নরসিংদীতে সহিংসতা-দায় তো শাসক দলেরই
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নরসিংদী জেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরিণতিতে জেলা শহরে শুক্রবার কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। অগি্নদগ্ধ যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা থেকে আগরতলাগামী মৈত্রী নামে একটি বাস।
ঘটনার সূত্রপাত শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নিজ জেলা নরসিংদী সফরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। তার বিরুদ্ধে নরসিংদী পৌরসভার সাবেক জনপ্রিয় মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে দলেরই এক পক্ষের। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দীর্ঘদিনের। শুক্রবারের সংঘর্ষ তারই পরিণতি। মন্ত্রী হিসেবে নিজ জেলা ও দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা তিনি করেছিলেন কি-না এবং করে থাকলে আন্তরিকতা কতটা ছিল, সে প্রশ্ন সঙ্গতভাবেই করা যায়। লোকমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের শাস্তি বিধানে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও কথা উঠেছে। সংবাদপত্রের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা হয়, মন্ত্রী সব দল-মতের তো নয়ই, এমনকি নিজের দলেরও সবার প্রতি সমান আচরণ করছেন না। আর এ কারণেই প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও পক্ষপাতমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারছে না। শুক্রবারের মন্ত্রীবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র, যার আরেকটি পরিচয় নিহত সাবেক মেয়রের ভাই। আমরা আশা করব, সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ উভয়েই নরসিংদীর সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। সেখানে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। মন্ত্রীর সফর প্রতিহত করার লক্ষ্যে একটি পক্ষ পরপর দু'দিন হরতাল আহ্বান করেছে। তারা 'সরকারবিরোধীদের' মতোই শহরের পথে পথে ভাংচুর-অগি্নসংযোগ করেছে। তাদের হাতে অগি্নদগ্ধ হয়েছে ঢাকা থেকে আগরতলাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস। এ ধরনের আন্তর্জাতিক রুটের একটি যানে অগি্নসংযোগ করার প্রতিক্রিয়া কতটা ব্যাপক হতে পারে সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের নেতাকর্মীদের ধারণা নেই, তা ভাবা যায় না। একদল কর্মী উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউ ছিল না। সরকার এসব বিষয়ে মনোযোগী না হলে তার জন্য যে চড়া মূল্য দিতে হবে, তা উপলব্ধি করার মতো বিচক্ষণ লোক নিশ্চয়ই এ দলের কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে রয়েছেন।
No comments