৭১ টিভিকে মাহমুদুর রহমান- ‘আমি এখন বসে আছি পুলিশের জন্য’ by আদিত্য আরাফাত
বিচারপতির স্কাইপে সংলাপ প্রকাশের অভিযোগে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রকাশক হাসমত আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গত বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান মামলাটি দায়ের করেন।এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর-এর ‘একাত্তর জার্নাল’ অনুষ্ঠানের (সরাসরি) একপর্যায়ে মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে ফোনে যোগাযোগ করা হয়।
অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান জানান, স্কাইপে কথোপকথন প্রকাশে কোনো আইন ভাঙা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘ইকোনমিস্ট প্রশ্ন করেছিলো বিচারপতি নাসিমকে তার অনৈতিক কার্যকলাপের জন্যে। এবং নাসিম সাহেব তখন তার দেওয়া রুলিংয়ে স্বীকার করেছেন যে তিনি অনৈতিক কাজ করেছেন।’’
সরাসরি প্রোগ্রামে ক্ষোভ ও উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন মাহমুদুর রহমান। উপস্থাপিকা সামিয়া জামানও কম যান না। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য কথোপকথনটি হুবহু তুলে ধরা হলো...
উপস্থাপিকা: আমাদের আজকেতো একটি প্রধান আলোচনার বিষয় এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সংবাদটি আসার পর থেকে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান আপনার বিরুদ্ধে এবং পত্রিকার প্রকাশকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। এখানে…
মাহমুদুর রহমান: এটাতো সরকার করিয়েছে। যার নাম বললেন, তিনি করেননি, কাজেই ওভাবে কথাটা বলুন। কথা টুইস্ট করবেন না। (উচ্চকণ্ঠে)
উপস্থাপিকা : হ্যাঁ, আমি—
মাহমুদুর রহমান: এটা মামলার জন্যে সরকার গিয়েছিলো...
উপস্থাপিকা: আমাদের কাছে যেই...
মাহমুদুর রহমান: প্রথমে গিয়েছিলো শামসুদ্দিন মানিকের কাছে। যেই শামসুদ্দিন মানিকের বিরুদ্ধে আমি মানি লন্ডারিং এর অভিযোগে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানিয়েছি। এবং সেই আবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন। আমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে যে এটা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই বিচারপতি আমার মামলা কি শুনতে পারেন? পারেন না। তো বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কোন পাতালে চলে গেছে এটার আরেকটা প্রমাণ শামসুদ্দিন চৌধুরি মানিকের আমার মামলা শোনা। এটা বোধহয় আফ্রিকার জঙ্গলের কোনো দেশে এটা হতে পারত না। বিচারের নামে বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে।
উপস্থাপিকা: আমি, আমি সাহিদুর রহমানের নাম বললাম কারণ সেই তথ্যই আমাদের হাতে আছে; সরকার করিয়েছে কি না--
মাহমুদুর রহমান: তা আপনাদের কাছে তথ্য...
উপস্থাপিকা: (উচ্চকণ্ঠে)এটা আপনিই বলবেন, এটা আপনারই বলার কথা এবং আপনি বলেছেন।
মাহমুদুর রহমান: আপনি টেলিভিশন চালান, আপনি সকল তথ্য জানেন না? আপনিতো সকল তথ্য জানেন। তো আপনি সাহিদুর রহমানের নাম বলছেন কেনো? সাহিদুর রহমান এবং এই রুল দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা ছয়টার সময়। আর সাতটার সময় সিএমএম কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোন রাজ্যে বাস করছি? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা দেশটাকে ? বিচারের নামে কী করছেন আপনারা ?
উপস্থাপিকা: আপনিতো, আপনিতো এখনও মুক্ত আছেন...
মাহমুদুর রহমান: মুক্ত আছি? এটাকে মুক্ত থাকা বলে না।
উপস্থাপিকা: এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন...
মাহমুদুর রহমান: আমি এখন বসে আছি পুলিশের জন্যে। হোয়াট ডু ইউ মিন বাই মুক্ত থাকা? কীসের মুক্ত? বাংলাদেশে কে মুক্ত আছে? বাংলাদেশ একটা ৫৪ হাজার বর্গমাইলের কারাগার। ১৬ কোটি মানুষ এখানে জেলে আছে। এখানে একটা মানুষের, একটা মানুষ, একটা ব্যক্তি এবং একটা পরিবারের রাজত্বে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।
উপস্থাপিকা: এখানে...
মাহমুদুর রহমান: বিচার, পুলিশ...সবকিছু তার আন্ডারে।
উপস্থাপিকা: দ্বিতীয় যে অভিযোগটা আনা হয়েছে যে তথ্য প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে, সংবাদপত্রের সম্পাদক হিসেবে আপনার সোর্স প্রকাশের বাধ্যবাধকতা নেই কিন্তু কোনো আইন ভেঙে আপনারা এই তথ্য সংগ্রহ করেছেন কিনা, এই প্রশ্নটা বারেবারে উঠছে। আপনি কি আমাদের দর্শকদের জন্য বলবেন যে আপনার এই ১৭ ঘণ্টা...
মাহমুদুর রহমান: এখানে কোনো আইন ভাঙা হয়নি। আপনারা হয়তো ভুলে গেছেন যে এটা প্রথম...এটা ইকোনমিস্টে উঠেছে। ইকোনমিস্ট প্রশ্ন করেছিলো বিচারপতি নাসিমকে তার অনৈতিক কার্যকলাপের জন্যে। এবং নাসিম সাহেব তখন তার রুলিং এ স্বীকার করেছেন যে তিনি অনৈতিক কাজ করেছেন। এবং তিনি কথা বলেছেন, যেটা কোনো বিচারপতি করতে পারেন না। এবং করার পরে তিনি রুল ইস্যু করেছেন, এটা ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে। এবং রুলিং এ তিনি বলেছেন যে এই হ্যাকিং এর দায় দায়িত্ব ইকোনমিস্টের। এবং সেটার দায়িত্ব এখন তারা আমার দেশের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। এটাই অনৈতিক...
উপস্থাপিকা: ইকোনমিস্ট, ইকোনমিস্ট তো পুরোটা...
মাহমুদুর রহমান: এখানেই আইন ভাঙা হয়েছে।
উপস্থাপিকা: ইকোনমিস্টতো ছাপায়নি, আপনি আমাদের দেশে ছাপিয়েছেন।
মাহমুদুর রহমান: নো নো নো ছাপিয়েছে। আপনি কী পড়েছেন?
উপস্থাপিকা: আপনার, আপনি কি ইকোনমিস্টের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন?
মাহমুদুর রহমান: আপনি কি অনলাইন পড়েছেন? গতকাল রাতের অনলাইন দেখেছেন ইকোনমিস্ট আজকে?
উপস্থাপিকা : হ্যাঁ, অনলাইনে দেখেছি।
মাহমুদুর রহমান: সম্পূর্ণ ছাপা হয়েছে। আপনি মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন কেনো যে ইকোনমিস্ট ছাপায়নি।
উপস্থাপিকা : না, সেটাতো ঐ ঘটনার পরে, ব্লগে।
মাহমুদুর রহমান: তো আপনি এভাবে বিভ্রান্ত করছেন কেনো? আপনার দর্শকদের বিভ্রান্ত করছেন কেনো?
উপস্থাপিকা: না, দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে চাইনা বলেই আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলছি।
মাহমুদুর রহমান: সেটাইতো, বিভ্রান্ত করবেন না। ইকোনমিস্ট ছাপিয়েছে। ইকোনমিস্ট তার মত করে ছাপিয়েছে। ইকোনমিস্ট তাদের মন্তব্য দিয়ে ছাপিয়েছে। আমরা কোনো মন্তব্য দেই নি, আমরা শুধুমাত্র তথ্যটা জনগণের অধিকার আছে, জনস্বার্থে আমরা প্রকাশ করেছি। এখানে কোনোরকম আইন ভাঙা হয়নি। সরকার যেটা করছে, গায়ের জোরে করছে। বাকশালী ফ্যাসিবাদী কায়দায় করছে।
উপস্থাপিকা: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগ দেওয়ার জন্য।
No comments