ফুলেল সংবর্ধনায় সিক্ত হয়ে খালেদা জিয়া উত্তরাঞ্চলে by মোশাররফ বাবলু
পথে পথে ফুলেল সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গতকাল শনিবার উত্তরাঞ্চল সফর শুরু করেছেন। আজ রবিবার বিকেল ৪টায় দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-ই শহীদ ময়দানে (বড় মাঠ) ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া।
এই জনসভাকে কেন্দ্র করে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। জনসভা সফল করতে উত্তরাঞ্চলকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য গতকাল দলের নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতার ঢল নামে। পথে পথে তাঁকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রাস্তার দুই পাশে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড বহন করে হাজার হাজার নেতা-কর্মী বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় খালেদা জিয়াও হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু করে বগুড়ার সার্কিট হাউস পর্যন্ত তিন শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়।
আজ সকালে বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। দিনাজপুরে আগে থেকে অবস্থান করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিকেল ৪টায় দিনাজপুরের গোর-ই শহীদ ময়দানে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়াসহ জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় গুলশানের বাসভবন থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। গাড়িবহর উত্তরা হাউজ বিলডিং মোড়ে পৌঁছালে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী স্লোগানে স্লোগানে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া চলন্ত গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এরপর টঙ্গী হয়ে গাড়িবহর গাজিপুর চৌরাস্তায় পৌঁছার পর বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এরই মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীদের সহযোগিতায় জনতার ভিড় ঠেলে গাড়ি সামনে এগিয়ে চলে। চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ী, মৌচাক, সখিপুর, কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর হয়ে গাড়িবহর এলেঙ্গা পৌঁছার পর আবার দলীয় নেতা-কর্মীদের জটলার মুখে পড়ে তাঁর গাড়িবহর। প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য চারদিকে থেকে ঘিরে ধরেন তাঁরা। কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানান।
বিরোধীদলীয় নেতার আগমন উপলক্ষে যমুনা সেতুর দুই তীরে ব্যাপক শোডাউন করেন বিএনপি, জামায়াত ও ১৮ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে স্লোগান দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। জামায়াত নেতা-কর্মীরা তাঁদের কারাবন্দি নেতাদের ছবি প্রদর্শন করে তাঁদের মুক্তির দাবি জানান। এরপর সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় হয়ে গাড়িবহর হাটিকুমরুল পৌঁছালে হাজার হাজার নেতা-কর্মী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। এরপর রায়গঞ্জ হয়ে বগুড়ার চান্দাইকোনা, শেরপুর, শাহজাহানপুর, বনানী সাতমাথা দিয়ে সরাসরি সার্কিট হাউসে আসে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। সাতমাথা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। বিশেষ করে বিভিন্ন বয়সের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী হাতে ধানের শীষ বহন করে নেচে-গেয়ে খালেদা জিয়ার বগুড়ায় আগমনকে স্বাগত জানান। এ সময় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াসহ জোট নেতাদের অভ্যর্থনা জানান।
গতকাল রাতে বগুরা সার্কিট হাউসে পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও ডিনার সেরে তিনি স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাতে খালেদা জিয়াসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সার্কিট হাউসেই অবস্থান করেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী। এদিকে পুরো রাস্তায় দেখা গেছে আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানা রকম প্ল্যাকার্ড।
ব্যাপক প্রস্তুতি : আজ রবিবার দিনাজপুরে বড় মাঠে বিএনপির জনসভা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা থেকে যানবাহন ভাড়া করে আসার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো ৩০০টি বাস ও ট্রাক, ৫০০টি মাইক্রোবাস, ৫০টি পিকআপ, পাঁচ হাজার মোটরসাইকেল ভাড়া করেছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর আলম এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহেদুল্লাহ আবু নূর চৌধুরী জানান, জনসভায় ঠাকুরগাঁও থেকে ৪৫ হাজার নেতা-কর্মী যাতে অংশ নিতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে যাতে নেতা-কর্মীরা আসতে পারেন সে জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কাজল জানান, পঞ্চগড় জেলা থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মী যেন দিনাজপুরের জনসভায় উপস্থিত হতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আ. জব্বার জানান, রবিবার দিনাজপুরের জনসভার জন্য সব বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস ভাড়া হয়ে গেছে। এ কারণে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-রংপুরসহ স্থানীয় রুটগুলোতে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত বাস নাও থাকতে পারে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, জনসভায় কমপক্ষে ১০ লাখ লোক অংশ নেবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ দিনাজপুরের জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন জেলা সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু। সভা পরিচালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী। দিনাজপুর সফরকালে খালেদা জিয়া তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করবেন বলেও দলের একটি সূত্র জানায়। এ দিন রাতেই খালেদা জিয়ার ঢাকার পথে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
'বাধার পাঁয়তারা' : দিনাজপুর অভিমুখে বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনরা বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
রিজভী বলেন, টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে নির্মিত তোরণ ভেঙে ফেলা হয়েছে, ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে এভাবে আওয়ামী লীগের বাধা দেওয়ার মানসিকতা প্রমাণ করে, তারা গণতন্ত্রের রীতি-নীতির তোয়াক্কা করে না। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে ব্যাপক পুলিশের অবস্থানের সমালোচনাও করেন রিজভী। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ছিল নয়াপল্টনে। তবে পুলিশের বাধার কারণে কমলাপুর স্টেশনের কাছ থেকে ওই মিছিল শুরু হবে বলে জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুল লতিফ জনি, আবদুস সালাম আজাদ, এম এ মালেক, রফিক শিকদার প্রমুখ।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট মাসব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার এটি প্রথম জনসভা। দিনাজপুরের জনসভা শেষে চলতি মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীতে জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। এ ছাড়া আগামী মাসে ৬ অক্টোবর হবিগঞ্জ ও ৯ অক্টোবর বরিশাল জেলায় আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি।
রংপুর ও দিনাজপুর হরতালের আওতামুক্ত : এদিকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্যজোট ও সমমনা ১২ দলের ডাকা রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে রংপুর ও দিনাজপুর। গতকাল দুপুরে ১২ দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, প্রধান বিরোধী দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর হরতালের আওতামুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১২ দল।
রাজধানী ঢাকা থেকে বগুড়া পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য গতকাল দলের নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতার ঢল নামে। পথে পথে তাঁকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রাস্তার দুই পাশে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড বহন করে হাজার হাজার নেতা-কর্মী বাদ্যের তালে তালে নেচে-গেয়ে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় খালেদা জিয়াও হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু করে বগুড়ার সার্কিট হাউস পর্যন্ত তিন শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়।
আজ সকালে বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। দিনাজপুরে আগে থেকে অবস্থান করা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিকেল ৪টায় দিনাজপুরের গোর-ই শহীদ ময়দানে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়াসহ জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
গতকাল শনিবার বিকেল ৪টায় গুলশানের বাসভবন থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদা জিয়া। গাড়িবহর উত্তরা হাউজ বিলডিং মোড়ে পৌঁছালে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী স্লোগানে স্লোগানে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া চলন্ত গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এরপর টঙ্গী হয়ে গাড়িবহর গাজিপুর চৌরাস্তায় পৌঁছার পর বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এরই মধ্যে নিরাপত্তাকর্মীদের সহযোগিতায় জনতার ভিড় ঠেলে গাড়ি সামনে এগিয়ে চলে। চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ী, মৌচাক, সখিপুর, কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর হয়ে গাড়িবহর এলেঙ্গা পৌঁছার পর আবার দলীয় নেতা-কর্মীদের জটলার মুখে পড়ে তাঁর গাড়িবহর। প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার জন্য চারদিকে থেকে ঘিরে ধরেন তাঁরা। কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে অভিনন্দন জানান।
বিরোধীদলীয় নেতার আগমন উপলক্ষে যমুনা সেতুর দুই তীরে ব্যাপক শোডাউন করেন বিএনপি, জামায়াত ও ১৮ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। এখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে স্লোগান দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানান। জামায়াত নেতা-কর্মীরা তাঁদের কারাবন্দি নেতাদের ছবি প্রদর্শন করে তাঁদের মুক্তির দাবি জানান। এরপর সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় হয়ে গাড়িবহর হাটিকুমরুল পৌঁছালে হাজার হাজার নেতা-কর্মী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। এরপর রায়গঞ্জ হয়ে বগুড়ার চান্দাইকোনা, শেরপুর, শাহজাহানপুর, বনানী সাতমাথা দিয়ে সরাসরি সার্কিট হাউসে আসে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। সাতমাথা থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও উৎসুক জনতা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। বিশেষ করে বিভিন্ন বয়সের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী হাতে ধানের শীষ বহন করে নেচে-গেয়ে খালেদা জিয়ার বগুড়ায় আগমনকে স্বাগত জানান। এ সময় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়াসহ জোট নেতাদের অভ্যর্থনা জানান।
গতকাল রাতে বগুরা সার্কিট হাউসে পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও ডিনার সেরে তিনি স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাতে খালেদা জিয়াসহ ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সার্কিট হাউসেই অবস্থান করেন। সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী। এদিকে পুরো রাস্তায় দেখা গেছে আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানা রকম প্ল্যাকার্ড।
ব্যাপক প্রস্তুতি : আজ রবিবার দিনাজপুরে বড় মাঠে বিএনপির জনসভা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর ও পঞ্চগড় জেলা থেকে যানবাহন ভাড়া করে আসার প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো ৩০০টি বাস ও ট্রাক, ৫০০টি মাইক্রোবাস, ৫০টি পিকআপ, পাঁচ হাজার মোটরসাইকেল ভাড়া করেছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর আলম এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহেদুল্লাহ আবু নূর চৌধুরী জানান, জনসভায় ঠাকুরগাঁও থেকে ৪৫ হাজার নেতা-কর্মী যাতে অংশ নিতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনাজপুর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে যাতে নেতা-কর্মীরা আসতে পারেন সে জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন ভাড়া করা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কাজল জানান, পঞ্চগড় জেলা থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মী যেন দিনাজপুরের জনসভায় উপস্থিত হতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আ. জব্বার জানান, রবিবার দিনাজপুরের জনসভার জন্য সব বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস ভাড়া হয়ে গেছে। এ কারণে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-রংপুরসহ স্থানীয় রুটগুলোতে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত বাস নাও থাকতে পারে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, জনসভায় কমপক্ষে ১০ লাখ লোক অংশ নেবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ দিনাজপুরের জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন জেলা সভাপতি লুৎফর রহমান মিন্টু। সভা পরিচালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক মুকুর চৌধুরী। দিনাজপুর সফরকালে খালেদা জিয়া তাঁর মায়ের কবর জিয়ারত করবেন বলেও দলের একটি সূত্র জানায়। এ দিন রাতেই খালেদা জিয়ার ঢাকার পথে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।
'বাধার পাঁয়তারা' : দিনাজপুর অভিমুখে বিরোধীদলীয় নেতা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনরা বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
রিজভী বলেন, টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে নির্মিত তোরণ ভেঙে ফেলা হয়েছে, ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে এভাবে আওয়ামী লীগের বাধা দেওয়ার মানসিকতা প্রমাণ করে, তারা গণতন্ত্রের রীতি-নীতির তোয়াক্কা করে না। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকে ব্যাপক পুলিশের অবস্থানের সমালোচনাও করেন রিজভী। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ছিল নয়াপল্টনে। তবে পুলিশের বাধার কারণে কমলাপুর স্টেশনের কাছ থেকে ওই মিছিল শুরু হবে বলে জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবদুল লতিফ জনি, আবদুস সালাম আজাদ, এম এ মালেক, রফিক শিকদার প্রমুখ।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট মাসব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার এটি প্রথম জনসভা। দিনাজপুরের জনসভা শেষে চলতি মাসের ২৯ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীতে জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। এ ছাড়া আগামী মাসে ৬ অক্টোবর হবিগঞ্জ ও ৯ অক্টোবর বরিশাল জেলায় আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন তিনি।
রংপুর ও দিনাজপুর হরতালের আওতামুক্ত : এদিকে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্যজোট ও সমমনা ১২ দলের ডাকা রবিবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আওতামুক্ত থাকবে রংপুর ও দিনাজপুর। গতকাল দুপুরে ১২ দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, প্রধান বিরোধী দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর হরতালের আওতামুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১২ দল।
No comments