স্মরণ-হেমাঙ্গ বিশ্বাস by শামস শামীম
'হবিগঞ্জের জালালি কইতর সুনামগঞ্জের কোড়া/সুরমা নদীর গাঙচিল আমি শূন্যে দিলাম ওড়া/...শূন্যে দিলাম ওড়া রে ভাই যাইতে চান্দের চর/ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কলকাতার উপর।' ছোটবেলা থেকে মানুষের মুখে মুখে এই গানটি শুনে বড় হয়েছি।
জানতাম না, এর শিল্পী কে? জ্ঞান হওয়ার পর জানলাম, এই গানের মহান শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। এ গানে একদিকে হাওরভাটির জীবনপ্রকৃতি-জীববৈচিত্র্য অনবদ্য হয়ে উঠেছে, আরেকদিকে দেশ ভাগের আখ্যান বেদনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানের কথা ধনুকছিলার মতো টান টান। তাঁর গানে কাঁপত মসনদ, জেগে উঠত নিম্নবর্গীয় লোকজন। কণ্ঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা সুরধ্বনি মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস। বাংলার চিরায়ত সম্পদ লোকধারাকে কেন্দ্র করেই তাঁর গণসংগীতের বিচরণ। এই মহান গণমানুষের শিল্পী ১৯১২ সালের ১৪ জানুয়ারি বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার মিরাশিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বাংলার লোকায়ত ধারার গণসংগীতকে মর্যাদার আসনে রেখে গেছেন। এখনো শ্রেণীবৈষম্যে নিষ্পেষিত অধিকারহারা, সর্বহারা শ্রেণীর লোকজন তাঁর গানকে প্রেরণার উৎস হিসেবে মানে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর গণসংগীত উদ্দীপ্ত করেছে বাঙালিকে। তাঁর মতে, 'স্বাদেশিকতার ধারা যেখানে সর্বহারার আন্তর্জাতিকতার মহাসাগরে গিয়ে মিলেছে, সেই মোহনায় গণসংগীতের জন্ম।' তিনি এই দেশের লৌকিকধারায় তাঁর গানকে শাণালেও একই সঙ্গে সর্বহারা ও বঞ্চিতের প্রশ্নে ছিলেন বৈশ্বিক। তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী স্মৃতিচারণায় শিক্ষকনেত্রী হেনা দাস বলেছিলেন, 'হেমাঙ্গদা একদিকে যেমন জনজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে একাত্ম ছিলেন, তেমনি জনগণের মুক্তিসংগ্রাম ও তার লক্ষ্য সম্পর্কেও ছিলেন পরিপূর্ণ সচেতন। তাই তাঁর গানের মর্মবস্তু হয়েছে জনগণের দুঃখ-কষ্ট, বেদনা ও তাদের মরণপণ বলিষ্ঠ সংগ্রামের হাতিয়ার।'
১৯৩৮-৩৯ সালে তিনি দেবব্রত বিশ্বাস, বিনয় রায় ও নিরঞ্জন সেনের সঙ্গে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গঠন করেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর প্রচেষ্টায়ই সিলেটে 'সিলেট গণনাট্য সংঘ' প্রতিষ্ঠিত হয়।
'মাস সিঙ্গারস' নামের দল গঠন করে জীবনের শেষ বেলায় তিনি গ্রামে গ্রামে মানুষকে গান গেয়ে সচেতন করতেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সংগীত হলো_আমি যে দেখেছি সেই দেশ, সেলাম চাচা, শঙ্খচিলের গান, মশাল জ্বালো ইত্যাদি। বাংলা গণসংগীত আর হেমাঙ্গ বিশ্বাস এক অভিন্ন নাম।
শামস শামীম
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গানের কথা ধনুকছিলার মতো টান টান। তাঁর গানে কাঁপত মসনদ, জেগে উঠত নিম্নবর্গীয় লোকজন। কণ্ঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা সুরধ্বনি মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস। বাংলার চিরায়ত সম্পদ লোকধারাকে কেন্দ্র করেই তাঁর গণসংগীতের বিচরণ। এই মহান গণমানুষের শিল্পী ১৯১২ সালের ১৪ জানুয়ারি বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার মিরাশিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বাংলার লোকায়ত ধারার গণসংগীতকে মর্যাদার আসনে রেখে গেছেন। এখনো শ্রেণীবৈষম্যে নিষ্পেষিত অধিকারহারা, সর্বহারা শ্রেণীর লোকজন তাঁর গানকে প্রেরণার উৎস হিসেবে মানে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তাঁর গণসংগীত উদ্দীপ্ত করেছে বাঙালিকে। তাঁর মতে, 'স্বাদেশিকতার ধারা যেখানে সর্বহারার আন্তর্জাতিকতার মহাসাগরে গিয়ে মিলেছে, সেই মোহনায় গণসংগীতের জন্ম।' তিনি এই দেশের লৌকিকধারায় তাঁর গানকে শাণালেও একই সঙ্গে সর্বহারা ও বঞ্চিতের প্রশ্নে ছিলেন বৈশ্বিক। তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী স্মৃতিচারণায় শিক্ষকনেত্রী হেনা দাস বলেছিলেন, 'হেমাঙ্গদা একদিকে যেমন জনজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে একাত্ম ছিলেন, তেমনি জনগণের মুক্তিসংগ্রাম ও তার লক্ষ্য সম্পর্কেও ছিলেন পরিপূর্ণ সচেতন। তাই তাঁর গানের মর্মবস্তু হয়েছে জনগণের দুঃখ-কষ্ট, বেদনা ও তাদের মরণপণ বলিষ্ঠ সংগ্রামের হাতিয়ার।'
১৯৩৮-৩৯ সালে তিনি দেবব্রত বিশ্বাস, বিনয় রায় ও নিরঞ্জন সেনের সঙ্গে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ গঠন করেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর প্রচেষ্টায়ই সিলেটে 'সিলেট গণনাট্য সংঘ' প্রতিষ্ঠিত হয়।
'মাস সিঙ্গারস' নামের দল গঠন করে জীবনের শেষ বেলায় তিনি গ্রামে গ্রামে মানুষকে গান গেয়ে সচেতন করতেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সংগীত হলো_আমি যে দেখেছি সেই দেশ, সেলাম চাচা, শঙ্খচিলের গান, মশাল জ্বালো ইত্যাদি। বাংলা গণসংগীত আর হেমাঙ্গ বিশ্বাস এক অভিন্ন নাম।
শামস শামীম
No comments