শিক্ষক-কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠক আজ- আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হতে পারে by বিভাষ বাড়ৈ

দেশব্যাপী শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় অস্থিরতা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাড়িভাড়া ও মেডিক্যালভাতা বৃদ্ধি, বন্ধ হওয়া এমপিও চালু, শিক্ষা জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


সকাল ১১টায় নিজ মন্ত্রণালয়ের দেশের শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনগুলোর তিনটি বৃহৎ জোটের ২৭ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। জানা গেছে, শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আন্দোলনরতদের দাবির বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আজকের বৈঠকেই গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো মেনে নেয়া হবে। বহু বছরের দাবি ১০০ টাকার বদলে সম্মানজনক বাড়িভাড়া ও মেডিক্যালভাতা বৃদ্ধির ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে মেনে নেয়া হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের শূন্যপদে এমপিও ছাড় করার দাবিও।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী হাজার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের ফলে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছেই। কর্মকর্তারা বলছেন, সঙ্কট উত্তরণে এ অবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সহায়তামূলক মনোভাব নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে আমাদের অর্থ সঙ্কটের কথাও সকলকে বুঝতে হবে। সকল বিষয় মাথায় রেখেই আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্প্রতি বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের পর বেতনবৈষম্য দূর করাসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন সরকারসমর্থক বলে পরিচিত বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা। আন্দোলনে আছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (কামরুজ্জামান)। দুই সংগঠনের লাগাতার আন্দোলনের পর বৃহস্পতিবার শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের লক্ষ্যে ঘোষিত ২১ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (কামরুজ্জামান)। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে এ আল্টিমেটাম দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে লাগাতার ধর্মঘট পালনসহ আরও কঠোর কর্মসূচীর ডাক দেয়া হবে। এর আগেই সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে বেতনভাতা বৈষম্য দূর করাসহ ১৭ দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচী পালন করে বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। তাদের দাবির মধ্যে আছে- চাকরি জাতীয়করণ, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকারী-বেসরকারী বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের সমপরিমাণ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বাড়িভাড়া, উৎসব ভাতা ও মেডিক্যাল ভাতা প্রদান করা এবং শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ ৬৫ বছরে উন্নীত করা ইত্যাদি। বাংলাদেশ শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আতিয়ার রহমান বলেন, আমরা বেতনবৈষম্য রোধসহ যে সকল দাবি জানিয়েছি, তা খুবই যৌক্তিক। সরকারকে আমাদের দাবি মানতে হবে। তিনি সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচী থেকে এক বিন্দুও নড়ব না। পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেছেন, আমাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখতে আগেই আমরা সরকারকে বলেছিলাম। তিনি জানান, শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকারী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো বাড়িভাড়া, মেডিক্যাল ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা চান। সাবেক এই ছাত্রনেতা আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, এ সরকারের আমলে যেসব শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এ সরকারের সমর্থক। কিন্তু তাঁরাও বেতনভাতা পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী শিক্ষকরা আজ চরম অবহেলিত। সরকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বেসরকারী শিক্ষকদের বেতনভাতা, সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার আমাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলো পূরণ করবেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট সঙ্কট কাটাতেই শিক্ষামন্ত্রী আজ বৈঠক করতে যাচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। এ সময় শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (কামরুজ্জামান) শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সভাপতি অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জামান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক শাহজাহান আলম সাজু ও আতিয়ার রহমান এবং জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ ও সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক আসাদুল হকসহ মোট ২৭ শিক্ষক নেতা উপস্থিত থাকবেন। তবে ভুইফোঁড় কিছু সংগঠন আছে, যারা আদৌ শিক্ষক নন কিন্তু হঠাৎ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে অবস্থান নেন, তাদেরকে ডাকা হয়নি বৈঠকে। নেতাদের কয়েকজন রাতে জানান, সংগঠনগুলোর দাবি অনেক। তবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দাবি পূরণ করা হবে বলে আমাদের বলা হয়েছে। এছাড়া আলোচনার মাধ্যমে পর্যাক্রমে আরও কিছু দাবি পূরণ করতে চায় সরকার। শিক্ষক নেতারা জানান, বাড়িভাড়া ও মেডিক্যালভাতা বৃদ্ধি এবং স্থগিত হওয়া এমপিও চালুর বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও রাতে জানালেন, বৈঠকেই গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো মেনে নেয়া হবে। ১০০ টাকার বাড়িভাড়া বাড়িয়ে ৫০০ টাকা ও মেডিক্যাল এলাউন্স ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করা হতে পারে। আর দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকা শূন্যপদের এমপিও চালুর ঘোষণা দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। শীঘ্রই এটাও চালু হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দাবি মেনে নিয়ে আন্দোলন বন্ধ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষক নেতারা আগেই কোন কথা বলতে রাজি হননি। তাঁরা বলেছেন, আগে সরকারের ঘোষণা আসুক, পরে সে অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.