রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোন পথে? by ড. নিয়াজ আহম্মেদ
প্রবাদ আছে 'বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।' শিশু যেমন মায়ের কোলে স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ বোধ করে, তেমনি জীবজন্তুদের বনে শোভা পায়। প্রবাদটি শিশু ও জীবজন্তুর বেলায় যেমন প্রযোজ্য ও সত্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিবিধ ব্যবস্থা ও পদ্ধতির ক্ষেত্রেও অনেকটা মানানসই।
রাজনীতি ও ক্ষমতাসীন হওয়াকে আমরা একটি ব্যবস্থা হিসেবে সবাই জানি। আমাদের জানাটা সঠিক হলে এই ব্যবস্থায় রাজনীতিবিদের আসাটা মঙ্গলজনক ও সুখকর। রাজনীতিসচেতন অনেকে হতে পারেন; কিন্তু রাজনীতি চর্চা ও অনুশীলন সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। রাজনীতিবিদরা দেশ শাসন করবেন- এমনটি বললে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবমূল্যায়ন করা হয় বলে অনেকে মনে করতে পারেন; কিন্তু অরাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা অন্য অর্থে যাঁদের রাজনৈতিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নেই, তাঁরা যখন ক্ষমতাসীন হওয়ার চেষ্টা করেন এবং ক্ষমতাসীন বনে যান, তখন সমস্যা দেখা দেয়। আবার যখন রাজনীতিবিদের দ্বারা দেশ পরিচালনার কথা বলছি, তখন এ কথাও মনে রাখতে হবে যে যাঁদের কথা আমি বলছি তাঁরা একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে তৈরি করেছেন কি না? একসময় ডাকসু, বাকসু, জাকসু ও চাকসু ছিল রাজনীতিবিদ তৈরির কারখানা। এ প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া রাজনীতিবিদ এবং ভিন্ন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়াদের মধ্যে ব্যবধান থাকা অবান্তর নয়। গত প্রায় দুই দশক এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। ফলে রাজনীতিবিদদের স্থান দখল করেছেন ব্যবসায়ী (একটি বড় অংশ) চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অ্যাডভোকেট, আমলা, এমনকি শিক্ষকও।
পেশাজীবীগোষ্ঠী কর্তৃক দেশ চালানো একেবারেই অসম্ভব- এমন কথা ঢালাওভাবে বলা ঠিক নয়, কেননা দেশ চালানোর জন্য বহুমুখী দক্ষতা ও গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি প্রয়োজন, যা পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছে। দেশ চালানোর জন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন রাজনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতা, অন্যদিকে প্রশাসনিক ও একাডেমিক জ্ঞানের কমতি থাকা ঠিক নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ ক্ষেত্রে সমস্যা তুলনামূলক কম, কেননা সেখানে অনেকেই শিক্ষিত, মেধাবী এবং তাদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক জ্ঞানের কমতি নেই; কিন্তু বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ ত্রিমাত্রার সমন্বয় পাওয়া কঠিন। হয়তো রাজনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে; কিন্তু একাডেমিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নেই। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে। একেবারে পরিপূর্ণ সমন্বয় পাওয়াটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং সবার মধ্যে পাওয়া যায় না। ফলে শাসনব্যবস্থার জন্য একটি মিশ্র ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ দেখা যায়। ক্রমান্বয়ে অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে, রাজনীতিবিদদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে আর স্থান পূরণ হচ্ছে বিভিন্ন পেশাজীবীগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ী ব্যক্তি দ্বারা। এতে কারো কারো অদূরদর্শী মনোভাব ও অন্যান্য অদক্ষতায় দেশ বড় বড় বিপদ, বিতর্ক ও সিদ্ধান্তহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন একাডেমিক, কখনো বা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছেন। আর এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পেশাদার আমলাদের পথ করেছেন সহজ।
অন্যদিকে অদক্ষতা ও আগ্রহের অভাব যা-ই বলি না কেন, সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় কাজে আগ্রহ ও জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার ইচ্ছার জন্য রুটিন কাজের বাইরে সময় দেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে এবং অনেকে এসব কাজে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একাডেমিক সেশন, যেমন- বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, ওয়ার্কশপে কম অংশগ্রহণ করছেন কিংবা অংশগ্রহণ করলেও নিজ থেকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছেন। কিংবা সংসদে দেরিতে উপস্থিত হওয়া ও কোরাম সংকটে পড়াসহ নির্ধারিত বিষয়ের বাইরে রাজনৈতিক আলোচনা বেশি মাত্রায় প্রাধান্য পাওয়ার প্রবণতা হরহামেশা লক্ষ করা যায়। তাই তো বিশ্ব পরিবেশ দিবস কিংবা মানবাধিকার দিবসে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় রাজনৈতিক কথাবার্তা। এটা ঠিক যে রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য পরিপূর্ণ একাডেমিক হতে হবে এমনটি নয়। যাঁরা একাডেমিশিয়ান তাঁরাই একাডেমিক চর্চা করবেন; কিন্তু একাডেমিক বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা না থাকলেও পদে অবিষ্ট হয়ে সেই দক্ষতা অর্জন করা যায়। দিনের কিংবা সপ্তাহের কিংবা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় এ-সংক্রান্ত বিষয়াবলি জানার জন্য সময় রাখা যেতে পারে। নইলে ধারণার অভাবে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রাষ্ট্র ও জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কিংবা না জেনে ভুল করার দায় নিজেদের নিতে হতে পারে।
ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তিনি পেশাদার রাজনীতিবিদ হোন কিংবা পেশাদার কম রাজনীতিবিদ হোন, তাঁকে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে তাঁর পেশাদারিত্বের বিষয়টি একেবারে ভুলে যান। একজন এমপি কিংবা মন্ত্রীর সম্মান অনেক। সাধারণ মানুষ তাঁদের যথেষ্ট সম্মান ও উঁচু আসনে রাখতে চায়। সাধারণ মানুষের প্রতি কল্যাণধর্মী মনোভাব থেকে এমনটি হয়; কিন্তু এ ধরনের লোকগুলো যখন কোনো কিছুর বাছবিচার না করে নিজেদের সম্মান বাড়ানোর জন্য হরহামেশাই মিডিয়ার সামনে চলে যান কিংবা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ছোটখাটো অনুষ্ঠানে চলে যান, তখন সাধারণের মনে প্রশ্নের উদয় হয়। সন্দেহ করতে থাকে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যখন আমরা কোনো পেশাজীবী রাজনীতিবিদের মধ্যে লক্ষ করি, তখন পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদের মধ্যে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। অবসর সময় মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া একটি কল্যাণের কাজ, এ সময়ে বিনা মূল্যে কাউকে আইনগত সহায়তা প্রদান করাও কল্যাণকর। তেমনিভাবে শিক্ষক-রাজনীতিবিদ কিংবা প্রকৌশলীরাও অবসর সময়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন। একমাত্র ব্যবসায়ীদের বিষয়টি ভিন্ন। তাঁরা হয়তো অনেক কিছু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পারেন। তাঁদের ব্যাপারে মন্তব্য করা কঠিন। কিন্তু পেশাজীবীদের কাছ থেকে এমনটি আশা করা ঠিক নয়।
নিজেদের কোনো কিছুতে অন্তর্ভুক্তি বা অংশগ্রহণ যদি 'সংরক্ষিত' (যেমনটি আমরা বিভিন্ন জায়গায় লক্ষ করি) করার চেষ্টা করি, তাহলে তাঁদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক কিছুই এখানে প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু সাধারণের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাটা জরুরি। সম্ভব হতে পারে অংশগ্রহণ কমানো, অন্তর্ভুক্তি সংরক্ষিতকরণ ও কম কথা বলার মাধ্যমে। আর সততার প্রশ্নটি তো রয়েছেই। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিজেদের রুটিন কাজকর্ম সঠিকভাবে করলে তাঁদের প্রতি সাধারণ মানুষের ধারণার পরিবর্তন হবে। হয়তো তিনি দুর্নীতির সঙ্গে আদৌ জড়িত নন; কিন্তু যখন তাঁকে দেখা যায়, একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির নিজস্ব অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে, তখন সাধারণের মনে প্রশ্ন ওঠাকে আমরা বন্ধ করব কিভাবে?
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
neazahmed_2002@yahoo.com
পেশাজীবীগোষ্ঠী কর্তৃক দেশ চালানো একেবারেই অসম্ভব- এমন কথা ঢালাওভাবে বলা ঠিক নয়, কেননা দেশ চালানোর জন্য বহুমুখী দক্ষতা ও গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তি প্রয়োজন, যা পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছে। দেশ চালানোর জন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন রাজনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতা, অন্যদিকে প্রশাসনিক ও একাডেমিক জ্ঞানের কমতি থাকা ঠিক নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এ ক্ষেত্রে সমস্যা তুলনামূলক কম, কেননা সেখানে অনেকেই শিক্ষিত, মেধাবী এবং তাদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক জ্ঞানের কমতি নেই; কিন্তু বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ ত্রিমাত্রার সমন্বয় পাওয়া কঠিন। হয়তো রাজনৈতিক জ্ঞান ও দক্ষতা রয়েছে; কিন্তু একাডেমিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নেই। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে। একেবারে পরিপূর্ণ সমন্বয় পাওয়াটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং সবার মধ্যে পাওয়া যায় না। ফলে শাসনব্যবস্থার জন্য একটি মিশ্র ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ দেখা যায়। ক্রমান্বয়ে অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে, রাজনীতিবিদদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে আর স্থান পূরণ হচ্ছে বিভিন্ন পেশাজীবীগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ী ব্যক্তি দ্বারা। এতে কারো কারো অদূরদর্শী মনোভাব ও অন্যান্য অদক্ষতায় দেশ বড় বড় বিপদ, বিতর্ক ও সিদ্ধান্তহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন একাডেমিক, কখনো বা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছেন। আর এর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পেশাদার আমলাদের পথ করেছেন সহজ।
অন্যদিকে অদক্ষতা ও আগ্রহের অভাব যা-ই বলি না কেন, সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় কাজে আগ্রহ ও জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার ইচ্ছার জন্য রুটিন কাজের বাইরে সময় দেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে এবং অনেকে এসব কাজে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। একাডেমিক সেশন, যেমন- বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, ওয়ার্কশপে কম অংশগ্রহণ করছেন কিংবা অংশগ্রহণ করলেও নিজ থেকে কিছু দেওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছেন। কিংবা সংসদে দেরিতে উপস্থিত হওয়া ও কোরাম সংকটে পড়াসহ নির্ধারিত বিষয়ের বাইরে রাজনৈতিক আলোচনা বেশি মাত্রায় প্রাধান্য পাওয়ার প্রবণতা হরহামেশা লক্ষ করা যায়। তাই তো বিশ্ব পরিবেশ দিবস কিংবা মানবাধিকার দিবসে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় রাজনৈতিক কথাবার্তা। এটা ঠিক যে রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য পরিপূর্ণ একাডেমিক হতে হবে এমনটি নয়। যাঁরা একাডেমিশিয়ান তাঁরাই একাডেমিক চর্চা করবেন; কিন্তু একাডেমিক বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি একটি ধারণা না থাকলেও পদে অবিষ্ট হয়ে সেই দক্ষতা অর্জন করা যায়। দিনের কিংবা সপ্তাহের কিংবা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় এ-সংক্রান্ত বিষয়াবলি জানার জন্য সময় রাখা যেতে পারে। নইলে ধারণার অভাবে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য রাষ্ট্র ও জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। কিংবা না জেনে ভুল করার দায় নিজেদের নিতে হতে পারে।
ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তিনি পেশাদার রাজনীতিবিদ হোন কিংবা পেশাদার কম রাজনীতিবিদ হোন, তাঁকে তাঁর সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে তাঁর পেশাদারিত্বের বিষয়টি একেবারে ভুলে যান। একজন এমপি কিংবা মন্ত্রীর সম্মান অনেক। সাধারণ মানুষ তাঁদের যথেষ্ট সম্মান ও উঁচু আসনে রাখতে চায়। সাধারণ মানুষের প্রতি কল্যাণধর্মী মনোভাব থেকে এমনটি হয়; কিন্তু এ ধরনের লোকগুলো যখন কোনো কিছুর বাছবিচার না করে নিজেদের সম্মান বাড়ানোর জন্য হরহামেশাই মিডিয়ার সামনে চলে যান কিংবা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ছোটখাটো অনুষ্ঠানে চলে যান, তখন সাধারণের মনে প্রশ্নের উদয় হয়। সন্দেহ করতে থাকে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যখন আমরা কোনো পেশাজীবী রাজনীতিবিদের মধ্যে লক্ষ করি, তখন পেশাজীবী ও রাজনীতিবিদের মধ্যে ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। অবসর সময় মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া একটি কল্যাণের কাজ, এ সময়ে বিনা মূল্যে কাউকে আইনগত সহায়তা প্রদান করাও কল্যাণকর। তেমনিভাবে শিক্ষক-রাজনীতিবিদ কিংবা প্রকৌশলীরাও অবসর সময়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন। একমাত্র ব্যবসায়ীদের বিষয়টি ভিন্ন। তাঁরা হয়তো অনেক কিছু ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পারেন। তাঁদের ব্যাপারে মন্তব্য করা কঠিন। কিন্তু পেশাজীবীদের কাছ থেকে এমনটি আশা করা ঠিক নয়।
নিজেদের কোনো কিছুতে অন্তর্ভুক্তি বা অংশগ্রহণ যদি 'সংরক্ষিত' (যেমনটি আমরা বিভিন্ন জায়গায় লক্ষ করি) করার চেষ্টা করি, তাহলে তাঁদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক কিছুই এখানে প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু সাধারণের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করাটা জরুরি। সম্ভব হতে পারে অংশগ্রহণ কমানো, অন্তর্ভুক্তি সংরক্ষিতকরণ ও কম কথা বলার মাধ্যমে। আর সততার প্রশ্নটি তো রয়েছেই। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ ও সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিজেদের রুটিন কাজকর্ম সঠিকভাবে করলে তাঁদের প্রতি সাধারণ মানুষের ধারণার পরিবর্তন হবে। হয়তো তিনি দুর্নীতির সঙ্গে আদৌ জড়িত নন; কিন্তু যখন তাঁকে দেখা যায়, একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির নিজস্ব অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে, তখন সাধারণের মনে প্রশ্ন ওঠাকে আমরা বন্ধ করব কিভাবে?
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
neazahmed_2002@yahoo.com
No comments