ইসলামী ১২ দল রংপুর দিনাজপুর বাদে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ॥ তুলকালাম প্রেসক্লাব এলাকায় -মহানবীর (স) প্রতি কটূক্তির প্রতিবাদ
পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে ঝটিকা মিছিল করেছে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের নেতাকর্মীরা। মিছিলকালে পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার এক ফটো সাংবাদিকদের গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।
এ সময় বাধা দিতে গেলে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণে পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে রবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। হামলা ও ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের ২ শীর্ষ নেতাসহ ৫২ জনকে আটক করেছে। নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদে আজ বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর বাদে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী ও সমমনা ১২ দল। রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন ভাংচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ মডেল থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্স্থাপন, নারীনীতি ও ফতোয়া সম্পর্কে উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশ বাতিল, শিক্ষানীতি সংশোধন, মহানবী (স)-এর কটূক্তিকারী ও ফেসবুকে মহানবী (স) কে ব্যঙ্গ করে ছবি প্রকাশকারীদের শাস্তি প্রদান, পর্দা প্রথা ও সম্প্রতি আমেরিকায় মহানবী (স) কে অবমাননা করে ছবি নিমার্ণের প্রতিবাদে শনিবার ইসলামী ও সমমনা ১২ দল খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামিক পার্টি, আহকামে শরীয়ত হেফাজত কমিটি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ভাসানী ফ্রন্ট ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে।
এদিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেয়া একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার আগাম প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালে জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধীরা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই অংশ হিসেবে শনিবারের ওই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচীতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা চালিয়ে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ শনিবার বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জিরোপয়েন্ট, দৈনিক বাংলা মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, জমায়েত, গণমিছিল বন্ধ করে।
পুলিশী নিষেধাজ্ঞা জারির পর কর্মসূচী সফল করার জোরালো ঘোষণা দেয় ইসলামী ও সমমনা ১২ দল। ঘোষণা মোতাবেক শনিবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, জিরোপয়েন্ট, পল্টনের কালভার্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সমবেত হতে থাকে। সমবেত নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যেসব জায়গায় সমবেত হয়েছিল সেসব জায়গা থেকেই ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্র্মীদের দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিচার্জ আর ধাওয়ার মুখে নেতাকর্মীরা পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, আজাদ প্রোডাক্টসের গলি, তোপখানা রোড়ের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেয়। এরপর নেতাকর্মীরা ওইসব গলি থেকেই পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নূরন্নবী, রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এসএম শিবলী নোমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দিকে এসে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময়ে প্রেসক্লাবের মূল ফটকে পুলিশী বাধার মুখে পড়ে নেতাকর্মীরা। এতে উত্তেজিত হয়ে নেতাকর্মীরা গেটের ভেতরের দিকে থাকা ঢাকা মেট্রো-এ-১০-৭৩৪ নম্বরের একটি জাপানী এইচ হান্ড্রেড মোটরসাইকেলে টেনে হিঁচড়ে মূল ফটক থেকে প্রেসক্লাবের প্রায় ৪ গজ ভেতরের দিকে নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকট শব্দে মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ বিস্ফোরিত হতে থাকে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, মোটরসাইকেলটি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার এক ফটো সাংবাদিকের। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমন পরিস্থিতিতে মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন, কার্জন হল, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন মোড়, জিরোপয়েন্টসহ আশপাশের প্রতিটি সড়ক দিয়েই যানবাহন চলাচল করে থাকে।
এ সময় পুলিশ এ্যাকশনে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছোড়ে। পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর পরিস্থিতির। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে থাকে। এদিকে ওই সময় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মুক্তি দাবিতে পিন্টু মুক্তি পরিষদ নামের একটি সংগঠন প্রেসক্লাব মিলনায়তনে একটি সমাবেশ করছিল। পিন্টু মুক্তি পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও আমানউল্লাহ আমানসহ অনেক কেন্দ্র্রীয় নেতা। অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরাও ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের ওই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নেয়।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের নেতাকর্র্মী ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে অবস্থান নেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মির্জা আব্বাসের গাড়ি প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মির্জা আব্বাসের গাড়ির পেছন পেছন অনেক নেতাকর্মীই বের হয়ে যান। এ সময় যানবাহন ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে বেশ কয়েক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা অব্যাহত রাখে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় পুলিশ বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী ও খেলাফত আন্দোলনের নেতা শাহ আহমদ উল্লাহ আশরাফসহ ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহবাগ মডেল থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক মোহসীন জনকণ্ঠকে জানান, ২ নেতাসহ সর্বমোট ৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আটকা পড়েন শত শত মানুষ। জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী কূটনৈতিকসহ সাংবাদিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। বেলা দেড়টার দিকে প্রেসক্লাবসহ আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে ২ শীর্ষ নেতাসহ ৫২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইসলামী ও সমমনা ১২ দল আজ বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর বাদে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এ দুটি জায়গায় সফরের কথা রয়েছে। আজ খালেদা জিয়া বগুড়া থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন।
এদিকে মহানবী (স) কটূক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বিতর্কিত চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিক্ষোভ চলছে। শুক্রবার পাকিস্তানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই চলচ্চিত্রের ভিডিওক্লিপ প্রচার হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে ইউটিউব বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ সরকারের এমন উদ্যোগের পরে শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতীকী কফিন এবং আমেরিকা ও ফ্রান্সের পতাকা পুড়িয়েছে ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা।
তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেয়া একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মূলত সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করার পরিবেশ সৃষ্টি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বিত করতেই যুদ্ধাপরাধীরা ইসলামী ও সমমনা ১২ দলকে পরিকল্পিতভাবে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠে নামিয়েছে। এসব কর্মসূচীতে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্স্থাপন, নারীনীতি ও ফতোয়া সম্পর্কে উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশ বাতিল, শিক্ষানীতি সংশোধন, মহানবী (স)-এর কটূক্তিকারী ও ফেসবুকে মহানবী (স) কে ব্যঙ্গ করে ছবি প্রকাশকারীদের শাস্তি প্রদান, পর্দা প্রথা ও সম্প্রতি আমেরিকায় মহানবী (স) কে অবমাননা করে ছবি নিমার্ণের প্রতিবাদে শনিবার ইসলামী ও সমমনা ১২ দল খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামিক পার্টি, আহকামে শরীয়ত হেফাজত কমিটি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ভাসানী ফ্রন্ট ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে।
এদিকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেয়া একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার আগাম প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালে জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধীরা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই অংশ হিসেবে শনিবারের ওই কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচীতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা চালিয়ে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ শনিবার বিকেল ৫টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পল্টন, বায়তুল মোকাররম, জিরোপয়েন্ট, দৈনিক বাংলা মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, জমায়েত, গণমিছিল বন্ধ করে।
পুলিশী নিষেধাজ্ঞা জারির পর কর্মসূচী সফল করার জোরালো ঘোষণা দেয় ইসলামী ও সমমনা ১২ দল। ঘোষণা মোতাবেক শনিবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, জিরোপয়েন্ট, পল্টনের কালভার্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা সমবেত হতে থাকে। সমবেত নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যেসব জায়গায় সমবেত হয়েছিল সেসব জায়গা থেকেই ঝটিকা মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্র্মীদের দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিচার্জ আর ধাওয়ার মুখে নেতাকর্মীরা পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, আজাদ প্রোডাক্টসের গলি, তোপখানা রোড়ের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেয়। এরপর নেতাকর্মীরা ওইসব গলি থেকেই পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নূরন্নবী, রমনা জোনের সহকারী কমিশনার এসএম শিবলী নোমানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে একটি ঝটিকা মিছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দিকে এসে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বাধার মুখে পড়ে মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময়ে প্রেসক্লাবের মূল ফটকে পুলিশী বাধার মুখে পড়ে নেতাকর্মীরা। এতে উত্তেজিত হয়ে নেতাকর্মীরা গেটের ভেতরের দিকে থাকা ঢাকা মেট্রো-এ-১০-৭৩৪ নম্বরের একটি জাপানী এইচ হান্ড্রেড মোটরসাইকেলে টেনে হিঁচড়ে মূল ফটক থেকে প্রেসক্লাবের প্রায় ৪ গজ ভেতরের দিকে নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিকট শব্দে মোটরসাইকেল যন্ত্রাংশ বিস্ফোরিত হতে থাকে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায়, মোটরসাইকেলটি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার এক ফটো সাংবাদিকের। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি গাড়িতেও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এমন পরিস্থিতিতে মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন, কার্জন হল, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন মোড়, জিরোপয়েন্টসহ আশপাশের প্রতিটি সড়ক দিয়েই যানবাহন চলাচল করে থাকে।
এ সময় পুলিশ এ্যাকশনে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রবার বুলেট ছোড়ে। পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় এক ভীতিকর পরিস্থিতির। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিতে থাকে। এদিকে ওই সময় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মুক্তি দাবিতে পিন্টু মুক্তি পরিষদ নামের একটি সংগঠন প্রেসক্লাব মিলনায়তনে একটি সমাবেশ করছিল। পিন্টু মুক্তি পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির হন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস ও আমানউল্লাহ আমানসহ অনেক কেন্দ্র্রীয় নেতা। অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরাও ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের ওই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নেয়।
এদিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের নেতাকর্র্মী ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত, শিবির, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে অবস্থান নেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মির্জা আব্বাসের গাড়ি প্রেসক্লাব থেকে বের হয়ে গেলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। মির্জা আব্বাসের গাড়ির পেছন পেছন অনেক নেতাকর্মীই বের হয়ে যান। এ সময় যানবাহন ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে বেশ কয়েক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা অব্যাহত রাখে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় পুলিশ বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী ও খেলাফত আন্দোলনের নেতা শাহ আহমদ উল্লাহ আশরাফসহ ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহবাগ মডেল থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক মোহসীন জনকণ্ঠকে জানান, ২ নেতাসহ সর্বমোট ৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পৃথক পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আটকা পড়েন শত শত মানুষ। জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী কূটনৈতিকসহ সাংবাদিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। বেলা দেড়টার দিকে প্রেসক্লাবসহ আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
এদিকে ২ শীর্ষ নেতাসহ ৫২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ইসলামী ও সমমনা ১২ দল আজ বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর বাদে সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এ দুটি জায়গায় সফরের কথা রয়েছে। আজ খালেদা জিয়া বগুড়া থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন।
এদিকে মহানবী (স) কটূক্তি করে যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত বিতর্কিত চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিক্ষোভ চলছে। শুক্রবার পাকিস্তানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ওই চলচ্চিত্রের ভিডিওক্লিপ প্রচার হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে ইউটিউব বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশ সরকারের এমন উদ্যোগের পরে শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতীকী কফিন এবং আমেরিকা ও ফ্রান্সের পতাকা পুড়িয়েছে ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাকর্মীরা।
তবে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দেয়া একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মূলত সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করার পরিবেশ সৃষ্টি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিলম্বিত করতেই যুদ্ধাপরাধীরা ইসলামী ও সমমনা ১২ দলকে পরিকল্পিতভাবে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠে নামিয়েছে। এসব কর্মসূচীতে বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা।
No comments