মালদ্বীপে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ by মোহাম্মদ নাশিদ
মালদ্বীপ এখন তীক্ষè ছুরির ফলার প্রান্তে অবস্থান করছে। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- ও নির্যাতনসহ ত্রিশ বছরব্যাপী মানবাধিকার দলনের ভয়াবহ একনায়কতান্ত্রিক শাসনের ধ্বংসাবশেষের ওপর কষ্টার্জিত উদার গণতন্ত্রের যে ভিত রচিত হয়েছিল, তা আজ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পরিণতিতে প্রেসিডেন্ট গাইয়ুমের শাসনের অবসান হয়, যে নির্বাচনে আমি বিজয়ী হয়েছিলাম। কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, বহির্বিশ্ব পরিষ্কারভাবেই অনুধাবন করেছে গাইয়ুম, তার মিত্ররা এবং তার সমর্থকবৃন্দ নেপথ্যে সক্রিয় রয়েছেন। এরা তারাই, যারা গত বছরের শেষদিকে ডিসেম্বর জোট নামে একটি জোট গঠন করে ইসলামী চরমপন্থীদের নিয়ে যারা আমার সরকারকে ইহুদী ও খ্রিস্টান-নিয়ন্ত্রিত সরকার বলে অভিযুক্ত করেছিল এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় উস্কানি দিয়েছিল। এরাই তারা, যারা মালদ্বীপের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত ফেব্রুয়ারি বিপর্যয়ের নাটেরগুরু। এবং এরাই তারা, যারা দেশের বর্তমান প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করছে; একইভাবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্ষমতার এই পর্যায় থেকে তারা ধীরে ধীরে আমার দেশের গণতান্ত্রিক জীবনের স্বাভাবিক কাঠামোকে তছনছ করে দিচ্ছে।
এতদ্ব্যতীত, কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল এ্যাকশন গ্রুপ (ঈসধম) গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মালদ্বীপ পরিস্থিতি নিয়ে কমনওয়েলথে আলোচনার বিষয়টি কর্মপত্র থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কানাডা, জ্যামাইকা, সিয়েরা লিয়ন, তানজানিয়া, ত্রিনিদাদ এ্যান্ড টোবাগো এবং ভানুয়াতুর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাকশন গ্রুপের সামনে বিষয়টি নামেমাত্র গুরুত্ব পেতে পারে।
মালদ্বীপের গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পুলিশের বর্বরতার শিকার হয়েছে; তাদের গ্রেফতার এবং কারাবন্দী করা হয়েছে। তাদের অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে কিংবা সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ ও সেগুলোর বিকাশের পথ রুদ্ধ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। বাক-স্বাধীনতা কঠোরভাবে খর্ব করা হচ্ছে। জনগণ বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্যদের ষড়যন্ত্রকারী বলার জন্য এখন তারা গ্রেফতার হতে পারে। আর সরকারের স্বাধীন ও সেবামূলক গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগেই নিজেদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের নিয়োগ করা হচ্ছে।
তাছাড়া জনগণের মধ্যে মুক্তির আকাক্সক্ষা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের নাটেরগুরু যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ঐসময় সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের গায়ে নখের আঁচড়ও পড়বে না। এই অভ্যুত্থান বিষয়ে জাতীয় তদন্ত কমিশন হাস্যকর একপেশে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে, যে কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন গাইয়ুমের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এতদ্ব্যতীত, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোটাদাগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব পরিকল্পিত ঘটনা ঘটেছিল, তার সবটাই লিপিবদ্ধ করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইট; কিন্তু তারা একজনও পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা সরকারী কোনো প্রতিনিধিকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। উপরন্তু, সরকার তাদের অনেককেই পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে।
সরকার বলেছে, এসব অপরাধে দোষীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কোনো কিছুই করা হবে না। অন্যদিকে, আমাকেসহ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী গণতন্ত্রকামী অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও নির্লজ্জভাবে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমার দল মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক সংসদ সদস্যকে সাজানো বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং তাদের আসন কেড়ে নেয়া হয়েছে। অনেকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার অপেক্ষায় রয়েছেন। সরকার এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছে যে, আমি এবং আমার সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের অতি সত্বর বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো শপথ করে বলেছেন যে, বাকি জীবনটা আমাকে কারান্তরালেই কাটাতে হবে।
বিগত নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের পাশাপাশি তাদের আরও লক্ষ্য হচ্ছে আগামী বছরের নির্বাচনে আমি যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারি সে ব্যবস্থা করা। গাইয়ুম ও তার মিত্ররা একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারিয়ে (স্বচ্ছ নির্বাচন হতে দিয়ে) যে ভুল করেছিল, দ্বিতীয়বার তারা তেমন ভুল করবে না।
কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন গ্রুপকে যদি মালদ্বীপ প্রসঙ্গ তাদের কর্মপত্র থেকে বাদ দিতে হয়, তাহলে মানবাধিকার দলনের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং দেশে অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচনের সুযোগ চিরকালের জন্য তিরোহিত হয়ে যাবে। মালদ্বীপ আবারও একটি পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হবে; এবং আমাদের সযতœলালিত গণতন্ত্র শুধু ইতিহাস বইয়ের পাদটীকা হিসেবেই রয়ে যাবেÑ যে গণতন্ত্র নিয়ে মাত্র একবার পরীক্ষার সুযোগ এসেছিল, কিন্তু তা বিফল হয়।
সুতরাং কমনওয়েলথ অ্যাকশন গ্রুপের প্রতি আমার জোরালো সুপারিশ হচ্ছে যতদিন পর্যন্ত না আমার দেশে পরিচালিত সকল সহিংসতার প্রতিবিধান হয়, নির্যাতনের শিকার সকল মানুষ প্রতিকার পায় এবং নতুন অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, ততদিন পর্যন্ত দেশটির ওপর সতর্ক পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।
দি গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ : মুস্তাফা মাসুদ
এতদ্ব্যতীত, কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল এ্যাকশন গ্রুপ (ঈসধম) গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মালদ্বীপ পরিস্থিতি নিয়ে কমনওয়েলথে আলোচনার বিষয়টি কর্মপত্র থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, কানাডা, জ্যামাইকা, সিয়েরা লিয়ন, তানজানিয়া, ত্রিনিদাদ এ্যান্ড টোবাগো এবং ভানুয়াতুর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাকশন গ্রুপের সামনে বিষয়টি নামেমাত্র গুরুত্ব পেতে পারে।
মালদ্বীপের গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পুলিশের বর্বরতার শিকার হয়েছে; তাদের গ্রেফতার এবং কারাবন্দী করা হয়েছে। তাদের অনেককে নির্যাতন করা হয়েছে কিংবা সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ ও সেগুলোর বিকাশের পথ রুদ্ধ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। বাক-স্বাধীনতা কঠোরভাবে খর্ব করা হচ্ছে। জনগণ বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্যদের ষড়যন্ত্রকারী বলার জন্য এখন তারা গ্রেফতার হতে পারে। আর সরকারের স্বাধীন ও সেবামূলক গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগেই নিজেদের বন্ধু এবং আত্মীয়দের নিয়োগ করা হচ্ছে।
তাছাড়া জনগণের মধ্যে মুক্তির আকাক্সক্ষা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে, ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের নাটেরগুরু যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ঐসময় সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের গায়ে নখের আঁচড়ও পড়বে না। এই অভ্যুত্থান বিষয়ে জাতীয় তদন্ত কমিশন হাস্যকর একপেশে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে, যে কমিশনের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন গাইয়ুমের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এতদ্ব্যতীত, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোটাদাগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব পরিকল্পিত ঘটনা ঘটেছিল, তার সবটাই লিপিবদ্ধ করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইট; কিন্তু তারা একজনও পুলিশ কর্মকর্তা কিংবা সরকারী কোনো প্রতিনিধিকে দোষী সাব্যস্ত করেনি। উপরন্তু, সরকার তাদের অনেককেই পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে।
সরকার বলেছে, এসব অপরাধে দোষীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কোনো কিছুই করা হবে না। অন্যদিকে, আমাকেসহ ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী গণতন্ত্রকামী অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও নির্লজ্জভাবে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমার দল মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক সংসদ সদস্যকে সাজানো বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে এবং তাদের আসন কেড়ে নেয়া হয়েছে। অনেকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার অপেক্ষায় রয়েছেন। সরকার এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছে যে, আমি এবং আমার সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের অতি সত্বর বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে; স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো শপথ করে বলেছেন যে, বাকি জীবনটা আমাকে কারান্তরালেই কাটাতে হবে।
বিগত নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের পাশাপাশি তাদের আরও লক্ষ্য হচ্ছে আগামী বছরের নির্বাচনে আমি যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারি সে ব্যবস্থা করা। গাইয়ুম ও তার মিত্ররা একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারিয়ে (স্বচ্ছ নির্বাচন হতে দিয়ে) যে ভুল করেছিল, দ্বিতীয়বার তারা তেমন ভুল করবে না।
কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল অ্যাকশন গ্রুপকে যদি মালদ্বীপ প্রসঙ্গ তাদের কর্মপত্র থেকে বাদ দিতে হয়, তাহলে মানবাধিকার দলনের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং দেশে অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচনের সুযোগ চিরকালের জন্য তিরোহিত হয়ে যাবে। মালদ্বীপ আবারও একটি পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হবে; এবং আমাদের সযতœলালিত গণতন্ত্র শুধু ইতিহাস বইয়ের পাদটীকা হিসেবেই রয়ে যাবেÑ যে গণতন্ত্র নিয়ে মাত্র একবার পরীক্ষার সুযোগ এসেছিল, কিন্তু তা বিফল হয়।
সুতরাং কমনওয়েলথ অ্যাকশন গ্রুপের প্রতি আমার জোরালো সুপারিশ হচ্ছে যতদিন পর্যন্ত না আমার দেশে পরিচালিত সকল সহিংসতার প্রতিবিধান হয়, নির্যাতনের শিকার সকল মানুষ প্রতিকার পায় এবং নতুন অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়, ততদিন পর্যন্ত দেশটির ওপর সতর্ক পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।
দি গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ : মুস্তাফা মাসুদ
No comments