা।
দেশে বর্তমানে সরকারি বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনেক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থাকার পরেও শিশুতোষ অনুষ্ঠানের এই স্বল্পতা কেন? এমন প্রশ্নে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, ‘কেউ কেউ আগ্রহী। তবে এ েেত্র দ নির্মাতার অভাব এবং বাজেট স্বল্পতার কারণে অনেকেই শিশুতোষ অনুষ্ঠান নির্মাণের ঝুঁকি নিতে চান না।’
কিন্তু অনেক অভিভাবক বলছিলেন, কার্টুনটি বাংলায় বা ইংরেজিতে ভাষান্তরিত করে বাংলাদেশে প্রচার করা হোক। তবে সেটিও বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর জন্য লাভজনক হবে না বলেই ধারণা করছেন শামীম শাহেদ।
তবে বাংলাদেশে দিগন্ত, বাংলাভিশন, বিটিভিসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল শিশুদের জন্য কিছু অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার করে থাকে। অভিভাবকেরা বলেছেন, এ সব অনুষ্ঠানের বেশির ভাগই শিশুদের আকৃষ্ট করতে পারে না।
ডোরিমন কেবল ভাষা শিক্ষাই দিচ্ছে না, এখন শিশুদের মধ্যে ডোরিমন কার্টুনের বিভিন্ন উপকরণও আকৃষ্ট করছে। গুলশানের সিটি করপোরেশন বিপণিবিতানের মা-মনি স্টোরের ব্যবস্থাপক বলেন, অনেক অভিভাবক এসে ডোরিমন ব্যাগ চান, কেউ ডোরিমন পুতুলের সন্ধান করেন। আমরা সেটি রাখি এবং এর বিক্রি যথেষ্ট ভালো।
No comments