ইকোনমিস্ট সম্পাদকের নোট by সাজেদুল হক
ব্যাখ্যা দিয়েছেন দ্য ইকোনমিস্ট পত্রিকার সম্পাদক। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে বৃটেনের পত্রিকাটি। গতকাল পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে ‘ট্রাইং ওয়্যার ক্রাইমস ইন বাংলাদেশ, দ্য ট্রায়াল অব দ্য বার্থ অব এ নেশন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। পত্রিকাটির ১৫ই ডিসেম্বরের মুদ্রিত সংস্করণেও সংবাদটি প্রকাশিত হবে।
সংবাদটি প্রকাশের ব্যাপারে সম্পাদকের নোট শিরোনামে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘এ প্রতিবেদনের বেশির ভাগ তথ্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালেতের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নিজামুল হক এবং ব্রাসেলস ভিত্তিক আইনজীবী আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যকার ১৭ ঘণ্টার বেশি সময়ের টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড এবং ২৩০টির বেশি ই-মেইল থেকে নেয়া হয়েছে। আমরা সাধারণত গোপন ই-মেইল এবং কথোপকথন প্রকাশ করি না। তবে এক্ষেত্রে জোর দাবি রয়েছে জনস্বার্থের। অনেক জীবন ঝুঁকির মুখে। একই সঙ্গে আদালতের এবং অতীতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতায় আসার সুনামও ঝুঁকির মুখে। আলোচিত তথ্যাদির সত্যতা প্রমাণ করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখেছি। এ কাজ করতে গিয়ে আমরা বিচারপতি নিজামুল এবং আইনজ্ঞ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা উভয়েই নিশ্চিত করেছেন যে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথাবার্তা বলেছেন। তবে বিচারপতি নিজামুল ট্রাইব্যুনালের বিচারক থাকা অবস্থায় গত ৬ই ডিসেম্বর দি ইকোনমিস্টের দুই সদস্যকে আদালতে হাজির হয়ে আমরা কিভাবে এ ই-মেইল এবং কথোপকথনের রেকর্ড পেলাম সেটা ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর ফলে ওই দুই ব্যক্তির মধ্যে যোগাযোগের পরিসমাপ্তি ঘটে। সাধারণত আমরা এসব নথির সূত্র প্রকাশ করতাম। কিন্তু এটা করা হলে তাদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হবে। দু’জনের কেউ একজন আমাদের সূত্রকে হুমকি দিতে পারেন এটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত নই, তবে এ মামলাকে ঘিরে তারা এক ধরনের সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। এটাই আমাদের আশঙ্কা। গত ৫ই নভেম্বর বাদী থেকে বিবাদীর পক্ষে যাওয়া এক সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের দরজা থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। বিবাদী পক্ষ দাবি করেছে এজন্য বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগই দায়ী। সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে ওই সাক্ষীকে তারপর থেকে আর পাওয়া যায়নি। আমরা এ ধরনের নথির জন্য কোন আহ্বান বা আবেদন করিনি। এজন্য আমরা কোন অর্থও দিইনি বা এটি প্রকাশের জন্য কোন প্রতিশ্রুতিও দিইনি। আমাদের এমন মনে করার কোন কারণ নেই যে, কথোপকথনের যে রেকর্ড, ই-মেইল আমরা পেয়েছি সেটি জাল বা অতিরঞ্জিত। বিচারে অভিযুক্তরা দোষী না নির্দোষ সেটা দি ইকোনমিস্ট জানে না। ইকোনমিস্ট কেবল মনে করে সাময়িকভাবে করা অনুমানে তাদের নির্দোষ হিসেবে গণ্য করার এবং ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’
হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনালের সর্বশেষ আদেশের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে দৈনিক মানবজমিন ইকোনমিস্টের ওই সংবাদের অনুবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকছে। গত ৬ই ডিসেম্বর ইকোনমিস্টের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোর প্রধান অ্যাডাম রবার্ট ও চীনা সংস্করণের সম্পাদক রব গিফোর্ডকে শোকজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের সে সময়কার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হকের ই-মেইল এবং স্কাইপ একাউন্ট হ্যাক করে প্রাপ্ত তথ্য গোপন রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই দিন ট্রাইব্যুনালের দেয়া আদেশে বলা হয়েছিল, এ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান এবং অন্য দু’সদস্য বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। এ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর যখন চেয়ারম্যান এবং সদস্য নিয়োগ দেয়া হয় তখন উন্মুক্ত আদালতে এটা বলা হয়েছে যে, ট্রাইব্যুনাল আইনটি তাদের জন্য নতুন। এটা বোঝার জন্য অন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, আইন পর্যবেক্ষণ, উভয়পক্ষের আইনজীবীদের এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের অগ্রগতি সম্পর্কে মাঝে মাঝে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তার সহযোগিতা নিয়েছেন। বিচার কার্যক্রম চলাকালেও ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার সহযোগিতা নিয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে তারা স্কাইপের মাধ্যমে আলোচনা করেছেন। দু’ অথবা তিন দিন আগে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান দেখতে পান তার ই-মেইল এবং স্কাইপ একাউন্ট হ্যাক করা হয়েছে। বুধবার (৫ই ডিসেম্বর) লন্ডন ভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট থেকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানকে ফোন করা হয়। ফোন করে বলা হয়, তিনি ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে যে আলোচনা করেছেন তা ইকোনমিস্টের কাছে আছে। পরে ট্রাইব্যুনাল এ ব্যাপারে তথ্য গোপন রাখার নির্দেশনার পাশাপাশি এ-ও বলেছিল, এ আদেশ না মানা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রাইব্যুনালের এ আদেশের পর গত ৯ই ডিসেম্বর থেকে ঢাকার দৈনিক আমার দেশ ধারাবাহিকভাবে সে স্কাইপ সংলাপ প্রকাশ করে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি মো. নিজামুল হক।
No comments