ফরমালিনমুক্ত কাঁচাবাজার-মালিবাগের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত

শুধু প্রশংসনীয় নয়, রীতিমতো অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই পর্যায়ক্রমে রাজধানীর ১০টি বাজারে ফরমালিনমুক্ত পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মালিবাগ বাজারকে ফরমালিনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।


গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে ফরমালিনমুক্ত বাজারের কার্যক্রম। কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সরবরাহ করা হয়েছে ফরমালিন শনাক্তকরণের কিট। এরপর শুরু হয়েছে বিক্রয়ের জন্য আনা পণ্যে ফরমালিন পরীক্ষণের কাজ। ফরমালিন পরীক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধনের পর গত কয়েক দিনে বাজারের প্রবেশপথেই বিক্রয়ের জন্য আনা পণ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। যেসব পণ্যে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকটির অস্তিত্ব মিলেছে, তা বাজারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাজারে প্রবেশ করতে না পারা পণ্যগুলো ফেরত গেছে ঠিকই, কিন্তু ক্রেতারা ফেরেননি। তারা নিশ্চিন্তে বাজার করেছেন। ফরমালিনমুক্ত মাছ, সবজি কিনে খুশিমনে বাড়ি ফিরেছেন। গণমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে তারা প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস ও আনন্দ। শুধু নিয়মিত ক্রেতারাই নন, বাজারের খবর গণমাধ্যমে আসার পর ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে, দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা বাজারে ভিড় জমিয়েছেন। বিক্রি বাড়ায় বিক্রেতারাও খুশি। এফবিসিসিআই ও ব্যবসায়ীদের এ উদ্যোগটি বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। সবাই আশা করছেন, মালিবাগ বাজারের মতো অন্য বাজারগুলোকেও ফরমালিনমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। খাদ্যপণ্যে ফরমালিনের বিপজ্জনক বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, বিক্রিতেও এর ছাপ পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে আমদানিকৃত ফল বিক্রিতে ভাটার মূল কারণ ফরমালিন। সচেতন ক্রেতারা অন্য অনেক পণ্যের ব্যাপারেও সতর্ক। এ অবস্থায় ফরমালিনমুক্ত বাজারে যে বিক্রির গতি বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। তবে ফরমালিনমুক্ত বাজার গড়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, খুচরা বাজারে প্রবেশের মুখে ফরমালিন পরীক্ষা কার্যকর পন্থা হলেও আড়ত বা পাইকারি পর্যায়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা হলে ফরমালিনযুক্ত পণ্য বাজার পর্যন্ত পেঁৗছতে পারবে না। ব্যবসায়ীদের এ পরামর্শ নিয়ে নিশ্চয়ই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা ভাববেন। আড়ত ও পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে ফরমালিন পরীক্ষণ ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রেতা অধিকার সুরক্ষার প্রয়োজনে পণ্যের মানের সঙ্গে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। সাম্প্রতিক অতীতেও বাজারে মূল্যতালিকা টানিয়ে ভালো ফল পাওয়া গিয়েছিল। পণ্যের মান নিশ্চিত করার জন্য সবার সামনে খাসি জবাইসহ ক্রেতাদের আশ্বস্ত করার মতো নানা উদ্যোগ এসেছিল। সে উদাহরণগুলোও অনুসৃত হতে পারে। সবার চেষ্টায় বাজারকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে। এক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ প্রক্রিয়াটিকে জোরদার করতে পারে। সবাইকে সম্পৃক্ত করে ফরমালিনমুক্ত, মানসম্মত ও ন্যায্যমূল্যের বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে বাজারে ক্রেতাদের উৎসাহ ও আস্থা দুটোই বাড়বে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে অবিশ্বাস ও সন্দেহের বর্তমান সম্পর্কও দূর হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ফরমালিন যেভাবে নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করছে, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ভুগিয়ে চলেছে, তাতে সেই ভোগান্তির অবসান হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য বিষমুক্ত নিরাপদ পণ্য অত্যন্ত জরুরি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ফরমালিন আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা এ উদ্যোগকেও স্বাগত জানাই।
 

No comments

Powered by Blogger.